নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি (১৩ তম পর্ব)

১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

১৩

বেশ টায়ার্ড লাগছে। আজকে যে কি হয়েছে, সকাল থেকেই রুগী। দুপুরে রেস্ট নেয়ার সুযোগ পাইনি, একটু চোখ লেগে এসেছে কি মোবাইল ফোন বেজে উঠল।
— স্যার একটু আগে এসেন স্যার। রুগী একটু বেশি আছে আজকে।
ফলে চারটার আগেই আজকে বসতে হয়েছে। আগের রুগীটা যখন প্রবেশ করে তখনই আমার অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটা জানিয়েছিল, ইনিই শেষ রুগী। আর তাই আমি জানি, আজকের মত আমার ছুটি। ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাত এগারটা।
ইউজুয়ালি আমি দুদিন ঔষধ কোম্পানিকে ভিজিট অ্যালাউ করি। আজকে তার মধ্যে একটি দিন। বাট এখন আর ঔষধ কোম্পানীর ভিজিট অ্যালাউ করতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে বাসায় গিয়ে ধপাস করে বিছানায় ঝাপ দিই।
খারাপও লাগছে। বেচারারা অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। বাট… শরীর আজকে বিদ্রোহ করছে। অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটাকে ডাকবার জন্য কলিং বেলের সুইচে চাপ দিলাম। ও আসলে ওর মারফত কথাটা ওদেরকে জানিয়ে দেয়া দরকার।অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটা ঢুকেই জিজ্ঞেস করল
— ভিজিট দিব স্যার?
— না। আজকে আর বসব না। উনাদের বরং আগামীকাল আসতে বল। জানিয়ে দিস আগামীকাল ডেট না থাকলেও ভিজিট অ্যালাউ করব।
এতে পুরোপুরি ক্ষতিপুরণ হবে না। বরং কিছুটা অত্যাচার করাই হবে। আগামীকাল আবার এসে ওদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। বাট, উপায় নেই।
দ্রুত বের হওয়া দরকার। তাই কথাটা বলে আর দেরী করলাম না। চেম্বারে আমার একটা কম্পিউটার থাকলেও আমার পার্সোনাল ল্যাপটপটা নিয়ে আসি। ল্যাপটপটা গুটাতে শুরু করলাম। পাওয়ার কর্ডটা ল্যাপটপের ব্যাগে ঢুকাচ্ছি, তখন অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটা বেরিয়ে গেল। গিয়ে সম্ভবতঃ অপেক্ষমান মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের তথ্যটা জানাল।
মনক্ষুন্ন হলেও সবাই ব্যাপারটা মেনে নিল। একে একে চলে যেতে শুরু করল। বাইরে রাখা সিসি ক্যামেরাতে সব কিছুই আমি দেখতে পাচ্ছি। দেখলাম একজন লোক থেকে গেছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না, তবে বোঝা যাচ্ছে আমার অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটার সাথে তর্ক করছে। চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম। সব গুছিয়ে বেরোতে যাব এমন সময় ফোনটা আসল। মাহফুজুর রহমান কলিং লেখাটা জ্বলজ্বল করছে ফোনের স্ক্রিনে। ফোনটা রিসিভ করলাম।
— স্যার আমি মাহফুজুর রহমান। প্যানারোম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস থেকে স্যার। স্যার, পেপার্সগুলো নিয়ে এসেছিলাম। অল্প সময় লাগবে। আসব স্যার?
ওহ নো। এই লোকটা আর আসবার দিন পেল না? বাট, গরজটা যেহেতু আমার, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, কষ্ট হলেও অফিশিয়াল কাগজে সিগনেচারগুলো আজকেই সেরে যাই। বললাম
— আসুন।
এরপরে বেল চাপলাম। ছেলেটাকে জানালাম মাহফুজ সাহেবকে আসতে দাও। কাহিনীটা মাস ছয়েকের পুরোনো। হাইপারটেনশান নিয়ে আমার একটা রিসার্চ ছিল। সেই আর্টিকেলটা পাঠিয়েছিলাম আমেরিকান কার্ডিয়াক সোসাইটিতে। পেপারটা অ্যাকসেপ্টেড হয়েছে। সোসাইটি অ্যানুয়াল কনফারেন্সে আমাকে ইনভাইট করা হয়েছে পেপার প্রেজেন্ট করার জন্য। ভিসা আর অন্যান্য ফর্মালিটির দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে এক ট্রাভেল এজেন্সিকে। ওখানে থেকেই এসেছেন মাহফুজ সাহেব।
ভদ্রলোক প্রবেশ করেই ক্ষমা চাইলেন
— সরি স্যার। আসলে উপায় ছিল না। এই কয়টা কাগজে আপনার সিগনেচার দরকার ছিল।
— দিন।
কাগজগুলোতে সিগনেচার করছি এমন সময় জানতে চাইলেন
— নিউ ইয়র্কটাও কি ঘুরে আসবেন? কাছেই। আর যে কজন যাচ্ছেন, উনাদের প্রায় সবাই যাচ্ছেন। আমি কিন্তু স্যার আপনার জন্য একটা…
হঠাৎ করে পৃথিবীটা দুলে উঠল। এক মুহুর্তের জন্য চোখের সামনে সবকিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেল। কেন যেন কানে কেবল 'নিউ ইয়র্ক' শব্দটা বাজতে লাগল।
ভয়টা একেবারেই পাইনি, বলব না। যখন আমেরিকান কার্ডিয়াক সোসাইটি কর্তৃপক্ষ জানাল যে এবাররের কনফারেন্স ফিলাডেলফিয়ায় তখন সাথে সাথেই গুগল ম্যাপ দেখেছিলাম। একটু জুম আউট করতেই দেখলাম, ইউ ইয়র্কের খুব কাছেই। বুকটা ধক করে উঠেছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, নো মোর।
পুরনো ক্ষত এক্সপোজ হতে পারে এমন কোন ঘটনার আশপাশ দিয়েও যাব না। ওদের জানিয়ে দিই, আমি যেতে পারছি না। দেন ওদের প্রেসিডেন্ট মেইল করে। জানায় ইট ওয়াজ অ্যা নাইস আর্টিকেল। দে উইল বি হাইলি অনার্ড ইফ আই অ্যাটেন্ড। ফর্মালিটি টাইপ কথাবার্তা আর কি।
কথাটা এদেশে জানাজানি হতে সময় লাগেনি। বেশ কয়েকটা কোম্পানী স্পন্সর করবার জন্য প্রতিদিন ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিল। অ্যান্ড দেন? ইয়েস, আই মেড দ্যা ব্লান্ডার।
যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে একটা ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম, নিউ ইয়র্কে যাব না। এমন না যে গেলেই দেখা হবে। বাট আমি জানি, গেলেই মন অস্থির হয়ে উঠবে। আর আজ যখন মাহফুজ সাহেব নিউ ইয়র্কের কথাটা বললেন তখন যে কষ্টটা এতোদিন ধরে বুকের ভেতর চাপা দিয়ে রেখেছিলাম, হঠাৎ করেই সে ক্ষতটা আবার এক্সপোজ হয়ে গেল।
তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলাম। ভদ্রলোককে জানালাম
— নাহ। ফিলাডেলফিয়া থেকেই ফিরে আসব।
মাহফুজ সাহেব সম্ভবতঃ এমনটা আশা করেননি। যেহেতু আমার পুরো খরচ একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী বিয়ার করছে, আর তারা আমাকে পুরো ছাড় দিয়ে রেখেছে, তাই উনি ধরেই নিয়েছিলেন এদিক ওদিক কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অফারে আমি আপত্তি করব না। তিনি প্রায় নিশ্চিতই ছিলেন, তথ্যটা আমাকে জানালে আমি থ্যাঙ্কস সহকারে হ্যা বলব। আর তাই তিনি ট্যুর প্ল্যানে নিউ ইয়র্কটা নিজ দ্বায়িত্বে ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন।
— সবাই যাচ্ছে দেখে আপনার জন্যও টিকিট কেটে ফেলেছি স্যার। মানে আগে কিনলে ডিসকাউন্ট থাকে তো স্যার, তাই…
ততোক্ষণে আমি অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছি। বুঝতে পারলাম, ওভার রিয়াক্ট করছি। মাহফুজ সাহেবের দিকে চোখ তুলে তাকালাম। তাকিয়ে মায়া লাগল। আমি যদি এখন নিউ ইয়র্ক যেতে অসম্মতি জানাই, তাহলে উনার টাকাটা পানিতে যাবে। আর হ্যা বললে? প্রশ্ন সেটাই। আদৌ কি কিছু হবে? সম্ভাবনা জিরো বলব না, তবে খুব বেশিও না। দেখা যাবে হয়তো তেমন কিছুই হবে না।
তারপরও… ইয়েস। খুব ছোট্ট, কিন্তু সম্ভাবনা একটা আছে। সো, এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঝুঁকিটা নেব কি না। মন একেবারেই চাইছে না। একবার মনে হল, দ্বিতীবারও ‘না' বলে দিই। কিন্তু কেন যেন বলতে পারলাম না।
— ওকে।
ভদ্রোলোকের হাসি কান ছুই ছুই করছে। বুকের ওপর থেকে বিশাল একটা পাথর নেমে গেছে। য— স্যার, এখানে আরেকটা সই।
মন্ত্র মুগ্ধের মত নির্দেশিত স্থানে সিগনেচার করে দিলাম।
— থাঙ্ক ইউ স্যার। আশা করছি ভিসা আর অন্যান্য ব্যাপার সময় মত হয়ে যাবে।
কথাগুলো কানে ঢুকলেও ব্রেনে পৌঁছল কি না বলতে পারব না। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে প্রশ্নটা বেরিয়ে গেল
— নিউ ইয়র্কে কোথায় উঠছি?
— হোটেলটার নামটা মনে নেই, বাট ব্রুকলিনে।
এরপরে কখন যে ভদ্রলোক উঠে গেলেন টেরই পেলাম না। ছেলেটার আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম
— স্যার।
তাকিয়ে দেখলাম বেশ অবাক হয়ে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ছেলেটাকে বললাম
— গাড়ী নিচে লাগিয়েছে?
— জ্বি স্যার।
এরপরে আর কথা না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গাড়ীতে উঠলাম। আপ্রাণ চেষ্টা করলাম মোবাইলের মেইল আইকনটাতে চাপ দিব না। কিন্তু পারলাম না। নিজের অজান্তেই আঙ্গুল চলে গেল ‘ইমেইল' লেখা বর্গাকার আইকনটাতে।
একটাই মেইল এসেছিল। উত্তর দিই নি। বাট ডিলিটও করিনি। একটা ফোল্ডারে রেখে দিয়েছিলাম। অনেকদিন পরে আবার নিজের ওপর কন্ট্রোল হারালাম। মেইলটাতে ক্লিক করলাম। দীর্ঘ দু বছর পরে আজকে সেই মেইলটা দ্বিতীয়বারের মত আবার ওপেন করলাম। ছোট্ট দু লাইনের লেখা একটা মেইল।
'যদি কোনদিন আমেরিকা আস, আমার এখানে এসো। খুব খুশি হব। নিচে ঠিকানা দিলাম।’
স্ক্রল করে নিচে নামতে হল না। একই স্ক্রিনে স্পস্ট দেখতে পেলাম ঠিকানাটা। স্ট্রীট আর অ্যাপার্টমেন্ট নম্বরের পরে জ্বলজ্বল করছে দুটো শব্দ, 'ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক'।
আর মেইলের শেষে শুধু লেখা, নীলা।

চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল লাগছে সিরিজ :)


+++++++

২| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

বনসাই বলেছেন: বুকে একটু ব্যথা পেলাম মনে হয়।

৩| ১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক----

৪| ১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

সোহানী বলেছেন: হুম এমন মহাপুরুষ বাস্তবে আছে কিনা তার সন্ধান করছি...........হাহাহাহাহাহা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.