নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com
- পরী একটা কবিতা শুনবি?
- একদম না। তোর সব পচা কবিতা, কই থেকে যে পাস.. ছিঃ।
- তাহলে গান শোন, .... মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন....
- তুই থামবি। এইটা ব্যাচেলর মুভির গান না ? আমার মোটেও ভাল্লাগেনাই মুভিটা। তারচে বড় কথা হলো তোর গানের গলা শুনলে পাবলিক ফকিরকে ভিক্ষা না দিয়ে তোকে দেবে।
- হুমম, জানি তো! আমার কোন কিছুই এখন আর আপনার ভাল্লাগেনা। লাগবে কিভাবে! নতুন নতুন বন্ধু..কত্তো কত্তো ভাব! পুরান এই আমারে কি আর ভালো লাগে!
- আরে এইতো তুই জানিস। তাহলে জ্বালাস কেন?
- ঠিক আছে যান, ফোনটা রেখেই দেই।
- এই না না.... শোন....
- শোনার কি আছে... তুই তো আমার কিছুই পছন্দ করিস না। তোকে আর কিচ্ছু বলবো না।
- না না শুনবো তো। বল না...
- তুই শুনলেও তোকে শোনাচ্ছে কে?
- বাব্বা জনাবের আবার রাগও আছে। আপনি কি জানেন রাগ করলে কি হয়?
- জানি না; জানতেও চাই না।
- রাগ করলে শাক খেতে হয়। আপনি তো শাক খেতে পছন্দ করেন না, তাই আপনার রাগ করা নিষেধ।
- কে করেছে এই নিষেধ?
- নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন জনৈক সফদার ডাক্তার।
- উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে ক্ষেপায়া দিয়া এখন ঢং করা লাগবে না আর।
- ঢং করছি কই! ঢং তো করেছিলাম আগে।
- মানে কি?
- মানে একটা কবিতা শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। শোনাবেন নাকি?
- ব্লাকম্যাইলিং করবি না কিন্তু। তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি কিসে খুশি হই আর কিসে বেজার। আর তাই আমাকে খুশি করার চেষ্টা করছিস। তাই না?
- না মহামান্য; সত্যি সত্যি... তিন সত্যি আমার খুব ইচ্ছে করছে কবিতা শুনতে। একটা কবিতা শোনাবি প্লিজ।
- মিথ্যা না তো?
- তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস না। যা তোর কাছ থেকে কবিতা শুনবো না।
- রাগ করে না। শোনাচ্ছি তো।
- কার কবিতা শোনাবি? আপনি তো আবার ফেইসবুকের কবিতা পেইজের টুকলি কবি। কবিতার পেইজ চালাস আর ওইখান থেকে কপি মেরে শোনাস আমাকে।
- তা তো ঠিক। যতো পারিস তত আমার ইজ্জতের ফালুদা বানা।
- ক্যানো? নিজের লেখার অভ্যাসটা টুকটাক ধরে রাখলে তো আমাকে অন্যের কবিতা শোনানো লাগে না।
- ওই কবিতা লেখার প্রতিভা আর জ্ঞান কখনো আমার হবে না। আর আমার লেখা তোর ভালোও লাগবে না। তার চাইতে অন্যের কবিতাই শোন।
- তো আজ কার কাব্যরাত্রি হবে হে আমার প্রিয় আবৃত্তিকার?
- রাত্রি নয় হে আমার আরব্য রজনীর রাজকন্যা...এখন হবে আনিসুল হক কাব্যসন্ধ্যা।
- প্রথম আলোর আনিসুল হক? ‘মা’ লিখেছিলেন যিনি? মিটুনদা ?
- জ্বি...তিনিই। উনার কয়েকটা কবিতা আছে পড়লে আমার মনে হয় উনার শুধু কবি হওয়া উচিৎ ছিল।
- হুমম... কিন্তু উনাকে তো মতিকন্ঠ বারোটা বাজায়া দিছে। কিসব উল্টাপাল্টা নাম দিয়া.. হি হি..
- ওইটা অন্য কাহিনী। ফালতু লাগে এইসব। ওইটা তোকে আরেকদিন বলব। আজ কাব্য শোন... আরেকটা কথা ভালো না লাগলে কিন্তু আমি দায়ী না কবি মিটুনদা দায়ী।
- প্যাঁচার মত কথা না প্যাঁচাইয়া এবার কবিতা শোনা।
“..... তুই কি আমার দুঃখ হবি? এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো, চোখের নীচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি? / তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর, / নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে, / ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা/ কেমন যেন বিষাদ হবি?
তুই কি আমার শুন্য বুকে /দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি? একটু খানি কষ্ট দিবি
নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি? একটু খানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায় / কথা দিয়েও না রাখার এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি? /তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?”
- অনেক সুন্দর রে কবিতাটা। উনার ফেইসবুক পেইজের লেখাগুলো ভালো লাগে। কিন্তু এতো সুন্দর কবিতা যে লিখেছেন জানতাম না তো..
এই বলে অনেক্ষণ চুপ করে থাকিস তুই। নিরবতা ভাঙি আমিই..
- তোর হাতটা একটু ধরি পরী?
- ক্যান, হাত ধরতে হবে কেন! আমার হাতের মধ্যে কি আছে?
- আমার আজন্ম সাধ তোর হাতটা ধরার, তোকে একটু ছুঁয়ে দেয়ার- আলতো করে।
- তুই অনেক পাগল আছিস। এখন কি করে ধরবি আমার হাত? আমি কি তোর কাছে আছি?
- তুই আমার কাছে। অনেক কাছে। আমার বুকের ভেতর তুই।
- ইসস ঢং দেখো মানুষের !
- দে না পরী সোনা। প্লিইজ...
আমি জানি আমার এই কথা শুনে তুই চোখটা বন্ধ করলি। চোখ বন্ধ রেখেই অল্প একটু হাসলি। একইভাবে শুয়ে থেকে হাতটা বাড়িয়ে ধরলি সামনে...শুণ্যে। তারপর বললি...
- জোসনা ধরেছিস কখনো?
- জোসনা কি ধরা যায় রে পাগলি...
- যায় তো। শুনিসনি ওই গানটা-
‘আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া জোসনা ধরতে যাই।
হাত বাড়াইলেই চান্দের আলো, ধরতে গেলেই নাই.....’
তোর মায়ামাখা গলায় গানের লাইন দুটো শুনতে শুনতে এবার আমিও হাত বাড়িয়ে দিলাম তোকে ছুঁয়ে দেবার জন্য। তোকে স্পর্শ করলাম। বিশ্বাস কর একদম বাস্তব, সত্যি ছোঁয়া। তোর উষ্ণতা আমার হাতের আঙুলে লেগে গেলো। তোর স্পর্শ এখন আমার অস্তিত্বে। কিন্তু আমি জানি তুই এসবের কিছুই অনুভব করিসনি। জোছনার মতোই তোর হাত গলে অনুভবহীন আমার স্পর্শ গড়িয়ে পড়ে গেলো!
- পরী আজ অনেক জোছনা তাই না রে। তোর মনে আছে সেই প্রথম দিককার কথা, যখন তুই প্রত্যেক রাতে আমার সাথে কথা বলতি- সেইসময় জোস্না তোকে ডিস্টার্ব করতো। তুই প্রায়ই বলতি জানালা গলে আসা জোস্নার আলোর যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারিস না। এখনো কি জোসনা তোকে বিরক্ত করে?
- জোসনাগুলোও ইদানিং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে রে.. একটু মন খারাপ করেই বললি তুই। আর তোর এই মন খারাপের ক্ষণে পাশে থাকার সুযোগে আমি যেন উড়ে চলে গেলাম তোর কাছে। আর স্পষ্ট দেখতে পেলাম তোর বাম গালের ছোট্ট টোলটাকে।
তোকে কোনদিন বলা হয়নি তোর গালের এই ছোট্ট টোলটা আর দেখার জন্য আমি শতবার জন্মাতেও রাজি আছি। আর তোর মাধুরি দিক্ষিত মার্কা সিগনেচার হাসিটা দেখার জন্য নশ্বর হওয়ার কথা ভেবেছি শতবার। আমার যে তোকে দেখতে খুব ভালো লাগে, ইচ্ছে করে সারাজীবন শুধু তোকেই দেখি এটাও বোধহয় জানিস না তুই। এমন আরও অনেক কথাই বলতে পারিনি তোকে। বলা হয়নি আমার সীমাবদ্ধতা, আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভীরু মানুষটার কথাগুলোও।
বলা হয়নি বলেই তুই হয়তো কখনো বুঝতে পারিসনি যে ছেলেটা প্রতিমাসে অন্তত এক শুক্রবারে মায়ের হাতের ধনিয়াপাতা আর উঠানের পাশের দেশী মরিচ দিয়ে রান্নাকরা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে টিউশনি ফাঁকি দিয়ে পালায়- সে কিভাবে শুধু তোকে নিয়ে এই ইট-কাঠের ১৪২০ বর্গফুটের অট্টালিকায় থাকার কথা ভাববে? জানিস পরী, মানুষের কল্যানের জন্য ধর্ম সৃষ্টি- কিন্তু ধর্মের বেড়াজাল-সংস্কারে কতো মানুষের হৃদয় ভাঙে তার কোন পরিসংখ্যান কি জানা আছে তোর?
এই কথাগুলো কখনো বলা হয়নি; হয়তো কোনদিন বলাও হবে না। আর এই বলতে না পারার জন্য আজ তিন তিনটা বছর পরও তোকে একটু ছুঁয়ে দিতে গিয়ে হাতটা সরিয়ে নেই। শীতসন্ধ্যায় হুল ফোটানো বাতাসের দিনগুলোতে রিকশায় বাসায় ফেরার পথে দুজনের মাঝে অন্তত ইঞ্চিখানেক অনতিক্রম্য দুরত্ব থাকে।
ব্যর্থ-কাপুরুষ প্রেমিকের মোবালীয় কল্পনাবিলাসের সুত্র মেনে বলি,
- আমার কম্বলটা ছোট, ঠান্ডা ঢুকে। চলে আসবো নাকি তোর কাছে?
তুই যথারীতি উত্তর দিস,
- একদম না। এইসব উল্টাপাল্টা কথা বললে ফোন কেটে দিব কিন্তু..।
জানিস এরপর ভয়ে না, ব্যর্থতার উপহাসের আশংকায় চুপ হয়ে যাই।
এরপরও হাসিস তুই। মাথা ঝনঝন করা হাসি। আমি অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করি তোর রিনিঝিনি হাসি। তোর বাম গালে ছোট্ট টোলটা আবারও দেখতে পাচ্ছি আমি !
এভাবেই রাত গড়ায়। সাথে মোবাইলের হিসেবি ব্যালেন্স..দুজনের ফোনের টাকা প্রায় শেষ। অপারেটর কাবুলিওয়ালার কাছে লোন নেয়া দশ-দশ; বিশ টাকাও শেষের পথে। আর কয়েক মিনিটের মধ্যে দুজনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। ঠিক এমন সময়গুলোতে বুকের ভেতর কেমন যেন অবাক শুণ্যতা। শেষ মুহুর্তে হয়তো তুই-ই বলিস
- কেমন জানি একা একা লাগছে। তুই সাথে থাকলে ভালো লাগতো।
তখন খুব করে কান্না পেয়ে যায় আমার। কিছুই বলতে পারি না । ভাবতে বসি সেই নিরর্থক বাক্যটির কথা- 'তুই সাথে থাকলে ভালো লাগতো'।
...কিন্তু আমি জানি এটা সম্ভব না। তুইও জানিস। হয়তো বিশ্বাস করছিস না। বিশ্বাস আমিও হয়তো করছি না। থাকুক না আমাদের বিশ্বাসটুকু এই মুহুর্তের জন্য তোলা হয়ে আমরা ভেবে যাই যেমনটা আমরা ভাবতে চাই। এখন.... এই মুহুর্তে.... দু'জন পাশাপাশি...।
©somewhere in net ltd.