নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি (১২ তম পর্ব)

১৩ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭

১২

কাজটা বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত করলেও মনের এক কোণায় সম্ভবতঃ বিবেক অবশিষ্ট ছিল। মিথ্যে কথাটা ঝোঁকের মাথায় বলে ফেললেও ফিল করলাম, অস্বস্তি লাগছে। নীলার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না। মেয়েটা অগাধ বিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিল। আমি তাকে সঠিক একটা সিদ্ধান্ত দিব। আর আমি সেই বিশ্বাসকে এভাবে পেছন থেকে ছুড়ি মারলাম?
অ্যান্টি বিবেকও কাজ করছিল। ‘এছাড়া আর কোন উপায় নেই’ বা ‘এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ এসব যুক্তি দিয়ে নিজের অপরাধবোধকে কাউন্টার দেয়ার আপ্রাণ চেস্টা চলছিল। তবে খুব সফল হচ্ছিলাম না। অনেকটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল বলা যায়।
কোন এক পক্ষের বিজয় জরুরী। আই থিঙ্ক একটু ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা দরকার। আমার হাসপাতালে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কথাটা নীলাকে জানালাম।
— আমি একটু হাসপাতাল থেকে ঘুরে আসি।
— তুমি তো দুপুরে কিছু খাওনি।
— ক্যান্টিনে খেয়ে নেব।
— তারচেয়ে বরং বাসায় যাও। মা আছেন।
ব্যাপারটা অ্যাভয়েড করতে চাইলাম। 'দেরী হয়ে যাবে’ বলে বেরিয়ে পড়লাম। হাসপাতালে পৌছে নিজেকে প্রথম যে কাজটা করলাম, তা হচ্ছে শান্ত করার চেস্টা। পুরো পরিস্থিতি নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলাম। স্যুড আই কমপেনসেট? রাতে গিয়ে যদি জানাই, ভয়ের কিছু নেই, চল বাসায় ফিরে যাই, তাহলেই হয়তো পাপ স্খলন হয়ে যায়। বাট দ্যাট মিনিস টেনশান ওভার অ্যান্ড দ্যা স্টোরি আগেইন ইন ট্র্যাক।
কি করব? অ্যান্টি বিবেক থেমে নেই। ভাবছে এটা সেটা পরীক্ষার নাম করে এই কটা দিন কাটাবার চেস্টা করব? অ্যাঞ্জিগ্রাম করা যায়। সেখানে এক আধটা ব্লক পাওয়া যেতেই পারে। এরপরে কিছু একটা বুঝিয়ে বাইপাস করানোর অ্যাডভাইস দেয়া যায়। আর এসব করতে করতে অনায়াসে তিন সপ্তাহ পার করে দেয়া যায়।
কাজগুলো মেডিকেলি ভুল বলা যাবে না। আবার এটাও ঠিক, সেসব ঠিক এই মুহুর্তে জরুরী না। মাস খানেক পরেও করা যায়। মজার সমস্যা। আমি যে অন্যায় করছি, আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। এমন অন্যায় কি করা যায়? একজনকে পাওয়ার জন্য?
এমন দোটানায় জীবনে পড়িনি। একবার মনে হচ্ছে সততা দেখাই আর এরপরের অংশটা নিয়তির হাতে ছেড়ে দিই। পরের মুহুর্তেই চিন্তা আসছে, খুব তো অন্যায় করছি না। মেডিকেল সাইন্সের বাইরে গিয়ে তো কিছু করছি না। এই মুহুর্তে হার্ট অ্যাটাক হয়নি, বাট কাল হবে না এমন গ্যারান্টি তো নেই। সেফ সাইডে থাকতে সমস্যা কি?
সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। ঘুমাবার চেস্টা করলাম। আমার অব্যার্থ ফর্মুলা, টিভি দেখা, ট্রাই করলাম। কাজে দিল না। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেল। আমার অ্যাটেনডেন্ট ফোন দিল।
— স্যার কয়েকজন রুগী অপেক্ষা করছে।
বিকেলে আবার রুগী দেখা শুরু করলাম। কিছুক্ষণের জন্য চিন্তাটা মাথা থেকে গেল। রাত আটটার দিকে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে নীলার নাম ভেসে উঠল। কি বলবে জানি। সম্ভবতঃ একটু আগে কনসালটেন্ট সাহেব রুগী সম্পর্কে ব্রিফিং দিয়েছেন। ব্রিফিংটা আমাকে জানিয়ে আমার সিদ্ধান্ত জানতে চাইবে। ব্যাপারটা অ্যাভয়েড করতে মন চাইছে। ফোন ধরব না ভেবেও শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টালাম।
ওপাশ থেকে নীলা হাসপাতালের পরিস্থিতি জানাল। যেমনটা ভেবেছিলাম, হাসপাতালে এর পরের ঘটনাগুলো যথারীতি রুটিন মাফিকই ঘটছে। সন্ধায় আইসিইউর দ্বায়িত্বে থাকা কনসালটেন্ট এসে সব রিপোর্ট দেখেছেন। জানিয়েছেন, তিনি সিওর ব্যাথাটা হার্টের জন্য নয়। তবে বয়স যেহেতু হয়েছে, অ্যাঞ্জিগ্রাম করে নেয়া উচিত।
আর সব শেষে জানাল,
— রাতে কি একটু আসতে পারবে? একা ভয় লাগছে।
সবকিছু আমার ফেভারে যাচ্ছে। এতোক্ষণ যে দোটানা কাজ করছিল, সেটা অ্যান্টি বিবেকের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ল। এবার বেশ শক্ত একটা যুক্তি দাঁড়িয়ে গেল। অ্যাঞ্জিগ্রামের সিদ্ধান্ত তো আর আমার দেয়া না। যে সিদ্ধান্ত এতোক্ষণ নিতে পারছিলাম না, তা এক ঝটকায় নিয়ে ফেললাম।

রাত দশটার দিকে ঐ হাসপাতালে পৌছলাম। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পারবো তো? গলা যদি কেপে যায়? যদি নীলার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলতে না পারি?
করিডোর দিয়ে এগিয়ে গেলাম। আইসিইউর সামনে নীলা অপেক্ষা করে ছিল। সোহেলও ওখানে ছিল। দুজনেরই চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ স্পস্ট। আমি ওখানে পৌছাতেই নীলা জানাল আইসিইউর দ্বায়িত্বে থাকা কনসালটেন্ট এখনও ভেতরে আছেন। আমি যেন একটু উনার সাথে কথা বলি।
কার্ড ভেতরে পাঠালাম। উনি আমাকে ভেতরে আসত অ্যালাউ করলেন। ডিউটিতে থাকা জুনিওর ডাক্তারটা আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

ভদ্রলোকের চোখও বেশ শার্প। উনিও একনজরে বুঝে গেলেন, কাহিনী কি। আমাকে একাকী ডেকে তথ্যটা জানালেন
— হার্টের সমস্যা তো না। তবে সেফ সাইডে থাকতে অ্যাঞ্জিগ্রাম করে নেয়া যায়।
— আই নো।
— দেন? কি করবেন?
— আমি একটু ওদের সাথে আলাপ করে নি। দেন আই উইল লেট ইউ নো।

কনসালটেন্ট সাহেব আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা ইতিমধ্যে করতে দিয়েছিলেন। সেগুলোর রিপোর্টও সেই মুহুর্তে এসে পৌঁছে গেল। যথারীতি, নো প্রব্লেম। হি ইজ অ্যাবসুলিউটলি ফাইন। কিছু সৌহার্দ বিনিময় করে বেরিয়ে আসলাম।
আমাকে এখন সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। নীলা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। উনার সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলোতে যে কিছু আসেনি, সে সম্পর্কে জানালাম। অ্যান্ড দেন প্লেইড মাই কার্ড। নীলার চোখে চোখ রেখে বেশ গম্ভীরভাবেই বললাম
— কনসালটেন্ট সাহেব মনে করছেন না ব্যাথাটা হার্টের কারণে। এ ব্যাপারে আমিও একমত। তবে উনি সেফ সাইডে থাকার জন্য অ্যাঞ্জিগ্রাম সাজেস্ট করছেন।
একটু দুরে সোহেলও দাড়িয়ে। নীলাও বুদ্ধিমতী। অভিনয় একটু এদিক ওদিক হলেই ধরা পড়ে যাব। খুব সাবধানে খেলতে হচ্ছে। নীলা একবার সোহেলের দিকে তাকাল। যদিও দেখতে পাচ্ছি না, আমার ধারণা চোখের দৃষ্টিতে ছিল একরাশ ‘সরি'। হয়তো বলতে চাইল, ‘আই হ্যাভ নো অপশান।’ এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে অনুরোধ করল
— তোমার ওখানে নিয়ে যাওয়া যায় না?
এই অনুরোধটাই আশা করছিলাম। সরাসরি রাজী না হয়ে কিছুটা ভাবনার অ্যাক্টিং করলাম। এরপরে ‘এতো করে যখন বলছো’ টাইপ একটা ভাব দেখিয়ে বললাম
— ওকে।
নীলার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
— কবে শিফট করতে চাও?
-- আজ রাতটা থাক। কাল সকালে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

এসের হাসপাতালের সিস্টেমটা আমাদেরটার মতই। কোন ঔষুধ পত্র কেনার ব্যাপার থাকলে রুগীর লোককে স্লিপ ধরিয়ে দেয় না। নিজস্ব ফার্মেসি থেকে কিনে নেয়, পরে বিল ধরিয়ে দেয়। সো, রাতে এখানে কোন অ্যাটেনডেন্ট থাকা জরুরী না। তারপরও নীলার এক দুরসম্পর্কের ভাইকে মিরপুর থেকে ডেকে পাঠানো হল। সে হাসপাতালে রাতে থাকবে।
নীলাকে জানালাম,
— আই থিঙ্ক রাতে আর তেমন কোন সমস্যা হবে না। উনাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
— চল।
— তুমি তো তোমাদের বাসাতেই থাকবে।
— ভাবছিলাম।
— বেশ তো। চল তোমাকে ড্রপ করে দিই।
সোহেলও একই পাড়ায় থাকে। ওকেও সাথে নিলাম। পথে টুকটাক কথা বললাম। সকালে যতটা টেনসড লাগছিল, এখন ততোটা লাগল না। চিন্তিত বাট সেই ফ্যাকাসে ভাবটা নেই। সম্ভবতঃ সামলে উঠেছে।
বাসায় ফিরে দেখলাম পরিস্থিতি বেশ থমথমে। দেখে খারাপ লাগছে, বাট উপায় নেই। টেনশানটা বজায় রাখা জরুরী। নীলা ওর মাকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। সব শুনে উনি আমার দিকে অধীর আগ্রহে তাকাল। উনার চোখে বোল্ড লেটারে একটাই অনুরোধ লেখা ‘আমার স্বামীকে দ্রুত ভাল করে দাও বাবা’
রাতের খাওয়া দাওয়ার পরে নীলার মা অনুরোধ করলেন, ওখানেই রাতে থেকে যেতে। রাজী হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, অ্যাঞ্জিওগ্রাম পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নীলাকে কিছুটা আভাস দিয়ে রাখি। কি বলব গুছিয়ে নিচ্ছিলাম এমন সময় নীলা ঘরে আসল
— সমস্যায় ফেলে দিলাম, না?
ওর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিলাম। এরপরে নীলাকে বললাম,
— নাহ। ইটস ওকে।
নীলা বিছানার এক কোণে বসল। কথাগুলো তখনও গুছিয়ে নিতে পারিনি। নীলার দিকে তাকালাম। আমি জানি এখন ও কি বলবে। 'আই অ্যাম রিয়েলি গ্রেটফুল। থ্যাঙ্কস।’ বাট এখন আমার এসব আলাপ করতে ইচ্ছে করছে না। এরচেয়ে বেশি জরুরী আমার প্ল্যানটার খুটিনাটি নিয়ে আরেকবার ভাবা। কোন লুপহোল থাকলে সেটা ঠিকঠাক করা।

নীলা মাথা নীচু করে আছে। মনে হচ্ছে গ্রাটিচুড না জানিয়ে যাবে না। শুনেই ফেলি। জিজ্ঞেস করলাম
— কিছু বলবে?
নীলা ওপর নীচে মাথা ঝুকিয়ে সম্মতি জানাল। এরপরে চোখ তুলে তাকাল। ওর দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, হিসেবে কোথাও গন্ডগোল করে ফেলেছি। ও এখন অন্য কিছু বলবে। অ্যান্ড দেন শি স্টার্টেড। আবিস্কার করলাম, চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মাই হোল ওয়ার্ল্ড স্টার্টেড টার্নিং আপসাইড ডাউন। যে খেলা প্রায় জিতেই ফেলেছি, হঠাৎ এক ঝটকায় সেই খেলা থেকেই ছিটকে গেলাম। নীলা বলতে লাগল
— বিয়ের আগেই আমি ডিভি লটারির জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। আজকে বিকেলে রেজাল্ট হয়েছে। আমার নাম আছে।

চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬

আশফাক সফল বলেছেন: টুইস্ট এর টাইমিং অসাধার ।

২| ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন!

অনেক সিরিজ এগিয়ে গেছে গল্প!
সবগুলো মনে হয় ধরতে পারিনি।

ভাল লাগল

+++

৩| ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এবারতো পুরোই টাস্কি খাওয়ালেন! যাই হোক গল্প যখন শেষ হয়নি সাথেই আছি।

৪| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.