নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব সেবা

ছৈয়দ মোকাররম বারী

মানুষ সৃষ্টির সেরা জিব

ছৈয়দ মোকাররম বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখের পানিটা আর ধরে রাখতে পারলামনা - শেয়ার করুন -

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

কিছুদিন আগে দুপুরে ২ নং গেট থেকে চকবাজার যাওয়ার জন্য রিকশা খুজছিলাম। কিন্তু পাচ্ছিলাম না।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা রিকশা বেল বাজিয়ে বলল কই যাবেন? আমি ঘুরে তার দিকে তাকালাম। দেখি ৬৫/৭০ বছরের একজন বৃদ্ধ। আমি বললাম চকবাজার যাব। বৃদ্ধ চালক বললেন, উঠেন।

আমি দিধায় পরে গেলাম, এত বৃদ্ধ একজন রিকশা চালক। ভাবলাম, না উঠলে উনি কষ্ট পেতে পারেন। তার আগেই উনি বলে বসলেন, বাবা টানতে পারুম। এটা নিয়া চিন্তা কৈরেন্না। আমি বুড়া দেইখ্যা অনেকে উঠতে চায়না। কথাটা শুনে খারাপ লাগলো খুব। তাই দর দামে না গিয়ে উঠে পড়লাম।

তো উনি টানতে লাগলেন, কিছুটা ধীরে ধীরে। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা বাসায় আপনার কে কে আছেন? আপনি এই বৃদ্ধ বয়সে রিকশা চালান কেন? আপনার ছেলে মেয়ে নাই?

উনি একটা দির্ঘশাস ফেললেন বলে মনে হল। উনি বললেন, আছেরে বাবা, ৩টা পোলা, একতা মাইয়া। ছোটও থাকতে মাইয়া টা হারাই গেসে, আর পাইনাই। আর পোলারা এহন কে কোথায় আছে জানিনা। সবাই বউ নিয়া থাহে। আলাদা হইয়া গেছে। আমি কম বেশি সবাইরে পড়াইসি। ২জন গার্মেন্টসে চাকরী করে, আর একজন আবুধাবী থাহে। আর ওগো মা, অনেক আগেই মইরা গেসে। ভালই হইসে। না হইলে বুড়ীডা অনেক কষ্ট পাইত।

আমারে কেও দেহেনা, শুধু খোটা আর গালি দিত, একটা সময় খাওন বন্ধ কইরা দিল। পোলার বউ গুলা ভালা না। খাওন দিলেও বাসি খাওন দিত। এত কষ্ট, অপমান আর সয্য করতে পারিনাই বাবা।

তাই ঘর থেইক্কা বাইর হইয়া গেসি। ৪টা বছর ধইরা রিকশা চালাই, বস্তিতে থাহি, আল্লাহ্ রে ডাকি। অনেক ভালা আছি এহন। কেওর খোটা হুনতে হয়না। ভালাই আছি অনেক।

একটা সময় মইরা যামু অগো মার মত। আমার কারো সাহাযযর দরকার নাই। আল্লাহ্‌ অগরে আমার মরা মুখো আর না দেহাক। দোয়া করি তারা যেন সুখে থাহে। এই কথা গুলো বলার পর আমার থেকে মনে হল উনি কাঁদছেন, ঘামে ভিজা গামছা দিয়ে চোখ মুছতে দেখলাম।

আমি আর কিছুই বলার ভাষা পেলাম না। ভাবতে থাকলাম কেন ওনাকে এত কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলাম? কেন?

একটা সময় গন্তব্যে চলে আসলাম,ওনাকে ৫০ টাকা দিলাম। উনি বাকি টাকা ফেরত দিতে চাইলে বললাম ওটা রেখে দেন চাচা, উনি বললেন বাবা রেট ভাড়া তো ২০ টেহা, আমি এর চাইতে বেশি নিবার পার্মুনা। রাতের খাবারের টেহা উঠলেই চালানো বন্ধ কইরা দিমু। অনেক জোর করলাম, তার পরেও তিনি নিলেন না। উনি না নিয়েই রিকশা টেনে চলে গেলেন। আর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।

পাঠক, আপনারাও এরকম অনেক রিকশা চালক, ভেন চালক কে দেখে থাকবেন, যারা আজ বিবেক হীন পশুদের মনুষত্ত হীনতার শিকার।

ঐসব মানুষ রুপি অমানুষদের বলছি, তোদের বিবেক মৃত, তোরা পশুর থেকেও অধম, তোরা কখনো সুখি হতে পার্বিনা। তোদের কি এত টুকু মানবতা নেই? নিজের বৃদ্ধ মা বাবা কে পেলি, কিন্তু তাদের সেবা করা তো দূরের কথা উল্টা তাদের অসম্মান করিস, বোঝা মনে করিস? -
* আল্লাহ আমাদের সবাইকে মা’বাবার খেদমত করার তৌফিক দান করুন..আমিন
*ছৈয়দ মোকাররম বারী*

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: কষ্টের জীবন। খারাপ লাগল।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

ইদানীং জাহিদ বলেছেন: ভাষা হারিয়ে ফেলছি ভাই

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩

নাজমুল হাসান রেদোয়ান বলেছেন: কেন এমনটা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.