নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাজেট ট্রাভেলার।

সারাফাত রাজ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান হচ্ছে বান্দরবান আর আমি একজন পরিব্রাজক।

সারাফাত রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর ভারতের হিমালয় (পর্ব - ২, আধিক্য চুঙ্গিওয়ালা)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৫


উত্তর ভারতের হিমালয় (পর্ব - ১, আধিক্য যশোর রোড)
সবগুলো পর্ব
রান্নার অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেস্ট ছিলো সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি। রান্না যে পৃথিবীর সবচাইতে বড় শিল্প আর সিদ্দীকা কবির যে সে শিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় বড় মাপের শিল্পী তা এনটিভির এই প্রোগ্রামটা দেখলেই বোঝা যেত। (রন্ধনশিল্পী নিয়ে কাল্পনিক ভালোবাসার অতিরিক্ত অসাধারণ একটা লেখা আছে, আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছি তার লেখাটি পড়ে। যদিও আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে লেখাটি আরো অনেক বড় হওয়া উচিৎ ছিলো)। বাবুর্চি কথনঃ বাবুর্চি, রন্ধনশিল্পী এবং শেফ।

এনটিভিতে যখন রান্নার এই প্রোগ্রামটি সম্প্রচার হতো সে বয়সটাতে শারমিন লাকি আরো সুন্দর ছিলেন, তার উপস্থাপনা অনুষ্ঠানটিকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছিলো। একদিন সিদ্দিকা কবির আর শারমিন এই দুই মহারথী মিলে সৃষ্টি করেছিলেন লালমোহন নামের অসাধারণ এক মিষ্টি। লালমোহন প্রধানত অপ্রচলিত একটা নাম, আমরা একে মূলত কালোজাম হিসাবেই চিনি। এর আরেকটি নাম হচ্ছে গুলাব জামুন। আমি যদিও কোন রান্নার অনুষ্ঠানের প্রতি একেবারেই আগ্রহী ছিলাম না, কিন্তু আমার বড় আপু আমাকে এটা দেখতে বাধ্য করতো। কারণ অনুষ্ঠানে রান্নার যে উপকরণগুলো প্রয়োজন সেগুলো মনে রাখার দায়িত্ব ছিলো আমার। তবে আমি এই লালমোহন তৈরীর রহস্য পর্বটা প্রচন্ড মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম। কতো সহজে, কতো কম উপকরণ দিয়ে, আর কি অবলীলায় এটি তৈরী করা যায়। শহরে ছানা অথবা মাওয়া সহজে পাওয়া যায় না বলে দর্শকদের সুবিধার জন্য সিদ্দিকা কবির এবং শারমীন ময়দা ব্যাবহার করেছিলেন। যখন ময়দাগুলোকে মিষ্টির আকৃতিতে ভেজে চিনির রসে ডুবানো হয়েছিলো তখন আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি এর সুঘ্রাণ পাচ্ছি। আমার এখনো জ্বিভে পানি চলে আসে এই অসাধারণ মিষ্টিগুলোর কথা ভাবলে।



বাঙ্গালির সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টির নাম বোধহয় রসোগোল্লা। রসগোল্লা খেতে ভালোবাসে না এমন কোন মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি। ছোট ছোট সাদা গরম রসগোল্লা গরম ঝোল থেকে দু’আঙ্গুলে উঠিয়ে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে গভীর আবেশে চোখ বুজে ফেলা আর তারপর মুখের মধ্যে নরম গরম এবং কোমল একটা অনুভূতি!!! ঠোঁট বেয়ে তখনো দুফোটা গরম রস গড়িয়ে পড়ছে!! উফ!!! ভাবলেই শরীর ঝিমঝিম করে উঠে!!



রসগোল্লার ইতিহাস কতোদিনের তা কে জানে। তবে এই রসোগোল্লার আবিষ্কার নিয়ে বেশ ধুন্ধুমার কান্ড বেঁধে গেছে। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য বলে যে তারাই নাকি রসগোল্লার আবিষ্কর্তা। পুরীর জগন্নাথ দেবতা তার স্ত্রী লক্ষী দেবীর মানভঞ্জন করাতে তাকে রসগোল্লা খাইয়েছিলেন। তাদের সম্মানার্থে জগন্নাথের মন্দিরে রথযাত্রার সময় রসগোল্লা ভোগ দেয়া হয়। তবে উড়িষ্যার রসগোল্লার স্বত্ব পাবার দাবী মোটামুটি অগ্রাহ্য করা যায়। কারণ আমরা যে রসগোল্লা খেয়ে থাকি তা ছানার তৈরী, আর উড়িষ্যার মিষ্টি তৈরী হয় ক্ষীর থেকে।


১৮৬৮ সালে কলকাতার নবীন চন্দ্র দাস প্রথম রসগোল্লার আবিষ্কার করেন এরকম দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নবীন চন্দ্র দাস নাকি প্রথম ছানার মন্ডকে চিনির রসে ডুবিয়ে তৈরী করেছিলেন রসগোল্লা। তার ছেলে কে সি দাস কৌটজাত করে বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে পাঠানোর মাধ্যমে রসগোল্লাকে বিশ্বজনীন করে তোলেন।


পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার রসগোল্লা নিয়ে বিতর্ক শেষ পর্যন্ত আইনি লড়ায়ে গড়িয়েছে। উড়িষ্যা ৩০শে জুলাই রসগোল্লা দিবস হিসাবে পালন করা শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আপিল করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে ৩টি কমিটি গঠন করেছে। প্রথম কমিটি রসগোল্লার ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করবে, ২য় কমিটি উড়িষ্যার রসগোল্লার দাবী নিয়ে অনুসন্ধান করবে এবং ৩য় কমিটি পশ্চীমবঙ্গের রসগোল্লার দাবী নিয়ে অনুসন্ধান করবে।


তবে কলকাতা ও ভুবনেশ্বরের রসগোল্লা নিয়ে টানাটানির ভিড়ে আরেকজন দাবীদার হারিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি শেষাক্ত এই মতবাদের সমর্থক। বিশেষজ্ঞদের মতে রসগোল্লার আদি উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চল। বরিশালের যে অঞ্চলটাতে পর্তুগীজদের আধিক্য ছিলো সেখানকার বাঙালী ময়রাগণ ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে ক্ষীরমোহন বা রসগোল্লা নামে গোলাকার একধরনের মিষ্টি তৈরী শুরু করে। এই নূতন ধরনের মিষ্টি তৈরীতে পর্তুগীজ জলদস্যু বাহিনীর হাত ছিলো।


একটা সময় এই ময়রাগণের বংশধরেরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। যাদের অধিকাংশই ঘাটি গাড়ে তখনকার পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলির একটি, কলকাতায়। বিলাসবহুল নগরীর একটি প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে খাদ্য।


খাদ্য হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্পের একটি যার প্রাধানতম শাখা হচ্ছে মিষ্টি শিল্প। মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে পৃথিবীতে যে পরিমান এক্সপেরিমেন্ট চলে তা বুঝি আর অন্য কোন খাবার নিয়ে হয় না। আর শিল্প তো সবসময়ই পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত হবার নিয়ম মেনে চলে। শিল্পের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের অনুষঙ্গে সংযোজন ও বিয়োজনের এই খেলায় সৃষ্টি হয়ে উঠেছে রসনাবিলাসের অপ্সরীসম এই মিষ্টান্ন, রসগোল্লা।


বাঙালীকে সবচেয়ে বেশি বদলে দিয়েছে পর্তুগীজরা। এই জলদস্যুরা বাঙ্গালিদেরকে এতো বেশি অত্যাচার করেছে অথচ বাঙ্গালীরা তা একেবারেই মনে রাখেনি। অত্যাচারী হিসাবেও মনে রাখেনি অথবা পরিবর্তনকারী হিসাবেও মনে রাখেনি। পর্তুগিজরাই তো আমাদেরকে আলু আর মরিচ খাওয়া শিখিয়েছে। এই দুটো জিনিস ছাড়া তো আমরা এখন আমাদের একটা দিনও কল্পনা করতে পারিনা। ভেবে দেখুন তো আলুর তরকারি ছাড়া আমরা ভাত খাচ্ছি, আর এই তরকারিটা রান্না হয়েছে গোলমরিচ দিয়ে!! এখন তো অনেকে গোলমরিচ জিনিসটা কি তাই জানে না।


অন্যান্য আরো নূতন খাবারের সাথে পর্তুগীজরা আমাদের শিখিয়েছে বিভিন্ন ধরনের আচার আর দুধের ছানা তৈরীর প্রক্রিয়া। জলদস্যুরা যখন ভেতো বাঙ্গালীকে নষ্ট দুধ খাওয়া শেখালো তখন থেকে বাঙ্গালিরা ভালো দুধ নষ্ট করে খাওয়া শুরু করলো।


বাঙ্গালীর মিষ্টি তৈরীর ইতিহাসকে আমরা মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, দুধের ছানা তৈরীর আগে ও পরে। দুধের ছানা বাংলার মিষ্টি তথা খাদ্য পরিবর্তনে অসাধারণ এক বিপ্লব এনে দিয়েছিলো। দুধ নষ্ট হয়ে গেলে যে সেটা থেকে ছানা তৈরী করা যায়, এটা বাঙ্গালীদেরকে শিখিয়েছিলো পর্তুগীজরা। তার আগ পর্যন্ত দুধ নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দেবার রেওয়াজ ছিলো। তবে যেদিন থেকে বাঙ্গালীরা দুধের ছানার ব্যাবহার শিখলো সেদিন থেকে তারা পর্তুগীজকে টেক্কা দিয়ে গেল। দুই হাজার বছরের পুরানো মতিচূর লাড্ডু থেকে লাফ দিয়ে বাঙালী পৌছে গেল ভুবনমোহিনী রসগোল্লাতে। শুধু কি রসগোল্লা!! রসমালাই, চমচম, কালোজাম, গোপালভোগ, রাজভোগ, কমলাভোগ, ছানার জিলাপী, সন্দেশ আরো কত্তো কি! তবে সবগুলোকে ছাপিয়ে রসগোল্লার আবেদনই বাঙ্গালীর কাছে চিরন্তন। ভাবগতিক দেখে কে বলবে, যে রসগোল্লার বয়স দুইশো বছরের কম! সেটা বরঞ্চ প্রাগৈতিহাসিক লাড্ডুর থেকে মানুষের কাছে বেশি আপন।

লেখাটার এই পর্যন্ত কাল্পনিক ভালোবাসা ভাইকে উৎসর্গ করা হলো।


রম্য এবং ভ্রমণ কাহিনী লেখক শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত “রসগোল্লা’’ গল্পটি দশমশ্রেণিতে আমাদের অবশ্য পাঠ্য ছিলো। আমি নিশ্চিত যে এই গল্পটি দশম শ্রেণির স্টুডেন্টদের কাছে সবচাইতে জনপ্রিয়। অসাধারণ এই ছোটগল্পটিতে রসগোল্লার রসকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা বর্ণনাতীত। আমি যতোবার গল্পটা পড়েছি ততোবার আবার জিহ্বায় পানি জমে গেছে। গল্পটিতে রসগোল্লার রস আস্বাদন করে বিশ্বজনীনতার যেরূপ অভিব্যাক্তি হয়েছিলো তা তিনি অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন,
“ফরাসিরা বলেছিল, ‘এপাতাঁ!’
‘জর্মনরা, ‘ক্লর্কে!’
ইতালিয়ানরা, ব্রাভো!’
স্প্যানিশরা, ‘দেলিচজো,দেলিচজো।’
আরবরা, ‘ইয়া সালাম, ইয়া সালাম!"


তবে গল্পটা শুধুমাত্র রসগোল্লা নিয়েই ছিলো না। বরঞ্চ কাস্টমস নিয়ে বিড়ম্বনার কথাও ছিলো। “রসগোল্লা’’ গল্পটি থেকে আরো খানিকটা,

“চুঙ্গিঘর কথাটা বাঙলা ভাষাতে কখনও বেশি চালু ছিল না বলে আজকের দিনে অধিকাংশ বাঙালী যদি সেটা ভুলে গিয়ে থাকে তবে তাই নিয়ে মর্মাহত হবার কোনো কারণ নেই। ইংরেজিতে একে বলে ‘কাস্টম্ হাউস’, ফরাসিতে ‘দুয়ান, জার্মানে ৎস্ল্-আম্ট্, ফার্সিতে ‘গুমরুক্’ ইত্যাদি। এতগুলো ভাষাতে যে এই লক্ষ্মীছাড়া প্রতিষ্ঠানটার প্রতিশব্দ দিলুম, তার কারণ আজকের দিনে আমার ইয়ার, পাড়ার পাঁচু, ভূতো সবাই সরকারি, নিম-সরকারি, মিন-সরকারি পয়সায় নিত্যনিত্যি কাইরো-কান্দাহার প্যারিস-ভেনিস সর্বত্র নানবিধ কনফারেন্স করতে যায় বলে আর পাকিস্তান হিন্দুস্থান গমনাগমন ত আছেই।“


২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর ইন্ডিয়ান সময় যখন সকাল ৯ টা তখন আমি ইন্ডিয়ান চুঙ্গিঘর তথা কাস্টমস পার হচ্ছিলাম। একজন কাস্টমস আমাকে এককোনে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট ছো মেরে তুলে নিয়ে গটগট করে হেঁটে বের হয়ে গেল। সৈয়দ মুজতবা আলীর বন্ধু ঝান্ডুদা ইতালিয়ান চুঙ্গিওয়ালা দ্বারা বিড়ম্বিত হয়েছিলেন। আর ইন্ডিয়ান চুঙ্গিওয়ালা আমার চকচকে ৫০০ টাকার একটা নোট, যার অভিমূখে বঙ্গবন্ধুর জ্বলজ্বলে মুখচ্ছবি সেইখানা ডাকাতি করলো। ক্ষোভে, দুখে, হতাশায়, গ্লানিতে চরমভাবে অপমানিত বোধ করলাম আমি।


কাস্টমস থেকে বের হয়ে ইমিগ্রেশনের দিকে চললাম। একজায়গা থেকে ইমিগ্রেশন ফর্ম সংগ্রহ করে সেটি পূরন করলাম। ফর্মের দুটো জায়গা বুঝতে পারিনি বিধায় সেটা খালি রেখে দিলাম। আসলে প্রতিবারই আমার ইমিগ্রেশন ফর্ম দালাল পূরন করে দেয়, কিন্তু এবার দালালের সাহায্য না নিয়ে আমিই সেটা পূরন করেছি। বাঁশের বেড়ার একপাশে দেখি দালালেরা ১০/২০ টাকার বিনিময়ে ফর্ম পূরন করে দিচ্ছে। আমি অবশ্য সেদিকে আর গেলাম না। সোজা অফিসে ঢুকে গেলাম।


ইমিগ্রেশন অফিস দেখি পুরোই খালি। অনেকগুলো অফিসার নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। একটা খালি কাউন্টারে এগিয়ে গিয়ে ফর্ম জমা দিলাম। ফরমের সবগুলো অংশ পূরন করা হয়নি দেখে অফিসারটি একটু হাসলো। তারপর নিজেই সেই অংশগুলো পূরন করে দিলো। ছবি তোলা, পাসপোর্টে সীলা মারা সবমিলে এক মিনিটও লাগিলো না। ইমিগ্রেশন অফিসারটির ছোট্ট হাঁসিটা ততোক্ষণে আমার মন অনেকটাই ভালো করে দিয়েছে।


কিন্তু মাঝে মাঝে আমার বেশ ইগো প্রব্লেম কাজ করে। এই মুহূর্তে আমার প্রচন্ড পরিমানে রোখ চেপে গেছে। এটা সামলানো দরকার। বদমাশ কাস্টমসটা খামাখা আমার ৫০০ টাকা ঝেড়ে দেবে কেন!! এটার একটা বিহিত হওয়া দরকার। ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে অফিসের পিছন দিক দিয়ে অনেক ঘুরে সরু একটা গলি দিয়ে আবার এসে উপস্থিত হলাম কাস্টমসে। খুঁজে খুঁজে বের করলাম সেই বদমাইশ চুঙ্গিওয়ালাকে। আমাকে দেখে সে একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তারপর সে আমাকে আবারও নির্জন একটা ঘরের একপাশের কোনে নিয়ে গেল।


এই বদমাইশটার সাথে আমি হাতাহাতি ছাড়া সবকিছু করেছি। হুমকি-ধামকি থেকে অনুনয়-বিনয় পর্যন্ত সবকিছু। সে আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছিলো, আমিও তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছি। ব্যাটা অবাঙ্গালী ছিলো, সে যেন বুঝতে না পারে এরকম দুয়েকটা বাংলা গালাগালিও দিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা একটা নেগোসিয়েশনে এসেছিলাম। আমি অনেকখানি নরম হতে বাধ্য হয়েছিলাম, আর সে অল্পখানি নরম হয়েছিলো। ৫০০ টাকা থেকে সে আমাকে ১০০ টাকা ফেরত দিতে রাজী হয়েছিলো। যাক বাবা!! কুমিরের মুখ থেকে মুরগীর একটা মরা ঠ্যাং উদ্ধার করাও বা কম কি!!


সমস্যা হচ্ছে তার কাছে একশো টাকা নেই। আমার কাছেও ভাঙ্গতি নেই। আমি আবার সরু গলি দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে আসলাম। এখানে ডলার, রুপি, টাকা ভাঙানোর অনেকগুলো দোকান আছে। পরিচিত একটা দোকান থেকে চারশো টাকা ধার নিলাম। তারপর আবার পিছনের সরু গলি দিয়ে কাস্টমস অফিসে ফেরত আসলাম।


বদমাইশ ব্যাটা দেখি হাসিমুখে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সেও ভাঙ্গতি জোগাড় করতে পেরেছে। তার হাতে ১০০ টাকার চকচকে একটা নোট। আমি নিশ্চিত যে ব্যাটা এই টাকাটা কোন বাংলাদেশী যাত্রীর কাছ থেকে ঝেড়েছে। তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে দাঁত কেলিয়ে আমিও একটা হাসি দিলাম। তারপর পিছন ফিরে সমান তালে তার চৌদ্দ গুষ্টিকে গালাগালি দিতে দিতে আবার পিছনের গলিটা দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসের সামনের দিকে চললাম। ভাগ্যিস ব্যাটা টের পায়নি, টের পেলে আমার যে কি হতো তা আল্লাহই জানে!! টাকার ক্যাচালের যন্ত্রনায় ততোক্ষনে প্রায় ৪৫ মিনিট পার হয়ে গেছে।


ইমিগ্রেশন অফিসের বাইরের দরজায় দেখি আমার বাংলাদেশী সাহায্যকারীটি দাঁড়িয়ে আছেন। আমার দেরী দেখে তিনি কিছুটা চিন্তিত। কাস্টমসের কথা শুনে তিনি খানিকক্ষন হাসলেন। তারপর কে পি ঘোস থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে দিলেন। এরা সবসময়ই আমাকে টাকার কম রেট দেয়। কিন্তু পরিচিত বলে কখনো কিছু বলতেও পারি না। আসলে বর্ডারে জাল রুপির ব্যাপার থাকতে পারে, এই আশঙ্কায় আমার বাবা অন্য কোথা থেকে টাকা ভাঙ্গাতে দিতে চান না। তবে এবার আমি বুদ্ধি করে এদের কাছ থেকে সব টাকা ভাঙ্গাইনি। আমার সাহায্যকারী তখনো আমার পিছু ছাড়েনি। তার ফোন থেকে আমার বাবার সাথে ক্ষানিকক্ষণ কথা বললাম, জানালাম যে আমি ভালো আছি কোন সমস্যা নাই। তারপর পাসপোর্ট ফটোকপি করবো আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না, এই বাহানা দিয়ে সাহায্যকারীটিকে ভাগালাম।


যেখানে পাসপোর্ট ফটোকপি করেতে গিয়েছি তার পাশে দেখি টাকা ভাঙানোর জন্য ডাকাডাকি করছে। আমি প্রথমে ফটোকপি করলাম। ইন্ডিয়াতে ফটোকপিকে জেরক্স বলে। বিল আসলো মাত্র ৮ রুপি। অথচ একবার বাংলাদেশ অংশের বেনাপোলে ৫ পাতা ফটোকপি করার জন্য দোকানদার আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়েছিলো। ফটোকপি শেষে বাকী টাকাগুলো ভাঙ্গাতে চললাম।


যে টাকা ভাঙানোর কথা বলেছিলো সে আমাকে একটা গলির ভিতর তার সাথে যেতে বললো। আমি প্রথমে গলির মধ্যে ঢুকতে রাজী হচ্ছিলাম না। কিন্তু সেখানে বেশকয়েকজন লোককে দেখে শেষ পর্যন্ত ঢুকলাম। বর্ডারের এরকম গলিতে একা ঢোকা একেবারেই ঠিক না। যে কোন সময় যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। এরা প্যাচে ফেলে যাত্রীদের কাছ থেকে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। বিদেশ বিভুয়ে এর চাইতে বড় বিপদ আর কি হতে পারে।


তবে গলির খুব বেশি ভিতরে ঢুকতে হলো না। ওখানের একটা দোকানে ঢুকলাম। দোকানদার আমাকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করলো। কতো টাকা ভাঙ্গাতে চাই সেটা শুনে নিলো। তারপর সেটা ক্যালকুলেটারে হিসাব করে আমার সামনে শো করলো, মুখে কিছু বললো না। আসলে পাশাপাশি এতো দোকান যে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রতোযোগিতা চলে আসে। যদি সে মুখে কিছু বলে তাহলে পাশের দোকানদার সেটা শুনে ফেলতে পারে, এজন্যই হয়তো ক্যালকুলেটরে শো করে।


যাই হোক, রুপির এম্যাউন্ট যেটা পেলাম সেটা কে পি ঘোস থেকে অনেক বেশি। আমার টাকাগুলো ভাঙ্গিয়ে ফেললাম। কিন্তু আমি সন্দেহ প্রকাশ করলাম যে তাদের রুপিগুলো জাল কিনা। কারণ আমি শুনেছি যে বর্ডার থেকে বিভিন্ন দোকান অনেক সময়ই জাল রুপি গছিয়ে দেয়। ইন্ডিয়াতে জাল রুপি সহ ধরা পড়লে কঠিন শাস্তি। দোকানদার তখন হেঁসে আমাকে জাল রুপি চেনার উপায়গুলো
বোঝালো। আমি তাকে বললাম যে আপনি তো ভুজুং ভাজং যা কিছু আমাকে বোঝাতে পারেন। শুনে সে জোরে হেঁসে উঠলো। আসলে অনেক সময় অনেক কিছু ইচ্ছা না থাকলেও জোর করে বিশ্বাস করতে হয়। টাকা ভাঙ্গানো শেষে আমি যেন সেগুলো খুব সাবধানে রাখি সে ব্যাপারে দোকানদার বারবার আমাকে সাবধান করে দিলো, কারণ প্রায়ই নাকি লোকাল ট্রেনে পকেটমার হয়। একখানা কার্ড দিলো যেন পরেও আমি সেখানে আবার আসতে পারি।


টাকা ভাঙ্গানো শেষে অটোতে উঠলাম। এই অটোগুলো বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে। ২০ মিনিট মতো সময় লাগে। ভাড়া আগে ছিলো ২৫ রুপি, এবার দেখি ৩০ রুপি করে চাচ্ছে। দরদাম না করে উঠে পড়লাম, ৫ রুপিরই তো ব্যাপার।


আমি বসা মাত্রই অটো চলা শুরু করলো। যশোর রোডের এপারের অংশ। এখানকার গাছগুলো আরো বেশি সুন্দর, আরো বেশি মোটামোটা। এইপাশের রাস্তা চওড়া করা হয়েছে গাছগুলোকে সংরক্ষন করে। বিশাল মোটা গাছগুলোকে মাঝখানে রেখে দুপাশ দিয়ে চার লেনের রাস্তা। ডালপালার কারণে কিছুটা পথ অন্ধকার অন্ধকার, মনে হয় যেন সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।


বনগাঁ শহরের বাড়িগুলোর সাথে যশোরের একটু পুরানো বাড়িগুলোর দারুন মিল। মনে হয় যেন যশোরের কেশবলাল রোড দিয়ে যাচ্ছি। তবে এখানকার মেয়েদের দেখলে খুবই ভালো লাগে। তারা খুব স্বাধীনভাবে সাইকেল বা স্কুটি চালিয়ে চলাফেরা করে। অন্তত বাংলাদেশের মেয়েদের মতো তাদের মধ্যে ন্যাকামো ব্যাপারটা নেই।



পৌছে গেলাম বনগাঁ স্টেশনে। অটো থেকে নেমে কাস্টমস ব্যাটাকে আবারো কতোগুলো গালি দিলাম মনে মনে। ইন্ডিয়ান সময় অনুযায়ী এখন বাজে সকাল ১০ টা ২০ মিনিট। আমি সবসময়ই বনগাঁ থেকে ৯’৫০ এর মাঝেরহাট লোকাল ধরি। এই ট্রেনটা একেবারে বিবাদীবাগ পর্যন্ত যায়। বদমাইশটার সাথে ক্যাচাল না বাধলে আমি সহজেই সেই ট্রেনটা ধরতে পারতাম। এখন আমাকে এই ভারী ব্যাগটা টেনে কয়েকবার ট্রেন আর বাস বদলে বদলে বিবাদীবাগ যেতে হবে। অসহ্য!





টিকিটের জন্য বিরাট লাইন। লাইনের পিছনে দাড়ালাম, কিন্তু একেবারেই সময় লাগলো না। এই ব্যাপারগুলোতে অটোম্যাটিকলি কম্পেয়ার চলে আসে। বাংলাদেশে কোন ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য কতোক্ষন করে লাইনে দাঁড়াতে হয়, তারপরেও লাইন পার হলে কাউন্টারে গেলে বলে টাকা ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসেন। অথচ এখানে খুব দ্রুত টিকিট দিয়ে দিতে পারে, খুচরা নিয়েও কোন সমস্যা করে না। এখানকার টিকিট বিক্রেতার অধিকাংশই দেখি নারী। আমাদের দেশেও রেলে এখন নারী এমপ্লয়ী দেখা যাচ্ছে, যদিও সংখ্যায় তা বেশ কম।


দমদম পর্যন্ত টিকিট কাটলাম। ৭০ কিলোমিটারের ভাড়া ১৫ রুপি। সময় লাগে ট্রেনভেদে দেড় ঘণ্টা থেকে পৌনে দু ঘণ্টা। ১ ও ২ দুটো প্ল্যাটফর্মেই ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিলো। ১ ও ২ নম্বর থেকে যে ট্রেনগুলো ছাড়ে সেগুলো সাধারণত রানাঘাটে যায়। আর ৩ নম্বরেরটা কলকাতার দিকে। তবে শুনলাম দুনম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনটা নাকি শিয়ালদা যাবে। উঠে পড়লাম সেটাতে।

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩৫

রানা আমান বলেছেন: রসগোল্লার মতই সুস্বাদু লেখার জন্য ধন্যবাদ ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭

সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা হা হা

অনেক ধন্যবাদ ভাই :)

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: লালমোহন অপ্রচলিত নাম নয় ভাই। এই মিষ্টিটাকে লালমোহনই বলে। আর কালোজাম আকারে চমচমের মতো লম্বা ও তুলনামুলকভাবে কড়া ভাজার হয়ে থাকে। ফলে কালোজামের রঙ কালচে হয়, কিন্তু লালমোহনের রঙ উজ্জ্বল লালচে।

যাই হোক পুরো লেখাটাই উপভোগ্য। ধন্যবাদ সারাফাত রাজ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আসলে কি, অনেক সময় আকার বদলের কারনেও মিষ্টির নাম বদলে যেতে পারে।

লেখাটি শুরু করার আগে আমি আমার আপুর সাথে কথা বলেছি, সে লালমোহনকেই কালোজাম হিসাবে চিহ্নিত করেছিলো। বোধহয় আমাদের অঞ্চলে লালমোহনকে কালোজাম হিসাবে সম্বোধন করে থাকে। কারণ দোকানে এই মিষ্টিটাকে আমি কালোজাম হিসাবেই ডাকতে শুনেছি। ইন্টারনেটেও কালোজাম আর লালমোহনকে একই মিষ্টি বলতে দেখেছি।

তবে আপনি চাইলে লেখাটার এই অংশটা আমি বদলে দিতে পারি। কারণ মিষ্টি বিষয়ে আমার ভুল হতেই পারে।

আমাদের ওখানে চমচম কিন্তু লম্বা হয় না, একেবারে গোল হয়।

৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: লেখাটি ভালো লেগেছে।

আর আপনি বলতে চেয়েছেন- রান্নার অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেস্ট ছিলো সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি। রান্না যে পৃথিবীর সবচাইতে বড় শিল্প আর সিদ্দীকা কবির যে সে শিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় বড় মাপের শিল্পী তা এনটিভির এই প্রোগ্রামটা দেখলেই বোঝা যেত।

তাদের সব রান্নার রেসিপি বড় লোকদের মুখ রোচকের জন্য। ছোট লোকের রন্দন প্রণালী নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই।
থাকবেই বা কিরে.......... ছোট লোকের খাদ্যই যেথানে ঠিত মত নেই সেখানে মুখ রোচক, রন্দ্ন প্রণালী থাকার কথা না।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

সারাফাত রাজ বলেছেন: লেখা ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করার জন্য আরো বেশি করে ধন্যবাদ।


তাদের সব রান্নার রেসিপি বড় লোকদের মুখ রোচকের জন্য। ছোট লোকের রন্দন প্রণালী নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই।
থাকবেই বা কিরে.......... ছোট লোকের খাদ্যই যেথানে ঠিত মত নেই সেখানে মুখ রোচক, রন্দ্ন প্রণালী থাকার কথা না।


আমার মনে হয় গরীব লোকেরা যে তার রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে পারে এটা তিনি ভাবেননি, ভাবলে নিশ্চয় গরীব লোকের রান্নাও শেখাতেন।

৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। এবার পর্বে রসোগোল্লায় মন ভরল।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২২

সারাফাত রাজ বলেছেন: রসগোল্লায় তো আপনার মন ভরলো, কিন্তু আপনার বাড়িতে যে দাওয়াত দিলেন সেখানে কি কি আইটেম থাকবে? :D

৫| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তবে আপনি চাইলে লেখাটার এই অংশটা আমি বদলে দিতে পারি। কারণ মিষ্টি বিষয়ে আমার ভুল হতেই পারে।


না, না, বদলানোর কোন প্রয়োজন নাই। কারণ এলাকা ভেদে একই মিষ্টি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে থাকে। সামান্য পার্থক্য ছাড়া এসব মিষ্টি একই।

ধন্যবাদ ভাই সারাফাত রাজ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

সারাফাত রাজ বলেছেন: ওকে ভাই। B-)

আপনি অনেক মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়েছেন, আপনাকে স্পেশাল থ্যাকস :)

৬| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২২

তাওহিদ হিমু বলেছেন: রসগোল্লার পরিবর্তে ভ্রমণ ও সেই দেশ, তাদের পরিবহণব্যবস্থা, মানুষ, ব্যবসা, মানুষের আচরণ ইত্যাদি নিয়ে আরো বেশি লিখলে ভাল লাগত। তবে রসগোল্লার লেখাও কম মিষ্টি না। অনেক ভাল লাগল। এবার একটু দেরি হলো। পরের পর্বের আশায় রইলাম। ভালবাসা ও ধন্যবাদ আপনাকে। ☺

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা হা হা

ভাই, সব একবারে চাইলে কি হবে?
ধীরে বন্ধু ধীরে....

যদ্দুর সম্ভব লেখার চেষ্টা করবো।

৭| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩১

প্রামানিক বলেছেন: রসগোল্লার ঝগড়া আর অন্যান্য লেখা সব কিছু নিয়ে রগোল্লার মতই ভালো লাগল। ধন্যবাদ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬

সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই B-)

৮| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭

অদৃশ্য বলেছেন:




ফ্যান্টাস্টিক...

গোল্লা নিয়ে ক্যাচাল গন্ডোগোল ভালোই চলছে তাহলে, জানা ছিলোনা... এখন জেনে বেশ মজা পেলাম... দুধ নিয়ে এমন ঘটনা কোনদিনও জানা ছিলোনা... আর কাল্পনিক ভাইয়ের যদি ডায়াবেটিক না থাকে তবে উৎসর্গ করা একদম ঠিক আছে... গোল্লা কাহিনী দারূন...

চুঙ্গিওয়ালার সাথে আপনার ফাইটটা অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত... বদমাসের দলগুলো এভাবেই অন্যের টাকা মেরে দিয়ে টাটা, আম্বানি হবার স্বপ্ন দেখে... ওসব রাক্ষসদের মুখ থেকে ১০০ টাকা ফিরিয়ে আনাটাও দারূন কাজ...

সবমিলিয়ে দারূন ভাবেই এগুচ্ছে কাহিনীটি... আপনার লিখার প্রশংসা বারবার করে আপনার মাথাটাকে নষ্ট করতে চাইনা... তারপরেও কথা হলো কোনকিছু না বললে আপনি আপনার উপস্থাপনের ভঙ্গিমাটাও ঠিকঠাক ধরতে পারবেননা... আমার দিক থেকে, এটা সুন্দর... আমার বিশ্বাস আপনি লিখালিখির চর্চা নিয়মিত করলে দারূন কিছুই দেশ ও মানুষেকে উপহার দিতে পারবেন... আপনার পড়াশুনার পাশাপাশি এই ভাবনাটুকুতেও কাজ করুন...

লিখাটি সময়করে আরও একবার পড়বো...
শুভকামনা...

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২১

সারাফাত রাজ বলেছেন:
কাল্পনিক ভালোবাসা খাবার-দাবার নিয়ে খুবই অত্যাচার করে। সে মাঝে মাঝে এমন এমন খাবারের নাম বলে যে মানসিকভাবে অত্যাচারিত হই। তাই প্রতিশোধ নেবার এক মধুর চেষ্টা। ;)





ভাই, আপনি কিছু মনে করবেন না। আপনি সবসময়ই এত্তো সুন্দর করে মন্তব্য করেন যে তার উত্তর দিতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। শেষে দেখে যায় আপনাকে এমন জবাব দিই আমি যা খুবই সাদামাটা হয়ে যায়।

দয়া করে নিজ গুনে এটা ক্ষমা করবেন।

৯| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: কি কি আইটেম থাকবে সেটা আসলেই দেখবেন। আর আমি তো জব করি একটা, তার জন্য বাইরে থাকি নিশ্চয় একদিন সময় করে আসবেন।তবে দুজনের সময় মিললেই তবেই আসতে হবে । একটু সবুর করুন ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: তাইলে আসেন আলোচনা করি :#)

১০| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬

শেখ মাসুদুর রহমান বলেছেন: ঠোঁট বেয়ে তখনো দুফোটা গরম রস গড়িয়ে পড়ছে!! উফ!!! ভাবলেই শরীর ঝিমঝিম করে উঠে!!

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, কেমন যে হয়ে গেল ব্যাপারটা !!!!!! B:-)

১১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ১৯৮৭ সালে হাবরা থেকে শিয়ালদহ গিয়েছিলাম আড়াই রুপী দিয়ে।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৯

সারাফাত রাজ বলেছেন: সে তুলনায় তো তাহলে ভাড়া খুব বেশি বাড়ে নাই। এখন এই পথটুকুর ভাড়া ১০ রুপি।

১২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: চুঙ্গিওয়ালাকে আবার খুঁজে বের করে ১০০ টাকা ফেরৎ আনার ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেষ্টি।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৫৪

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাইরে, ইন্টারেস্টিং নারে :||

৫০০ টাকার মধ্য থেকে যে অন্তত ১০০ টাকা ফেরত পেয়েছিলাম এটার জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। :|

১৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২০

রঞ্জন সরকার জন বলেছেন: ইন্ডিয়ান কাস্টমসের হারামীর বাচ্চাটাকে (গালি দেওয়ার জন্য দুঃখিত) ৪০০ টাকা দিয়ে দিলেন!!!?? চিল্লাচিল্লি শুরু করা উচিত ছিল। দেখা যেত কি করতে পারে। জাস্ট এটা বলে চিল্লাইলেই হত যে "এই এই আমার মানিব্যাগ থেকে থাবা মেরে টাকা নিলেন কেন?" বারবার বললেই দেখা যেত কি করে। X(

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০২

সারাফাত রাজ বলেছেন: গালি দেবার জন্য দুঃখিত হবার কিচ্ছু নেই। যারা গালির প্রাপ্য তাদেরকে অবশ্যই গালি দেয়া উচিৎ। আমি নিজেই তো ইন্ডিয়ান কাস্টমসের হারামীর বাচ্চাটাকে চৌদ্দ গুষ্টি সহ যে পরিমান গালাগালি দিছি তার ইয়াত্তা নাই।

ভাই আমি তো চিল্লাচিল্লি অনুনয় বিনয় হুমকি সব করেছি। শুধু হাতাহাতি ছাড়া। এজন্যই অন্তত ১০০ টাকা ফেরত পেয়েছিলাম। নাহলে পুরো টাকাটায় ভোগে যেত।


আসল ব্যাপার হচ্ছে যে আমরা মোটামুটি ওদের কাছে জিম্মি। আমি এর চাইতে বেশি আর কি করতে পারতাম!!! দেখা গেল যে বাংলাদেশ পুলিশের মতো তারাও দুনম্বরি কোন জিনিস আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে বিপদে ফেলে দিতো।

যাক!! কি আর করা!!!

১৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৪

আমি গাডডুর বাপ বলেছেন: অনেক দেরিতে কমেন্ট করছি বলে দুঃখিত। জানেন তো আমি একটু অসুস্ত আর কয়েকদিন ধরে নানা ঝামেলার মাঝে আছি। এর জন্য আপনার সাথে কথাও বলতে পারি না।

ভ্রমন কাহিনীর মাঝে খাবারের ইতিহাস। খারাপ লাগে নাই।

ভাই আমিতো আপনাকে খুব সাধারণ একজন গোবেচারা টাইপ এর মানুষ ভাবছিলাম। কিন্তু আপনি এত হিম্মৎ ওয়ালা সাহসী একজন মানুষ তা তো জানতাম না। এই রকম শয়তান এর কাছ থেকে ১০০ টাকা ফেরত আনতে পারছেন এইটা তো বিশাল ব্যাপার।

আপনার সাথে আরেকটি অজানার দেশে বেড়িয়ে পড়ছি ভাবতেই ভালো লাগছে।
লেখা নিয়ে কিছু বলছি না কারন আপনার লেখার মান হিমালয় উচ্চতায় পোঁছে গেছে। আমার মত নাদানের হিমালয় এর ব্যাপারে কিছু বলা আসলে সাজায় না।

পরের পর্ব টা দ্রুত দেবেন আশা করি।

আপনার পাওনা কফি টা এই মাসেই পাবেন। আপনি যেকোনো একটা দিন ঠিক করলেই হবে।

ভালো থাকবেন।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: দুঃখিত হবার কিচ্ছু নাইরে ভাই, আপনি যে একটু সমস্যার মধ্যে আছেন তা আমি অনুধাবন করতে পেরেছি।

ভ্রমণ কাহিনীতে খাবারের ইতিহাস দিতে চাই নাই, চুঙ্গিঘরের ইতিহাস দিতে চেয়েছি। এই চুঙ্গিঘরের মধ্যে রসগোল্লা ঢুকে গেছে। :-<

ভাই, আমি সত্যিই একজন গোবেচারা টাইপ মানুষ।
হিম্মৎ ওয়ালা সাহসী
বাপরে!!! এরকম কথা তো ভাবতেই পারি না।
আসলে হয়েছে কি ভাই, হুতোশে আমি মাঝে মাঝে অনেককিছু করে ফেলি। ঠান্ডা মস্তিষ্কে থাকলে এটা করার কথা ভাবতেও পারি না। একবার ভার্সিটিতে ছাত্র আন্দোলন করার সময় পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলাম। বাপরে!!! সে কথা ভাবলে এখনো আমার জ্বর চলে আসে!! এই ঘটনার পর থেকে কোন ছাত্র আন্দোলনেই আমি আর সংযুক্ত হবার সাহস পাই না।

এখন তো আমি ভাবি যে বদমাশ কাস্টমস ব্যাটা যদি ছল-চাতুরি করে আমাকে আটকে দিতো তাহলে কি ভয়ঙ্কর ব্যাপারটাই না হতো!!

লেখার মান হিমালয়ে পৌছেছে
হা হা হা হা
মজা পাইলাম ভাই। ব্যাপারটা সত্যি হোক, আর আপনার মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক (অবশ্যই জীবিত অবস্থায়)।

পরের পর্ব তো এখনো লেখিইনাই ভাই।

কফি তো আপনার পাওনা। আপনিই প্রথম ব্যাক্তি যে আমার আগের সিরিজটার ধাধার সঠিক উত্তরটা দিয়েছিলেন। আশা করি খুব শিঘ্রই আপনার পাওনাটা পরিশোধ করতে পারবো।

তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হোক, এই কামনায় ...

১৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

গ্রাম বাংলা এবং গ্রামীণ জীবন বলেছেন: খুব চমৎকার বর্ণনা আপনার লেখা গুলি পড়লে মনে হয় ঐ জায়গাতেই আছি আমি ও আপনার সাথে ঘুরতেছি। আপনার লেখা পড়ে খুচ ইচ্ছা করে ঘুরতে যেতে কিন্ত সময় হয় না। পর্ব কবে পাব ভাই

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। আমি তো দেখেছি যে আপনি ভ্রমণ খুবই পছন্দ করেন। যেকোন ভ্রমণ লেখাতে আপনার মন্তব্য তারই প্রমান। আশা করি সময় করে ঘুরতেও পারবেন।

পরের পর্ব এখনো লেখা শুরু করতে পারিনাই ভাই।

১৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: সবটা টাকা নিতে পারলে আরো বেশি ভাল লাগতো। খুব রাগ হচ্ছিল আমার বলা নেই, কওয়া নেই কোন কারন ছাড়াই যে কেউ টাকা নিয়ে যাবে তাতো হতে পারেনা। ভাল থাকবেন ভাই। আর পরের পর্বটা দ্রুত দিবেন প্লিজ। আমার আবার এসব ব্যাপারে ধৈর্য ক্ষমতা কম।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩০

সারাফাত রাজ বলেছেন: কি আর করা যাবে ভাই :||

পরের পর্ব তো এখনো লেখাই শুরু করতে পারি নাই ভাই। :-< আমারো ধৈর্য অনেক কম। |-)


হা হা
দেখি ভাই যতো তাড়াতাড়ি দেয়া যায়, সেই চেষ্টাই করতেছি।

১৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৮

জীবন সাগর বলেছেন: রসগোল্লার ইতিহাস জানা হলো, মোটামুটি মনে থাকবে। ভাল লাগলো বাংলাদেশের বরিশাল ও রসগোল্লার সে ইতিহাসে সামান্য স্থান পেয়েছে।

রসগোল্লা কার না ভালো লাগে, আপনার গল্প পড়তে পড়তে আমার ছোট সময়ের রসগোল্লা খাওয়ার ইতিহাস মনে পড়ে গেল। যে ইতিহাস আমাকে এখনো মনে হলে হাসায়। যাকগে, আপনার পোষ্টটি পড়ে ভাল হলো রসগোল্লা সম্পর্কিত অনেক তথ্য পেয়ে গেলাম।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১০

সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা
ভাই লেখাটা লিখতে গিয়ে আমি উঠে কয়েকবার খেজুর গুড় খেয়ে এসেছি। বাসায় রসোগোল্লা ছিলো না তাই। :)

আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে রসগোল্লার ইতিহাসে জন্মদাত্রী হিসাবে বরিশালাকে বেশি স্থান দিই। তবে কলকাতার মিষ্টিগুলো সত্যিই খুব অসাধারণ। কলকাতায় যদি কখনো যান তাহলে ওখানকার মিষ্টিগুলো পরখ করে দেখতে পারেন। বড় দোকানের চেয়ে ছোট ছোট দোকানের মিষ্টি গুলো আমার কাছে বেশী ভালো লেগেছিলো। শুধুমাত্র মিষ্টি খাবার জন্য কলকাতায় গেলেও সে ট্যুর বৃথা হবে না।

ভালো থাকবেন ভাই। B-)

১৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১০

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: কখনো যদি ফরিদপুর এ যান, তাহলে শহরের ভিতরে তেতুলতলায় খোকা মিয়ার মিষ্টির দোকানে গিয়ে গরম গরম রসগোল্লা খেতে ভুলবেন না। B-)

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৯

সারাফাত রাজ বলেছেন: কেন ভাই!
এটা তো বলতে পারেন, যে চলেন আপনাকে ওখানে নিয়ে গিয়ে খাওয়াচ্ছি। X((

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.