নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান হচ্ছে বান্দরবান আর আমি একজন পরিব্রাজক।
পরের পর্ব
অন্য পর্বগুলো
ক্ষণিকা
দার্জিলিঙের ট্রেনটি ১০ কিঃমিঃ বেগে চললেও সিমলার ট্রেনটির গতি ঘন্টায় প্রায় ২০ কিঃমিঃ। মাঝে মাঝে খুব সুন্দর ছোট ছোট স্টেশন। সেসব স্টেশনে মুখরোচক খাবার বিক্রি হচ্ছে। আমি তাই কিনে খাওয়া শুরু করলাম। একেকটি স্টেশনে ট্রেন থামে আর আমি টুকটাক এটা-ওটা কিনে খায়। প্রতিটি স্টেশনে খাবার পানির ব্যাবস্থাও আছে। কিন্তু সেগুলো হাতে ছোয়া যাচ্ছে না,কারণ সেগুলো সব বরফ গলা জল।
ট্রেনটি ছুটে চলার ফাকেই জংলি গাছপালা ছাড়িয়ে পাইন বন শুরু হলো। রাস্তার দু’ধারের ঝোপঝাড়ে রঙ-বেরঙের ফুল ফুটে আছে। আমার তো মনে হচ্ছে একটি পুষ্পক রথ আমাকে নিয়ে স্বর্গের পানে ধেয়ে চলেছে।
দুপুর একটার দিকে ট্রেন একটা পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর জানতে পারলাম ইঞ্জিনের কি যেন সমস্যা হয়েছে। ঠিক করতে সময় লাগবে। অনেকক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে আছি এজন্য সেতু আর নিয়নের কাছে গেলাম বসার জন্য। গিয়ে দেখি তারা দুজনে ততোক্ষণে জমিয়ে ফেলেছে। আশেপাশের ছেলে ছোকড়া মেয়ে বুড়ো সবাই তদের দুজনের বিশেষ করে সেতুর গুনমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উঠেছে। সে দেখি হকারের কাছ থেকে এটা ওটা কিনে সবাইকে খাওয়াচ্ছে, আর মাঝে মাঝে উল্টোপাল্টা হিন্দিতে কি সব বলছে! পুরো বগির লোক হেঁসেই অস্থির।
ট্রেন অনেকক্ষণ থেমে আছে দেখে নিচে নামলাম। আর নামার পর মনে হলো ভাগ্যিস ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছিল। রেলপথ ধরে সামনে কিছুদূর হেঁটে গেলাম। পুরো যাত্রাপথের সব জায়গায় দেখেছি, কিছুদূর পরপর কিছু লোক ট্রেন রাস্তা মেরামত করছে। আসলে এই দুর্গম রেলপথটি সবসময় সংস্কারের উপর রাখতে হয়। এখানে একজন রেলপথ মেরামতকারিকে পেলাম।
তাকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে এমন এক জায়গায় গিয়ে দাড়ালাম যেখান থেকে অবারিত দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একপাশে উঁচু পাহাড় আর একপাশে গভীর খাদ। দুপাশেই পাইনের ঘন বন। দূরের উঁচু পাহাড়গুলোকে সাদা মেঘ ঢেকে দিচ্ছে আবার পরক্ষণেই সেগুলিকে উধাও করে দিয়ে সূর্য ঝমকে উঠছে।
ঘন্টা দেড়েক পর আবার ট্রেনে উঠে বসলাম। দেখি আসর ততোক্ষণে জমজমাট। পুরো বগির সব যাত্রী সেতুর মজাদার কথা শোনার জন্য উৎসুক হয়ে আছে। সেতু ভাঙা ভাঙা হিন্দীতে কিসব উল্টোপাল্টা বকছে আর পুরো ট্রেন কেঁপে কেঁপে উঠছে সবার হাঁসির ঠেলায়। ব্যাপারটা না দেখলে ঠিক কল্পনা করা যায় না। পাহাড়ি পথে একটা ট্রেন নষ্ট হয়ে গেছে যেখানে এক বাংলাদেশী পাগলের প্যাচালে পুরো ইন্ডিয়ান যাত্রী মত্তো হয়ে হো হো করছে, যাদের হো হোর ঠেলায় ছোট্ট এই ট্রেনটি যেকোন সময় কাত হয়ে পাহাড় থেকে খাদে পড়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে একটি মেয়ে দেখি সেতুর বিশেষ অনুরক্ত হয়ে গেছে। চেহারার মিল থাকায় আমি তাকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সম্বোধন করায় সে আরো খুশি হয়ে উঠেছিল। মেয়েটি তার মা, ছোট ভাই রোহিত আর কাজিন পঙ্কজদার সাথে তারা দেবি স্টেশনে যাচ্ছে। সেখানেই তাদের বাড়ি। তারা সবাই সেতুর গুনমুদ্ধ ফ্যান। অন্য একজন যুবক দেখি সেতুকে আওরংজেব আওরংজেব বলে সম্বোধন করছে। আমি ভাবলাম আরে বাবা! এতো ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে যে নাম নিয়েও ঠাট্টা হচ্ছে। পরে শুনি সেতুর ভালো নাম হচ্ছে আওরঙ্গজেব। চুপি চুপি একটা গোপন কথা প্রকাশ করে দিই, এই যুবক কিন্তু পরে(ফেসবুকে) সুদর্শন নিয়নের বিশেষ ভক্ত হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে ।
সেতুর এসব হাস্যকর কর্মকাণ্ডে আনন্দিত হয়ে তার সদ্য পরিচিত এক আন্টি আমাদের খাবার খেতে দিলো। পাপড় চাটনি আরো কি কি যেন। এরপর পুরো বগির সব যাত্রীই তাদের দুপুরের খাবার থেকে আমাদের ভাগ দেয়া শুরু করলো। সব ভেজ খাবার। আমরা খেয়ে শেষ করি তারা আবার দেয়, আবার শেষ করি আবার দেয়। তৃপ্তি সহকারে এতো খাবার খাওয়া হলো যে বলার নয়। আমি আমার বেশ কবার ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, আমাদের দেশে আমরা যেমন সহযাত্রীর সাথে বকবক করি এদেশের লোক তেমন করে না। এদেশের লোকজন সাধারণত সহযাত্রীর সাথে পরিচিত হতে অনাগ্রহী বোধ করে। তবে সেতু এমন একটা জিনিস যে সবাইকে আপন করে নিতে বাধ্য করেছে। এমনকি ভারতীয়রা তাদের দুপুরের খাবার থেকে ভাগ পর্যন্ত দিয়েছে। নাহলে আজ দুপুরে আমাদের না খেয়ে থাকতে হতো। আরো একটা কথা চুপি চুপি বলে রাখি,আমাদের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সেতুকে দেশে ফেরত আসার পর এতোটা বিরক্ত করে যে সেতু তাকে ঘাড় থেকে নামানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে। যেহেতু তারা আমাদের ভরপেট খাওয়ালো, আমাদেরও উচিৎ তাদেরকে কিছু খাওয়ানো। দেশ থেকে আসার সময়, খিদে লাগলে আমি যেন টুকটাক খেতে পারি এজন্য আমার বাবা আমাকে গাদাখানেক গজা কিনে দিয়েছিল। বগির সবাইকে সেই গজা বিলালাম। কেউ কেউ সেই গজা এতো পছন্দ করলো যে আরো কয়েকবার করে চেয়ে নিলো।
দুপুর তিনটার কিছু পরে পিছন থেকে একটা ইঞ্জিন এসে ট্রেনটাকে টেনে পিছনের স্টেশনে নিয়ে গেল। সেখানে নষ্ট ইঞ্জিনটাকে সরিয়ে ভালো ইঞ্জিনটা জোড়া লাগিয়ে আবার সিমলার দিকে চলা শুরু হলো।চারপাশের দৃশ্য সেইরকম মোহনীয়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট স্টেশনে থামছে। তারপর আবার চলছে। ব্রীজ আর সুড়ঙ্গ পার হচ্ছে সমানতালে। আর সুড়ঙ্গের ভিতরে ট্রেন ধুকলে সবাই আনন্দে সমানে চিৎকার করছে।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রেন হঠাৎ করে আরো উপরে প্রায় খাড়াভাবে ওঠা শুরু করলো। চারপাশ থেকে ছুটে আসা মেঘ ঘিরে ধরা শুরু করেছে। ঠান্ডার পরিমাণ হুট করে বেড়ে গেল। কাল অতো গরম থেকে আজকের এই মনোরম ঠান্ডায় এসে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেতু আর নিয়নের অবস্থা মোটামুটি কাইত! কারণ কাল সন্ধ্যায় তারা যে পাতলা হাফপ্যান্ট পরেছিল এখনো তাদের পরনে সেই জিনিসই রয়েছে।
হঠাৎ দূর থেকে সিমলা শহরটা দেখতে পেলাম। মেঘাচ্ছন্ন একটা আবহাওয়ায় শহরটিতে শেষ বিকেলের আলো পড়ছে। ব্যাপারটি একই সঙ্গে এতো সুন্দর আর অপার্থিব যে নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২
সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আশা করি খুব দ্রুতই যেতে পারবেন।
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৪
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী ভালো লাগলো
ব্লগে সবাই এখন ভ্রমণের গল্প শেয়ার করছে
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
সারাফাত রাজ বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
আমার মনে হয় ভ্রমণ কাহিনী লেখা সবচেয়ে সহজ, মানে গল্পের প্লট খুজতে হয় না। আর আমরা তো সবাই টুকটাক ঘুরতে পছন্দ করি। এজন্যই সবাই ভ্রমণ গল্প শেয়ার করছে। আর বাইরে গেলেই যেহেতু ছবি তোলা হয় এজন্য ভ্রমণ ব্লগগুলি খুব সহজেই রঙ্গিন করে তোলা যায়।
জয় হোক ভ্রমণ ব্লগের।
৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: টয়ট্রেনের মজাদার অভিজ্ঞতা সেইরকম মজাদার হইছে
+++
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
সারাফাত রাজ বলেছেন: শুধু মজা হয়ছে? সবসময় মনে হয় ইশ আরেকবার যদি যাইতে পারতাম!
৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: ভাললাগা রইল ভাই। শেষ ছবিটা তো অপূর্ব
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮
সারাফাত রাজ বলেছেন: ভালোলাগার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি শেষ পর্যন্ত ভালোলাগা থাকবে।
শেষ ছবিটায় যা দেখছেন সত্যিকারের অবস্থা এর চাইতে আরো মোহনীয় ছিলো।
৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২
সুমন কর বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম এবং ভালো লাগা।
পরপর দু'টো সুন্দর ভ্রমণ পড়লাম আর আফসোস না করে পারছি না... কবে যাবো !!
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪
সারাফাত রাজ বলেছেন: প্রিয়তে রাখা আর ভালোলাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
খুব ইচ্ছা শক্তি থাকলে অবশ্যই যেতে পারবেন।
৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী খুব ভাল লাগল ,আশা করি অন্য পর্ব গুলও সময় করে পড়ব । ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪
সারাফাত রাজ বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি অন্য পর্ব গুলোও ভালো লাগবে।
৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আবারও ধন্যবাদ সিরিজটার জন্য।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০
সারাফাত রাজ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
৮| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আমরা সিমলা পৌঁছেছিলাম মধ্যরাতে, সেই সিমলাও আরেক অপার্থিব সুন্দর। পোস্টে ভালোলাগা রইল, লাইক সাথে +++
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৩
সারাফাত রাজ বলেছেন: এবার গেলে অবশ্যই টয় ট্রেনে করে যাবেন। যখন ট্রেনটা সিমলার কাছাকাছি পৌছায় তখন যে কি ভালো লাগে
আমি অবশ্য মধ্যরাতের অপার্থিব সিমলা দেখিনি, তবে অনুমান করতে পারছি
ভালোলাগার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
৯| ২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৪
জাজাবর পৃথিবী বলেছেন: অসাধারন অসাধারন সব গুলো পর্বই ++++++++++++++++
২২ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা হা অনেক ধন্যবাদ ভাই
১০| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৬
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সত্যি আপনা মনমূগ্ধকার বর্ননায় অবাক না হয়ে পারছি না।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪
সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: ইশ কবে যে যাওয়া হবে। যে পারিমান লোভ হচ্ছে যাবার জন্য। অনেক সুন্দর ছবি আর বর্ণনায় মুগ্ধ হলাম।