নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ব্লগের খাতা।

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

সন্দীপন বসু মুন্না

অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com

সন্দীপন বসু মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘে ঢাকা চাঁদ

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৯





‘‘না ঠিক আছে, তাহলে বলে দাও বন্ধুত্বের কোনও অর্থ নেই, আজ থেকে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা চেঞ্জ। বন্ধুত্ব মানে বিশ্বাস আর ভালবাসাকে গলা টিপে মেরে ফেলে নিজের রাস্তা গুছিয়ে নেয়?’’ কথাগুলো বেশ জোরে জোরেই বলেছিল মিনকা। আর কথাগুলো শেষ করেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিল দীপ্রর সামনে। আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ বসে ছিল দীপ্র। আসলে ক্লাস শেষ হবার পরপরই কথাগুলো শুনে নিজেকে ঠিকমতো কন্ট্রোল করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছিল মিনকার জন্য।

কিন্তু ব্যাপারটার শুরুটা কিন্তু মোটেই এমন ছিল না। অন্য সব বৃহস্পতিবারের মতো আজও ক্লাস নিচ্ছিলেন জাবেদ ইকবাল স্যার। মিডিয়া লাইনে প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব। টেলিভিশনের সংবাদ পাঠক কাম উপস্থাপক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

প্রতি ক্লাসের মতো এই ক্লাসেও তার স্বভাবজাত ভঙ্গিতে ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি।

:‘‘একটু আগেই যে কথা বলেছিলাম...পয়েন্টস টু বি নোটেড, প্রতিটি খবরের পিছনে ছটা ডব্লিুউ এবং একটা ‘এইচ' কাজ করে। ছ'টা ‘ডব্লিউ কী-কী? লিখে নাও। হোয়াট , হোয়েন, হোয়্যার, হুম, হোয়াট, এবং হু। আর ‘এইচ' হল হাউ, মানে কীভাবে। এ ছাড়াও আছে কয়েকটা ‘সি'। যেমন, কেপিবিলিটি, কনটেন্ট, কনটেক্সট, কন্ট্রাক্ট, কনসেনট্রেশন, কমনসেন্স...’’

ভদ্রলোক বিরতিহীন বাসের মতো অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন।

‘‘এবার তোমরা আমায় বলোতো, টিভি নিউজ আর নিউজ পেপারের খবরের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

প্রশ্নটা ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ছুঁড়ে দিলেন জাবেদ ইকবাল।

এখানে অবশ্য ছাত্র ছাত্রীরা অসমবয়সী। কেউ আঠারো, তো কেউ বা আঠাশ! কেউ বা হয়তো চল্লিশ ছুঁই ছুঁই! প্রশ্নটা করার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই কথা বলে উঠল। কারও কথাই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। হাত তুলে গোলমাল থামালেন জাবেদ ইকবাল।

এক এক করে বলো...আচ্ছা প্রথমে তুমি বলো তো, ওই যে বাঁ দিকের শেষে যে আছে। হ্যাঁ, কী নাম তোমার?’’

‘‘স্যার, দীপা'।

‘‘বেশ তুমি শুরু করো। কী ধরনের পার্থক্য থাকে?’’

‘‘স্যার খবরের কাগজে যতবার খুশি পড়া যায়। পড়ে ভাবা যায়। টেলিভিশনে সে সুযোগ নেই। খবরে এমন শব্দ ব্যবহার করতে হয় যা সহজ এবং চট করে শ্রোতার মনোযোগও আকর্ষণ করে...''

ক্লাস জমে গিয়েছে। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব বক্তব্য রাখছে। সঙ্গে চলছে জাবেদ ইকবালের প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা, নতুন সমীকরণ।’’

একসময় মিনকার পালা এল।

‘‘স্যার, টেলিভিশনে দুটো খবরের ধরণ আলাদা হতেই পারে, তবে নিউজ রিডারের অভিব্যক্তিও ওই অল্প সময়ের মধ্যেই বদলে ফেলতে হয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এই চেঞ্জ অফ এক্সপ্রেশনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ায় উৎসবের খবর আর দুঃখের খবরে সে-অর্থে কোনও পার্থক্য নেই। দুটোকে আলাদা করার দায় পাঠকের, মিডিয়ার নয়। অ্যাম আই রাইট স্যার?’’

সপ্রশংস দৃষ্টিতে মিনকার দিকে তাকালেন জাবেদ ইকবাল,

‘‘ভেরি ওয়েল সেড। সত্যি কথা বলতে কী, আজকের দিনে মানুষের জীবনেই তো সুখ-দুঃখের মধ্যে ব্যবধান কমে যাচ্ছে। তোমার কোনও প্রিয়জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, কিন্তু তোমায় হয়তো সেমিনারে হাসিমুখে প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে, এই তো জীবন। এভাবে দেখলে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া হয়তো অনেক বেশি জীবনের কাছাকাছি।’’

ক্লাস শেষ। অনেকেই ঘিরে ধরেছে জাবেদ ইকাবালকে। আজকাল সর্বত্রই লবি তৈরির ধান্ধা। মিডিয়া লাইনে জাবেদ ইকবাল একজন প্রভাবশালী লোক। খাতির জমিয়ে রাখতে পারলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই! ভদ্রলোক অবশ্য কাউকেই খুব একটা পাত্তা দেন না। আজও দিলেন না। মিষ্টি করে হেসে,

‘‘আজ আমার একটু তাড়া আছে, পরের দিন কথা হবে।’’ বলে বেরিয়ে গেলেন।

তবু জল্পনা কল্পনা থামে না প্রক্ষিণার্থীদের। এমন সময় চাঁদনীর চিৎকার

‘‘কী রে, সেদিন নিউজ চ্যানেলের জন্য ইন্টারভিউ কেমন দিলি?’’

চাঁদনীর গলায় উচ্ছবাস। একদম আস্তে কথা বলতে পারে না মেয়েটা। জাবেদ ইকবাল চলে যেতেই চিৎকার শুরু করেছে। মিনকা সেদিন নতুন একটা বাংলা নিউজ চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়েছে। এ কথা চাঁদনী আর দীপ্র ছাড়া কাউকেই বলেনি ও। চাঁদনীর চিৎকারে সকলেই এবার জেনে যাবে। হলও তাই। অনেকেই ঘুরে তাকাল। ফয়সাল নামে একটি ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়ছে। সে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে সামনে।

‘‘কোথায় ইন্টারভিউ দিচ্ছিস তোরা! কোথাও খবরাখবর পাচ্ছিস?’’

আরে মাঝে-মাঝে পেপারে অ্যাড দেয় না। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে তুইও দেখতে পাবি।

‘‘কোথায়, কোন চ্যানেলে?’’ মাঝবয়সী নাসরীন আপাও ব্যগ্র হয়ে জানতে চাইছে।

‘‘একেবারে নুতন চ্যানেল। নামও বোধহয় এখনও ঠিক হয়নি।’’

কোনও রকমে সকলকে কাটিয়ে ওরা দু'জন বেরিয়ে আসে। দীপ্র আজ আসেনি। বেরিয়েই চাঁদনীর পিঠে একটা চাপড় মারে মিনকা।

‘‘গলাটা আস্তে করা যায় না।’’

‘‘উফ! তোর হাতে কী শক্তি! জিম করা শুরু করেছিস নাকি?’’

‘‘তাই করা উচিৎ। মুখের কথায় কোনও কাজ হবে না। তোমার জন্য ঠিক আছে। এবার থেকে ওরকম মাইকের মত আওয়াজ করলে একদম গলা টিপে ধরব, তখন বুঝবি মজা।’’

মাসখানেক হল এই নতুন কোর্সটার যোগ দিয়েছে মিনকা। নিউজ প্রেজেন্টিং আর উপস্থাপনা শেখার ইন্সটিউশন একন পাড়ায়-পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। বসুন্ধরা সিটির এই অনুষ্ঠানটি অবশ্য বেশ পুরনো এবং নামকরাও। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস হয়। বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা পালা করে ক্লাস নিচ্ছেন। ইংলিশে ফাইনাল ইয়ার মিনকার। তবু অনেকদিনের সখ এবং স্বপ্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দুনিয়ায় নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করা। টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস অবশ্য এমনিতেই আছে, সেই সঙ্গে এই ধরনের কোর্স করা থাকলে প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক মিডিয়াও ওর কেরিয়ারের সম্ভাব্য ক্ষেত্রের মধ্যে চলে আসবে।

এ ক্লাসে ভর্তি হয়ে মিনকার বেশ লাভই হয়েছে। দু'জন নতুন বন্ধু পেয়েছে সে। চাঁদনী আর দীপ্র। ওর বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। একে তো নিজে এগিয়ে গিয়ে বন্ধুত্ব করতে ওর প্রবল অনীহা, তার উপর আবারও প্রচন্ড অভিমানী। ‘ও কেন আমার সঙ্গে এমন করল' টাইপের মনোভাব নিয়ে ও যে কত বন্ধুর কাছ থেকে নীরবে সরে এসেছে তার লেখাজোখা নেই। মায়ের সঙ্গে এই নিয়ে ওর প্রায়ই মতবিরোধ হয়। মা বলেন,

: ‘‘এত অভিমান ভালো নয়, মিনকা। এমন করলে তো তোর কোনও বন্ধুই থাকবে না। এভাবে কী সমাজে বাঁচা যায়!’’

: ‘‘যায় কী যায় না তা জানি না, তবে মনের মতো বন্ধু না পেলে তেমন বন্ধুত্ব আমি টিকিয়ে রাখতে পারি না। কাউকে পছন্দ না হলে তার সাথে মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে লাভ কি?’’

সে হিসেবে দেখতে গেলে চাঁদনী আর দীপ্র ওর জীবনে প্রাপ্তি ছাড়া কী! দু'জনই প্রাণখোলা টাইপ। সারাক্ষণ হা-হা-হি-হি, পরস্পরের পিছনে লাগা! ওদের সান্নিধ্যে এলেই মন একেবারে ঝরঝরে, হালকা।

দু'জনে একটু এগোতেই দ্যাখে দীপ্র আসছে।

:‘‘কীরে, ক্লাসে আসিস নাই যে! কোথায় ছিলি এতক্ষণ?’’

চাঁদনী কলকল করে উঠল।

:‘‘আর বলিস না। ঢাকার রাস্তা আজ পুরা বন্ধ। ফার্মগেটে নাকি কোন নেতার উপর হামলা হয়েছে। তোরা মারামারি করবি কর, কে মানা করেছে! তাই বলে পাবলিককে ঝামেলার মধ্যে ফেলে? এদিকে রাস্তায় আবার বিশাল মিছিল। ব্যস! নট নড়ন চড়ন হয়ে ভিড় বাসে বসে থাকতে হল! শেষে হেঁটেই চলে এলাম। আসতে আসতে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। কোন দেশে যে বাস করছি!’’

:‘‘সর্বনাশ বলিস কী? আমি তো আসতে জ্যাম পাই নাই।’’ চাঁদনীর গলায় উৎকণ্ঠা।

:‘‘আসতে পাও নাই এখন পাবা। নো টেনশন। এখন নে ধর, ঝালমুড়ি খা। তোদের জন্যই অপেক্ষা করছি। একটু আড্ডা না দিলে আর চলছিল না, বুঝলি! মুডটা সকাল থেকেই অফ হয়ে আছে।’’

:‘‘না রে আজ আমার বসা হবে না একটু জরুরি কাজ আছে। বলে চাঁদনী একটু তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে যায়।’’

চাঁদনী চলে যাবার পর আগেই সে জমজমাট ভাবটা আর থাকে না। তবু গল্প করতে করতে ইন্সটিটিউট এর সামনে একটা রেস্টুরেন্টে বসে পড়ে ওরা। দীপ্রের মুড আজ সত্যিই অফ। অন্যদিকে চাঁদনী আরও মাতিয়ে রাখে। আজ কী হয়েছে কে জানে!

:‘‘কী রে এত চুপচাপ কেন? চাঁদনী চলে গেছে বলে মন খারাপ?’’

মিনকা টিপ্পনী কাটে। দীপ্র গম্ভীর হয়ে থাকল। কোনও উত্তর দিল না।

:‘‘অ্যাই কী হয়েছে রে! বোবা হয়ে গেলি নাকি! নাকি চাঁদনীর বিরহে পাগল হলি?’’

:চাঁদনীকে নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ও আমাদের চেয়ে একশ'ধাপ এগিয়ে গিয়েছে।’’

:‘‘মানে?

মিনকা অবাক!

:‘‘কোনও খবরই রাখিস না তুই? টিভিটা দেখাও ছেড়ে দিয়েছিস নাকি?’’

:‘‘সময় হয় না রে। কী হয়েছে বলবি তো!’’

:‘‘চাঁদনী একটা নতুন চ্যানেলে খবর পড়ছে! সেই জন্যই আজ ওর এত সাজগোজ।’’

:‘‘সে কী রে! জানি না তো! কোন চ্যানেলে?’’

চ্যানেলের নাম শুনে চমকে গেল মিনকা,

:‘‘কি বলছিস এইসব! ক'দিন আগেই তো ওই চ্যানেলে আমি নিউজ রিডিংয়ের জন্য ইন্টারভিউ দিলাম। ওকেও তো ডেকেছি। আমাকে একবার তো বলল না! সেদিন ও-ই তো ফোন করে আমায় বেস্ট অব লাক উইশ করল। আজও আমাকে ক্লাস শেষের পর সবার সামনে জিজ্ঞেস করে একথা। এতকিছু ঘটে গেল, সবকিছু চেপে গেল ও?’’

দীপ্র হাসল,

:‘‘চাঁদনী তোর কাছ থেকে ইনফো নিয়ে তোকেই ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়েছে। ধরেছে নিশ্চয়ই কোনও রাঘব-বোয়ালকে। এসব লাইনে একবার লবি ধরতে পারলে ঢোকাটা অনেক সহজ। তারপর নিজের যোগ্যতায় টিকে থাকতে হবে। ও তোকে জানাতে যাবে কোন দুঃখে। আফটার অল, তুই ওর কম্পিটিটর। যোগ্যতার বিচারেও তুইও কিছু কমন যাস না। সুতরাং তোকে জানানোটা ওর পক্ষে রিস্কের ব্যাপার।’’

বিস্ময় আর কাটছিল না মিনকার। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা তা হলে এই! বিশ্বাস আর ভালবাসাকে গলা টিপে মেরে ফেলে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়া? জাবেদ ইকবাল স্যারের কথাগুলো ভাবছিল ও। আজকের যুগে সুখ-দুঃখের অভিব্যক্তি নিজের জীবনেও ধরে রাখার জায়গা নেই! তবুও আজ মনের ভাবটাকেও লুকোতে পারছে না কেন! চোখ দু'টোই বা এমন বিশ্বাসঘাতকতা করছে কেন? সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে! মিনকা লক্ষ্য করে দীপ্র তাকিয়ে আছে ওর দিকে,

:‘‘দুনিয়ার সব সোনালি জিনিসই সোনা হয় না রে মিনকি। খাঁটি সোনা চিনতে সময় লাগে। খাঁটি বন্ধুও। অকারণে তোর চোখের জল নষ্ট করছিস কেন বোকা মেয়ে? দীপ্রের গলাটা বড্ড নরম শোনাচ্ছে। মিনকার চোখের জল কোনও বাধাই মানছিল না। নীরবে কেঁদে চলেছে ও। বসুন্ধরা সিটির এই অংশটাতে এখন লোকজন কম থাকলেও যা দু'চারজন লোক আছে ওদের আড়চোখে দেখছে। দীপ্রেরই অপ্রস্তুত অবস্থা।

:‘‘কী করছিস কী! সবাই দেখছে কিন্তু। কি ভাবছে বল তো?’’

:‘‘আমি যে ওকে আমার বন্ধু ভেবেছিলাম দীপ্র। ও আমার সঙ্গে এমন করতে পারল?’’

কথা বলতে গিয়ে মিনকার গলা বুজে আসে।

:‘‘চোখ মুছে ফ্যাল শিগগির। জীবনটা অনেক বড় রে গাধা! আমি তো রইলাম তোর পাশে। সবসময় থাকব। অবশ্য তুই যদি চাস তা হলেই।’’

ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টিও আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। গুমোট ভাবটাও যেন কমে গিয়েছে হঠাৎই। কোথা থেকে যেন অচেনা ফুলের মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে। দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মিনকা।

:‘‘ইস... বৃষ্টি এসে গেল যে! ছাতাও আনিনি, বাড়ি ফিরব কী করে!’’

মিনকার গলায় একরাশ উদ্বেগ।

:দূর বোকা! দেখছিস না কেমন উথালপাতাল হাওয়া দিচ্ছে। দেখিস মেঘ উড়ে যাবে, তেমন বৃষ্টি হবে না। গরমের হলকানিটা শুধু কমবে।’’

:‘‘ও আচ্ছা। তুই বুঝি সবজান্তা!’’

মিনকার মনের মেঘটাও কেটে যাচ্ছে একটু-একটু করে। হাতের পিঠ দিয়ে চোখ দুটো মুছে নেয় ও।

:‘‘মিলিয়ে নিস আমার কথা।’’

দীপ্রের গলা দৃঢ়। সত্যিই কখন যেন মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করেছে নীল রঙের আকাশ। অন্ধকার কেটে গিয়ে হালকা হলদে চাঁদের আলোয় মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে বাড়ির দেওয়াল, গাছের পাতায়, টিপ-টিপ বৃষ্টির ফোঁটা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.