নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ পাহাড় ডিঙায়, পর্বত ডিঙায়, আমি সময়কে ডিঙাতে পারি না। আমি এক জায়গায় জড় হয়ে বসে থাকা মানুষ, ঘূর্ণনশীল পৃথিবী ঘুরবে, আর আমি তার গতিতেই এগিয়ে যাবো। মানুষের ভালো ব্যবহারগুলো সব মরিচীকা, কোথাও সুখ নেই, চারিদিকে অহেতুক সৌন্দর্য।

একজন নীলমেঘ

সময় কিছুই পরিবর্তন করে না, যদি না তুমি পরিবর্তন এর চেষ্টা করো।

একজন নীলমেঘ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রলয়বীণা_বাজবে_যখন.... (১)

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:০৪

১....
ইন্টার্ণীর পরপর অভিজাত পাড়ার এক প্রাইভেট হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরী শুরু করলাম। চাকরীটা আমার না করলেও হত, পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিং শুরু করতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু যেহেতু বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছি, এমন সময় বেকার থাকাটা শোভন দেখায় না...
সে যাই হোক, প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরী শুরু করলাম এবং সে চাকরীই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।হাসপাতালটিতে একটি নির্দিষ্ট কনসালট্যান্ট এর আন্ডারে জ্বরের রোগী ভর্তি হলেই আমার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হতো, মেজাজটাও বিগড়ে যেতো। কারণ, আমার জানা ছিলো এই রোগীটিকে একটু পরেই অযৌক্তিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অ্যান্টিবায়োটিক (মেরোপেনেম) প্রয়োগ করা হবে এবং আমাকে ট্রিটমেন্ট শীটে সেটাই লিখতে হবে....
বিনীতভাবে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে- অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রাইমারী লেভেলের সিলেক্টিভ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা যায় কিনা। কনসালট্যান্ট আমাকে বেশ কঠিনভাবে অপমান করলেন।ভালোই হয়েছিলো, আমি রিজাইন লেটার জমা দিলাম এবং ঢাকা মেডিকেলে ট্রেনিং স্টার্ট করলাম। আনন্দের বিষয়, ঢাকা মেডিকেলে আমাকে কখনও এমন অযৌক্তিক অবস্থায় পড়তে হয় নাই....
২.....
অভিজাত পাড়ার গল্প বললাম, এবার অজপাড়াগাঁয়ে যাই। বিসিএসে জয়েন করলাম, যেখানে অন্য কোনো সরকারী কর্মকর্তা সহজে পা মাড়ান না, সেখানে যেতে হলো এবং আবারো মেজাজ খারাপ হলো। এক ইনভেস্টিগেশনের খপ্পরে পড়লাম, পরীক্ষার নাম Widal test...
টাইফয়েড ফিভার সাসপেক্ট হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে, আর আছে একটা ফালতু পরীক্ষা। Widal test হলো সেই ফালতু পরীক্ষা। Kumar and Clark's Clinical Medicine বইয়ে এই ইনভেস্টিগেশন সম্পর্কে বলা আছেঃ
"Serological tests such as the Widal antigen test are of little practical value, are easily misinterpreted and should not be used.".......
এবার গ্রাম এলাকায় মেজাজ খারাপ হবার কারণটা বলি।যেখানে আমাদের দেশে এই ইনভেস্টিগেশনের অ্যাকচুয়ালী কোনো মূল্য নাই, সেখানে কারো জ্বর হলেই ফার্মেসীর দোকানদার থেকে শুরু করে পল্লী ডাক্তার, স্যাকমো, হোমিও ডাক্তার, আয়ুর্বেদ ডাক্তার, ইউনানী ডাক্তার এবং কিছু অ্যালোপেথিক ডাক্তারকেও এই টেস্ট সাজেস্ট করতে দেখলাম।রেজাল্ট একটু বাড়লেই( যেটা আমাদের এই দেশে খুবই স্বাভাবিক) কেল্লা ফতে, টাইফয়েড হয়েছে বলে ১৪ দিনে ২৮ টা থার্ড জেনারেশন অ্যান্টিবায়োটিকের ইনজেকশন স্টার্ট করা হয়।ব্যবসা ভালোই চলে....
৩...
অভিজাত পাড়া গেলো, অজপাড়াগাঁ গেলো। এবার আমার এক আমজনতা বন্ধুর কথা বলি...
বন্ধুর কাশি আর শ্বাসকষ্ট কিছুতেই কমে না। ফার্মেসীওয়ালার কাছে গিয়ে তিনটি ভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ইনএপ্রোপ্রিয়েটলী খাবার পরও যখন কাশি থামে না, তখন বন্ধুবর ভীত হয়ে আমার শরণাপন্ন হলো....
বন্ধুর কাশি ও শ্বাসকষ্টের কারণ ছিলো অ্যাজমা/হাঁপানী, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের আসলে কোনো প্রয়োজনই ছিলো না....
৪...
দেশ থেকে বের হই, একটু পাশ্চাত্ত্যে নজর দেই...
বৃটেনের রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস্ এর মেম্বারশীপ পরীক্ষা দিতে গেলাম।প্রশ্নগুলো করা হয় রিয়েল লাইফ কেইস বেইজড্ সিনারিওর সাথে সামঞ্জস্য রেখে।ইনফেকশনের টপিক আসলেই প্রশ্নে দেখি রোগীকে ৫-৬ টাকার Amoxicillin, Flucloxacillin টাইপের প্রাইমারী লেভেলের অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন করা হয়েছে -সে কথা বলা হয়। আমি প্রশ্নের অ্যান্সার দেই আর মিটিমিটি হাসি। মনে মনে বলি, "হায়রে গরীব বৃটিশ, বাংলাদেশে আয়। দেখ ব্যাটা, আমরা কত ধনী! আমাদের পাড়ার ফার্মেসীওয়ালাও চিকিৎসা শুরু করে ৪০-৫০ টাকার থার্ড জেনারেশনের Cef-3 দিয়ে...."
আমার এক কাজিন থাকে USA তে। কয়দিন আগে তাকে বলেছিলাম প্রেসক্রিপশন ছাড়া প্রাইমারী লেভেলের অ্যান্টিবায়োটিক Amoxicillin যোগাঢ় করতে। উনি যে উত্তর পাঠিয়েছিলেন তা হুবহু আপনাদের কাছে তুলে ধরিঃ
"Dr, I just spoke to the CVS, the largest pharmacy in u.s.a. Any antibiotic has to be prescribed by doctor. No way you can have it without doctor's prescription. Thanks"
এইবার যে কাজিন Italy তে থাকে তাকে বললাম, ' ভাই, একটা কাজ দিব, করতে পারেন কিনা দেখেন।প্রেসক্রিপশন ছাড়া Flucloxacillin কিনে বাসায় আনেন, আমারে ছবি পাঠান...'
২৪ ঘন্টা যাবার পর ভাই রিপ্লাই দিলেনঃ " প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক!!!পাগল হইছো?.... "

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:০১

থার্মোমিটার বলেছেন: যা লিখলেন এটা আমাদের জাতিগত সমস্যা, সমাজের সব সেক্টরেই পচন ধরেছে, ডাক্তার সমাজ বাকি থাকবে কেন? ডাক্তাররা কেউ বাইরে থেকে আসেনি এই দেশেরই মানুষ, বাংলাদেশের রোগিরা যদি ডাক্তার হতো তাহলে তারা এমন ডাক্তারই হত । আর হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক না লিখলে অনেক রোগিরাই ডাক্তার কে ডাক্তারই মনে করে না ।

১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৯

একজন নীলমেঘ বলেছেন: জ্বী ভাইয়া, আমরা বড় রসিক জাতি। সবাই নামের পাশের ট্যাগটাকেই সম্মান করি। ^_^

২| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:৩৭

নতুন বলেছেন: আমাদের জেনারেসনই মনেহয় এন্টিবাওটিক রিজিসটেন্সে করতে পারে এমন জীবানু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে দেখে যেতে পারবে বলে মনে হয়।

আমার স্ত্রীকে ফরিদপুর মেডিক্যালের অধ্যাপক এই ওয়াইডাল টেস্ট রেজাল্ট দেখে ২৮টা এজিথ্রমাইসিন প্রিস্কাইপ করেছিলেন.... ( তিনি অবশ্য ক্রিকেট খেলা দেখেন আর রোগী দেখেন... tab. লিখে রা্ন নেওয়া দেখে বাকি নাম লিখছিলেন আগের রোগীর)

সেটা দেখে নিচে অবসর প্রাপ্ত আরেক অধ্যাপকের কাছে গেলাম.... তিনি সব শুনে ওয়াইডাল টেস্ট সম্পকে আপনার কথা গুলি বলেছিলেন.... এবং সাধারন ৭ দিনের ওষুধ দিলেন বললেন যদি ঠিক না হয় তবে আসতে... আমাদের সেই কোস` শেষ করে আর যেতে হয় নাই।

১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:১১

একজন নীলমেঘ বলেছেন: জ্বী ভাইয়া, আমরাই দেখে যেতে পারবো আশা করছি।(মূলত ভয় পাচ্ছি এ জিনিস দেখতে)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.