নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫১



অবশেষে কিচ্ছুক্ষণ আগে কক্সবাজার পৌঁছালাম। হঠাৎ নীলার আগমনে যেমনটা আশা করেছিলাম, তেমন কিছু হয়নি। পথে ‘আমাকে না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’ টাইপ তেমন কোন মেলোড্রামা হয়নি। বাস কোম্পানীর ওয়েটিং রুমে নীলা বেশ শান্তই ছিল। ব্যাখ্যা দিব কি না এমনটা যখন ভাবছিলাম, তখন নীলাই কথা বলল। সাবলীল ভাবেই বলল।
— রাতে খেয়েছো কিছু?
নীলার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেস্টা করলাম, স্বাভাবিক প্রশ্ন? না আলাপচারিতা শুরুর চেস্টা? মনে হল নির্দোষ জিজ্ঞাসা। নীলাকে যতটা চিনেছি, এমন পাবলিক প্লেসে ঝগড়া করা টাইপ মেয়ে ও না। কৈফিয়ত ইউজুয়ালি ও চায়নি কখনও, তবে এটাও ঠিক তেমন কোন অনিয়ম আমি করিওনি। এনিওয়ে, উত্তর দিলাম।
— না। ভেবেছিলাম বাস যেখানে থামবে…
— ওকে।
‘ওকে' মানে বোঝার চেস্টা করলাম। নীলাও তখন খাবে? নাকি খেয়ে এসেছে। নিজের অজান্তেই প্রশ্নটা করে ফেললাম।
— তুমি?
মিস্টি একটা হাসি দিল নীলা। এর মানে হচ্ছে খায়নি এবং ক্ষুধা লেগেছে।
— খাবে কিছু? বাস ছাড়তে মনে হয় কিছু দেরী আছে।
— না।
— স্ন্যাকস টাইপ কিছু?
এবার সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে মিস্টি একটা হাসি দিল। ‘ডোন্ট ওরি, আই অ্যাম ফাইন’ টাইপ। এর আরও একটা মানে হচ্ছে, ও এখন খাবে না, আমার সাথেই খাবে।
প্রশ্নটা না করলেও, উত্তরটা আমার রেডি রাখা উচিৎ, আই থিঙ্ক। আর তাই নিজের অজান্তেই আমার মাথায় তখন এক্সকিউজ তৈরির ফ্যাক্টরী চালু হয়ে গেছে। দুজনের জন্য টিকিট কেটে কেন একা একা এসে হাজির হয়েছি, এর একটা যুতসই ব্যাখ্যা তৈরির চেস্টা করছি।
— স্যুটকেসে কিন্তু তোমার লাগেজও নিয়েছি।
আমার স্যুটকেসের দিকে ইঙ্গিত করে জানাল। এটা কি কেবল তথ্য? না কোন ইঙ্গিত? ব্যাখ্যা যেহেতু এখনও তৈরি করে উঠতে পারিনি, তাই এড়িয়ে যাওয়াই সেফ অপশান মনে হল। বললাম
— আই সি।
— মোবাইল সুইচড অফ দেখে তোমার অফিসে ফোন করেছিলাম।
ব্যাখ্যা? না ইঙ্গিতে কৈফিয়ত চাইছে? ঘুরিয়ে কিছু জানতে চাওয়া টাইপ মেয়ে নীলা না। ইনফ্যাক্ট নীলাকে যতটা চিনেছি, ওকে অ্যাভয়েড করছি এমনটা বুঝতে পারলে ও নিজেই আমাকে সুযোগটা করে দেয়। আর এখানেই নীলা যেন আজকে ঠিক নীলা নেই।
তথ্যটা দেয়াতে একটা সুবিধা হল। নিজের অজান্তেই যে চিন্তাটা কাজ করছিল, অর্থাৎ ‘নীলা জানল কিভাবে?’ সেটার সম্ভবতঃ এমনই কিছু একটা উত্তর ভেবেছিলাম। সেটা কনফার্ম হল।
বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে টিকিটগুলো রাখা ছিল। ওখানে কিছু খুঁজতে গিয়ে সম্ভবতঃ ওগুলো পেয়ে যায়। এরপরে অফিসে ফোন করলে ওখান থেকে সম্ভবতঃ জানায়, আমি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছি। অ্যান্ড দেন, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে। আমার এই ধারণা সঠিক কি না, এই তথ্যটা জানা খুব জরুরী না। যেটা জানা জরুরী তা হচ্ছে, হাউ ডিড শি ফিল দেন।
এখানে এসেছে মানে এই না যে, ব্যাপারটায় ও রিয়াক্ট করেনি। বাট অ্যাজ ইউজুয়াল, আসল রিয়াকশানটা ও দেখাচ্ছে না। নকল স্বামীর সাথে কেনই বা ঝগড়া করা? কিন্তু ওর কথা শুনে কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো…।
যদি সত্যিই স্কোর সেটেল করতে এসে থাকে তবে সেটা কখন ঘটবে? আমার মন বলছে, কক্সবাজারে কিছু একটা ঘটবে। এনিওয়ে, আপাততঃ বর্তমান সামলানো জরুরী। মোবাইল কেন সুইচড অফ রেখেছিলাম, একা কেন এসেছি, এমন সব প্রশ্নের উত্তর এখনও রেডি হয়নি। কি উত্তর দিব ভাবছিলাম এমন সময় আমাদের ট্যুর গাইড আমাকে উদ্ধার করল।
— স্যার লাগেজগুলো লকারে দিয়ে দিই?
সুযোগটা নিলাম। উঠে দাঁড়ালাম। গাইড মশাই, ‘আপনাকে আসতে হবে না’ টাইপ কিছু একটা বলছিল। না শোনার ভান করে লাগেজগুলোসহ বাইরে বেরিয়ে এলাম।

এরপরের কাহিনীতে উল্লেখযোগ্য তেমন আর কিছু নেই। দ্যাটস দ্যা বিউটি অফ নীলা। আমি অস্বস্তি বোধ করছি, ব্যাপারটা ও বুঝে গেছে। আই থিঙ্ক আর জানতে চাইবে না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই বোধহয় আলাপ পাল্টে ফেলল।
— লাস্ট কবে গিয়েছ?
সেফ টপিক। আলাপ এগিয়ে গেল। শুরু হল স্মৃতি রোমন্থন। 'লাস্ট কবে এসেছিলাম’, ‘কেন এসেছিলাম’, 'সেসময় কি হয়েছিল' টাইপ সিলি সব গল্প গড়্গড় করে বলতে লাগলাম। গল্পগুলো খুব মজার হচ্ছিল কি না জানি না, বাট নীলা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছিল। আই থিঙ্ক, কাজটা করছিল পরিস্থিতি ইজি করবার জন্য। কিছুটা ইজি হলও। যথারীতি স্টপেজে খাওয়া দাওয়াও সারলাম। এরপরে? নাহ, আর তেমন কিছু হয়নি। কম্বল মুড়ি দিয়ে দারুণ একটা ঘুম দিলাম। নীলার খবর বলতে পারব না। অ্যান্ড দেন? ভোর বেলা নীলার ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গল।
— উঠো, এসে গেছি।

হোটেলে পৌঁছে গাইড মশাই জানালেন, এখন চাইলে একটু রেস্ট নিতে পারি, কারণ এখন কোন আউটিং নেই। আউটিং বিকেলে।
আর কি কি বলেছিল শুনিনি। দ্রুত নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। অ্যান্ড নাও ওয়েটিং ফর দ্যা ক্লাইম্যাক্স, নীলার রিয়াকশান। ইন দ্যা মিন টাইম, আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। অনেস্ট কনফেশান করব। নো বাহানা, জাস্ট দ্যা ট্রুথ। সরাসরিই স্বীকার করব, ‘তোমাকে অ্যাভোয়েড করতে চেয়েছিলাম।’
— সাওয়ারটা সেরে ফেল।
নীলা সেরে ফেলেছে। টাওয়েলে চুল মুছছে। আমার কাপড়ও বের করে রেখেছে। একবার নীলার দিকে তাকালাম। আজকে কি ওকে একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে? না আমি একটু বেশি ওর দিকে তাকাচ্ছি? মুখ ভর্তি ঝলমলে হাসি।
— দেখা শেষ?
শিট। সম্ভবতঃ একটু বেশি সময় নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইউজুয়ালি এমনটা হয় না। আজ মনটা একটু এলোমেলো ছিল বলেই হয়তো। বাট নীলার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানো এটাই তো প্রথম না। আগেও তাকিয়েছি। আর এমন বিহেভিয়ার নীলা সাধারনতঃ ইগনোর করে এসেছে। স্মিত হেসে সরে যেত। আজ করল না। ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল
— আরও কিছুক্ষণ দেখবে? দাঁড়িয়ে থাকব?
নীলার চোখে দুস্টামী। হেসে ফেললাম। কেন যেন বলে ফেললাম
— অফিসিয়ালি তো এখনও দেখতে পারি, আই থিঙ্ক।
বলেই বুঝলাম, বাজে কাজ করে ফেলেছি। নীলা কিছুটা ম্লান হয়ে গেল। জানতে চাইল
— এরপরে কি আর সম্পর্ক রাখবে না?
‘না' উত্তরটা দিতে গিয়েও দিতে পারলাম না। নীলার দিকে তাকালাম। ইজ শী সিরিয়াস? নীলা কি চায় সম্পর্ক রাখি? না অন্য কিছু বলতে চাইছে? নীলার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, সামথিং ইজ রং। ও নতুন কিছু বলতে চাইছে। রিথিংকিং অ্যাবাউট আওয়ার রিলেশানশীপ? আনলাইকলি, বাট… নট সিওর। টপিক চেঞ্জ করাটাই বেটার হবে।
— বেরোবে?
নীলা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপরে স্মিত হেসে বলল
— বেরোব। বাট তোমার সাথে।
'আমি টায়ার্ড’ টাইপ কিছু একটা বলতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার নিজেরও ইচ্ছে করছে। ডিসগাস্টিং। আর সপ্তাহ খানেক পরে যেখানে ডিভোর্স হতে যাচ্ছে… । আই স্যুড কন্ট্রোল মাইসেলফ। অ্যান্ড দেন, সম্মতি জানালাম,
— ওকে।

শীতটা বেশ জোরাল না। আবার হালকাও না। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না সোয়েটারের ওপর জ্যাকেটটা পড়ব কি না। নীলা বোধহয় আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার এই স্বভাব ওর চেনা। ঝট করে জ্যাকেটটা উঠিয়ে নিল। আমাকে আর কিছু ভাববার সুযোগ না দিয়ে বলল
— চল।
নীচে নেমে আবিস্কার করলাম আমাদের ট্যুর পার্টির বেশ কিছু সদস্য জড়ো হয়েছে। প্ল্যানে না থাকলেও সম্ভবতঃ সবার অনুরোধে গাইড মশাই সবাইকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। এই দঙ্গলের সাথে বেরোবার কোন ইচ্ছে নেই। কি করব ভাবছি এমন সময় দেখলাম নীলা এগিয়ে গিয়ে গাইড মশাইকে কিছু একটা বলে আসল। এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— লেটস মুভ।
— ওরা কোথায় যাচ্ছে?
— জানা জরুরী?
— না।
— দেন?
নীলার এই রুপ আগে দেখিনি। এর আগে কখনো আমার ওপর এমন করে অধিকার চাপায়নি। কি করব, না করব তার সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিতাম। অ্যান্ড আই থট, দ্যাটস দ্যা বেস্ট ওয়ে টু ডিল এভ্রিথিং। আজকে কেমন যেন অন্যরকম লাগল। আমাদের দুজনের জন্য ওর এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা বেশ এঞ্জয় করলাম।
— বলে এসেছি, আমরা খেয়ে আসব।
— দুপুরের খাওয়া তো ওরা দেবে।
— তো?
এটাও ভাল লাগল। কি হচ্ছে আজকে?
মনে হচ্ছে, নীলা আজকের দিনটা নিজের মত কাটাবে। আর আমি যদি ভুল না করি, তাহলে, আমার ধারণা পুরো ট্যুরটাতেই অনেক নতুন ঘটনা ঘটবে। কেন যেন, ‘দেখি না কি হয়’ টাইপ একটা মানসিকতাও ভর করল আমার ওপর। নিজেকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম। ঠিক করলাম, মন যা চায়, তাই করব। নো সেলফ রেগুলেশান।
— আমি হাঁটব। আপত্তি আছে?
আড় চোখে নীলার দিকে তাকালাম। টিপিক্যাল টিন এজ প্রেমিকার মত বিহেভ করছে। আহ্লাদী প্রেমিকার মত ওর এই প্রেমিকের ওপর নিজের অধিকার প্রয়োগ টাইপ ব্যাপারগুলোর কেন যেন খারাপ লাগছে না।
আমাদের হোটেলটা সি বীচের বেশ কাছেই। হেঁটে হেঁটেই বীচে যাওয়া যায়। আবিষ্কার করলাম, ওর পাশে পাশে হাঁটতে ভালোই লাগছে। কেন লাগছে? সকালে বলা কথাটাআ কি তবে সত্যি? আমি কি সত্যিই প্রেমে পড়েছি? শিট।
হাঁটতে হাঁটতে কখন বীচের কাছে চলে এসেছি লক্ষ্যই করিনি। নিজের অজান্তেই কখন সমুদ্রের ঢেউ দেখা শুরু করেছি তা ও বলতে পারব না। সম্বিত ফিরল নীলার স্পর্শে।
দেখলাম পিচ্চি এক ক্যামেরাম্যানকে ইতিকধ্যেই নীলা ম্যানেজ করে ফেলেছে। গলায় একটা ডিএসেলার ঝুলছে। আশেপাশে এমন পিচ্চি আরও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা চুক্তি ভিত্তিক ফটোগ্রাফার। যতক্ষণ থাকব, আমাদের পেছন পেছন ঘুরবে আর আমাদের ছবি তুলবে।
আর সেই পিচ্চিকে পোজ দেয়ার জন্যই নীলা আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। আমার বাহুর ভেতর দিয়ে ওর একটা হাত ঢুকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মিস্টি করে হাসি দিয়ে ঘোষণা করল।
— হ্যাঁ, এবার তুলো।

— চলবে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৫৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: হুম এবার দেখছি গল্প জমাচ্ছেন। মনে হয় আরো জমবে। ভাল থাকবেন পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ। দিয়েছি পরের পর্ব

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৩

নোয়াখাইল্ল্যা বলেছেন: ব্রো,আপনার স্টোরি অনেক ইন্টারেস্টিং। নিউ পর্ব হেভি হবে বলে হোপ করি। ইউর রাইটিং হাত অনেক গুড। ওয়েল উইশ রইল।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আগের পর্ব গুলো পড়েছি।

মানবীর প্রেম যতটা না টানে
তার চেয়ে বেশি টানে প্রকৃতির প্রেম।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ সঙ্গে থাকবার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.