নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি পারতাম দুঃখগুলো নিলামে বিক্রি করে দিতাম

শাহজাহান সাঈফ

একাকিত্ব হলো জীবনের সাধনা লাভের উত্কৃষ্ট উপায়। উর্দু বা হিন্দুতে একাকিত্বকে বলা হয় তানহা। একাকিত্ব মানুষের জীবনে পূর্ণতা দেয়। পৃথিবীর তাবত্ বিখ্যাত ও মহান ব্যক্তি তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ একাকিত্বে কাটিয়েছেন। কখনো ইচ্ছা করে আবার কখনো বা বাধ্য হয়ে। তারা কেউবা গেছেন নির্জন পাহাড়ের কোনো গুহায়, অথবা গভীর জঙ্গলে।

শাহজাহান সাঈফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার গণিত শিক্ষক শ্রদ্ধেয় “দিবানন্দ কুমার দাশ” যার অবদানে আমি গণিতে ডাবল জিরো থেকে লেটার মার্কস

০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৫৭

ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত দুইটা বিষয় ছিল আমার কাছে চরম আতংকের নাম। একটা ইংরেজি অপরটা হল গণিত। ইংরেজিতে তো কোনমতে ১০/২০ তুলতে পারতাম, কিন্তু গণিতে তো আর কোনমতে কিছু হয় না সুতরাং প্রত্যেক পরীক্ষায়ই গণিতে আমার প্রাপ্ত নাম্বার ছিল ডাবল জিরো। এই অবস্থা চলছিল ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত। আশা ছিল এই দুটি বিষয়ে বাদে বাকি বিষয়গুলোতে পাশ করে যথারীতি দ্বিতীয় বিবেচনায় দশম শ্রেণীতে উর্ত্তীন হব। আশা বিফলে যায়নি, দ্বিতীয় বিবেচনা’য়ই দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। আমাদের সময় এক বিষয়ে ফেল করলে ‘প্রথম বিবেচনা’, দুই বিষয়ে ফেল করলে ‘দ্বিতীয় বিবেচনা’, তিন বিষয়ে ফেল করলে ‘তৃতীয় বিবেচনা’ আর চার বা ততোধিক বিষয়ে ফেল করলে ‘বিশেষ বিবেচনা’র ব্যবস্থা ছিল। আর আমরা ক’জন ফ্রেন্ড ছিলাম এই বিবেচনা’র সুবিধা ভোগি।

[ছবি : স্যারের ফেইসবুক পেইজ থেকে]
দশম শ্রেণীর শুরুতে পেলাম দিবানন্দ স্যারকে আমাদের গণিতের শিক্ষক হিসেবে। পাল্টে যেতে থাকল আমার গণিত ভীতির হিসেব নিকাশ। আস্তে আস্তে পাটিগণিত আর বিজগণিত আয়ত্বে আসতে শুরু হল, ক্লাসের খাতায় ‘০’ শুণ্যের বদলে কিছু নাম্বার বসতে শুরু করল।কঠিন মগজের মত উপপাদ্য আর সম্পাদ্য ও সহজ মনে হতে লাগল। শুরু হল আমার গণিত ভালোবাসা।পাশাপাশি সব বই এর নিচে রাখা ইংরেজি বইটাও তুলে আনলাম গণিতের পরই। দশম শ্রেণীর প্রি-টেষ্ট পরীক্ষায় বুঝতে পারলাম কিছু একটা হবে।পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর অভ্যাসবশত নিচ থেকে আমার নাম খোজা শুরু করলাম, লিষ্টের নির্ধারিত জায়গা পর্যন্ত আমার নাম দেখতে না পেয়ে বুজলাম কম দিনের অভ্যাসে হয়তো সরল অংকের ফলাফল মিচিং হইছে।সম্পাদ্যের জায়গা উপপাদ্যের সূত্র মিলিয়ে দিয়েছি।কিন্তু ঘাড় ঘুড়িয়ে যখন লিষ্টের উপরের দিকে তাকালাম, রেজাল্ট দেখে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি বিবেচনা মুক্ত হয়ে গেছি।এইবারই প্রথম কোন প্রকার বিশেষ বিবেচনার সুবিধা না নিয়ে সকল শিক্ষকদের সহযোগিতায় ও দোয়ায় একেবারে ক্রমিক নং- (২) দুইয়ে পৌছে গেছি।স্যারেরাও বিশ্বাস করতে পারছিলেন কি না জানি না তবে সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছিলেন মনে হয় শ্রদ্ধেয় তছর আলী স্যার, আশিক স্যার, রাধিকা স্যার ও কৃপেশ স্যার। কারণ উনারাই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজীর ক্লাসে আমাকে মানুষ করতে উনাদের হাতের অক্লান্ত বিয়াম করতে হয়েছিল প্রতিনিয়ত। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নি:স্বার্থ শিক্ষাদানের কল্যাণে শুরু হল এস.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা দেবার স্বপ্ন । প্রি-টেষ্ট পরীক্ষার পর কিছুদিন স্কুল বন্ধ ছিল, এই সুযোগে ভর্তি হলাম দিবানন্দ স্যার এর কাছে গণিত প্রাইভেট পড়তে। আমার এখন মনে হইতেছে দিবানন্দ স্যার এর হাতে মনে হয় গণিতের একটা আলাদিনের চেরাগ আছে। ঘষা দিলেই সকল অংকের সহজ নিয়ম বের হয়। স্যারের কাছে মাত্র এক মাস প্রাইভেট পড়াকালিন সময়ের মধ্যেই গণিত বই আমার কাছে মাসী-খালার মত পরিচিত হয়ে গেল (বি:দ্র: প্রাইভেট পড়া বলতে এ যামানার প্রাইভেট নয়, আমাদের প্রাইভেট ছিল স্যারের নিজ বাড়ীতে নূন্যতম সম্মানীতে, অনেক সময় সম্পূর্ণ ফ্রিতে)।

এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। গণিতে লেটার মার্কস সহ উত্তীর্ণ হলাম। মার্কসীট দেখে পরে জানতে পেরেছিলাম সে বছর এস.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষায় আমাদের রৌয়াইল হাই স্কুল থেকে আমিই মনে হয় গণিতে সবচেয়ে বেশী মার্ক পেয়েছিলাম। এই লেটার মার্কের পুরো অবদানই ছিল শ্রদ্ধেয় দিবানন্দ স্যার এর। স্যার আপনাকে খুব বেশি মিস করি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১২

সুব্রত দত্ত বলেছেন: শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা অটুট থাকুক আর শিক্ষকরাও হয়ে উঠুক আর্দশ মানুষ। বর্তমান জামানায় এটা বড় প্রার্থনা। আপনার পোস্টটি দারুণ লেগেছে। ধন্যবাদ।

০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:৩৩

শাহজাহান সাঈফ বলেছেন: প্রাইমারী থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের অবদান আামি চিরকৃতজ্ঞতার সহিত স্বরণ করি। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: পড়ে ভালোলাগলো। এই যে আপনি উনার কথা লিখলেন, এটাই শ্রদ্ধা করা মন থেকে, স্বার্থহীন। সম্মান করলেন উনাকে। শিক্ষকদের প্রতি এই ব্যাপারগুলো থাকুক। শুভকামনা রইলো। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.