নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ব্লগের খাতা।

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

সন্দীপন বসু মুন্না

অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com

সন্দীপন বসু মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

একাত্তরের পুতুলওয়ালা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯





১৯৭১ সালের কথা। তখন সবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুস্তাফা মনোয়ার চাকরি করেন পাকিস্তান টেলিভিশনে। যুদ্ধ শুরু হতেই সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে গেলেন কলকাতায়। তিনি যেখানে থাকতেন তার খুব কাছেই ছিল একটি শরণার্থী শিবির। পরদিন তিনি শিবিরে গিয়ে দেখন- কারো মুখে হাসি নেই। বিমর্ষ সবাই। প্রায় সবাই বাড়ি-ঘর জমি-জিরেত ফেলে এককাপড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কারো আবার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে পাকহানাদাররা। এই কষ্টভারাক্রান্ত মানুষগুলোর চেহারা দেখে তিনি ভাবলেন এদের হাসাতে হবে। আর এই হাসানোর জন্য আয়োজন করলেন পাপেট শো। কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরের শরণার্থী শিবিরে প্রথম পাপেট প্রদর্শনীটি হয়।



সেই সময় পাপেটের খেলার মধ্যে দিয়ে তিনি দেখাতেন- ইয়াহিয়া খানকে মারছে কৃষক। আর জিজ্ঞেস করছে –‘আর কেউ কি মারতে চাও?’ তখন সবাই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে এগিয়ে আসছে অত্যাচারী ইয়াহিয়াকে মারতে। এতে পাপেটের কারুকাজ-কথা বলা দেখে দেশ ছেড়ে আসা দুখী মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটে। এরপর থেকে তার পাপেট শো ছিল শরণার্থী শিবিরের অসহায় মানুষগুলোর কাছে আনন্দেও উৎস। তিনি যেখান যেতেন শিশুরা তাকে ঘিরে ধরত ‘পুতুলওয়ালা’ ‘পুতুলওয়ালা’বলে।



মুস্তাফা মনোয়ারের অনেক গৌরবময় পরিচয়ের মধ্যে একটি হল তিনি একাত্তরের রণাঙ্গনে পাপেট শো দেখিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। মুক্তির গানের চিত্রগ্রাহক লিয়ার লেভিনের ধারণ করা মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজেও অম্লান হয়ে আছে একাত্তরের পুতুলওয়ালা মুস্তাফা মনোয়ারের এই কীর্তি।



বাবার কাছেই সৃষ্টিশীল কাজের হাতেখড়ি



১৯৩৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর এক শিল্পী পরিবারে জন্ম মুস্তাফা মনোয়ারের । বাবা কবি গোলাম মোস্তফা ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত কবি। তিনি শুধু কবিতা লিখতেন না, ভালো গানও গাইতেন। গ্রামের বাড়ি ছিল ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায়। তবে বাবার কর্মস্থলের সুত্রে কলকাতায় থাকতো তাদের পরিবার। মুস্তাফা মনোয়ারদের কলকাতার বাসাটি ছিল কবি সাহিত্যিকদের আড্ডাস্থল। প্রতিদিন কবিতা-গানের আসর বসতো বাড়িতে। পারিবারিকভাবে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশের ছায়ায় তিনি শিশুকালেই শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। শিশু বয়সেই নরম হাতের ছোঁয়ায় সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতেন তিনি। প্রাকৃতিক দৃশ্য, আর নানা ধরণের কার্টুন ছবি। এছাড়া খুব ছোটবেলায় বাবার ক্যামেরায় ছবি তোলার হাতেখড়ি তার।



ভাষা আন্দোলনের পোষ্টার



এরই মধ্যে এল ১৯৫২ সাল। ভাষা আন্দোলনের বছর। মুস্তাফা মনোয়ার তখন থাকতেন নারায়ণগঞ্জে মেজ বোনের বাড়িতে। সেসময় নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ থেকেই তিনি শুনতে পেলেন ঢাকায় গুলি হয়েছে। ভাষার দাবিতে শহীদ হয়েছে বাঙালিরা। পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষা বন্ধ করে দিতে চায়। এর প্রতিবাদে ছবি আঁকলেন তিনি এবং সেই ছবি বন্ধুদের সঙ্গে সারা নারায়ণগঞ্জ শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিতে লাগলেন। এর জেরে পুলিশ এসে তাকে বন্দি করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দিলেন। দীর্ঘ একমাস কারাবাসের পর মুক্তি পেলেন এই নির্ভিক কিশোর।



অঙ্কে মাত্র চার নম্বর !



জেল থেকে ছাড়া পাবার পর আবার ইশকুল। নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে মুস্তাফা মনোয়ার কলকাতায় গিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন সায়েন্সে। পড়ালেখায় মনোযোগ তার কোনোদিনই ছিল না, তার উপর আবার কলেজে ভর্তি হয়েছেন সায়েন্সে, অথচ অঙ্কে ভীষণ কাঁচা। একদিন স্যার অঙ্কের খাতা দিতে এসে কয়েকজন ভালো নম্বরধারী ছাত্রের নাম ধরে ডাকলেন এবং খাতা দেওয়ার পর হঠাৎ বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠলেন-মুস্তাফা মনোয়ার।

হাসি হাসি মুখ নিয়ে মুস্তাফা মনোয়ার উঠে দাঁড়ালেন। শিক্ষক তো তার মুখে হাসি দেখে অবাক, এই ছেলে, তুমি কত পেয়েছ জানো? হাসছো যে! তুমি চার পেয়েছ। ছেলেটা তখন আরো হাসছে। এখনো হাসছ! লজ্জা করছে না! অঙ্কে কেউ কোনোদিন চার পায়? ছেলেটা বলল, স্যার কোন অঙ্কটা ঠিক হয়ে গেল, তাই ভেবে হাসছি।



মুজতবা আলীর পরামর্শ



অঙ্কে এত খারাপ করে সায়েন্সে পড়া মুশকিল। এসময় বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। মুস্তাফা মনোয়ারদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন এই গুণী লেখক। তিনি মাঝে মাঝে তার ছবি দেখতেন এবং খুব প্রশংসা করতেন। মুজতবা আলী বললেন, ছেলেটার এত ভালো গুণ সায়েন্স পড়ে নষ্ট হবে! এরপর তিনি তিনি সঙ্গে করে তাকে কলকাতা আর্ট কলেজে নিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করলেন। সৈয়দ মুজতবা আলী প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি। এখানে সমানভাবে চলতে থাকে মুস্তাফা মনোয়ারের ছবি আঁকা ও গানের চর্চা। আর্ট কলেজে প্রতি বষের্র পরীক্ষায় তার স্থান ছিল প্রথম। ১৯৫৯ সালে তিনি কলকাতা সরকারী আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টস বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।



শরণার্থী শিবিরের পাপেট



৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তান টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান। যুদ্ধের শুরুর দিকেই তিনি ভারতে চলে যান। ভারতে অবস্থানকালীন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালনা করেন। পুতুল দিয়ে একইসঙ্গে শিশুদেও শিক্ষা ও বিনোদনের জগতের রূপকার তিনি। এছাড়া পাপেট নিয়ে বিটিভিতে তার শিক্ষামুলক অনুষ্ঠান ‘মনের কথা’ শিশুদের প্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।



শিশুদের জন্য মুস্তফা মনোয়ারের শৈল্পিক সৃষ্টি ‘পাপেট’। কলকাতা আর্ট কলেজে পড়তে গিয়ে তিনি প্রথম ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের পাপেট দেখেছিলেন। আর তখন থেকেই পাপেটকে শিশুদের শিক্ষা ও বিনোদানের মাধ্যমে হিসেবে ব্যাবহারের পরিকল্পনা তার মাথায় আসে। এরপর ১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে টেলিভিশনে ‘আজব দেশে’ অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে তিনি ‘বাঘা’ ও ‘মেনি’ চরিত্র রচনা করে পাপেট প্রদর্শনী করতে থাকেন। তার সে সময়ের কাহিনীতে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার থাকত বেশী। তার তৈরি পাপেট চরিত্র 'পারুল' নামটির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্য সেই সাত ভাই জাগানো লোককথার কথা মনে হয়। পারুল বোন একটিই, সেই-ই তো একদিন সাত ভাইকে জাগিয়েছিল। এই মর্তে আবার নবজাগরণের ঘটনাটা খুব সম্ভবত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার সেই 'পারুল' বোনটির মাধ্যমেই ঘটাতে চান।





লেখকের সঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার



ছবি: লেখক ও ইন্টারনেট

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন:

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

এস.কে.ফয়সাল আলম বলেছেন: খুব প্রিয় একজন মানুষকে নিয়ে লিখছেন।

অনেক অনেক ভাল লাগা রইল।

++

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ ফয়সাল ভাই।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৬

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: খুব প্রিয় একজন মানুষ নিঃসন্দেহে।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শরৎ ভাই।

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। একাত্তুরের পুতুলওয়ালা ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় শুধু পুতুল খেলার জন্য নয় চমৎকার অভিব্যক্তির জন্যও।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: সুন্দর কমেন্টটির জন্য ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

খাটাস বলেছেন: । যদি ও মনের কথা অনুষ্ঠান টা আমার ছোটতে ভাল লাগত না, তবু ও এমন একজন মানুষের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
এই প্রতিভাবান মানুষটির অনেক অজানা তথ্য জানিয়ে সুন্দর পোস্ট টির জন্য অনেক ভাল লাগা ও কৃতজ্ঞতা। পোস্টে প্লাস।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: ভালো

৭| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লিখবেন।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: চেষ্টা করবো ভাই। দোয়া রাখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.