নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাজেট ট্রাভেলার।

সারাফাত রাজ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান হচ্ছে বান্দরবান আর আমি একজন পরিব্রাজক।

সারাফাত রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-২০ ( আধিক্য সারচুতে পুলিশ চেকপোস্ট আর বিখ্যাত গাটা লুপ - ৪)

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩


আগের পর্ব
পরের পর্ব
অন্য পর্বগুলো





সারচু জায়গাটা ১৪,১০০ ফিট উঁচু। এডভেঞ্চারপ্রিয় ট্যুরিস্টদের ক্যাম্পিংয়ের খুব প্রিয় জায়গা এটি। অনেক টুরিস্ট এখানে তাবুর মধ্যে কয়েক রাত কাটিয়ে যায়। আশেপাশে অনেকগুলো তাবু দেখলাম। সিজনে এটা নাকি ভরপুর থাকে। এখানে তাবুর মধ্যে রাত কাটানো নিশ্চয় জীবনের সেরা অভিজ্ঞতার একটা।



সারচুতে কতোগুলো তাবু খাটিয়ে পুলিশের চেকপোষ্ট। এখানে খুবই কড়া চেক হয়। এটা হিমাচল প্রদেশ আর জম্মু এন্ড কাশ্মীর রাজ্যের সীমান্ত। তাছাড়া কাছাকাছিতেই চীন সিমান্ত। যে দেশের সাথে ভারতের অলরেডি একটা ভয়াবহ যুদ্ধ হয়ে গেছে। তাহলে বোঝায় যাচ্ছে যে কতোটা স্পর্শকাতর জায়গা এটা।



গাড়ি থেকে আমি আমার পাসপোর্ট নিয়ে নামলাম তাবুর মধ্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আলী ভাইও নামলেন, তারও চেক হবে। আমি খুব মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়লাম। একয়দিনে আমাকে কোনরকম তল্লাশি বা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়নি।





আমি একেবারেই জানি না যে বাংলাদেশিরা নিজ পরিচয়ে এই পথে যেতে পারবে কিনা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। হঠাৎ করে মনে হলো, আরে আমি এতো ভাবছি কেন!! আমাকে যদি এপথ দিয়ে আর সামনে যেতে না দেয় তো যাবোনা। যতোটুকু এসেছি আর যা দেখেছি তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো। কোন সমস্যা নেই। আর এটা ভাবতেই সবকিছু সহজ হয়ে গেল।








গাড়ি থেকে নেমে চারপাশ দেখছি। আলী ভাই আমাকে একটু দাঁড়াতে বলে তাবুর মধ্যে ঢুকে গেলেন। আমি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে
বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।











কিছুক্ষণ পর আলী ভাই হন্তদন্ত হয়ে তাবু থেকে বের হয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে বলে তিনি দ্রুত গাড়িতে উঠে গাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেন। আমি প্রথমে হতভম্ভ হয়ে গেলেও তার কথামতো কাজ করলাম। গাড়িতে বসার সাথে সাথে গাড়ি চলা শুরু করলো।

কিছুদূর সামনে যাবার পর আলী ভাই এই তাড়াহুড়োর ব্যাখ্যা দিলেন। আসলে হয়েছে কি আর্মির লোক হিসাবে পরিচয় দেবার কারণে তাবুর পুলিশ তাকে খুব বেশি চেক করেনি। আর তিনি ভিতরে পুলিশের কাছে আমাকে ইন্ডিয়ান এবং তার আত্মীয় হিসাবে পরিচয় করে দিয়েছেন। এজন্য আমাকেও আর পুলিশেরা গুরুত্ত্ব দেয়নি। আর এর ফলেই আমি এই পুলিশ চেকিং থেকে বেচে গেলাম। নাহলে আমাকে বেশ হেনস্থার মধ্যে পড়তে হতো। পুলিশ আবার সন্দেহ করে বসবার আগেই আমরা দ্রুত ঐ এলাকা ছেড়ে বের হয়ে এলাম। আর অবশেষে লাদাখ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারলাম।

পুলিশ চেক পোষ্ট থেকে সরে আসবার কিছুদূর পর গাড়ি আবার থেমে গেল। এখান থেকে আলী ভাইয়ের এক বন্ধু আর তার পাঁচ বছরের এক ছেলে উঠলো। আলী ভাইয়ের বন্ধু একজন বৌদ্ধ। সেও আর্মিতে কর্পোরাল পদে চাকরি করে। এখন ছুটিতে আছে। তারা সারচুতে কি একটা কাজে যেন এসেছিলো, এখন লেহ ফেরত যাবে। লোকটার নাম এখন আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তবে তার পাঁচ বছরের ছেলের নাম তানজিং। অসাধারণ মিষ্টি দেখতে এই পিচ্চিটাকে আমি হয়তো কামড়েই খেয়ে নিতাম যদি না ওর নাক দিয়ে এতো পরিমাণ সর্দি পড়তো।

তানজিং আর তার বাবা পিছনের সিটে বসলো। আলী ভাই আবার গাড়ি ছেড়ে দিলেন। আমি তানজিং আর তার বাবাকে আমার খেজুর আর গজা থেকে ভাগ দেয়া শুরু করলাম। তানজিং খেজুর একবার নিয়ে নেহি চাহিয়ে নেহি চাহিয়ে বললেও গজা তার খুবই পছন্দ হলো। সে কিছুক্ষণ পরপর আমার কাছ থেকে গজা চেয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তবে তানজিং এর বাবার কাছে মনে হয় গজা ততোটা ভালো লাগেনি। আমি অবশ্য একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করেছি, প্রাপ্তবয়স্ক কাশ্মিরীরা মিষ্টি জাতীয় খাবার একেবারেই পছন্দ করে না। এমনকি তারা চায়েও লবণ মিশিয়ে খায়। তো এবার আলী ভাই তার বন্ধুর সাথে আঞ্চলিক লাদাখী ভাষায় কথা বলা শুরু করলেন আর এতোক্ষণ পর আমি আমার বকবক থামালাম।

সারচুতে পুলিশ ক্যাম্পের পর লোহার একটা ব্রীজ দিয়ে গভীর খাদ দিয়ে বয়ে চলা সারাপ-ছু নদীটা পার হলাম। ভয়ঙ্কর জায়গা এটা। আবার একই সাথে এতো অদ্ভুত রকমের সুন্দর যে পাগল হয়ে যেতে হয়।







ব্রীজটা পার হবার পর হঠাৎ করে রুক্ষতার পরিমাণ বেড়ে গেল। লাদাখ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু আর শীতল মরুভূমি। এখানে বৃষ্টি হয়না বললেই চলে। বছরে আট মাসেরও বেশি সময় পাহাড়গুলো বরফে ঢাকা থাকে। কোন কোন পাহাড় সারা বছরই বরফ চাপা থাকে। বেশিরভাগ অঞ্চলে একেবারেই গাছপালা নেই। পাহাড়গুলোতে ছোট ছোট কিছু রুক্ষ্ম ধরণের ঝোপঝাড় আছে। আবহাওয়া ভয়ঙ্কর ঠান্ডা আবার একই সাথে চোখ ধাঁধানো সূর্যের আলোয় চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। আর আছে বাকানো চড়াই পথ, যে ভয়ঙ্কর পথে বেশ দ্রুতই ছুটে যাচ্ছে আমার গাড়ী। অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার জীবনটা তো বেশ অসাধারণ।









আর আমার ক্যামেরার চার্জ প্রায় ফুরিয়ে গেছে, এজন্য ছবি তোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছি। তবে চারপাশের দৃশ্য সেইরকম। কিছুক্ষণ পর এসে পৌছালাম বিখ্যাত গাটা লুপে।

গাটা লুপ হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে বেশি সংখ্যক প্যাচানো রাস্তার সমাহার। একেবারে নিচ থেকে একেবারে উপর পর্যন্ত যেতে ২১টি হেয়ার পিনের বাক আছে অর্থাৎ ২১ বার মোড় ঘুরতে হয়। এর মানে হচ্ছে একদম নীচের রাস্তায় দাড়ালে মাথার উপরে ২২টা রাস্তা আর একদম উপরের রাস্তায় দাড়ালে পায়ের নীচে ২২টা রাস্তা। চূড়ার রাস্তাটির উচ্চতা ১৫,৩০২ ফিট।











পেচিয়ে পেচিয়ে গাড়ি উপরে ওঠা শুরু করলো। নিচ থেকে উপরের রাস্তার বিশাল বড় বড় লরিগুলোকে খেলনার মতো মনে হচ্ছে। আর দৃশ্যটা এমন যে আমি নিজের চোখে না দেখলে কেউ যদি আমাকে এইরকম রাস্তার কথা বলতো তো আমি ভাবতাম সে নিশ্চয় গপ্পো মারছে।









আগের পর্ব





গাটা লুপে চড়ার সময় পাশের পাহাড়টাতে কতোগুলো বন্য হরিণ দেখলাম। কিন্তু ছবি তোলার আগেই সেগুলি হারিয়ে গেল। আহ !! আমি নিশ্চয় দুনিয়ার সেরা ভাগ্যবানদের একজন।

তবে আমি সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম একথা শুনে যে বছরে চার –পাঁচ মাস খোলা মানালি থেকে লেহ এর রাস্তায় নাকি দিন রাত ২৪ ঘন্টায় গাড়ি চলাচল করে। এমনকি বড় বড় লরি পর্যন্ত। হায় আল্লাহ! এটা কিভাবে সম্ভব! কিন্তু তখন কি আর জানতাম যে কয়েকদিন পরে আমাকেও সেই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।













গাটা লুপের এই বাইশ রাস্তায় চলার সময় বড় বড় লরি আর বাসগুলো পুরো রাস্তা অতিক্রম করলেও ছোট জীপ গাড়ির জন্য এই রাস্তা থেকে ওই রাস্তায় যাবার শর্টকাট পদ্ধতি আছে। আলী ভাই যখন এই শর্টকাট পদ্ধতি ধরেন তখন জান হাতে করে বসে থাকতে হয়। কারণ এই শর্টকাট একদম খাড়া ভাবে উঠে গেছে। গাটা লুপের নীচের রাস্তা থেকে উপরের রাস্তার উচ্চতা ১,২০০ ফিটেরও বেশি। অর্থাৎ নীচের রাস্তাটা ১৪,১০০ ফীট আর উপরের রাস্তাটা ১৫,৩০২ ফিট। ২১টা মোড় পার হতে হতে উচ্চতা ১২০০ ফীট বেড়ে যায়।





উপরের রাস্তাটায় প্রচন্ড ধুলো। আসলে গাটা লুপে কোন পিচের রাস্তা নেই। কোনরকমে পাহাড় কেটে মাটির একটা পথ তৈরী করা হয়েছে। আলী ভাই মনে হয় বেশ ব্যাপারটাতে বেশ লজ্জ্বা পেলেন। তিনি ভেবেছেন যে একজন বিদেশী হয়ে এইরকম পথে চলতে হচ্ছে বলে আমি নিশ্চয় ভারত সম্পর্কে খারাপ মনোভাব পোষন করছি। তিনি এজন্য আমাকে কিছুটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করলেন। হো হো করে হেঁসে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম যে আমি এই পথটা সত্যিকার ভাবে উপভোগ করছি।





গাটা লূপ পার হবার পর পৌছালাম লাচুংলা পাসে। এটির উচ্চতা ১৬,৬১৬ ফিট। পাহাড়টিতে বেশ বরফ জমে আছে। তবে ঠান্ডা তেমন নেই। চারপাশের দৃশ্য সেইরকম মনোমুগ্ধকর।







এখান থেকে গাড়ি আবার নামা শুরু করলো। আর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এখান থেকেই শুরু হলো। পাহাড়গুলোর আকৃতি এমন যে মনে হচ্ছে কেউ খুব যত্ন সহকারে এগুলো সাজিয়েছে।










প্রাকৃতিক ইন্ডিয়া গেটটা দেখে খুবই মুগ্ধ হলাম। তবে এ রাস্তায় প্রচন্ড ধূলো। আর আমার ক্যামেরার চার্জ তখন লাল সিগন্যাল দেখাচ্ছে। ছবি তোলা বন্ধ রেখে চারপাশ হা করে গিলতে লাগলাম।








তখন মনে হচ্ছিল আমি যদি এখন মারাও যাই তবু বোধহয় আফসোস কিছুটা কম হবে। কারণ আমি যা দেখছি আল্লাহ সেই দৃশ্য দেখার সুযোগ পৃথিবীর খুব কম মানুষকেই দিয়েছেন। বাতাসে আর বালিতে পাহাড় খয়ে খয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত ভাস্কর্য তৈরী হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে বিরাট কোন আর্ট গ্যালারিতে এসে পড়েছি। প্রতিটা পাহাড়ের দিকেই কমপক্ষে এক বছর তাকিয়ে থাকা সম্ভব।













অবশেষে বেলা প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে পৌছালাম প্যাং এ। জায়গাটা ১৫,২৮০ ফিট উঁচু।



এখানে দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি। গাড়ি থেকে নামলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা। আর এতো জোরে বাতাস বয়ে চলেছে যে মনে হচ্ছে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তবে এইরকম পান্ডব বর্জিত জায়গায় টয়লেটের সু ব্যাবস্থা দেখে চমৎকৃত হলাম। বেশ কয়েকটা তাবু নিয়ে ছোটখাট একটা জনপদ।



আলী ভাই আর তার বন্ধু খাওয়া দাওয়া করার জন্য হোটেলে ঢুকলেও আমি গেলাম না। আমার ততোটা খিদে লাগেনি। আর আল্লাহর রহমতে আমার এখনো পর্যন্ত কোন সমস্যাই হয়নি। না বমি লাগা, না মাথা যন্ত্রণা,না দম বন্ধ হওয়া। কিচ্ছু না। আমি তো খুব অবাক। এমনকি আলী ভাই আর তার বন্ধু পর্যন্ত। তারা নাকি এখনো পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কোন সুস্থ পর্যটক দেখেনি। সবারই কোন না কোন সমস্যা হয়েছে। ব্যাপারটি শুনে আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লাম। তবে কি অসুস্থ না হয়ে পড়াটা আমার কোন সমস্যা। কিন্তু একটু চিন্তা করতেই কার্যকরণটা আমি খুঁজে পেয়েছিলাম।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি অসুস্থ হননি জেনে আনন্দিত। তবে আপনার সুস্থতার রহস্যটা সম্পর্কে বললে আরো বেশি আনন্দিত হতাম। এটা কি কিছুদিন ধরে পাহাড়ী অঞ্চলে থাকার কারনে আপনার শরীর অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো?

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১২

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাইয়া, সেটা মনে হয় আমি আগামী পর্বে প্রকাশ করবো ;) :-P B-))

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: বাতাসে আর বালিতে পাহাড় খয়ে খয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত ভাস্কর্যগুলো দেখে সত্যিই আমি পুলকিত, জানিনা কখনো যাওয়া হবে কিনা।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬

সারাফাত রাজ বলেছেন: সত্যিই এই জায়গাটা অসাধারণ। আমার তো মনে হয় মানালি থেকে লেহ যাবার রাস্তাটা কমপক্ষে এক সপ্তাহ ধরে দেখতে দেখতে যাওয়া উচিৎ। আসলে এই পথ আর পথ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই হচ্ছে মূল দ্রষ্টব্য। :>

৩| ১৪ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৪৮

শাকিল১৫৪৫ বলেছেন: :-B :-B :-B আগ্রহী যদি সবকিসু অনুকুলে থাকে । ৫০/৫০ ।যেতে চাই যদি নেন

১৬ ই মে, ২০১৬ ভোর ৫:২৬

সারাফাত রাজ বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.