নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি (১৫ তম পর্ব)

১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৫৮

১৫

কনফারেন্স বেশ ভালোই গেল। একটা প্রেজেন্টেশান ছিল আর একটা সেসান চেয়ার করলাম। ইউজুয়ালী এসব কনফারেন্সে আসা হয় ঘোরাঘুরি করার উদ্দেশ্যে। বাট আমার তেমনটা করার সুযোগ ছিল না। ভিসা অবশ্য পাঁচ বছরের দিয়ে দিয়েছে। সো চাইলে আমি কিছুদিন থেকে ঘোরাঘুরি করতে পারি। টাকা পয়সাও সমস্যা না। কিন্তু কোথায় যাব? বিশাল দেশ। দেখার মত যা কিছু। সব স্টেটেই কমবেশি কিছু না কিছু দেখার আছে। বাট মনে তখন ছটফট করছে, কখন নিউ ইয়র্কে যাব। পুওর হার্ট। ইট নোজ নো লজিক। দুবছর আগে একবার ধাক্কা খেয়েও সখ মেটেনি।
এনিওয়ে, ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠান ছিল তিন দিনের। এরপরে ওখানে ট্যুর প্রোগ্রাম ছিল দুদিনের। ওখান থেকে চলে আসি নিউ ইয়র্কে। এখানে প্রোগ্রাম ছিল একদিনের। এদিক ওদিক ঘোরার অন্য সব যেসব ট্যুর প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করলেও, নিউ ইয়র্কে করলাম না। 'শরীর ভাল না’ ছুতায় রুমে থেকে গেলাম। কেন? অ্যা মিলয়ন ডলার কোয়েশ্চেন।
আমাদের লাস্ট স্টপেজ, নিউ ইয়র্কে। এখানে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফ্লাই করব। ফ্লাইট রাতে। সকাল থেকে অযথাই রুমে বসে আছি। অযথা ঠিক না, স্মৃতি রোমন্থন করেছি আর যত সব ফ্যান্টাসি টাইপ চিন্তা করেছি। রাস্তায় বেরিয়েছি আর হঠাৎ করে নীলার সাথে দেখা কিংবা মোন ম্যাকডোনাল্ডে খেতে গেছি আর দেখি নীলাও ওখানে বার্গার নিয়ে বসে আছে।
এসব চিন্তা করে ঘন্টা পাঁচেক পার করলাম। ট্যুরে বাকী যে ডাক্তাররা ছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন। কাছেই কি একটা সাইট ছিল। এখন যাচ্ছে একটা শপিং মলে। কেনাকাটা করবেন। আমাকে অফার করেছিলেন, আমি রাজী হইনি।
এখন অবশ্য খারাপ লাগছে। গেলেই পারতাম। হয়তো… ইয়েস, রুপকথা টাইপ চিন্তাই মাথায় ঘুরছে সকাল থেকে। এনিওয়ে, আজকের দিনের সকল কাজের সারাংশ হচ্ছে, এই মুহুর্তে আমি একা রুমে বসে। আপাততঃ তেমন কোন কাজ নেই। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি, সময়টা কাটতে চাইছে না। তারচেয়েও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, একটা উৎকন্ঠা ভেতরে ভেতরে কাজ করছে। এতোক্ষণ যেসব ফ্যান্টাসি ভাবছিলাম, উইল ইট হ্যাপেন? কোনভাবে কি এই কয় ঘন্টায় নীলার সাথে দেখা হতে পারে?
যুক্তি বলছে, এক উপায়েই ব্যাপারটা সম্ভব, যদি আমি নীলার বাসায় যাই। ঠিকানা আছে। ট্যাক্সি ভাড়া করবার পয়সাও আছে। নেই কেবল অনুমুতি। ইয়েস, আমার মনের অনুমুতি। এই একটা ব্যাপারে আমি অটল অবস্থান নিয়েছি, অন্ততঃ এখন পর্যন্ত, নীলার বাসায় আমি যাব না। এই জেদের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব না। মে বি অভিমান, মে বি ইগো। বাট আই থিঙ্ক… আমি মিন আমি নিজেকে যতটা চিনি তাতে আমার কাছে মোস্ট লাইকলি কজ মে বি, ওটা সোহেলেরও বাসা। যার কাছে আমি পরাজিত হয়েছি।
নিজের অজান্তেই কখন যে পায়চারী করতে শুরু করেছি, বলতে পারব না। যখন খেয়াল হল, তখন নিজেকে কড়া করে একটা বকা দিলাম। ‘বিহেভ ইওরসেলফ।’
বকাটা দেয়ার আরও একটা কারণ আছে। টু ইয়ারস পাসড। আর এই দুই বছরে কাহিনী তো সেই দুবছর আগের অবস্থানে আটকে নেই। নীলার জীবন যেমন এগিয়েছে, আমার জীবনও তো এগিয়ে গেছে। হয়তও নীলার মত সুখকর এগিয়ে যাওয়া না, বাট জীবন থেমে তো থাকেনি।
নীলা চলে যাওয়ার পরে প্রথম কিছুদিন ডিপ্রেশান কাজ করেছিল। স্বাভাবিক। প্রথম বিয়ে, প্রথম প্রেমও। সেটায় ব্যার্থতা। অ্যান্ড উইদাউট মাই ফল্ট। ডিপ্রেশান স্বাভাবিক। মানুষের দরদ ভরা দৃষ্টি। উপদেশ বাণী। কখনও নীলার উদ্দেশ্যে আজেবাজে সব কমেন্ট। ঘুরে ফিরে ঘটনাটা ভুলতে দিচ্ছিল না। তবে মাস ছয়েক। এরপরে ধীরে ধীরে, ইয়েস, একটা সময় পরে, ডিপ্রেশান থেকে বের হয়েও আসতে পারলাম। বন্ধুরা হেল্প করেছিল।
তবে বেশি হেল্প করেছিল, আমার কাজ। নিজেকে সামলে নিতে তখন দিন রাত খাটতে লাগলাম। ততোদিনে ডাক্তার হিসেবে বেশ কিছু নাম ডাকও হয়েছে। ফলে রুগীও বাড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্তই হাসপাতালে থাকতাম। দুপুরে খাওয়া আর রেষ্ট নেয়া হাসপাতালেই সারতে লাগলাম। রাতেও ক্যান্টিনে খেয়ে বাসায় ফিরতাম। আর এতোটাই টায়ার্ড হয়ে বাসায় ফিরতাম যে ঘুমে চোখ ঢুলে আসত।

এভাবেই চলছিল। এমন সময় জেসমিন আসে জীবনে। নাহ, প্রেম না। মেয়েটা ডাক্তার। উইডো। ভালবেসেই বিয়ে হয়েছিল। অ্যান্ড দেন? বিয়ের মাস ছয়েকের ভেতরেই স্বামী মারা যায়। কিডনী ফেইলিওর। এরপরে কিছুদিন শোক পালন। অতঃপর, হাউজ উয়াইফ জীবনের ইতি টেনে চাকরি খোঁজা শুরু। আমাদের হাসপাতালে যখন যোগ দেয়, তখন আমি ডিপ্রেশান স্টেজ থেকে বের হব হব করছি।
শি ইজ গুড লুকিং। ভদ্র অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি ওয়েল বিহেভড। উইডো না হলে এই মেয়েকে ইম্প্রেস করতে ছেলে গুলো কিউতে দাঁড়াত। ইভেন ইউডো হও য়া সত্ত্বেও হাসপাতালের অনেক ছেলে ডাক্তারই ওকে পছন্দ করে। দুএকজন সম্ভবতঃ প্রপোজও করেছে। আমি অবশ্যে সেই কিউতে ছিলাম না।
বাট ওয়ানডে… ইয়েস, একদিন ওর সম্পর্কে আমার মায়ের কাছে রিপোর্ট পাঠায় আমাদের হাসপাতালের এক কলিগ। শুভাকাংখী টাইপ। উদ্দেশ্যও খারাপ ছিল না। ফোনে জানায়, 'দারুণ সুন্দরী একটা মেয়ে আছে, ভদ্র ফ্যামিলির তবে বিধবা। এই ব্যাপারটা যদি কনসিডার করেন তবে ইমরানের সাথে বিয়ে দেয়া যায়।’
এরপরে যা হয় আর কি। পুত্রদায়গ্রস্থ মাতা হঠাৎ একদিন এসে হাজির আমাদের হাসপাতালে। এসে যথারীতি মেয়ে দেখা সারলেন। ইনিয়ে বিনিয়ে জানতে চাইলেন, আমাকে জেসমিনের কেমন লাগে অ্যান্ড অল দ্যাট। দেন? ইয়েস ইট হ্যাপেন্ড। অপছন্দ হওয়ার মত মেয়ে জেসমিন না, ফলে মা তার তরফ থেকে মত দিয়ে গেলেন।
হঠাৎ করে আবিস্কার করলাম, জেসমিন আমার সাথে কেমন অন্যভাবে কথা বলছে। কিছুটা অধিকারবোধ টাইপ। 'আমি খেয়েছি কি না’ 'বুয়া ঠিকমত আসছে কি না’ এসব আর কি। মনে হল, শি ইজ ইন্টেরেস্টেড। অ্যান্ড অনেস্টলি স্পীকিং, ব্যাপারটা আমারও খারাপ লাগত না। ফলে আমার জীবনে আরেকটা সেটল ম্যারেজের সম্ভাবনা হব হব করতে শুরু করল।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, মাকে পাঠাবো ওদের বাসায়। ফর্মাল প্রোপোজাল দিতে। ঘটনাটা মাস দুয়েক আগের। কাজটা কেন ঝুলে আছে, আই রিয়্যেলি ডোন্ট নো। কিছুটা লজ্জা কাজ করছে হয়তো, বাট দ্যাটস নট অল। মনের কোনে কোথাও একটা ভয় কাজ করছিল। প্রথম বিয়ের অভিজ্ঞতাজনিত ভীতি। কিংবা তিক্ততা। নাকি নীলাকে ভুলতে না পারা? নট সিওর।
এনিওয়ে, এই আমেরিকা ট্যুরে নীলাকে কেন এক্সপেক্ট করছিলাম, জানি না। আমার আসবার কোন খবর ওকে দিইনি। ওর ফোন আছে কি নেই, জানি না। ফেসবুক কিংবা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ওর বিচরণ থাকলেও তা আমার অজানা। আমিও এসবে খুব রেগুলার না। হ্যা, মেইলটা ইউজ করি।
সো আমার জানা মতে, আমার আমেরিকা আসবার তথ্য জানবার তেমন কোন সুযোগ বা সম্ভাবনা নীলার নেই। আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ও একটাই মেইল করেছিল আমাকে। যথারীতি সেই মেইলের উত্তর আমি দিইনি। আরও মেইল করবার ইচ্ছে ওর ছিল কি না জানিনা, থাকলেও আমার তরফ থেকে উত্তর না পাওয়ায় নীলা বুঝে যায়, দ্যা স্টোরী ইজ ওভার। সো, শি স্টপড।
আমার অস্থিরতার কারণটা এখন বুঝতে পারছি। ঐ মেইলটাই হচ্ছে সব নষ্টের গোড়া। ওটাতে ঠিকানা লেখা আছে বলেই মনে মনে একটা ইচ্ছে গজিয়ে উঠছে, 'একবার ওর সাথে দেখা করি'। ব্রুকলীনেই তো আছে। মেইলে একবার নজর বুলালেই পুরো ঠিকানাটা জেনে যাব। জিপিএসে চেক করলে হয়তও দেখা যাবে বাসাটা খুব কাছেই। দু একটা রোড পরেই ওর অ্যাপার্টমেন্ট। হয়তো দেখা যাব আমাকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে বলবে, ‘হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ!’ এরপরে সেই দুষ্টুমীভরা হাসি হেসে বলবে, 'পারলে না তো?’
আমি নিজেকে চিনি। আর কিছুক্ষণের ভেতরেই জেদে ভাটা পড়বে। ওর বাসায় একবারের জন্য যাওয়ার কিছু একটা যুক্তি বের করে ফেলব। ‘বিয়ের খবরটা দিয়ে আসি’ কিংবা ‘দেখে আসি ও কেমন সুখি হয়েছে’। অ্যান্ড দেন… নাহ। আই হ্যাভ টু কিল দ্যা র‍্যাট। সম্ভাবনাটাকে অংকুরেই বিনষ্ট করতে হবে।
মোবাইল ফোনটা হাতে নিলাম। আঙ্গুল এগিয়ে নিলাম মেইল আইকনটায়। চলে গেলাম সেই মেইলে। মেইলটা সিলেক্ট করে সোজা ডিলিট চাপলাম। এরপরে ট্র্যাশ থেকেও। কিন্তু এর মধ্যেই যা ব্লান্ডার করার তা করে ফেলেছি। ঐ এক মুহুর্তের নজরেই মনে গেঁথে গেছে স্ট্রীট আর অ্যাপার্টমেন্ট নাম্বার। এখন?
ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান। আবার শুরু করতে হবে নিজের সাথে যুদ্ধ। ঘড়ি দেখলাম। আর ঘন্টা পাঁচেক। এই কটা ঘন্টা পার করতে পারলে, আই অ্যাম সেফ। টিভি ছাড়লাম।
অ্যান্ড দেন একটা মেইল আসবার নোটিফিকেশানের টোন বাজল আমার মোবাইলে। রিফ্লেক্স অ্যাকশানেই বোধহয় ফোনটা তুলে নিলাম। ইয়েস, দ্যা ইম্পসিবল হ্যাপেন্ড। ইটস নীলা। যথারীতি ছোট্ট একলাইনের মেইল
‘ একটু নীচে আসবে? লবিতে’

চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:৩১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Good

২| ১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:৩৮

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: বাহ্ কি সাসপেন্ডরে ভাই! আছি সাথে পরের পর্বে কি ঘটে অপেক্ষায়।

৩| ১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটা পর্বের সাথে আগের পর্বের লিঙ্ক দিয়ে দিবেন প্লীজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.