নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাক্তন

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:০৯


সীমা মিস্টি করে কথা বললেই বুঝি, ঝড় আসছে। আজকেও ব্রেকফাস্টের টেবিলে মিস্টিতে টুইটুম্বুর সীমার দেখা পেলাম। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই হাসছে। একবার ভাবলাম, জিজ্ঞেস করি। পরে ক্ষান্ত দিলাম। লেট ইট হ্যাপেন। কিছুক্ষণের ভেতরেইই আসল কাহিনীর দেখা পেলাম
— স্টোর রুমটা গতকালকে সাফ করলাম।
মাথায় তখন চিন্তার ঝড় শুরু হয়ে গেছে। ওখানে সব পুরনো জিনিসপত্র ছাড়া আর তেমন কিছু নেই। ওগুলো কি কটকটি ওয়ালার কাছে বেচতে চায়? বেচুক, আপত্তি নেই। বাট এটা মনে হয় ইস্যু না। একেবারে চুপ থাকার কিছু বিপদ আছে। ‘শুনছি না’ অভিযোগ আসবে। তাই উত্তর দিলাম
— যা আছে সব ফেলে দাও।
— সেজন্যই সাফ করছিলাম।
পজ। এখনই ঝড় আসবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমি ডেকে আনব? না আসবার জন্য অপেক্ষা করব। সীমা সম্ভবতঃ চাইছে আমি ডাক দিই। ওর চাওয়া অনুযায়ী চললে ঝড় কিছুটা মোলায়েম হলেও হতে পারে। সো…
— প্রয়োজনীয় কিছু পেলে?
— বুঝছি না।
হেয়ার বিগিনস দ্যা স্টোরী। এখন আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, কি ব্যাপার। মুখে পরাটা। চাবাচ্ছি। সো এই মুহুর্তে কথা বলতে পারছি না। ঝড়ের বেগে চিন্তা করছি। কি পেয়েছে ওখানে? অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, যা পেয়েছে, তাতে ঝড় উঠবার মত কিছু আছে কি না।
আপ্রাণ মনে করবার চেস্টা করছি। ওখানে কি কি রেখেছি। মাথা ব্ল্যাঙ্ক। কিচ্ছু মনে আসছে না। তাই নিজের ডিফেন্সও তৈরি করতে পারছি না। চর্বিত পরাটা গিলে ফেলেছি। মুখ এখন ফাঁকা। সো উত্তর দেয়ার সময় হয়ে গেছে। মিনমিন করে বললাম
— কি জিনিস?
সীমা একটা কাগজ এগিয়ে দিল। যদিও গায়ে ধুলাবালি কিছু লেগে নেই, তারপরও বোঝা যাচ্ছে, বেশ পুরনো। কাগজটা হাতে নিতে নিতে সীমার দিকে তাকালাম। ভাঁজ করা কাগজটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, কাগজটায় কিছু লেখা আছে। সাদা কাগজের উল্টো পিঠে লেখার ইম্প্রেশানটা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে। ভেতরের লেখার সেই ইম্প্রেশান দেখে বুঝতে পারছি, ভেতরের হাতের লেখাটা আমার।
কবে লিখেছিলাম? কাকে? মনে করতে পারছি না। তবে সীমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ভয়ঙ্কর কিছু একটা লিখেছি ঐ কাগজে। ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিলাম। খুললাম। ওহ নো। নট এগেইন।


স্টোরীটা কিছুটা কমপ্লিকেটেড। শুরুটা অ্যাজ ইউজুয়া। টিপিক্যাল স্টুডেন্ট লাইফ প্রেমের। এরপরে কিছু টুইস্ট অ্যান্ড ব্রেক আপ। বাট দ্যা প্রব্লেম ইজ, কাহিনীতে ছোট্ট একটা লেজ আছে। প্রব্লেম হয়েছে এই লেজ নিয়ে।
চিঠিটা খোলার আগে পর্যন্ত আমি মনে করতে পারিনি, ওটা কবে আর কাকে লিখেছি। খোলার পরে অবশ্য সেই সমস্যা আর থাকেনি। এক লহমায়, ফ্ল্যাশব্যাকের মত সব কিছু মনে পড়ে যায়। চিঠির শুরুতেই লেখা ছিল ওর নাম।
— অদিতি কে?
সীমার দিকে তাকালাম। ঝড়টা সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টপন্ড করা যায় কি না সেটা দ্রুত হিসেব করে নিলাম। মনে হচ্ছে যায়। অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে বললে সম্ভবতঃ আপাততঃ রেহাই পাব। তবে এই মুহুর্তে বিশ্বাসযোগ্য একটা উত্তর দিতে হবে। ‘প্রাক্তন প্রেমিকা’ উত্তরটা দেয়া যায়, বাট, ঐ যে বললাম, ছোট্ট একটা লেজ আছে। সমস্যা সেখানেই। তারপরও ট্রাই করলাম
— স্টুডেন্ট লাইফের প্রেম।
উত্তরটা শান্তভাবে শুনল সীমা। এবং আমার ধারণা উত্তরটা পছন্দও হল। আই মিন, বিশ্বাস করল। ইচ্ছে করেই অনেস্ট কনফেশান করলাম। এই চিঠি দেখবার পরে যে কেউ বুঝবে, এটা প্রেমপত্র। তাই ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ বলে স্কেপের চেস্টা করলাম না।
— চিঠিটা রেখে দিয়েছিলে কেন?
ওয়েল, অনেস্ট উত্তর, ফেলতে মায়া লাগছিল। অদিতির সাথে ব্রেকাপ হয়ে যাওয়ার পরে লেখা এই চিঠি। বেশ আবেগ নিয়ে লিখেছিলাম। ‘জাস্ট ব্রোকেন’ হার্ট থেকে যেমন লেখা বেরোয় আর কি। ওকে দেয়া হয়নি। কারণ? ওটা পরে বলছি। আপাততঃ ঝড় সামলাই। তবে এবার আই থিঙ্ক রিস্ক নেয়া যায়। মিথ্যে বললাম
— মনেই ছিল না ওটার কথা।
কাজে দিল বলে মনে হল না। কিছুটা ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। এরপরে দারুণ ইন্টেলিজেন্ট একটা প্রশ্ন করল।
— ওটা ফেলে দিলে আপত্তি আছে?
সীমার দিকে তাকালাম। বোঝার চেস্টা করলাম, কি মিন করতে চাইছে। 'আপত্তি নাই’ মানে দ্যা স্টোরি ইজ রিয়েলি ওভার। আর 'আছে' মানে অদিতি এখনও মনের কোণে জায়গা করে আছে। বাট দ্যা প্রব্লেম ইজ, 'আপত্তি নাই’ মানে সীমা ধরে নেবে, ভয়ে সম্মতি দিচ্ছি। এটা পরে ব্যাকফায়ার করবে। পদে পদে টেস্ট করে দেখবে, সত্যিই অদিতিকে ভুলেছি কি না। এক মুহুর্ত ভাবলাম। এরপরে? গেস হোয়াট। ইয়েস, আই ডিড দ্যা ইম্পসিবল।



আই থিঙ্ক একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া জরুরী। তাই না? ওকে দেন। চলুন অদিতির সাথে একটু পরিচিত হয়ে আসি। অদিতি আর আমি দুজনই কেমিস্ট্রির স্টুডেন্ট। সহপাঠী। অপূর্ব সুন্দরী। সো, আমি সহ আরও অনেকেই ওর পেছনে লাইন দিয়ে ছিল। একেবারে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই। অ্যান্ড অ্যাট লাস্ট আই ওয়াজ সিলেক্টেড।
প্রেম বেশ ভালোই চলছিল। মাঝে মাঝে মান অভিমান হত। আবার সব ঠিকঠাকও হয়ে যেত। আর এভাবেই এগিয়ে চলছিল আমাদের প্রেম কাহিনী। মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ারে উঠে কাহিনী একটু এলোমেলো হতে শুরু করে। অদিতির পরিবার কিছুটা রক্ষণশীল। সো মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করবে, ব্যাপারটা কিছুটা অনভিপ্রেত। তারপরও হয়তো অ্যালাউ করতো, যদি আমি কেউকেটা টাইপ কিছু হতাম। আমি বলা যায় অনেকটা এলেবেলে টাইপ ছেলে। না আছে বাপের অঢেল সম্পত্তি, না দারুণ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। চেহারা যদিও মাশাল্লাহ, তবে ওখানেই ফুলস্টপ।
ওদিকে অপূর্ব সুন্দরী হওয়ায় অদিতি বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। দারুণ সব পাত্র। 'বিদেশে থাকে’ থেকে শুরু করে বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে’। অদিতি পরীক্ষার কথা বলে দেরী করাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে আমাকে জানাচ্ছে, ‘কিছু একটা কর’।
কিছু একটা মানে, আমার বাড়ী থেকে ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠানো। এই মুহুর্তে যা অসম্ভব। বাসায় যদি বলি, এখন বিয়ে করতে চাই, ভয়ানক এক পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর যদি সে অবস্থা পার করে প্রস্তাব পাঠাতে সক্ষমও হই, তারপরের বাঁধা আসবে অদিতির বাসা থেকে। এমন ‘নাথিং' টাইপের পাত্রের হাতে কোন বাবা মা মেয়ে দেবেন। সো? আমিও টালবাহানা করতে লাগলাম।
এমন সময় গোঁদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিল চঞ্চল। আমাদের ফার্স্ট বয়। ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট। অদিতি মাঝে মাঝে পড়া বোঝার বাহানায় ওর সাথে লাইব্রেরীতে সময় কাটাত। বন্ধু বান্ধবরা রিপোর্ট দিল।ওদের নাকি মাঝে মাঝেই একসাথে হাঁটতে দেখা যায়। যদিও অদিতিকে আমি সন্দেহ করতাম না, তারপরও ব্যাপারটা একসময় আমারও বিরক্তিকর লাগতে লাগল।
একদিন কথাটা বলেই ফেললাম।
— তুমি আমাকে সন্দেহ কর?
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকফুটে চলে এলাম। আমতা আমতা করে বললাম
— ঠিক তা না। সবাই বলাবলি করছিল…
— আর ওমনি তুমি আমাকে সন্দেহ করে ফেললে?
এরপরে আর এব্যাপারে কথা বলতে যাইনি। তবে আমার মন বলছিল, ব্যাপারটা কেবল বন্ধুত্ব না। এনিওয়ে, এরপরে কাহিনী অন্য দিকে মোড় নেয়। পরীক্ষা শেষ হল। সবাই পাশ করলাম। আমি তখন হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজছি। একটা পেলেই অদিতির বাসায়…। অ্যান্ড দেন হ্যাপেনড দ্যা আনথিঙ্কেবল।
চঞ্চল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ায় ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হয়ে গেল। সেই সুবাদে একদিন অদিতিকে চাইনিজে দাওয়াত দিল। অনলি অদিতি। অদিতিও ব্যাপারটা আমাকে না জানিয়ে সেই ট্রীট অ্যাটেন্ড করল। কথাটা জানতে পেরে যারপরনাই মেজাজ বিগড়ালো। এরপরে যা হয় আর কি… ‘ছি, তোমার মন এতো নোংরা?’ দিয়ে শুরু হয়ে ব্রেকাপ দিয়ে শেষ হল।
এর পরের দিনই আমার একটা চাকরি হয়ে যায়। একটা ফার্মাসিউটিক্যালে। বেতন মন্দ না। ছুটি সেটায় জয়েন করতে। দিন কয়েকের ভেতরেই মাথা ঠান্ডা হয়ে গেলে ঠিক করি, অদিতির সাথে ব্যাপারটা মিটমাট করে ফেলব। আর যেহেতু এখন চাকরী হয়ে গেছে, সো বিয়ের ব্যাপারেও একটা প্ল্যানিং করে ফেলব।
চাকরীর মাস দুয়েকের মাথায় বসের কাছে আবেদনটা জানালাম, দিন দুয়েকের ছুটি চাই। পেলাম না। গেলে চাকরী ছেড়ে যেতে হবে। সো, বেশ দীর্ঘ এক চিঠি লিখলাম। কতটা ভালবাসি, কেন সন্দেহ করেছিলাম, কতটা অনুশোচনায় ভুগছি অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, ওকে বিয়ে করবার জন্য কত দ্রুত আমি ব্যাবস্থা নিচ্ছি, তারও একটা ব্লুপ্রিন্ট সেটায় যোগ করি। চিঠিটা লেখার পরে বার তিনেক চেক করি। নিজেকে অদিতির জায়গায় বসিয়ে ফিল করার চেস্টা করি, মান ভাঙ্গবার সম্ভাবনা কতটুকু।
আর আজ সকালে সেটাই চতুর্থবার সেটা পড়লাম।


— কখন আসবে বাসায়?
সীমার গলার স্বর বেশ নরম। ঝড় থেমেছে, এমনটা না। আসলে ওকে সাসপেন্সে রেখেছি। সকালের সেই চিঠি পর্বের পরে একটা কথাই বলেছিলাম,
— সব কথা তোমাকে বলতে আমার আপত্তি নাই, বাট এখন না বেরোলে সমস্যায় পড়ব।
কিছুটা সন্দেহ নিয়ে হলেও কথাটা মেনে নিয়েছিল সীমা।
— সত্যি বলছ?
— হ্যা, সত্যি। আজ বিদেশী একটা টীম আসবে। আমি দেরী করলে...
এনিওয়ে, আমার বর্তমান অবস্থা নেহাত মন্দ না। কিছুদিনের ভেতরে সেই ফার্মাসিউটিক্যালের চাকরি ছেড়ে দিই। ছেড়ে দিই মানে, জাপানে একটা স্কলারশিপ পেয়ে যাই। এরপরে মোটামুটি বেশ সহজ উত্তরণ। পিএইচডি সেরে দেশে যখন ফিরি তখন বেশ কয়েকটা ভাল ভাল চাকরীর অফার আমার পকেটে। এই মুহুর্তে আমার রয়েছে নিজের ফ্ল্যাট, নিজের দুটো গাড়ী। মেয়ে দুটো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। বলা যায়, আমি মোটামুটি টাইপের একজন বড়লোক।

অফিসে আজ সত্যিই ব্যস্ত ছিলাম। চারটার দিকে বিদেশী টিমটা চলে যাওয়ার পর থেকে আমি ফ্রি ছিলাম। সময়টা কাজে লাগাবার চেস্টা করেছিলাম। আসলে সীমাকে যে প্রমিজ করেছিলাম অফিস থেকে ফিরে পুরো গল্পটা বলব, সেটারই রিহার্সেল করছিলাম। মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছি। কতটুকু বলব। কিভাবে বলব। পুরো ব্যাপারটায় কিছু দোষ নিজের ঘাড়ে নেব। কিছু অদিতির ওপরে চাপাব। চিঠির সাথে সাঙ্ঘর্ষিক কিছু বলা যাবে না।
সমস্যায় আছি লেজ নিয়ে। গল্পের যে লেজটা এতোদিন লুকোনো ছিল, তা আজ বেরিয়ে যাবে। এরপরে কি হবে সেটা ভেবেই ভয় পাচ্ছি। গাড়ীতে বসে আপ্রাণ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাড়ী এখন জ্যামে। মনে প্রাণে চাইছি, জ্যামটা আরও কিছুক্ষণ চলুক। জ্যামকে এতোটা আপন কখনও মনে হয়নি। তবে লাভ তেমন কিছু হল না। অফিসের আট ঘন্টায় যে সমস্যার সমাধান করতে পারিনি অতিরিক্ত এই ঘন্টা খানেক সময়েও যথারীতি সেটা পারলাম না। সো, অনেস্ট কনফেশান ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
যাই হোক, জ্যাম ঠেলে একসময় বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসায় ফিরে বেশ কিছু নতুনত্বের দেখা পেলাম। অফিস থেকে ফিরে আমি যা যা করি, তা একেবারে তৈরি। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই সীমা টাওয়েল ধরিয়ে দিল। শাওয়ার সেরে ফিরতে না ফিরতেই চা।
— তারপর?
চুমুক দিয়ে সামনে বসা সীমার দিকে তাকালাম। মুখ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে কাহিনী শুরু করলাম। উদ্গ্রীব শ্রোতা হিসেবে সীমার সত্যিই জুড়ি নেই। গোগ্রাসে গিলল পুরো গল্প। এবং কাহিনী শেষে এলো সেই অবধারিত প্রশ্ন
— তারপর?
এবার লেজ বেরোবার সময় হয়ে গেছে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় পরের অংশ শুরু করলাম।
— তারপরের দিন সকালে সৈকতের ফোন আসে।
— সৈকত মানে, সৈকত ভাই? তোমার রুমমেট?
— হ্যা।
— কি বললেন?


আজ বাসায় ছোটখাট একটা পার্টি চলছে। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের যে কজন ফ্রেন্ড আমরা এখন ঢাকায় আছি, সবাইকে আজ আমার বাসায় দাওয়াত করা হয়েছে। দাওয়াতটা আসলে অন্য কারণে দেয়া হয়েছে। কারণটা একটু পরে বলছি।

সৈকত, শিহাব, মাসুদ অ্যান্ড দ্যা ফার্স্ট বয় চঞ্চল, সবাই এসেছে। পুরো কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট রিইউনিয়ন। হ্যা, অদিতিও এসেছে। অ্যান্ডঅ্যাজ ইউজুয়া, শি ইজ লুকিং গর্জিয়াস। গল্প গুজব চলছে। অনেস্টলি স্পিকিং, আই রিয়েলি অ্যাম এঞ্জয়িং।অনেকদিন পরে সবাই একসাথে।
সীমার সাথে ইতিমধ্যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি কি না? লুকানো লেজটা এটাই। শি ইজ মিসেস সৈকত। ইয়েস আমার রুমমেট অ্যান্ড বেস্ট ফ্রেন্ড সৈকতের সাথে শেষ পর্যন্ত অদিতির বিয়ে হয়।
ঘটনার শুরু ঠিক কবে, সঠিক জানি না। পরে যতটুকু শুনেছি তার সারাংশ হচ্ছে, অনেকটা অদিতির ওপর অভিমান করে চাকরীটা তো আমি নিয়ে ফেললাম, কিন্তু যেটা ভাবলাম না তা হচ্ছে আমি আসলে কি চাই।
আহামরি কোন চাকরী না। একে তো ঢাকার বাইরে, ফরিদপুরে, তার ওপর বেতনও কম। মাস খানেক যেতে না যেতেই অভিমান থিতিয়ে আসতে শুরু করল। এমন সময় যা হয়, বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণের চেস্টা করতে লাগলাম। কাজে দিল না। একসময় নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল। ‘কি এমন হয়েছিল, গেলই নাহয় এক সাথে রেস্টুরেন্টে’। এরপরে আসল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। অদিতিকে ফিরে পাওয়ার জন্য মন ছটফট শুরু করল। কি করব ভেবে কুল করতে পারছি না। ক্ষমা চাইব? ও কি ক্ষমা করবে আমাকে?
এভাবে কিছুদিন চলার পরে ঠিক করলাম, যা হবার হবে, একবার মুখোমুখি দাঁড়াব। ছুটি চাইলাম। পেলাম না। না পাওয়ার অবশ্য একটা যুক্তি সঙ্গত কারণ ছিল। নতুন প্ল্যান্ট লাগছে। এই সময় আমি চলে গেলে কোম্পানী সমস্যায় পড়বে। বস আশ্বাস দিলেন, মাস তিনেক পরে তিনি ছুটি দেবেন।
এনিওয়ে সেদিনই চিঠিটা লিখি আর ঠিক করেছিলাম পরের দিন চিঠিটা পোস্ট করব। করা হয়নি। সকালে সৈকতের ফোন আসে। জানায় অদিতির সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে।
ব্যাপারটা শুনে থ মেরে গেলেও কাহিনী ততোটা গোলমেলে না। আমি চলে আসবার কিছুদিন পরেই চঞ্চল ইয়াসমিনকে বিয়ে করে। ইয়াসমিন ছিল কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের হেডের মেয়ে। সো, অদিতির সাথে চঞ্চলের প্রেম ছিল না। আমিও নেই আর ওদিকে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসছে অদিতির। কি আর করবে বেচারী।
সৈকতের সম্ভবতঃ মনে মনে ইচ্ছে ছিল। ওর বাসা থেকেও প্রস্তাব যায়। অ্যান্ড…।
বলা যেতে পারে, সৈকত আমার অনুপস্থিতির সুযোগটা নেয়। ও অবশ্য পরে অন্য ব্যাখ্যা দেয়। আমার কোন কন্টাক্ট নম্বর ওর কাছে ছিল না। তাই পুরো ব্যাপারটা জানাতে পারেনি। তবে আমার ধারণা, এতোসব ঘটনা সম্ভবতঃ ইচ্ছে করেই আমাকে জানায়নি সৈকত। এবং যখন জানাল, তখন আর কিছু করার ছিল না।
যাই হোক, যে লেজটা কথা বলছিলাম, তা হচ্ছে, মিসেস সৈকতই যে সেই অদিতি এই তথ্যটা। ব্যাপারটা সীমাকে এতোদিন বলিনি। সেদিন যখন বললাম, সীমার চেহারা ছিল দেখবার মত। অবিশ্বাস? না হতবাক? সিওর না। সম্ভবতঃ ও ঠিক করে রেখেছিল, সব কাহিনী জানবার পরে আমার কাছে জানতে চাইবে, অদিতি এখন কোথায় কিংবা ওর সাথে এখনও সম্পর্ক আছে কি না। হয়তো নেগেটিভ টাইপের কিছু একটা প্রত্যাশাও করে ছিল। বাট...
অদিতির সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই, কথাটা বলতে পারছি না। সৈকতের সাথে প্রায়ই দেখা হয়। বেশ কয়েকবার ওদের বাসায়ও গিয়েছি। ওরাও এসেছে। অদিতির সাথেও আমাকে গল্প করতে দেখেছে। ওর সাথে হওয়া আমার গল্প গুজবকে ক্লাসমেটের সাথে গল্প হিসেবেই দেখেছে এতোদিন।
এনিওয়ে, সেদিনের সেই কনফেশানের সিক্যুইলি হচ্ছে আজকের এই রিইউনিয়ন। সৈকত আর অদিতি বাসায় আসবার পর থেকেই সীমার অনুসন্ধানী চোখ আমাদেরকে ফলো করছে। ব্যাপারটা টের পেয়ে আমি অদিতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে আছি। একসময় আমাকে একা পেয়ে সীমা আমার দিকে এগিয়ে আসল
— ফোনটা একটু দাও তো
নতুন কিছু না। বাসায় থাকলে আমার ফোন দিয়েই ও ফোন সারে। নিজের ফোনের ব্যালান্স বাচায়। ফোনটা এগিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই ফোনটা আমার কোটের ভেতরের পকেটে ঢুকিয়ে দিল।
— অদিতির সাথে কথা বলছো না যে?
থতমত খেয়ে বললাম
— ভাবলাম…
— আমি মাইন্ড করব?
— ঠিক তা না…
— আরে দূর। যাও গল্প করে আস। চাইলে চিঠির গল্পটাও বলতে পার।
বলে দুস্টুমির একটা হাসি দিল। ভেরি আনলাইকলি অফ হার। ভ্রু কুচকে সীমার চলে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকালাম। মন বলছে সামথিং ইজ রং।


— কি ব্যাপার?
— কিছু না।
— তোমার বউ বলল, তুমি নাকি আমাকে খুজছো?
— তাই বলল?
— কিছু হয়েছে?
— হু।
— কি?
— পুরনো কাগজপত্রের ভেতর তোমাকে লেখা একটা চিঠি পাওয়া গেছে।
খিলখিল করে হেসে ফেলল অদিতি।
— তাই তো বলি, তোমার বউ আজকে আমার দিকে এমন শ্যেন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে কেন?
— তাই নাকি?
— দেখো, এখনও তাকিয়ে আছে।
আড়চোখে তাকালাম। কৈ? সীমা তো যথারীতি চঞ্চলের বউয়ের সাথে খোশ গল্প করছে।
— তাকিয়ে ছিল, এখনই চোখ ঘুরিয়ে নিল।
— হতে পারে। আই থিঙ্ক ও দেখতে চাইছে, আমাদের ভেতর এখনও প্রেম অবশিষ্ট আছে কি না।
— আছে নাকি?
অদিতির মুখ হাসি হাসি।
— তোমার তরফের জানি না, আমার তরফে মনে হয় আছে।
অদিতি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। চোখে কি যেন একটা ছিল। এরপরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
— আমাকে কি লিখেছিলে চিঠিতে?
— ঐ, তোমাকে সন্দেহ করার জন্য ক্ষমা টমা চেয়ে আরকি।
— তো পোস্ট করনি কেন?
— তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল, তাই আর…
অদিতি কেমন একটা দৃষ্টি মেলে তাকাল আমার দিকে। তবে ক্ষণিকের জন্য। দ্রুতই আবার দুস্টুমির মুডে ফিরে আসল। হাসি হাসি মুখে জানতে চাইল
— তো রেখে দিয়েছিলে কেন?
— ফেলে দিতে মায়া লাগছিল।
মুখে তখনও হাসি। আমার দিকে তাকাল অদিতি।
— একটা কথা বলব?
এবার হাসি হাসি মুখটা হঠাৎ ম্লান হয়ে গেল। সামথিং রং। পাশ কাটাতে চাইলাম। বললাম
— জরুরী?
— জানি না। তবে মনে হচ্ছে তোমাকে বলা উচিত।
ভ্রু কুচকে তাকালাম অদিতির দিকে। বুঝে উঠতে পারছি না, এই আলাপ আর চালিয়ে যাওয়া উচিত হচ্ছে কি না। ঠিক যখন ভাবছিলাম আলাপের ইতি টানব তখনই অদিতি কথাগুলো বলল



— খেতে এসো। আপনিও আসুন ভাবি।
দারুণ স্বাভাবিক সীমা। আমাদের ডাকতে এসেছে। এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কেন আজকে সীমা এই আয়োজন করেছে। পরে এনিয়ে ভাবা যাবে। আপাততঃ খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। সাদেক করেছে। ফোনটা ধরলাম
— কিরে শালা, কার সাথে এতো কথা বলিস?
অবাক হলাম।
— কারো সাথে না।
— পনের মিনিট ধরে তোর ফোন বিজি পাচ্ছি। তোর বাড়ীর ঠিকানাটা বল
সাদেকও আজকে গেস্ট। বাড়ী খুজে পাচ্ছে না, তাই ঠিকানা জানতে ফোন দিয়েছিল। সেটা জানালাম। কিন্তু ফোন বিজি পাচ্ছিল কেন? হঠাৎ সন্দেহ হল। ফোনটা পকেট থেকে বের করলাম। রিসেন্ট কল লিস্টে গেলাম। লাস্ট কলটা সাদেকের। তার আগেরটা সীমাকে করা। কল ডিউরেশান পনের মিনিট। অর্থাৎ আমার পকেটে ফোনটা রেখে দেয়ার আগে সীমা নিজেকে কল দিয়েছিল। আর অদিতির সাথে আমার পুরো আলাপটা শুনেছে। মনে মনে হাসলাম। এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।
আজকের এই অনুষ্ঠানটা না হলে হয়তো কোনদিনই শুনতে পেতাম না অদিতির শেষ কথাগুলো। কথাগুলো এখনও কানে বাজছে
— ইউ ওয়্যার রাইট।চঞ্চলের সাথে তখন আমার অ্যাফেয়ার চলছিল। তোমাকে আমি ডিচ করছিলাম।


শেষ

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:০৩

আমি সাদমান সাদিক বলেছেন: চমৎকার, শেষ পর্যন্ত চমক ছিল :) সীমা মিস্টি করে কথা বললেই বুঝি, ঝড় আসছে ;)

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:১৮

বনসাই বলেছেন: আগের গল্পটির কিন্তু এখনো শেষ টানেন নি, ৬ পর্বেই আটকে গেছে। ওটা কি ওখানেই থেমে থাকবে।

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৩৯

বনসাই বলেছেন: লেখাটি দুইবার এসেছে, ঠিক করে দেন। খুব বড় ভেবে পরে পড়ার জন্যে রেখেছিলাম। এখন দেখি এটা হাফ হবে।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ঠিক করলাম। ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: প্রাক্তন নামে একটা খুব সুন্দর মুভি আছে কোলকাতার।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জানি। দেখেছি।

৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬

আমিন রবিন বলেছেন: মজাইলাম

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০০

সোহানী বলেছেন: কি মেয়েরে বাবা... প্রেম করে একজনের সাথে, ডেট করে আরেকজন আর বিয়ে করে থার্ড ওয়ান। বেচারা বেচেঁ গেছে..... তবে বউয়ের স্পাইং পর্বটা ভালো লেগেছে। এরকম শার্লকহোমস্ বউ সহজে মেলে না.........হাহাহাহা =p~

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: তাই? আমার ধারণা সব বউয়ের ভেতরেই একজন শার্লক হোমস থাকে।

৭| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন:
এবার আগের গল্পগুলোতে একটু হাত দিতে পারেন। ধন্যবাদ দেরী করে হলেও একটি দারুণ একটি গল্প করেছেন।

গল্পটি এক বসায় পড়ে নিলাম। তবে গল্পটি বেশ বিনোদিত করেছে।

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দিব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.