নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামান্য একজন মানুষ। বোধহয় বিবেকের চেয়ে আবেগ বেশি। তেমন বেশি কিছু করতে চাইনা, শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চাই। এই প্রতিজ্ঞা-ই রইল।।

সাঈদ জামিল

সাঈদ জামিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প-জীবন তো সবে মাত্র শুরু, এর শেষটা দেখে যেতে চাই।

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০১

অনেক্ষণ ধরে রাস্তার ধারে ধারে হেটে চলেছি । কাঁধে কালো কাপড়ের ব্যাগ । এতে তেমন কিছু নেই । শুধু আছে দুইটা ডাইরী । একটা আমার অন্যটা জন্মদিনে শ্রবণীর পক্ষ হতে পাওয়া উপহার । আমার গন্তব্য উত্তরণের দিকে । উত্তরণটা কক্সবাজারের প্রসিদ্ধ স্হানের মধ্যে একটি । দুপুরের প্রচন্ড রোদে শরীরের ভেতর থেকে ঘাম নিষ্কাশিত হচ্ছে । ফলে টিশার্টের অবস্থা বারটা । আর এদিকে রিক্সাও পাচ্ছিনা ।
একটু আকাশের দিকে চোখ বিচরণ করলাম । আকাশে নীলের সাথে সাদা রঙটা কতনা মানানসই । এসব তারই কুদরতির নিদর্শন । তিনি প্রতিটি জীবকে কত সুন্দর করেইনা সৃষ্টি করেছেন । আমি আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে হাটতে থাকলাম ।

সামনে একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে । মনে হয় রিক্সা ওয়ালা রিক্সাতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে । টাকা বেশি চাইলেও কোন মতে রিক্সাটা ছাড়া যাবেনা । আমি একপ্রকার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম । এই যে ভাই যাবেন ? রিক্সা ওয়ালা তার দু'হাতের ফাঁক থেকে মাথাটা তুলে আমাকে দেখতেই তার দুই চোখ স্বব্দ হয়ে গেল । সে কিছু না বলে আবার তার অাগের অবস্থায় ফিরে গেল । খানিকটা মুখ লুকিয়ে ফেলার মত । আমার তার এই আচরণে কিছুটা সন্দেহ হল ।
আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম । তার মুখ দেখে চোখে তখন শুধু একটা নামই ভাসছিল 'হারুন' । কিন্তু তা অসম্ভব । তবুও একবার চেষ্টা করে দেখলাম । আমি একটু গম্ভীর ভাবে বলে উঠলাম, ভাই আপনার নাম কি হারুন ? সে নামটা শুৃনে কিছুটা নড়েচড়ে বসল । লোকটি এবার যা করল তার জন্য আমি একদম অপ্রস্তুত ছিলাম । সে সোজা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল । তার শরীর জুড়ে প্রচুর ঘাম । প্রথমে একটু অস্বস্তি বোধ করছিলাম । পরে আমিও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । তার চোখ দিয়ে নুনতা অশ্রুধারা অঝোরে বয়ে যাচ্ছে । আমিও আর আকাশে কালো মেঘের অপেক্ষা করলাম না । আমারও ছেড়ে দিতে হল ।
,
হারুন আমার ছোট বেলার বন্ধু । আমরা সবাই দুষ্টমির ছলে তাকে বাদশা হারুন-আর-রশিদ বলে ডাকতাম । সে বাদশাকে আজ দেখে নিঃস্ব মনে হচ্ছে । অামার ধারণা ছিলনা তার অবস্হা এমন হবে । আর অন্য বন্ধুদের কথা বাদই দিলাম । মহান রব্বুল আল-আমিন কোন সময় তার বান্দাদের কোন পরীক্ষায় উপনীত করেন তা কারো ধারণা নেই । তিনি কাউকে চাইলে ফকির থেকে রাজা বানান আর রাজা থেকে ফকির । সব কিছুই তার হুকুমে চলমান । হারুন অনেক ভাল ছাত্র ছিল । ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে একমাত্র সে-ই ছিল আমাদের ক্লাসের প্রথম স্হান অধিকারী । সে ছাত্রের আজ করুণ পরিণতি । তা ভাবতেই কেমন যেন লাগছে আমার । আমরা দু'জন ফুতপাতে বসে আছি ।
কারো মুখে কোন কথা নেই । আমি হারুনের দিকে লক্ষ্য করলাম । তার পরনে ময়লা শার্ট আর পোরানো ধরণের লঙ্গি । পায়ে তলা ক্ষয়ে যাওয়া চেন্ডেল । আমি হারুনকে বললাম, দুপুরে কিছু খেয়েছিস ? সে নরম স্বরে বলল, আমার খিদে নাই । কিছুক্ষণ অাগে কলা আর বন রুটি খেয়েছি । এতেই হবে । আমার দৃষ্টি হারুনের দিক হতে ফিরিয়ে নিয়ে বললাম, আমি কিছু খাইনি । অনেক খিদা লেগেছে । সে কথাটা শুনে করুণার চোখে আমার দিকে চাইল । বন্ধুদের চোখে করুণার উম্মোচন দেখতে ভালোই লাগে । আমি বসা থেকে উঠে রিক্সার দিকে এগিয়ে গেলাম । হারুন আমার পিছনে । আমি আমার কাঁধের ব্যাগটা তাকে দিয়ে বললাম, সিটে গিয়ে বস্ । আমি রিক্সা চালাব । হারুন সিটে বসতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলনা । ভদ্র জামা পেন্ট পড়ে রিক্সা চালাব তা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা ।
তাই আমি রাস্তার পাশের ডোবা থেকে কিছুটা কাঁদা কাপড়ে মাখিয়ে নিয়ে তার সামনে এলাম । হারুন আমার আচরণ দেখে প্রায় অভাক । বন্ধুরা যখন কিছু মানতে চাইনা তখন তাদের ভিন্ন কিছু করে মানিয়ে নিতে হয় । সূত্রটা আমার আরেক বন্ধু থেকে শেখা । আমি রিক্সা চালাচ্ছি । আমার পেছনে হারুন । আমি মাঝে মাঝে মুখ ফিরিয়ে হারুনের দিকে দেখছি । সে এখন কান্নারত অবস্থায় । আমি হারুনের চোখে পানি দেখে বিরক্ত হয়ে বললাম, এই কাঁদছিস কেন ? হারুন বলল, জামিল তুই এখনো একটুও বদলাসনি । আমি হারুনের কথা শুনে একটু হেসে বললাম, হয়তো আমি অনেকের জন্য বদলে গিয়েছি কিন্তু তোর জন্য আমি সেই ছোট বেলার জামিলই রয়ে গিয়েছি । তুই আমার ছিলি, আমার আছিস এবং আমার থাকবি । আমরা এখন একটা ছোট হোটেলের সামনে । হোটেলটির নাম রান্না ঘর । আমি কখনো এর আগে এই হোটেলে আসিনি । হইত হারুন এসেছে । তাই সে এই হোটেলের সামনে রিক্সা রাখতে বলল । হোটেলটা বেড়ার তৈরি ।
উপরে টিনের ছানি । আমরা একটা টেবিলে বসে পড়লাম । খাওয়ার সময় আমি হারুনের দিকে একবার লক্ষ্য করলাম । সে অনেকদিন না খাওয়া ক্ষুদার্থ পথিকের মত ভাত খাচ্ছে । আমার তা দেখে চোখে পানি চলে এল । খাওয়া শেষে হারুন বলল, বিরানী অনেক ভাল হয়েছে । আমি বিল চুকিয়ে বাহিরে বের হতেই দেখি হারুন রিক্সার সামনে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । হারুন হাসি মুখে বলল, অনেকদিন কোথাও ঘুরি নি । কোথাও ঘুরতে যাবি ? যদি বা তোর সময় হয় । আমি বললাম, অবশ্যয়ই । আমারও অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি । আমার একটা প্রিয় স্হান আছে । যা পৃথিবীর সব সুন্দর স্হানকে হার মানায় । হারুন বলল, সেটা কোথায় ? সেখানে কি রিক্সা করো যাওয়া যাবে ? আমি হারুনের বোকা টাইপ্সের কথা শুনে হেসে বললাম, হুম । রিক্সা করে যাওয়া যাবে । স্হানটি হল উত্তরণ । যাবি ? হারুন বলল, অবশ্যয়ই যাব । হারুনের মুখে হাসি দেখতে আমার খুব ভাল লাগছে । তবে সে আগের মত মিষ্টি করে হাসতে পারেনা । তবুও তাকে দেখতে আমার ভালোই লাগছে । মনে হচ্ছে, অনেকদিন পর সে মন ভরে হাসছে । বিকেল ঘনিয়ে এসেছে । আমি আর হারুন আমার প্রিয় স্হানে দাঁড়িয়ে । তাকে আমার চেয়ে স্হানটার প্রতি অধিক কৌতূহলী দেখাচ্ছে । হারুন পাহাড়ে সব চেয়ে উঁচু টিলাটায় বসে আছে । তার ডান পাশে আমি । হারুনের দু'চোখ এখন বন্ধ । সে পাখির মত তার দুই হাত মেলে দিয়েছে ।
পাহাড়ে মৃদু বাতাস । হারুন বাতাসে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে । আঁধার নেমে আসায় আকাশে পাখিদের কয়েকটি দল দেখা যাচ্ছে । পাহাড়ের খালি স্হান গুলোতে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে । আমি হারুনের দিকে তাকালাম । সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি একটু মজা করে হারুনকে বললাম, চল্ এবার যাই । হারুন বলল, যাবনা । আমি বললাম, কখন যাবি ? হারুন বলল, জানিনা । আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম । আমি বুুঝতে পেরেছিলাম হারুনের জাইগাটা পছন্দ হবে । তাই অরেকটাবার পরীক্ষা করে দেখছিলাম । হঠাৎ হারুন বলে উঠল, বন্ধু তুই একটা আমার উপকার করে দিবি ? আমি বললাম, অবশ্যয়ই দুস্ত । সাধ্য থাকলে জান দিয়ে চেষ্টা করব । হারুন বলল, আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করে দিবি ? আমার মাস্টার্স কমপ্লিট করা আছে । হারুনের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম । মানুষ যে কত প্রকারের অদ্ভুত হতে পারে তা হারুনকে দেখে কিছুটা বুঝতে পেরেছি । আমি অবাক হওয়ার ঘুর কাটিয়ে বললাম, এটা কোন ব্যাপার হল ! এতো আমার জন্য কঁচু পাতা । হারুন তার কাজে ব্যস্ত । তাকে আজ প্রকৃতি প্রেমিকদের মত লাগছে । আমি আবার হারুনকে বললাম, তুই কি সত্যিই মাস্টার্স শেষ করেছিস ? হারুন এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল, হ্যাঁ ।
আসলে আমি এতদিন সম্পূর্ণ ভুল ধারণাতে ছিলাম । পরিবার পরিজন সব আমার কাছে মিথ্যার মায়া ছাড়া কিছুই মনে হত না । দুস্ত জানিস মাকে আজ অনেক মিস করছি । পৃথিবীটা অনেক সুন্দর তাই না ? আজ আমি তোর সাহায্যে নতুন ভাবে আবার পৃথিবীটাকে দেখলাম । সত্যিই আজ আমার অনেক ভাল লাগছে । আমি বললাম, রাতে জোছনা দেখবি ? হারুন মুচকি হেসে হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে বলল, জীবন অধ্যায়ে হঠাৎ করো কারো অদ্ভুত ভাবে প্রবেশ পুরো মোড়টায় বদলে দেয় । যেমনটি তুই আমায় নতুন ভাবে পৃথিবী দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটা উপহার দিলি ।আসলে জীবন তো সবে মাত্র শুরু । যখন এই ভূমিতে পা দিয়েছি এর সমাপ্তিটা দেখে যেতে চাই ।

রাত সময় মত তার আয়োজনে মেতে উঠেছে । কিছুক্ষণ বাদে জোছনা আলোকিত করবে পুরো শহর । বাদশা হারুন-আর-রশিদ জোছনা দেখার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল বিখ্যাত উত্তরণের পাহাড়ে ।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

সায়ান তানভি বলেছেন: ভালো লাগলো , নিয়মিত লিখুন

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

সাঈদ জামিল বলেছেন: ধন্যবাদ। সময় হয়না। তবে চেষ্টা করব :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.