নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'\'ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি\'\'

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৪


এই বছরে ঢাকাতে বইমেলাতে আসা স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদেরকে টিভিপ্রতিবেদক প্রশ্ন করেছিলেন,২১ শে ফেব্রুয়ারী কি ? কি হয়েছিল এই দিনে? কেউ উত্তর দিতে পারেনি, পাঠ্যপুস্তকে থাকলে তারা জানত, কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকা, বাবা মা, ভাইবোন কেউ গল্পছলেও তাদের বলার সময় পায় নাই, কিনবা জানানোর ইচ্ছা প্রয়োজনীয় মনে করে নাই অথবা তারা নিজেরাই জানে না ?
৪৮ সালে যখন শ্রী ধীরেন্দ্রলাল দত্ত ( ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যার সম্পর্কে পূর্বে আলোকপাত হয়েছে বলে সীমিত রাখা হলো ) পাকিস্তানের গণপরিষদে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী তোলেন, তখন লিয়াকত আলী খানের তির্যক কটূক্তি ''তিনি হিন্দু ভারতের দালালি করছেন'' ! পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ৪৮ সালে ঢাকায় এসেছিলেন।রমনা রেসকোর্স ময়দানে তাঁর দেয়া ‘Urdu and urdu alone shall be the state language of Pakistan’, এই বক্তব্যের প্রতি ক্রিয়ায় মাঠে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন কৈশোর আর যৌব নের সাকোতে দাড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র গবেষক, সাংবাদিক, সংগঠক ওয়াহিদুল হক।১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তান মুসলিম লীগের সম্মেলন উপলৰে পল্টন ময় দানে আয়োজিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন দম্ভের সঙ্গে আবারও ঘোষণা করলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। পূর্ব পাকি স্তানের ছাত্র-জনতা নাজিম উদ্দিনের এই ঘোষণা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ভাষা সং গ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস ঘোষণা করে সারাদেশে সবাত্মক হরতাল ডাকা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাইকযোগে সর কার ২১ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারির কথা ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রসমাজ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবর রহমান তখন জেলে ছিলেন। জেলখানায় তিনি এবং মহিউদ্দিন আহমেদ ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজবন্দী দের মুক্তি ও ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে অনশন শুরু করেন। মওলানা ভাসানী সংগ্রাম পরিষদের ২০ তারিখের সভায় ছিলেন না।
৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, গাজিউল হক তখন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে যেসব রাজনৈতিক তৎপরতায় তিনি সে-সময় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে ছেন তাতে তাঁর সমসাময়িক ছাত্রমহলে এবং রাজনৈতিক মহলে তিনি যথেষ্ট পরিচিত ও প্রভাব শালী হয়ে উঠেছিলেন।১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ যে বৈঠকে বসেছিল তাতে গাজীউল হক উপস্থিত না হয়ে অপেক্ষা করছিলেন ফজলুল হক হলে।সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল যে, সরকার ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে না। কারণে যে, তাহলে গোটা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের ওপর জেলজুলুম নেমে আসবে। এতে আসন্ন নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। তাঁরা ভেবেছিলেন ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনসাধারণের ব্যাপক জমায়েত হবার সম্ভাবনা কম।সর্ব দলীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামী মুসলিম লীগ, ছাত্রলীগ এবং সমস্ত রাজ নৈতিক দল ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরো ধিতা করেছিল। শুধুমাত্র যুবলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা পরিষদের প্রতি নিধিগণ মত প্রকাশ করেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে।অলি আহাদ ও আবদুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে থাকলেও মোহাম্মদ তোয়াহা ভোটদানে বিরত থাকেন কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত না থাকায়।
এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে খবর পেয়ে ফজলুল হক হলে অবস্থানরত গাজীউল হক রাত বারোটার পরে, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে বিভিন্ন হলের ছাত্র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের ফজলুল হক হলে ডাকেন।রাত প্রায় একটার দিকে ফজলুল হক এবং ঢাকা হলের মাঝা মাঝি পুকুরের পূর্বপাড়ে সিঁড়ি বাঁধানো পাকা ঘাটের ওপর সে-সময়কার ১১ জন ছাত্র মিলিত হন।তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১. মোহাম্মদ সুলতান, হাসান হাফিজুর রহমান, কবি ২. এস এ বারি এটি, পরবর্তীকালে বি এন পি সরকারের উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন; ৩. আনওয়ারুল হক খান, যিনি পরবর্তীকালে লন্ডন দুতাবাসে চাকরি ছেড়ে ঝুকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, মুজিবনগর সরকারের তথ্য সচিব, স্বাধীনতার পরে আয়কর সচিব হয়েছিলেন; ৪. মনজুর হোসাইন, পরবর্তীকালে চিকিৎসক; ৫. হাবিবুর রহমান শেলী, পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা; ৬. জিল্লুর রহমান, প্রয়াত, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি; ৭. গাজীউল হক; ৮. আবদুল মমিন, আওয়ামী লীগের নেতা ও পরবর্তী কালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী; ৯. মোস্তফা রওশন আখতার মুকুল, এম আর আখতার মুকুল নামে পরিচিত, পরবর্তীকালে সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত চরমপত্রের জন্য বিখ্যাত; ১০. সৈয়দ কামরুদ্দীন হোসাইন শহুদ, পরবর্তী কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক; ১১. আনওয়ার হোসেন, পরবর্তী কালের পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি।
গভীর রাতের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে। যদি ২১ ফেব্রু য়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না হয় তাহলে ভাষা আন্দোলন চিরকালের জন্য ব্যর্থ হয়ে যাবে এই ছিল ছাত্র নেতাদের মত। ঐ বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের চিঠি দিয়ে ৪ জন ৪ জন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হবার ব্যবস্থা করতে হবে। চিঠি দেয়ার দায়িত্ব গাজীউল হকের ওপরই অর্পিত হয়েছিল। গাজীউল হক ও মোহাম্মদ সুলতান ছোট ছোট চির কুট লিখে হলগুলোতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। সবাইকে সকাল ১০ টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় জড়ো হবার আহ্বান জানান।একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে সভা হবে তাতে সভাপতিত্বের দায়িত্বও গাজীউল হককেই দেয়া হয়েছিল। ভাষাসৈনিক ড. শরিফা খাতুন বলেন, ''বিশ্ববিদ্যা লয়ের এস এম হলের ছাত্র নেতারা ইডেন কলেজের গেটে এসে আমাদের জিএস আপা কে জানালেন, ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে। ২১ তারিখ সকালে ৯টার দিকে আমরা নাস্তা করে আমতলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। সকালে ইডেনের গেট বন্ধ ছিল। আমরা কেউ দেয়াল কেউ গাছ বেয়ে দেয়াল পার হলাম।আমতলায় গিয়ে দেখি অনেক লোকজন। মুসলিম স্কুল থেকেও মেয়েরা এসেছে। কাম রুন্নেসা স্কুলের ছাত্রীরাও ছিল। শ’ খানেক মেয়ে ছিল মনে হয়''।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ণনা করে জহির রায়হান লিখেছেন, “ছাত্রদের গ্রুপে ভাগ করা হলো। আমি ছিলাম প্রথম দশজনের ভেতর''।
এর পর ইতিহাস, টিয়ারগ্যাস এর ধোয়া আর গুলির শব্দ, মগজ ছিটকে পড়ল, শহীদ সালাম, রফিক, বরকতসহ আরও অনেকের তাজা রক্ত বাংলার মাটিতে মিশে আমা দের বাঙ্গালী জাতিসত্তার শেকড় হয়ে দাড়িয়ে গেল।সে রাতেই নতুন করে অস্থায়ী ভাবে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, যার আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম মাওলা। ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা যিনি শহীদ মিনার নির্মাণের পুরোধা তার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক বলেন ১৯৫০ সালের দাঙ্গা হাঙ্গামার বীভৎসতা ডা. গোলাম মাওলার চিন্তাধারায় একটা বিরাট পরিবর্তন এনে দেয়। ২০ ফেব্রম্নয়ারিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ড. গোলাম মাওলার ভূমিকা এদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থকবে''। এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক ডা. সাঈদ হায়দার বলেন,'' ডা. মাওলা সেই দিন তার প্রতি বাদের মাধ্যমে শুধু ঢাকা শহরের ছাত্রদের নয়, সারাদেশের ছাত্রদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ইচ্ছাকেই প্রকাশ করেছিল''।
২২ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকায় সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা সর্বাত্মক হরতাল ও মিছিল করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে জানাজা, শোকসভা ও মিছিল হয়। ২২ ফেব্রম্নয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্ররা বরকত যে স্থানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেছেন যে স্থানে রাতারাতি শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ছাত্র বদরুল আলম ও সাইদ হায়দার শহীদ মিনারের একটি চমৎকার ডিজাইন অঙ্কন করে দেন অতি স্বল্প সময়ে। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি গোলাম মাওলা ও মঞ্জুর হোসেনের নেতৃত্বে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ভোর হওয়ার পূর্বেই নির্দিষ্ট স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করল।২৩ ফেব্রুয়ারী সকালে সমগ্র ঢাকা নগরীতে এই শহীদ মিনার নির্মাণের কথা মুখে মুখে রটে গেল।সকাল থেকেই ঢাকায় আবাল বৃদ্ধবনিতা দলে দলে এলো এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবার জন্য। লালসালু কাপড় দিয়ে ঘেরা প্রথম শহীদ মিনারের বেদীমূল নানা রঙের ফুলে ভরে উঠেছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনা বাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।
সুত্র : নেট, ভাষা আন্দোলন ও ডাক্তার গোলাম মাওলা - আব্দুর রহমান ঢালি, ডক্টর শরিফা খাতুনের সাক্ষাত্কার , ভাষা আন্দোলনে গাজীউল হক- বদরুদ্দীন উমর, (জহির রায়হান জীবনী গ্রন্থমালা, অমর একুশে বাংলা একাডেমীর নিবেদন: ১৯ ৮৮), 'বাঙালী সংস্কৃতির উপর পাকিস্তানী আগ্রাসন'- জিয়াউদ্দীন তারেক আলী

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫০

নেয়ামুল নাহিদ বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, ভালো লেগেছে। জানলাম অনেক কিছু, বাঙালি জাতি অনেক ব্যক্তিকেই মর্যাদা দিতে পারে নি :(

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৬

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: আপনার সাথে সম্পূর্ন সহমত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.