নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি (১৮ তম পর্ব)

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৫৮

১৮

টিকিট আর পাসপোর্টটা হাতে নিয়ে হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি করব ভাবছিলাম এমন সময় পাশে এসে দাঁড়াল শিশির। ও আমাদের সাথেই এসেছিল। আমি স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছি দেখে জানতে চাইল
— আপনার না দুদিন পরে যাওয়ার কথা?
অবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকালাম। শিশিরও জানে আমার টিকিট দুদিন পরে? আর আমিই জানি না? কিভাবে কি হল, কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথাটা এখনও ঘুরছে। মহিলা যখন ‘সরি' বললেন, তখন এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল, মাই ফেট ইজ সিলড। আই লস্ট হার।
বাট, গল্পের মজাদার এক টুইস্ট তখন অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। এরপরে মহিলা যে কথাটা বললেন তার জন্য আমি একেবারেই তৈরি ছিলাম না। তারচেয়েও অবাক করা ব্যাপার ছিল আমার রিয়াকশান। এয়ারপোর্টে এসে কেউ যদি এমন তথ্য জানতে পারে, তার কেমন লাগবে? রাগ হবে? হতবাক হবে? না আমার মত আনন্দে আত্মহারা হবে?
অনেস্টলি স্পীকিং, মহিলা যখন জানালেন আমার টিকিট দুদিন পরের, সত্যি বলতে আমি তখন আকাশ থেকে পড়লেও, খুশিতে ডগমগ হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও মহিলাকে আমার প্রশ্ন ওঠা উচিৎ ছিল হাও ইজ ইট পসিবল, তা না করে বলে উঠলাম, ‘থ্যাঙ্ক গড'।
এরপরের ধাক্কাটা খেলাম শিশিরের কথায়। টিকিটের ডেট যদিও আমি দেখিনি, বাট স্পস্ট মনে আছে আমি ওদের জানিয়েছিলাম, সবাই যেদিন ফিরবে, আমিও সেদিন ফিরব। আর সবার ফেরার কথা আজকে। সো, আই ওয়াজ এক্সপেক্টিং, আমার টিকিটও আজকের ডেটেই কাটা। বাট… হ্যাং অন, শিশির আমার টিকিটের ডেট জানল কি করে?
— আমার দুদিন পরে যাওয়ার কথা?
— হ্যা। আপনিই তো ট্রাভেল এজেন্সিকে মেইল করেছিলেন, যে আপনি নিউ ইয়র্কে আরও দুদিন স্টে করতে চান। সেজন্যই তো আপনাকে আমরা ডাকিনি।
এবার বেশ বড়সড় ধাক্কা খেলাম। এখানে কোন আত্মীয় স্বজন নেই, আর একা একা ঘোরাঘুরির মত বোরিং ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না, তাই এখানে দুদিন স্টে করার প্রশ্নই ওঠে না। অন্য কারো সাথে কি ট্র্যাভেল এজেন্ট আমাকে গুলিয়েছে? নট সিওর, তবে মন বলছে সামথিং ইজ রং। কিন্তু কি সেই রং, তা নিয়ে পরে ভাবব। আপাততঃ থ্যাঙ্কস ফ্যাঙ্কস দিয়ে শিশিরকে বিদায় করলাম। ও জানাল, ওদের বোর্ডিং পাস ইস্যু হয়ে গেছে।
কেমন একটা রিলাক্স ভাব কাজ করছে। মনে মনে খুশী হলেও ব্যাপারটা কিভাবে হল, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ক্লারিক্যাল মিসটেক হতে পারে? অন্য কেউ হয়তো দুদিন পরের টিকিট কাটতে বলেছিলেন, আর ট্রাভেল এজেন্সি আমারটা কেটে দিয়েছে? আনলাইকলি, বাট পসিবল।
এনিওয়ে, বেশ রিলিভড একটা ফিলিং নিয়ে কিউ থেকে বেরিয়ে আসলাম। সো, আই হ্যাভ টু ডে মোর। কি করব এখন? কিছুক্ষণ আগের ফিলিংটা এখন কিছুটা স্তিমিত। নীলার কাছে এক্ষুনি যেতে হবে, ব্যাপারটা এই মুহুর্তে কাজ করছে না। ফিরে এসেছে পুরনো হেজিটেশান।
নীলার ওখানে যাওয়া কি ঠিক হবে? না হোটেলে যাব? বাট, হোটেল তো ছেড়ে দিয়েছি। এখন গেলে কি একটা রুম ফাঁকা পাব? এতো রাতে নীলার বাসায় লাগেজ সহ যাওয়া কি ঠিক হবে? ওয়েডিং রিং পরে থাকার মানে কি শি ইজ ওয়েটিং ফর মি? এমনও তো হতে পারে, যেহেতু সোহেলের সাথে লিভ ইন করছে, তাই নতুন কোন ওয়েডিং রিং পায়নি, আর তাই শি জাস্ট কেপ্ট ইট। এমনও তো হতে পারেশালের মত রিংটাও পড়ে এসেছিল, জাস্ট টু মেক মি হ্যাপি। তেমন কিছু ভেবে ওটা পড়েনি। কিংবা এটাও তো হতে পারে আংটি টাইট হয়ে গেছে, বেরোচ্ছে না।
কখন যে লাগেজ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এয়ারপোর্টের বাইরে চলে এসেছি বলতে পারব না। যখন সম্বিত ফিরে পেলাম তখন বুঝতে পারলাম, এভাবে বোকার মত এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকবার কোন মানে হয় না। আমাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নীলা? না হোটেল?
এমন সিচুয়েশানে যা হয়, আমার ভেতরেও তাই হচ্ছে। কম্প্রোমাইজ ফর্মুলার দিকেই মন টানছে। প্রথমে হোটেলেই যাই, ওখানে গিয়ে যদি দেখি হোটেলে সিট নেই, দেন... । এটাই সাব্যস্ত করলাম। এখন কেবল একটা ট্যাক্সি দরকার।
এমন সময় মোবাইলে ইমেইল নোটিফিকেশান আসল। স্মার্ট ফোনটায় প্রিভিউ ভেসে উঠল। নীলা মেইল করেছে। থ্যাঙ্ক গড। দ্রুত মেইল খুললাম। একটা লাইন লেখা। ‘তুমি কোথায়? রিং মি’ এরপরে একটা মোবাইল নম্বর। মোস্ট লাইকলি, এটা ওর নম্বর।
সবকিছু এতো দ্রুত ঘটছে যে অবাক হওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি। জীবনে কখনও এতো টুইস্ট অ্যান্ড টার্নের ভেতর দিয়ে গেছি কি না বলতে পারব না। কি হচ্ছে আজকে সব।
এনিওয়ে অবাক হওয়ার সময়ে এখন নেই। নীলার দেয়া নম্বরে দ্রুত ফোন করলাম। আমি কিছু বলার আগেই নীলা বলে উঠল
— যেখানে আছ, ওখানেই থাক, আমি আসছি।
কি পাগল মেয়ে রে বাবা। আগে তো সিওর হবে আমি ফোন করেছি কি না। কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তার আগেই নীলা লাইন কেটে দিল। কিংকর্তব্যবিমুঢ় বলতে যা বোঝায়, আমার অবস্থা এখন সেটাই। লাগেজ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। একটা ট্যাক্সি পাশে এসে দাড়িয়েছিল, না বললাম। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি এমন সময় দেখলাম একটা গাড়ী ঠিক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। নট সিওর, তবে মনে হল, এটা নীলার গাড়ী হতে পারে। একটু কাছে আসতে দেখা গেল নীলাকে। নিজের অজান্তেই স্বস্তির একটা নিশ্বাস বেরিয়ে আসল।
দ্যাট মিনস, আমি যে এখন এয়ারপোর্টে, ও সেটা জানত। অ্যান্ড আমাকে পিক করতেই ও এসেছে। মনটা আনন্দে নেচে উঠতে যাচ্ছিল, এমন সময় নজর পড়ল ড্রাইভিং সিটে। সোহেল ইজ ড্রাইভিং। ও, নো। নট এগেইন।
বড়সড় ধাক্কাটা হজম করার চেস্টা করছি। ওরা একসাথে কেন? দ্যাট মিনস, যা ভাবছিলাম, নাথিং লাইক দ্যাট। ওয়েডিং রিং পড়ে থাকা জাস্ট ড্রেস আপের অংশ? ডাজন্ট মিন এনিথিং? এক মুহুর্তের জন্য মনে হল, পায়ের নীচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
গাড়ীটা আমার পাশে এসে দাঁড়াল। নীলার মুখ রাগে থমথম করছে। সোহেল দ্রুত ড্রাইভিং সিট থেকে নামল, এগিয়ে গিয়ে বনেট খুলল।
— আমাকে দিন।
আমিও রোবটের মত এগিয়ে গিয়ে লাগেজ ওর হাতে তুলে দিলাম।
— উঠে পড়ুন।
আমার রোবট অবস্থা তখনও কন্টিনিউ করছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে পেছনের সিটে বসলাম। সোহেলও ড্রাইভিং সিটে এসে বসল। নিজেকে তখনও সামলে নিতে পারিনি, বাট আই থিঙ্ক, রিয়াকশান হিসেবেই, থ্যাঙ্কস টাইপ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় নীলা বলে উঠল
— তুমি একটা কি? টিকিটের ডেটটা দেখবা না?
ও, এই ব্যাপার? এক মুহুর্তে সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে গেল। সো, আমার দুদিন পরের ডেটে টিকিট কাটবার ব্যাপারটা ওয়াজ নট অ্যা ক্লারিক্যাল মিসটেক দেন। নীলা ডিড ইট। ও শুধু আমার মেইল চেকই করত না, আমার হয়ে মেইলও করত। অ্যান্ড আই গেস, আমাকে আমেরিকায় আসবার ব্যাপারটা যে কোম্পানী স্পন্সর করেছে, তাকে ও একটা মেইক করে আর সেটায় ও জানায়, আমি দুদিন পরে যেতে চাই। আর তাই ওরা দুদিন পরের টিকিট কাটে।
পুরো ব্যাপারটা রিয়ালাইজ করে কেমন একটা রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। প্রায় ক্যান্সেল হওয়া একটা ডেট আবার ফিরে যেমন লাগে আর কি। ভাল লাগা সারা মন জুড়ে ছড়িয়ে গেল। ওর মেইল করা ব্যাপারটায় না রেগে কেন যেন আনন্দ হচ্ছিল। শি ওয়ান্টেড মি টু স্টে টু মোর ডেজ?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?
— কি হল?
আমি কোন কথা বলছি না দেখে নীলা আবার কথা বলে উঠল। এবার উত্তর দেয়া দরকার। বললাম
— পাজল মেলাচ্ছি।
আই গেস, নীলাও বুঝে গেল আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি। স্মিত হেসে উত্তর দিল
— তুমি কিন্তু এখনও মেইলের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করনি।
এরপরে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— আই ক্যান্ট গ্যারান্টি এনিথিং।
প্রত্যুত্তরে আমিও একটা স্মিত হাসি দিলাম। মেইলের পাসওয়ার্ড এই মুহুর্তে আমার কনসার্ন না। আমার প্রথম কনসার্ন হচ্ছে সোহেল। হু ইজ হি? মিস্টার নীলা? ওর… মিস্টার এক্স?
সমস্যা হচ্ছে ব্যাপারটা সরাসরি জিজ্ঞেস করাও সম্ভব না। ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা যায়। নীলাকে যতটা চিনি, ব্যাপারটা টের পেলে ও ডাবল মিনিং টাইপ উত্তর দেবে। এদিক দিয়ে সোহেল অনেক সেফ। যদি সোহেলকে আদৌ উত্তর দিতে দেয়। তারপরও ট্রাই করলাম
— আমরা কোথায় যাচ্ছি?
সোহেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেও উত্তরটা দিল নীলা। ঠিক উত্তর না, মৃদু তিরস্কার। বলল
— জানা জরুরী?
সো, ও বলবে না। ঠিক আমাকে গেস করতে বলছে, এমন না। কেন যেন মনে হল, ও বোঝাতে চাইছে, দ্যা অ্যানসার ইজ সামথিং ইনেভিটেবল। মন বলছে, নীলার বাসায় যাচ্ছি।
আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। ব্রেনের ওপর অনেক ধকল গেছে। আর না। যা হয় হবে। নিজেকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম। সামনের দিকে না তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। রাতের নিউ ইয়র্ক দেখতে লাগলাম। এমন সময় একটা আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম
— উই ওয়্যার জাস্ট টেন মিনিট লেট।
এবার সোহেল কথাটা বলল। উত্তরে 'কোথায় লেট?’ কথাটা বলতে গিয়েও নিজেকে থামালাম। হার্ট মনে হল এক মুহুর্তের জন্য থেমে গেল। কানের ভেতর বাজছে একটা ওয়ার্ড, 'উই'।

চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ২:১২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: একটা ছোট্ট শব্দ দিয়ে কাহিনীর রেশটা সুন্দরভাবে ধরে রাখলেন। উই মানে আমরা। ওকে, আমরাও পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

২| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:২৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর সুন্দর ট্রার্নগুলো বেশ লাগছে। তবে গল্পের রেশ সম্মোহিত করে আছে পুরো গল্পটি পড়ার পরেই হয়তো ঘুড়টা কাটবে। আবারো পরের পর্বের অপেক্ষা।

৩| ২৪ শে মে, ২০১৮ ভোর ৪:৩৪

নিশাচড় বলেছেন: সময়ের অভাবে পুরোটা পড়তে পরিনি। নিচের দিখে টানছে বারবার। আরোকবার পুরোটা শেষ করবো।

৪| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.