নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যান্ড দেন ইট হ্যাপেন্ড

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০৪


এই হকারগুলোর একটা ব্যাপার আনপ্যারালাল। এদের চোখ খুব শার্প হয়। এক নজর দেখেই বুঝে যায় কার মনে কি চলছে। কে পোটেনশিয়াল গ্রাহক, আর কে কেবল বই নেড়ে চেড়ে দেখবে কিন্তু কিনবে না। আর এটাও বুঝে যায়, কাকে খানিকটা উৎসাহ দিলে, মৃদু না, হ্যাঁ হয়ে যাবে।
আমি খুব অল্প সময়ের জন্য তাকিয়েছিলাম। আর সেই অল্প সময়েই সম্ভবতঃ আমার মনের অবস্থা দেখতে পেয়ে যায় এই থট রিডার। বুঝে যায় আমি ওসব নির্বিষ টাইপ বইয়ের গ্রাহক না। এভাবে রাস্তায় বইকেনা টাইপই না। বরং আমি হচ্ছি সেইসব বিশেষ টাইপের বইয়ের পটেনশিয়াল গ্রাহক। তবে হিপোক্র্যাট টাইপ। ঐ যে, উৎসাহ দিলে, মৃদু না, হ্যাঁ হওয়া টাইপ। ঠিকই ধরেছে। কিনতে একেবারে যে ইচ্ছে করছিল না, তা না। তবে এভাবে? সবার সামনে? নেভার। সবাই কি ভাববে?
বাসের নিয়ম হচ্ছে রাত হয়ে গেলে বাসের ভেতরের লাইট বন্ধ রাখা হয়। আমরা যখন ফেরিঘাটে এসে পৌঁছি তখন সন্ধে পার হয়ে গেছে। রাতের বেলা কোন কারণে বাস থামান হলে ভেতরের লাইটগুলো সাধারনতঃ জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ফলে সবাই সবাইকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। ছেলেটা বিভিন্ন ধরনেরই বই আর পত্রিকা বিক্রি করছিল। ভেতরের সেই মোটামুটি আলোতে একনজর তাকিয়ে বুঝে গেলাম, বইগুলো নির্বিষ টাইপ বই। ভদ্র গোছের যাত্রীদের কাছে গিয়ে সেসব বইয়ের লিস্টি শোনাচ্ছে।
তবে পত্রিকাগুলোর দিকে এক নজর তাকিয়েই বুঝে গেলাম, ওগুলো মিক্সড। কিছু নির্বিষ টাইপ আর কিছু এক বিশেষ শ্রেণীর। অভিজ্ঞ চোখে তাকিয়ে এক নজরেই বুঝি যাই, সেই বিশেষ শ্রেণীরগুলো পত্রিকাগুলোর যে দুই ধরন হয়, অর্থাৎ হার্ড অ্যান্ড সফট, সেই দুই জাতেরই ওর কাছে আছে। হার্ডগুলো আবার পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কেবল ওপরে ছবিটা দেখা যাচ্ছে। ভেতরে লেখা দেখার উপায় নেই। কিনলেই কেবল পড়তে পারবেন।
বেশ দ্রুতই উত্তর দিলাম
— নাহ। লাগবে না।
মিস্টার থট রিডার সম্ভবতঃ আরেকবার টোকা মারত, পাশে মহিলা যাত্রী দেখে কাজটা করল না। এই ব্যাপারে মিস্টার থট রিডাররা আরও একটা ব্যাপারও জানে। আমাদের টাইপের ছেলেদের হিপোক্র্যাসিটা। পড়তে আগ্রহ ষোল আনা, শুধু কেউ যেন না জানতে পারে। আড় চোখে মেয়েটার দিকে তাকালাম। বাইরে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেনি। কথাবার্তা যেহেতু ইশারায় আর অনেকটা কোড ল্যাঙ্গুয়েজে হয়েছে, মেয়েটার বোঝার কথাও না।
স্মিত হাসলাম। চোখের সামনে ভেসে উঠল হোস্টেল জীবন। একটা সময় ছিল যখন এসব ছিল হটকেক। বেশিরভাগই এসব কেনা হত জার্নির সময়। কখনও স্টেশানে, কখনও ফেরি পারাপারের সময়। আর এসব বই দ্বিতীয়বার পড়ে যেহেতু প্রথমবারের মত উত্তেজনা আসত না, তাই চলত শেয়ারিং। নিজেদের কালেকশান ইন্টারচেঞ্জ করতে কেউই দ্বিধা করতাম না। কমবেশি সবাই জানত, আমরা কে কে, এই লাইনের লোক।
আমাদের আবার গুরুও থাকত। প্রায় প্রতিটি ইয়ারেই একজন থাকত। যার কাছে হয় কালেকশান থাকত আর নয়তো খবর থাকত, কার কাছে কি কি আছে। বিছানার তোষকের নীচেই সাধারনতঃ রাখা হত, তবে অতি সাবধানীরা আরও গোপন কোন জায়গায় এসব লুকিয়ে রাখত।
সাধারনতঃ শেয়ার করেই এসব পড়তাম। হোস্টেলে নতুন কোন কালেকশান আসলে পুরো গ্রুপের কাছেই খবর পৌঁছে যেত। নতুন মালিকের কাছে রীতিমত সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হত। যে ছেলেটিকে খনি হিসেবে সবাই চিনত, তার কাছে কালেকশান থাকত। আর তাই ওর কাছে মাঝে মাঝেই যাওয়া হত, ‘নতুন কিছু আছে?’ জিজ্ঞেস করতে। পেলে ভাল, আর না হলে পুরনোগুলোর একটা দিয়েই চালিয়ে দেয়া হত। কখনও ‘রফিকের কাছে নতুন একটা দেখলাম’ এমন কোন তথ্য দিয়ে সাহায্য করত।
হকারটা ততোক্ষণে বাসের শেষ প্রান্তে চলে গেছে। সেই একই ভঙ্গিমায় আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করল। আমার চেয়েও বয়সে তরুণ একজন কিনল। ছেলেটা ফিরে আসছে। আর বিক্রি হয়নি। একবার ভাবলাম বাইরে বেরোই। অন্ধকারে কিংবা একপাশে ডেকে নিয়ে একটা কিনে ফেলি। যদিও অনলাইনে এসব এখন ভুরি ভুরি, তারপরও ছাপানো বইয়ের একটা আলাদা ফিলিংস আছে। কিন্তু হঠাৎ কেন ইচ্ছে করছে? অনেস্টলি স্পিকিং, আমি নিজেই জানি না। হয়তো স্মৃতি জেগে উঠেছে, হয়তো জাস্ট ইচ্ছে করছে। আসল কারণ যা ই হোক, ইচ্ছেটা দাবাতে ইচ্ছে করল না। ঠিক করলাম, বাসটা ফেরিতে উঠলে এক সুযোগে…।
ছেলেটা ফিরে আসবার পথে আবার আমাদের সিটের ঠিক পাশে এল। আবার সেই আড় চোখের দৃষ্টি। তবে এবার কিছু বলল না। সিট পেরিয়ে যাবে এমন সময় আওয়াজ আসল
— ভাল কালেকশান আছে?
নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পাশে বসা অপরূপাটি প্রশ্নটা করেছে। যাকে বলে হা করে তাকানো, ঠিক সেভাবেই মেয়েটার দিকে এবার তাকালাম। কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সোজাসুজি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করেছে মেয়েটা। ছেলেটার চোখের অবস্থাও ছানাবড়া টাইপ। জীবনে কখনও কোন মেয়েকে এসব পত্রিকা কিনতে ও দেখেছে বলে মনে হয় না।
থট রিডার মশায় দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল। বেশ উৎসাহ নিয়ে নিজের কালেকশানগুলো দেখাল। দুএকটা রিকমেন্ডও করল। অপরূপাটি কয়েকটা হাতে নিয়ে দেখল। অবশ্য দেখার কিছু নেই। কি কি গল্প আছে, বোঝার উপায় নেই। জাস্ট আন্দাজে নিতে হবে। ব্যাপারটা জানে বলেই মনে হল। মিস্টার থট রিডার যে থট রিডিং করেছিল, তার ওপর নিজেই সম্ভবতঃ ভরসা করেনি। তাই সফটগুলো দেখিয়েছিল। সেগুলো নেড়েচেড়ে পছন্দ হল না অপরূপার। এরপরে থট রিডারের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল
— আর জি নাই?
'আর জি’? ‘আর জি’ মানে কি? স্পেশাল টাইপ কিছু? ছেলেটা তখন হতবাক হয়ে অপরূপার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রথমে আমার মাথায়ও ঢুকছে না। মেয়েটা এবার পরিষ্কার করে বলল
— গুপ্তর বই নাই?
এবার ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। ‘আর জি’ হচ্ছে এধরনের বইয়ের জনৈক বিখ্যাত লেখকের নামের অদ্যাক্ষর। সংক্ষেপে বলেছিল। রাইটারটির যে এই কোড নেম হয়েছে, জানা ছিল না। আই লাইনের লেখক হিসেবে কার নাম, তা সাধারনতঃ কেউই দেখে না। তবে এই রাইটারটার নামটা কিভাবে যেন বেশ হিট করে যায়। এই নামে আদৌ কেউ আছে কি না কে জানে? নামটায় যেহেতু কিছুটা তরল ইঙ্গিত আছে, তাই ধরে নেয়া যায়, নামটা ফেক।
ছেলেটা এবার সম্বিৎ ফিরে পেল। বুঝতে পারল কি চাইছে। পলিথিনে মোড়া হার্ড টাইপেরগুলো বের করল। যে কয়টা বাইরে রেখেছিল, সেগুলো প্রথমে দেখাল। এরপরে ঝোলার ভেতর থেকে আরও কয়েকটা বের করল। দেখা গেল তার কাছে পত্রিকা ছাড়াও বইও আছে। মোটা, পাতলা অনেক ধরনেরই আছে।
সবগুলো নেড়েচেড়ে দেখে অবশেষে দুটো পছন্দ করল। একটা পত্রিকা আরেকটা বই। দাম জানতে চাইল। থট রিডার মহাশয় তখনও স্বাভাবিক হয়নি। তবে এতদিনের প্র্যাকটিস কাজে দিল। নিজের অগোচরেই বেশি দাম চাইবার ফর্মুলায় ঢুকে গেল। অপরূপাও মনে হল ফর্মুলা জানে। প্রফেশনাল ক্রেতা।
কেনা শেষ হল। আমার হতভম্ব ভাব অনেকটাই তখন কেটে গেছে। রোমাঞ্চ কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এ কি মেয়ে রে বাবা! এভাবে সবার সামনে? কোন সংকোচ নেই, কোন ইতস্ততঃ ভাব নেই। একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করল। আমি যে হা করে ব্যাপারটা দেখছি, আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। ব্যাপারটা টের পেলাম যখন শুনলাম
— পড়বেন?
আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইছে। চোখে দুষ্টুমি কিংবা তেমন কোন ইঙ্গিত নেই। সোজা সাপটা প্রশ্ন। আমার ইতস্ততঃ ভাব তখন কাটতে শুরু করেছে। আরও একটা ব্যাপার বুঝে গেছি, শী ইজ সামথিং স্পেশাল। শুধু সুন্দরী না, দারুণ আধুনিক এক চরিত্র। সাহসী। মেয়েটার প্রতি এতক্ষণ কেবল একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম, অপরূপার মুখ থেকে বের হওয়া একটা শব্দে এবার সারা শরীরে সত্যিকারের একটা শিহরণ খেলে গেল। বললাম
— পড়ব।
চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ও এম জি ;)

আর জে কিনছে তাও বাসে :P সিত্য ধাক্কা খেলাম =p~ =p~ =p~

তারপর?

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০১

ত্রিকোণমিতি বলেছেন: কুল হইয়া গেলাম একদম! =p~

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৬

আশফাক সফল বলেছেন: মোচড়টা বেশ ভালো হয়েছে! পড়া আর গোল্প চলুক। সামনে ২ ঘন্টার ফেরী জার্নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.