নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের স্বপ্নগুলো স্বপ্নেই ভেসে বেড়ায়...বাস্তবে ধরা দেয় না!, তবুও স্বপ্ন দেখি...ঘুম থেকে জেগে উঠি, আশায় বুক বাঁধি ...ভুল-ত্রুটি শুধরে নতুনে পথ চলার।

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত)

আমি ভালবাসি কবিতা, গান, আবৃত্তি------- আর ঘুরে বেড়ানো।জীবনের স্বপ্নগুলো স্বপ্নেই ভেসে বেড়ায়...বাস্তবে ধরা দেয় না!, তবুও স্বপ্ন দেখি...ঘুম থেকে জেগে উঠি আশায় বুক বাঁধি ...ভুল-ত্রুটি শুধরে নতুনে পথ চলার।

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘মৃত করিমের হাড্ডি নিয়েও একদিন ব্যবসা হবে’

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২২

তথ্যসূত্রঃ রুদ্র হক, বিনোদন করেসপন্ডেন্ট, বাংলামেইল২৪ডটকম/ ২১৩৮ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩



ঢাকা: শাহ আবদুল করিম বাউল ছিলেন কি ছিলেন না তা নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে তার গান, জীবন দর্শন অনুসন্ধানে ব্রত হওয়াই শ্রেয়।১৯৯৭ সালের ২০ আগস্ট কবি এটিএম আহমেদ কায়সার শাহ আব্দুল করিমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। হাওর অঞ্চল তখন অথৈ জলে ভাসছে। এর মধ্যে আহমেদ কায়সারসহ আরো তিন জন উপস্থিত হলেন তার বাড়িতে। তিনি তখন আশি ঊর্ধ্ব,বয়সের জরা জীর্ণতায় দিনাতিপাত করছেন। একজন মহান সাধক তার সমস্ত জীবন সুর সারিন্দায় মানুষের মঙ্গল কামনা করে গেছেন। গেয়েছেন মানবতার গান। যার গানে লক্ষ্য কোটি মানুষ উদ্বেলিত হয় তিনি বসেছিলেন সর্বহারার মতো তার জরাজীর্ণ এক ঘরে।



সাক্ষাৎকারটি গ্রহণকালে আবদুল করিম বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আবেগ সামলে অবলীলায় বলে গেছেন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও উপলব্ধির বিবরণ। দেশ সমাজ রাষ্ট্রের সমালোচনা যেমন করেছেন তেমনি তার স্বপ্নের কথাও বলেছেন। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ সাক্ষাৎকারটি পরে খোয়াব নামে একটি লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য এ মহান সাধকের মৃত্যুদিনে তা পুনঃপ্রকাশিত হলো।



সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় এটিএম আহমেদ কাযসার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘খোয়াব’ সম্পাদক হাবিবুর রহমান এনার, ‘বিকাশ’ সম্পাদক মোস্তাক আহমাদ দীন ও মঞ্জু রহমান লেবু।



করিম ভাই,ব্যক্তিগত বিষয় দিয়েই শুরু করি,আপনার বয়স এখন কতো?

আমার জন্ম ১৩২২ বাংলার ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার। বোধহয় আশির কোঠা পেরিয়ে এসেছি ইতিমধ্যে।



যমদূতের চোখটাকে ও ফাঁকি দিয়ে রীতিমত…।করিম ভাই,আপনার পরিবার নিয়ে কিছু বলুন এবার…



(গানের সুরে)

পিতার নাম ইব্রাহিম আলী মাতা নাইওরজান

ওস্তাদ ছমরুমিয়া মুন্সী পড়াইলেন কোরান।

বাউল ফকির আমি, একতারা সম্বল

সরলা সঙ্গিনী নিয়ে আছি উজানধল।।

নূরজালাল নামে মোর আছে এক ছেলে…



আপনার সন্তান কি একজনই?

হ্যাঁ। এক ছেলে মাত্র। ১৩৭১এ ওর জন্ম।



আপনার স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলুন।

আমার স্ত্রীর নাম আফতাবুন্নেসা। আমি ডাকতাম সরলা নামে। আমার ‘আফতাবসঙ্গীত’ বইটি এই আফতাবুন্নেসার নাম অনুসারেই রাখা।আজকের এই করিম কখনোই করিম হয়ে উঠতে পারতো না যদি কপালের ফেরে সরলার মতো বউ না পেতাম। আমি সরলাকে এখনো মুর্শিদ জ্ঞান করি। দীর্ঘ বাউলজীবনে দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, সরলা তার ন্যূনতম কষ্টও আমাকে বুঝতে দেয়নি। পোড়া কপাল আমার, এমন বউকে ধরে রাখতে পারিনি। মৃত্যুই তার সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়েছে।



আমরা এবার আপনার নিজের সম্পর্কে জানতে চাইবো। কীভাবে শুরু করলেন? ক্যামনেইবা গানের জগতে আসলেন?

একেতো ভাটি অঞ্চল, এই যুগেও দেখেন যোগাযোগ,শিক্ষা-দীক্ষায় কতো অবহেলিত,উপেক্ষিত। তখনকার যুগে তো লেখাপড়া করা ভয়ানক কষ্টের ব্যাপার ছিল। ছোটবেলায় দুঃখ যে কি জিনিস,দারিদ্র্য যে কি জিনিস মর্মে মর্মে টের পেয়েছিলাম। আমার মা চাইতেন একটু পড়ালেখা করি। বাবা যদিও এক অর্থে ছিলেন খুবই সরল-সোজা, তবু জীবনের কুৎসিত বাস্তবতার রূপটাও তার জানা ছিল ভালোই। তাই প্রায়ই বলতেন- ‘আগে অইলো খাইয়া বাঁচা। বাদে পড়ালেখা’। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি। বেঁচে থাকার জন্য মোড়লের ঘরে গরু রাখালের কাজ করেছি। পরে নৈশ্য বিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশুনা করেছি। ইতিমধ্যে বিশ্বযুদ্ধের গুজব উঠলে সবাই বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। ফলে নিজের চেষ্টায় যতটুকু পারি নিজের বুঝবাঝটুকু সেরে নিয়েছি। আর গান তো ছিল রক্তের ভেতর। ‘ভাবিয়া দেখো মনে, মাটির সারিন্দারে বাজায় কোনজনে’ এরকম গান শুনতাম আগে। গাইতামও। খুব দাগ কাটতো মনে। মাঠে গরু রাখতে রাখতে গান গাইতাম। রাখাল বন্ধুরা তখন গোল হয়ে গান শুনতো। আস্তে আস্তে গান আমাকে কব্জা করতে শুরু করে। আমি বুঝে যাই, সারিন্দাই আমার প্রথম ও শেষ।



তখন গান গাওয়া নিয়ে সমস্যা হতোনা?

হতো না মানে? শুক্রবারে মসজিদে পর্যন্ত কথা ওঠে। মুসল্লিরা অভিযোগ করেন,করিম বেশরিয়তি কাজ-কারবার শুরু করেছে। অচিরেই তা বন্ধ করতে হবে। আমি থামিনি। গান তো মিশে গিয়েছিল অস্থি-মজ্জায়,ক্যামনে থামি।



তবে একটা ব্যাপার ছিল তখন। গানের দুশমন যতো ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল গানের ভক্তকুল। বাউলাগানের আসর শুনলেই মানুষ আট/দশ মাইল পথ হেঁটে আসতো অনায়াসে। গান শুনতো খুব মনোযোগ দিয়ে। প্যান্ডেলের কোথাও কোনো হট্টগোলের আভাস পাওয়া গেলে যখন মঞ্চে উঠে বলেছি ‘গান শুনতে চান না ঝগড়া করবেন আপনারা?’ ওমনি সব গোলমাল থেমে যেতো। এখন সেই ভক্তকুল নেই,সেই পরিবেশ নেই, সেই মানুষও নেই।



আপনার একটা বিখ্যাত গানই আছে যেখানে বর্তমান ও অতীতের একটা চমৎকার তুলনা টেনে এনেছিলেন। গানের প্রথম দিকটা বোধ হয় এইরকম: ’গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান/মিলিয়া বাউলাগান আর মুর্শিদী গাইতাম/আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।‘ সন্দেহ নেই, গানটা মর্মস্পর্শী। কিন্তু একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়,মনে হয় আপনি যেন তুলনামুলকভাবে অতীতমুখী;বর্তমান আপনার কাছে বিশ্রী এবং বিভৎস। বর্তমান থেকে এরকম মুখ ফেরালেন কেন?

বর্তমান আমার কাছে গৌণ কোনো বিষয় নয়। আমার চোখের সামনে এই পরিবেশ-পরিপার্শ্ব আমূল বদলে গেছে। নগরায়ন ও যন্ত্রসভ্যতার বিকাশ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে পরিবর্তন করেছে। আমি একে খারাপ চোখে দেখি না। কিন্তু আমার কান্না পায়, ভেতরে তীব্র হাহাকার অনুভব করি চোখের সামনে অবিকল যন্ত্র হয়ে উঠলো মানুষগুলো। ‘মন’ বলতে আমরা যে জিনিসটাকে বুঝাই সেটার চিহ্নমাত্রও থাকলোনা আর ।তাছাড়া সবচেয়ে আক্ষেপ লাগে যখন দেখি এই বিজ্ঞান বা যন্ত্রসভ্যতার ফল ভোগ করছে কয়েকজন হাতেগোনা কোটিপতি। এই যন্ত্রসভ্যতা ফলত ধনী-গরিবের মধ্যকার বৈষম্যকে আকাশ-পাতাল পর্যায়ে উন্নীত করেছে। আপনারা আমার গাঁয়ে এসেছেন, দেখে যান এখানে, এই বিশাল ভাটি অঞ্চলজুড়ে মানুষগুলো কি অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বাস করে। মাঝেমাঝে শহরে স্তম্ভিত হয়ে এই ব্যবধান লক্ষ্য করি। লোকে কয়, আমি নিরন্ন দুস্থ মানুষের কবি। আমি আসলে তাক ধরে দুস্থদের জন্য কিছু লিখিনি। আমি শুধু নিজের কথা বলে যাই,ভাটি অঞ্চলের একজন বঞ্চিত নিঃস্ব দুঃখী মানুষ আমি, আমার কথা সব হাভাতে মানুষের কথা হয়ে যায়… দ্যাখেন তো এই অঞ্চল ঘুরে, মানুষের আয়ের কোনো উৎস আছে কি না?( করিম শাহ ক্রমশঃ উত্তেজিত এবং তার চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠছে।) চারদিকে ভাসান পানি। জলে থৈথৈ করছে প্রতিটি বাড়ির উঠান। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? (করিম শাহের চোখে অশ্রুধারা) দিনে তিনবেলা নয়, শুধু একবেলা যদি দু’মুঠো খেতে না পারে, এই জন্ম কি মানুষের জন্ম?



জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে বলো ওগো সাঁই (গানের সুরে)

এই জীবনে যত দুঃখ কে দিয়াছে বলো তাই।

দোষ করিলে বিচার আছে,সেই ব্যবস্থা রয়ে গেছে

দয়া চাই না তোমার কাছে আমরা উচিৎ বিচার চাই।

দোষী হলে বিচারে সাজা দিবা তো পরে

এখন মারো অনাহারে কোন বিচারে জানতে চাই?

দয়াল বলে নাম যায় শুনা,কথায় কাজে মিল পড়ে না

তোমার মান তুমি বুঝো না আমরা তো মান দিতেই চাই

তুমি আমি এক হইলে পাবে না কোনো গোলমালে

বাউল আব্দুল করিম বলে আমি তোমার গুণ গাই।।



(চোখ বন্ধ;চোখে অশ্রুধারা পূর্বাপর বহমান। পরিবেশ স্তব্দ,নীরবতা শুধু দীর্ঘ হয়।) আমি বেহেস্ত চাই না দোজখ চাই না,জীবিত অবস্থায় আমার ভাটি অঞ্চলের বিপন্ন মানুষের সুখ দেখতে চাই। এই মানুষগুলোর সুখ যারা কেড়ে নিয়েছে,আমার লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। একদা তত্ত্বের সাধনা করতাম। এখন দেখি তত্ত্ব নয়,নিঃস্ব বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। দেহতত্ত্ব, নিগুঢ়তত্ত্ব আর সোনার বাংলা, সোনার মানুষ বললেই হবে না। লোভী,শোষক, পাপাত্মাদের আঘাত করতে হবে।



তত্ত্বগান গেয়ে গেলেন যারা মরমী কবি

আমি তুলে ধরি দেশের দুঃখ দুর্দশার ছবি

বিপন্ন মানুষের দাবি করিম চায় শান্তির বিধান।।



একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনার এ যাবৎ লিখিত গানের সংখ্যা কতো?

দীর্ঘ পঞ্চাশেরও অধিক বছর ধরে গান লিখে যাচ্ছি। কতো যে লিখেছি তার হিসাব আমার কাছে নেই। গানগুলো সংরক্ষণ করার চিন্তা কখনো মাথায় জাগেনি। রচনা করার পর এগুলো গুছিয়ে লিখে রাখার অভ্যাসও ছিল না। এখন স্মরণশক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মগজের কোণে আমার অনেক গান চাপা পড়ে আছে। তাহলেও এ পর্যন্ত গানের পরিমাণ মোটামোটি দুই হাজারের অধিকতো হবেই।



আপনার কয়টা গানের বই প্রকাশিত হয়েছে অদ্যাবধি

পাঁচটা। ‘আফতাব সংগীত’ বেরোয় ১৩৫৬ বাংলায়। তারপর ‘গণসংগীত’,‘ কালনীর ঢেউ’,‘ধলমেলা’ এবং কিছুদিন পূর্বে ‘ভাটির চিঠি’।‘কালনীর কুলে’ নামে আরেকটা বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়ে আছে। এছাড়া বাংলা একাডেমী আমার দশটা গান ইংরেজি অনুবাদ করে বের করেছিল বেশ আগে।



আপনার সমসাময়িক বাউলদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

আমার সমসাময়িক কেউ এখন আর বেঁচে নেই। যাদের সঙ্গে গান করেছি তাদের মধ্যে সাত্তার মিয়া, কামালুদ্দিন, আবেদ আলী, মিরাজ আলী,বারেক মিয়া, মজিদ তালুকদার, দূরবীণ শাহ এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। এছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গান করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হয়েছে,তাদের সবার নাম এখন আর মনে নেই। তুলনামূলকভাবে আমার গাঢ় হৃদ্যতা ছিল নেত্রকোনার সাত্তার মিয়ার সঙ্গে। মজিদ একদা অন্যের গান নিজের নামে গাইতো। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতো, ‘গানটা গাইতেছে কে? হোক অন্যের; আমি যখন অন্যের গান করি তখন আমিও তো একইভাবের ভাবুক থাকি। আমার কথা আমি বলবো না কেনো?’। জালালউদ্দিন, উকিল মুন্সী আমার চাইতে বয়সে যদিও অনেক বড় ছিলেন তাদের সঙ্গেও আমি দু’এক আসরে গান করেছি। দূরবীণ শাহ তুলনামূলকভাবে তত্ত্বগানের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন বেশি। ১৯৬৭ সালে আমরা একসঙ্গে বিলাতে যাই ‘ইস্টার্ন ফিল্ম ক্লাব’র আমন্ত্রণে। তার গলা খুব একটা ভালো ছিল না, তার ওপর ঠাণ্ডার দেশ-ওখানে গিয়ে তো গলা একেবারে বসে যায়। উপায়ান্তর না দেখে দূরবীণ শাহর অনেক গান আমি নিজের কণ্ঠে গেয়েছি ওখানে।



বিলেত সফরের কোনো মজার অভিজ্ঞতা কি মনে আছে?

খুব একটা মনে নাই। তবে বিলাতের দিনগুলোর ওপর আমার একটা দীর্ঘ গান আছে যা ‘ভাটির চিঠি’ গ্রন্থে প্রকাশিত। বিলাতে সবচেয়ে যে ব্যাপারটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে,সেখানে মানুষ মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করে। একেবারে দরিদ্র যে সেও তার কাজের শেষে সমানতালে আনন্দফুর্তি করতে পারে। মোটামুটি একটা মানুষ্য জীবনের গ্যারান্টি সে পায়। অফিসের বড়কর্তারা আমাদের মতো ঘুষটুষ খায় বলে মনে হলো না। আমাদের অফিসগুলোর বড়কর্তারা তো ঘুষ ছাড়া মানুষকে পাত্তা পর্যন্ত দেয় না। আমি একবার রেডিওর একটা চেক ভাঙাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলাম। সেখানে যাবার পর আমি মানুষ গেছি না পশু গেছি এ ব্যাপারে নিজেরই কিছুটা সংশয় এসে গিয়েছিল। এই কি স্বাধীন দেশের অবস্থা!( করিম শাহ আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠছেন) আমার পাঞ্জাবি ছিড়া তো কি হয়েছে, আমি এই দেশের নাগরিক না? আমার লুঙ্গিতে না হয় তিনটা তালি বসানো, আমি তো ট্যাক্স ফাঁকি দেই না কখনো। এতো ব্যবধান, এতো বৈষম্য কেনো? মানুষই তো মানুষের কাছে যায়। আমি তো কোনো বন্যপশু যাইনি। বন্যপশুরও অনেক দাম আছে, এদেশে মানুষের কোনো দাম নেই, মানুষের কোনো ইজ্জত নেই।(করিম শাহর চোখ জলে টলোমল)



এই সুদীর্ঘ জীবনে আপনার কোনো প্রাপ্তির কথা বলুন যা আপনাকে মাঝেমধ্যে পুলকিত করে?

আমি কখনো কোনো প্রাপ্তির ধার ধারিনি। প্রাপ্তি সংবর্ধনা এগুলোর প্রতি আমার বিতৃষ্ণা ধরে গেছে। জীবনে এতো প্রতারিত হয়েছি যে নতুন করে প্রতারিত হতে ভয় লাগে। করিমকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কী দরকার আছে? করিমের গান তো বাংলার মাঠেঘাটে খুব ক্ষীণস্বরে হলেও গাওয়া হয় এখনো। আমার সংবর্ধনা পাবার কোনো দরকার নেই, আমার গানই আমার সংবর্ধনা। গানের ভেতর আমি কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া এখন জরুরি। নিঃস্ব পরিবারে জন্ম নিয়ে আমি এখনো নিঃস্বই থেকে গেছি, নিঃস্ব হবার যন্ত্রণাটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই। আমি আমার এলাকায় নিজের যথসামান্য সামর্থ্য নিয়ে ‘বাঁচতে চাই’ নামে একটা সংগঠন করেছি। আমার চাওয়াটা খুব সামান্য, দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে শুধু বেঁচে থাকা। এই অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে শোষকের দল।



প্রাপ্তির কথা যদি বলেন, সেটা অনেক হয়েছে। হোসেন সোহরাওয়ার্দী আমার গণসংগীত শুনে ১৮৫ টাকা দেন। শেখ মুজিব তখন দুর্নীতি দমন মন্ত্রী, গান শুনে এগারো’শ টাকা দিলেন আর বললেন ‘আপনার মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হবে। মুজিব ভাই বেঁচে থাকলে করিম ভাই বেঁচে থাকবে,ইনশাল্লাহ’। করিম ভাই জীর্ণ শরীর নিয়ে বেঁচে আছি, উপযুক্ত মর্যাদা কারে কয় এখনো বুঝিনি। উপযুক্ত মর্যাদার দরকার নাই,জীবনের প্রায় আশি বছর দুঃখ দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে এসেছি, বেঁচেইবা থাকবো আর কয়দিন, নতুন করে আর স্বপ্ন না দেখলেও চলবে। কিন্তু লাখ লাখ বঞ্চিত মানুষ,তাদের দিকে চোখ ফেরান একবার।



প্রাপ্তি, হায়রে প্রাপ্তি! দেশ স্বাধীনের পর সামাদ আজাদ সাহেব লোক পাঠান তার নির্বাচনী সভায় শুধু উপস্থিত হবার জন্য। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী রেখে ছুটে গেছি আমি। উপস্থিত দর্শকদের অনুরোধে গানও গেয়েছি। দর্শকরা বক্তৃতা চায়নি, সমস্বরে বলেছে ‘বক্তৃতা লাগতো নায়, ভোট আপ্নারেই দিমুনে, করিম ভাইর গান আরো দুইডা শুনান’। ক্ষমতায় গিয়ে এরা সব ভুলে যায়। দেশ,জনগণ সব মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার কথা বলে, সেটাও।



কিছুদিন পূর্বে হুমায়ূন আহমেদ টিভিতে আমার গান দিয়ে একটা প্যাকেজ প্রোগ্রাম করলেন। আমি এসবে যেতে চাই না,পারতপক্ষে এড়িয়ে চলি। তবু উনি আমার কাছে যে ব্যক্তিটিকে পাঠিয়েছিলেন তিনি সুনামগঞ্জেরই লোক, একেবারে জোঁকের মতোই ধরলেন আমার না গিয়ে কোনো উপায় থাকলো না। যাহোক আমি গেলাম। আমার সাক্ষাৎকার নিলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। ফিরে আসার সময় হুমায়ূন আহমেদ আমার সাথে সৌজন্যমূলক আলাপটুকু পর্যন্ত করলেন না। কিছু টাকা দিলেন,তাও ড্রাইভারের মারফত। বাউলরা কি এতোই অস্পৃশ্য? এভাবেই উপেক্ষিত থাকবে যুগের পর যুগ? হাওর অঞ্চলে বড় হয়েছি, অন্ততঃ মনটাতো ছোট নয়। শুধু টাকার জন্য কি আমি এতোদূর গিয়েছিলাম? টাকাকে বড় মনে করলে তো অনেক আগেই অনেক কিছু করে ফেলতে পারতাম। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটিয়েছি দিনের পর দিন, উপোস করার অভিজ্ঞতা আমার আছে, জীবনের শেষ দিকে এসে ক’টা টাকারে জন্য তো হঠাৎ লোভী হয়ে উঠতে পারি না। হুমায়ূন আহমেদ এমনকি অনুষ্ঠানটা কবে প্রচারিত হবে তারিখটাও আমাকে জানাননি। মানুষের কাছে কি মানুষের এতটুকু দামও থাকবে না? পরে যখন অনেকেই অনুষ্ঠান দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন,আমার খুব আঘাত লাগলো। কষ্ট পেলাম খুবই। আমি এইসব লোকদের ‘মরা গরুর হাড্ডির কারবারী’ বলে থাকি। জীবিত করিম আসলে কিছুই নয়, কিন্তু মৃত করিমের হাড্ডি নিয়েও একদিন ব্যবসা হবে, এটাই হলো এদেশের বাস্তবতা।



গান নিয়ে আমি দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি। ঢাকা, পাবনা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুমিল্লাসহ প্রায় সব জায়গায়। লন্ডনেও দু’বার গেছি। ১৯৬৭ ও ১৯৮৫ সালে। মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছি। সিলেট রোটারি ক্লাব, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী আমাকে ‘সংবর্ধনা স্মারক’ দিয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অহনা পর্ষদ’ আয়োজিত দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এগুলো যদি প্রাপ্তি বলেন,তাহলে প্রাপ্তি অনেক।



শুনেছি কাগমারী সম্মেলনেও আপনি যোগ দিয়েছিলেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা কিছু বলুন।

কাগমারী সম্মেলনে আমি রমেশ শীলের সঙ্গে গান করেছি। তাছাড়া এই সম্মেলনে বড় পাওনা হলো মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে আমার আলাপ হওয়া। তিনি আমার গান শুনে বলেছিলেন ‘সাধনায় একাগ্র থাকলে তুমি একদিন গণমানুষের শিল্পী হবে’। ভাসানীর এই কথাটি আমাকে এখনো প্রেরণা দেয়।



আমরা যতদূর জানি প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থায় আপনি খুব একটা বিশ্বাসী নন। বিভিন্ন গানে আপনার এ বিষয়ক চিন্তাধারা ঘুরে ফিরে এসেছে বারবার। ধর্মকে আসলে কীভাবে দেখেন আপনি?

আমি কখনোই আসমানি খোদাকে মান্য করি না। মানুষের মধ্যে যে খোদা বিরাজ করে আমি তার চরণেই পূজা দেই। মন্ত্রপড়া ধর্ম নয়,কর্মকেই ধর্ম মনে করি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে হজ পালনের চেয়ে এই টাকাগুলো দিয়ে দেশের দুঃখী দরিদ্র মানুষের সেবা করাটাকে অনেক বড় কাজ মনে করি। প্রচলিত ধর্ম-ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ তৈরি করে দিয়েছে। কতিপয় হীন মোল্লা-পুরুত আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে বিভাজন নিয়ে এসেছে। এই বিভাজনই যদি ধর্ম হয় সেই ধর্মের কপালে আমি লাত্থি মারি।



‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই হলো আমার ধর্ম। নামাজ রোজার মতো লোক দেখানো ধর্মে আমার আস্থা নাই। কতিপয় কাঠমোল্লা ধর্মকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমার এলাকায় প্রতিবছর শীতের সময় সারারাত ওয়াজ মাহফিল হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বিশিষ্ট ওয়াজিনরা আসেন ওয়াজ করতে। তারা সারারাত ধরে আল্লা-রসুলের কথা তো নয় বরং আমার নাম ধরেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। কী আমার অপরাধ? গান গাইলে কি কেউ নর্দমার কীট হয়ে যায়? (তার শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে দ্রুত, উত্তেজনায় কণ্ঠস্বর চাগান দিয়ে উঠছে ক্রমে) এই মোল্লারা ইংরেজ আমলে ইংরেজি পড়তে বারণ করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। আজো তারা তাদের দাপট সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখে মনে হয় একাই আবার যুদ্ধ করি। একাই লড়াইয়ের ময়দানে নামি। জীবনের ভয় এখন আর করি না। আরেক যুদ্ধ অবধারিত হয়ে পড়েছে, এছাড়া আর মুক্তি নাই (তার চোখ থেকে জল উপচে পড়ছে)।



কী বলবো, কতোই বলবো দুঃখে ভেতরটা পাথর হয়ে আছে। আমার এক শিষ্য, তার নাম ছিল আকবর । সিদ্ধি টিদ্ধি খেতো বোধহয়। আকবর মারা গেলো অকালেই। তার মৃত্যুর কথা মাইকে ঘোষণা দেবার জন্য আমি নিজে মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে বললাম। ইমাম তো ঘোষণা করবেনইনা বরং জানাজার নামাজ পড়াবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। আকবরের দোষ হলো সে আমার শিষ্য। আমি গান গাই, আমি কাফির। শুধু আমি গিয়ে যদি উনার হাত ধরে তওবা করি তাহলেই আকবরের জানাজার নামাজ পড়ানো যায় কি না তিনি ভেবে দেখবেন। বেতনভোগী এই চাকরটার কথা শুনে রাগে দুঃখে ভেতরটা বিষিয়ে গেলো। আতরাফের সবাই তাকে বাৎসরিক যে চাঁদা দিয়ে রাখে সেই চাঁদার একটা ভাগ তো আমিও দেই। তাৎক্ষণিক কিছুই বলিনি কারণ কথাটা আমার গ্রামবাসীর কানে গেলে একটা ঝামেলা হয়তো বেঁধে যেতে পারে। অগত্যা আমি নিজেই জানাজা পড়িয়ে আকবরের কবর দেই। এই কথা মনে আসলে আজো চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।



আচ্ছা, এতো গেলো ধর্ম। ঈশ্বরকে নিয়ে কী ভাবেন আপনি?

ঈশ্বরকে আমি মনে করি একটা পেঁয়াজ, খোসা ছিলতে গেলে নিরন্তর তা ছিলা যায় এবং হঠাৎ একসময় দেখি তা শূন্য হয়ে গেছে। আমি ঈশ্বরকে এক বিশাল শক্তি হিসেবে গণ্য করি, ব্যক্তি হিসেবে নয়। ব্যক্তি কখনো একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নরূপে অবস্থান করতে পারে না, শক্তি তা পারে। বৈদ্যুতিক শক্তির কথা ধরুন, একই সাথে কোথাওবা ফ্যান ঘুরাচ্ছে, কোথাও বাতি জ্বলাচ্ছে, কোথাও কারখানা চালাচ্ছে।



মক্কা শরিফ আল্লার বাড়ি বোঝে না মন পাগলে

ব্যক্তি নয় সে শক্তি বটে আছে আকাশ পাতালে।।



তবে আমি কোনো অবাস্তব কিছুতে বিশ্বাস করি না। বেহেশত, দোজখ, দুই কান্ধে দুই ফেরেস্তা এগুলো আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়। আল্লাহ নিজেই যেখানে কর্তা, তার তাহলে এতো কেরানি রাখার কী দরকার আমি বুঝে উঠতে পারি না।



আপনার পূর্বের বাউলা যারা বিশেষতঃ এই সিলেট অঞ্চলে মরমী সাহিত্যের ভূমি কর্ষণ করেছেন-তাদের আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আমি নিজেকে তাদের উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করি। সৈয়দ শানুর,আরকুম শাহ, শীতালং শাহ, রাধারমন, হাছনরাজা এরা সত্যিকারের সাধক ছিলেন। ভাবুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এরা। একসময় আমরা গ্রাম-গ্রামান্তরে তাদের গান গেয়ে বেড়িয়েছি। তাদের গান থেকে প্রেরণা নিয়ে আমরা আজো গান লিখি। কিন্তু একটা দুঃখজনক ব্যাপার ঘটছে আজকাল, আমার কিছু গান দেখলাম রাধারমনের নামে গাওয়া হচ্ছে। এই জিনিসটা যে কারো পক্ষেই সহ্য করা খুব কঠিন। আমার বেশ কিছু গান যে যেভাবে পারেন এমনকি কেউ কেউ ভনিতায় নিজের নাম যুক্ত করেও গেয়ে থাকেন, এটা খুবই দুঃখের। দীর্ঘ পঞ্চাশ ষাট বছরের সাধনার ফসল এই গানগুলো। অন্যের কাছে কোনো মুল্য থাক বা না থাক আমার নিজের কাছে এই গানগুলোর যতকিঞ্চিৎ মূল্য তো আছে। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী রেখে গান রচনা করে বেড়িয়েছি। আজ সেসব স্মৃতি মনে পড়লে চোখে পানির ধারা নেমে আসে। এই গানগুলোই যদি আমার চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যায় তাহলে সারা জীবনের সাধনাই তো ভুল!



বেশ কিছুদিন আগে রাধারমনের একটা গানের বই বেরিয়েছিল মদনমোহন কলেজ থেকে গোলাম আকবর সাহেবের সম্পাদনায়। রাধারমনকে একেবারে জীবন্ত কাষ্ঠ করা হয়েছে বইটার পাতায় পাতায়। গানের কলি নেই ঠিক, শব্দ-বিভ্রান্তি, পদ-বিভ্রান্তি, একেবারে যাচ্ছেতাই কাণ্ড। মনটা দমে গেলো এটা দেখে। রাধারমনের গান তো আমি এই ক্ষীণ স্মৃতিশক্তি নিয়েও আজো ভুলতে পারিনি। এই ভাগ্য যদি রাধারমনের ঘটে, আমি করিম তো কোন ছার!



আজকাল প্রচার মাধ্যমে এমন কিছু অগ্রজ বাউলের নাম শুনতে পাই যাদের নাম এই পঞ্চাশটা বছরের বাউল জীবনে কখনো শুনিনি। আমার এই দীর্ঘ জীবনে রকিব শাহ কোনো ফকিরের গান তো দূরের কথা নাম পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ রেডিও টেলিভিশনে তার গান শুনে বিস্মিত হই। এমনকি এও দেখলাম তাকে আরকুম-হাছনদের সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। হায়রে দেশ! টাকা দিয়ে কি সবকিছু কেনা হয়ে যাবে? বয়স তো কম হয়নি,এক জীবনে দেখেছি অনেক। এবার বোধ হয় চাঁছাছোলা কিছু বলার সময় এসেছে। আজ যে হাছন রাজা হাছন রাজা বলতে আমরা অজ্ঞান-এই গানগুলো তো কিছুদিন পূর্বেও কাউকে গাইতে শুনিনি। এতো মর্মস্পর্শী গান তার অথচ গাইতো কয়জন? আমার জানা মতে, উজির মিয়া নামে এক ব্যক্তি হাছন রাজার গানকে সাধারণের গোচরে নিয়ে এসেছিলেন- আজ তার নামগন্ধ পর্যন্ত হাওয়া হয়ে গেলো। প্রচার মাধ্যম তাকে খুঁজে বের করার কোনো প্রয়োজনও অনুভব করে না। সব সফলতার পেছনে কিছু কষ্ট থাকে, এই কষ্ট যারা করে আমরা তাদের ভুলে যাই। কী নির্মম নিয়তি! ভেতরে জমা থাকা কথাগুলো এবার হয়তো বলা দরকার। যদি কেউ রাগ করে করুক, ভেতরের ক্ষোভ ভেতরে জমাট রেখে কোনো লাভ হয় না।



আপনার ব্যক্তিগত কোনো দুঃখের কথা বলুন যা গভীর রাতেও আপনাকে কষ্ট দেয়।

দুঃখতো হাজার হাজার, কয়টা বলবো? তবে আমার সরলা, যাকে আমি মুর্শিদ জ্ঞান করি সেই সরলা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে এটা মনে পড়লেই কলজে খানি উল্টে যেতে চায় (হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন)।



আপনার শিষ্য-ভক্ত অজস্র যারা এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনার গান গেয়ে বেড়ান, তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন

আমার শিষ্যরা প্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত। রুহী পাঠুর, রণেশ ঠাকুর, আব্দুর রহমান, প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ, নূর হোসেন, সুনন্দ দাস(৩) আরো অনেকেই আমার গান করে বেড়ায়, আমি তাদের জন্য আশীর্বাদ করি।



আপনাকে অনেক ধন্যবাদ করিম ভাই

আপনাদেরও অজস্র ধন্যবাদ।





পাদটিকাঃ

১। নূরহোসেনঃ শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য। তিনি বেশীর ভাগ সময় উজান ধলে করিম শা’র সাথেই থাকেন। গান ও করেন

২। নুরুন্নেছাঃ শাহ আব্দুল করিমের ভক্ত শিষ্য।

৩।সুনন্দ দাসঃ কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন। ভক্ত শিষ্যের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে কান্না ভেজানো কন্ঠে করিম বলেন- দুনিয়ায় কিছু মানুষ আছে যারা কোনকিছুতেই রা’ করেনা। সুনন্দ ছিলো সেই মানুষ’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.