নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিকভ্রান্ত পথিক

সায়েম মুন

আঙ্গুল-চুষে ওষ্ঠাগত, জীবনের বেহিসেবী, ছিন্নপত্র দোলাচালে, মলিনতর ক্রন্দসী। হিমশীতল হাভাতে, অনাদরে উর্বষী, কাষ্ঠাগত অবিরত, ছন্নছাড়া সন্ন্যাসী।

সায়েম মুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আয়না ছবি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮







বরফের দেশে সকাল বেলা গোসল করতে ইচ্ছে করেনা। গত কয়েকদিন গোসল না করায় রায়হানের শরীরটা খসখস করছে। বডি স্প্রে মেখে আর কদ্দিন চলা যায়! রাতে ঠিক করলো সকালে ঘুম থেকে উঠে ইচ্ছেমত সাবান মেখে গোসল করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সকল প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ ঝেড়ে বাথরুমে ঠুকে পড়লো। আচ্ছামত সাবান মাখলো সারা শরীরে। এই মুহূর্তে বেয়ারা টেলিফোনটা কর্কশ স্বরে বাজা শুরু করলো। একবার। দুইবার। তিনবার। আর কত সহ্য করা যায়। এমনিতেই মন মেজাজ খিচরে আছে। একটু শান্তিমত গোসল করলে খানিক মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যেত। সেটাও আর হলো না। দ্রুত সারা শরীরে পানি ঢেলে বাথরুম থেকে বের হলো।

হ্যালো কে বলছেন প্লিজ?

-আমি নাতাশা বলছি।

নাতাশা! কোন নাতাশা! রায়হানের চোখে মুখে বিস্ময়। সেই সাথে অজানা মেয়ের আন্তরিক কন্ঠ। সাথে স্বদেশী ভাষা। তার মনে কিছুটা প্রশান্তি বয়ে যায়। সে ইতস্তত করতে থাকে।

-আপনি রাতুল ভাইয়া না।

কোন রাতুল। রাতুল নামের তো কাউকে চিনি না। এই নামের কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তির হদিসও জানিনা।

-নাতাশা শব্দ করে হাসে। হাসির দমকে সে বলতে থাকে,

কেন আপনি ফরিদপুরের রাতুল ভাইয়া না?

ফরিদপুরের রাতুল ভাই। শুনে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে রায়হান।

ইচ্ছে করছিল ফোনটা রেখে একটু গরম কাপড় পড়া যাক। কিন্তু তরুনীর সুরেলা কন্ঠ রায়হানকে মুগ্ধ করে রাখে। কথা বাড়ানোর অজুহাতে কিংবা তরুনীর কন্ঠ আরো কিছুক্ষণ শুনতে রায়হান কথার পিঠে কথা জোড়া দেয়।

-নাতাশার প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে রায়হান বলে, ফরিদপুরের রাতুল ভাই কি রকম সম্পর্কের ভাই?

-রাতুল ভাই আমার কাজিন।

কাজিন! কি ধরনের কাজিন?

-আমার মামাতো ভাই।

আচ্ছা আপনার মামাতো ভাইয়ের কন্ঠ কি আপনি চিনেন না?

-নাতাশা তবু নাছোড়বান্দা। না আপনার কন্ঠ রাতুল ভাইয়ের মত।

তাহলে আমিই আপনার রাতুল ভাই। রায়হানের কন্ঠে কৌতুক মেশানো।

তরুনী খিলখিল করে হাসা শুরু করে। রায়হানের বুকে পুরনো একটা ঝড় বয়ে যায়। তরুনীর রুপ সুধা আর মাদকতা ঝড়।

-আজ তাহলে রেখে দেই। পরে কথা হবে। তরুনী ফোন রেখে দেয়ার জন্য উদ্যত হয়।

না না এতদিন পর রাতুল ভাইয়াকে ফোন দিলেন। আরও কিছুক্ষণ কথা বলেন।

-নাতাশা বাই বলে রেখে দেয়।

রায়হানের মনে বহুবিধ সন্দেহ এবং আশা ডালপালা মেলে। এই তরুনী কি আমার নাম পরিচয় জেনেই ফোন দিয়েছে। না অজানা নাম্বারে হুট করে কল ঢুকে পড়েছে। না আবার জান্নাত কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। সে দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। তা নাহলে দূর্মূল্যের চাকুরীটা চলে যেতে পারে। রেডি হয়ে রেস্তোরার উদ্দেশ্যে ছুটে।





রায়হানের বন্ধু অনিক। অনিকের সাথে জান্নাতের দীর্ঘ দু বছরের গভীর প্রেম। সম্পর্কগুলো পুরনো হতে থাকলে বাসী ভাতের মত হয়ে যায়। সুগন্ধ বা দূর্গন্ধ যাই থাকুক না কেন। সেই ভাতের উপর রুচি থাকে না। দিনকে দিন অনিক আর জান্নাতের চাওয়া পাওয়ার হিসেব বেড়ে যাচ্ছিল। মাঝখানে একদিন বড় ধরনের সংঘাত বাঁধে তাদের। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দুজনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়ে যায়। কাছেই পুলিশ ছিল। তারা এসে ব্যাপারটা মিটমাট করে। কিন্তু আসল ব্যাপারতো মিটমাট হওয়ার মত নয়। মনের ব্যাপারে কি আর এত সহজে সমঝোতা চলে। শুরু হয় তাদের মান অভিমান। রায়হান উপযাচে জান্নাতের কাছে যায়। ব্যাপারটার একটা সুরাহা টানতে। হাজার হোক তারা একই ক্লাসের বন্ধু। দীর্ঘদিন একই সাথে ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু জান্নাতের সাফ উত্তর "কোন কাপুরুষের সাথে আর কোন সম্পর্ক নয়"। যে কাপুরুষ আমার দুর্দিনে আমার দায়িত্ব নিতে অপারগ তাকে আর যাই হোক প্রেমিক হিসেবে দেখতে চাই না। রায়হানও আর বেশী চাপাচাপি করে না।



শেষে জান্নাতের সন্মুখে রায়হানই সুপুরুষ হয়ে দাঁড়ায়। ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে রায়হান জান্নাত কে পছন্দ করতো। কিন্তু তার পছন্দের তোয়াক্কা না করে অনিক জান্নাতকে প্রপোজ করে বসে। হয়ত সেই পুরনো শত্রুতার ঝাল মেটাতেই রায়হান এই পথ বেছে নেয়। এরমধ্যে রায়হানের জীবনে আরও কয়েকটি প্রেম এসেছিল। কিন্তু সেই প্রেম ছিল বালির বাঁধের মত নরম। হাল্কা হাওয়াতে উড়ে গেছে। মূলত: জান্নাতকে না পেয়েই সে উদভ্রান্ত হয়ে যায়। মন না টানলেও সময় কাটানোর জন্য সম্পর্ক স্থাপন করে।



কিছুদিনের মধ্যেই রায়হান আর জান্নাতের মধ্যে সম্পর্কটা কিছুটা ভারী হয়ে যায়। জান্নাত একদিন ক্লাসে উপস্থিত হয়েই বলে ফেলে,''রায়হান তুমি যদি আমাকে প্রকৃতই চাও তাহলে এখনি বিয়ে করে ফেল। নইলে কিছুদিনের মধ্যে আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে বসতে হবে। আর তুমিতো জানোই সুন্দরী মেয়েদের পাত্রের অভাব হয়না"। রায়হান এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তবে সুপুরুষ হিসেবে যখন সামনে দাঁড়িয়েছে। তাই তার মনকে কিছুটা নাড়িয়ে দেয়ার কথা। চালচুলো নেই তাতে কি। কিছুদিন পর তো হবে। আপাতত কাজী অফিসে গিয়ে কাবিননামা লিখলেই হলো। অনেক ভেবে চিন্তে সে রাজী হয়ে গেল। সেদিনই কয়েকজন বন্ধুর উপস্থিতিতে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।



ছাত্র মানুষ। তেমন কোন আয় রোজগার নেই। এই অবস্থায় বিয়ে মানে নিজের বুকে ছুরি মারা। সেই ছুরিটা যখন মেরেই বসেছে। তখন ক্ষত নিরাময় ছাড়া উপায়ই বা কি! সে দুটো টিউশনী করতো। সাথে আরও দুটো বাড়িয়ে দিলো। তারা ভার্সিটির কাছেই একটা বাসায় সাবলেট নিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করলো।





প্রথম প্রথম নাতাশাই ফোন দিতো। এখন রায়হানই ফোন দেয়। রাতুলের মুখোশ থেকে বেড়িয়ে এসে এখন রায়হানে ঠেকেছে।

তাদের এক রাতের ফোনালাপ---

-তোমার বড় ভাই রাতুল আমি। অথচ এ কদিনে নাম ধরে ডাকছো।

সেই অধিকার তো তুমি দিয়েই দিয়েছো।

নাতাশা হাসে। সে অল্পতেই হাসে। তার হাসির শব্দে রায়হান পুলকিত হয়ে যায়। এরকম মিষ্টি হাসি সচরাচর সব নারীর হয় না। এরকম সুন্দর হাসির মেয়েরা সুন্দরী হয়। রায়হানের ধারণা।

-নাতাশা। আচ্ছা নাতাশা মানে কি জানো।

নত প্লাস আশা। আশা যখন শেষ হয়ে যায় তখন তাকে নাতাশা বলে।

-কাকে পাওয়ার আশা। আমাকে? আমাকে তো তুমি পেয়েই গেছো। তাহলে না পেলে কখন। রায়হান টিপ্পনি কাটে।

আমি তোমাকে পেয়েছি! আমাকে তুমি পেয়েছো নাকি! নাতাশা ভান করার চেষ্ঠা করে।

-আচ্ছা আজকে মেইল নাম্বারে তোমার ছবি পাঠায় দিয়ো। নিশ্চিত হই। দুজন দুজনকে পাবো কিনা!

পরদিন নাতাশা মেইল করে ছবি। ছবি দেখে রায়হান অস্থির হয়ে যায়। আগে যে সব মেয়ের সাথে প্রেম করেছে, রূপ সৌন্দর্যে তারা কেউ ই নাতাশার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। মডেলের মত দেখতে নাতাশা রায়হানের মনে ঝড় তোলে। সেই ঝড়ে তার জীবনে যত মেয়ে এসেছিল সবার সৌন্দর্য উবে যায়। জান্নাতের সৌন্দর্যও নড়বড়ে হয়ে পড়ে।



নাতাশা, রায়হানের ছবি দেখে খুশী হয়। সে এরকম লম্বা, চওড়া, স্মার্ট পুরুষ আগে খুব কম দেখেছে। চোখে মুখে কেমন যেন ছেলে মানুষী ভাব। মনে মনে যেন এরকম একজন পুরুষকে সারাজীবন অন্বেষণ করছে। সে খুশীতে পাখা মেলে।





এরমধ্যে জান্নাত কয়েক দিন ফোন দিয়ে রায়হানকে ব্যস্ত পেয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে ফোন দিতো। এখন কেমন জানি তার মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। ফোন দিতে তো চায়ই না। উল্টো এটা ওটা, কাজের কথা, পড়ার কথা বলে ফোন রেখে দেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেও তাকে ফোনে ব্যস্ত দেখে অনেকটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে জান্নাত। এখন ফোনে কথা মানে ঝগড়াঝাটি। ফোন মানে জান্নাতের অভিমান বৃদ্ধি। জান্নাত ভাবে, কি রকম একটা সহজ প্লান ছিল। কত নিষ্ঠুরভাবে প্লানটা ভেস্তে যাচ্ছে।

প্লান ছিল রায়হান স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাবে। সেখান থেকে পড়াশুনা করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করবে। পারলে সেখানেই সেটেল হওয়ার চেষ্ঠা করবে। পরবর্তীতে জান্নাতকে নিয়ে যাবে। সেজন্য নেডারল্যান্ডে যাওয়ার আগে জান্নাত অনেক হেল্প করেছে রায়হানকে।



কয়েকদিন আগের কথা। জান্নাত ফোন দিলে কেটে দিয়ে ব্যাক করে রায়হান।

-রায়হান শোনো। তোমার সাথে আমার জরুরী আলাপ আছে।

কি জরুরী আলাপ? তাড়াতাড়ি বলো আমার হাতে সময় খুব কম।

-তোমার কি হয়েছে আজকাল? ফোন দিলেই সময় নেই। এ কাজে বিজি ও কাজে বিজি।

এত ঘ্যানর ঘ্যানর করো না তো জান্নাত। বিদেশের জীবন বড্ড ঝামেলার। এখানে ব্যস্ততা খুব। তুমি না আসলে বুঝবে না।

-রাখো তোমার ব্যস্ততা। আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি তোমার মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। সেটা আমি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি। আগে যেখানে প্রতিদিন একবার করে কল দিতা। এখন সপ্তাহে একবারও কল দিতে চাও না। কল দিলে উল্টো অজুহাতের পাহাড়।

জান্নাত এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে মনের রাগ ও ক্ষোভ কমানোর চেষ্ঠা করে।

জান্নাতের উত্তেজিত কথায় রায়হান আমতা আমতা করতে থাকে।

-রায়হান শোনো তুমি যদি আমাকে সহ্য করতে না পারো তাহলে এখনই বলে ফেল। বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে। আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা যেহেতু এখনো গোপন আছে। সেটা গোপনই থাকুক। প্রকাশ করার দরকার নেই।

জান্নাতের কন্ঠ ভারী হতে থাকে। এক সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কান্না যেহেতু রাগ ক্ষোভ দুঃখ প্রশমনে সহায়ক সে অঝরধারায় কাঁদতে থাকে। কিন্তু রায়হানের কোন বোধোদয় নেই। সে বলে

-জান্নাত তুমি যা ভাল মনে করো তাই করো। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকবে না।

ঠিক আছে। আমরা যে রকম নীরবে বিয়ে করেছিলাম, সে রকম নীরবেই দুজনার দু পথে চলে যাবো। জান্নাত ফোন রেখে দেয়।



এটাই ছিল রায়হানের সাথে জান্নাতের শেষ আলাপ। মূলতঃ বিয়ের পর, অনিকের সাথে জান্নাতের দীর্ঘ দিন প্রেমের বিষয়টা রায়হান মানতে পারছিল না। সব সময় চোখে বালি পরার মত খোচাচ্ছিল। জান্নাত চলে গেলে রায়হানও যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচে গিয়েছিল।





জান্নাতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা নাতাশার কাছে গোপনই ছিল। এখনও গোপন থাকতো। কিন্তু সেটা প্রকাশ পায় রায়হান আর জান্নাতের শেষ ফোনালাপের দিনে। দীর্ঘক্ষণ ফোন বিজি, সাথে রায়হানের উদভ্রান্তের ন্যায় কথাবার্তা নাতাশার মনে সন্দেহের বাতি জ্বালায়। কয়েক বার চাপাচাপিতে শেষে জান্নাতের ব্যাপারটা বলে ফেলে।



রায়হানের কথা শুনে নাতাশা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। এদিকে পড়াশুনা প্রায় শেষ। তার বাড়ি থেকেও বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবার কেবলমাত্র উপযুক্ত পাত্র পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

কয়েক দিন পর সকালে--- প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর...

-শোন রায়হান। আমাদের সম্পর্কের তো দীর্ঘদিন হলো। এবার চলো বিয়ে করা যাক।

বিয়ের জন্য এত ব্যস্ত হয়ে গেছো কেন নাতাশা। এখনো তো সময় ফুরিয়ে যায়নি। আমি আগে দেশে এসে নেই।

-না রায়হান ব্যস্ততা আছে। আমার বাসায় সবার একটাই কথা। আমাকে কবে পার করতে পারবে। আমার বিয়ে না হলে বড় ভাইয়া বিয়ে করতে পারছে না। তাই তাড়াটা আরও বেশী। এত দিন পড়ালেখা ছিল। একটা অজুহাত ছিল। এখন কোন কারণই অবশিষ্ট নেই।

---আচ্ছা ঠিকাছে। দেখি কি করা যায়।

রায়হান ভেবে কূল পায় না। জান্নাতের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এদিকে নাতাশাও যদি চলে যায় তাহলে কি হবে উপায়! অস্থিরতায় রাত কাটে।



সাত দিন পর নাতাশা

-রায়হান। গতকাল এক পাত্র দেখতে এসেছিল তার পরিবার সহ। আমাকে তাদের সবার পছন্দ হয়ে গেছে। এ মাসের বাইশ তারিখে আমার বিয়ে।

--বাইশ তারিখ বিয়ে মানে। এ মাসেই আমার কিছু পরীক্ষা আছে। এর মধ্যে আমি কেমন করে দেশে যাবো। তোমাকে তুলে নিবো।

-আমি কিছু বুঝিনা। তুমি যেমন করে পারো আসবা। নইলে আমারও কোন উপায় নেই। ঐ পাত্রের হাত ধরে চলে যেতে হবে।

-আচ্ছা ফোন রাখো। পরে কথা হবে।

নাতাশা ফোন রেখে দিলে রায়হানের অস্থিরতা বাড়তে থাকে। সে কি করবে না করবে ভেবে কূল কিনারা করতে পারছে না। একেক বার ভাবে বিয়ে হলে হোক। চলে যাক আপদ। আবার ভাবে জান্নাত চলে গেছে। এখন যদি বসে থাকে হয়ত নাতাশাও চলে যাবে। যে কোন ভাবেই হোক দেশে যেতে হবে বলে মনস্থির করলো।





রায়হান তড়িঘড়ি করে ষোল তারিখে দেশে আসে। আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে। ঢাকায় এক বোনের বাসায় উঠে। তার লক্ষ্য সকালে উঠেই ফরিদপুরের দিকে যাবে। তার পরিবারের সবাই নাতাশার ব্যাপারটা জানে। সুতরাং এ ব্যাপারে কাউকে আর কিছু বুঝাতে হবে না। তার শরীর বেশ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। মনে হচ্ছে হাঁটতেও পারবে না। এক পুরনো ঘনিষ্ট বন্ধু শামীম কে ফোন দিয়ে সাথে যাওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করলো। শামীম তার ঘটনার কিছুই জানে না। এতদিন পর বিদেশ থেকে এসে হঠাৎ কেনই বা ফরিদপুরে। তার বাড়ি তো অন্যদিকে।

রায়হান বললো, ''দোস্ত আজ ফোনে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব না। কালকে যাওয়ার পথে সব বলবো।''

---ঠিক আছে দোস্ত। সারজীবন তো হেল্পার হিসেবে সাথে নিলি। এখন বিদেশ থেকে এসেও তোর হেল্পার প্রয়োজন।

---দোস্ত হেল্পার ছাড়া আমি সারাজীবন অচল। সব সময় একজন হেল্পার দরকার। যদিও জীবনে চলার পথে লেডিস হেল্পাররাই যথেষ্ট সহায়ক। তারা দুজনে হাসে। শামীম রায়হানের চারিত্রিক দুর্বলতার কথা আগে থেকেই জানে। তাই হাসিটা আরও প্রকট হয়।

---তাহলে সকালে কখন রওয়ানা দিচ্ছিস।

---সকাল নয়টার দিকে। তুই শাহবাগে চলে আসিস।

শামীম অল্পতেই রাজী হয়ে যায়। কারণ ওদিকে আগে কখনো যাওয়া হয়নি। রায়হানের কাজ উপলক্ষ্যে যদি একবার ঘুরে আসা যায় মন্দ কি! নতুন জায়গা দেখা হলো। সাথে রায়হানের কার্যোধারও হলো।





তারা পরের দিন সকালেই রওয়ানা দেয়। শামীম পথে জানতে পারে রায়হানের আসল উদ্দেশ্য। আপাতত রায়হান নাতাশাদের বাড়ী পর্যন্ত যাবে। বাড়ীটা চিনে আসবে। আর নাতাশাকে সবার অগোচরে দেখেই চলে আসবে। নাতাশা'র যে মোবাইল নম্বরটা রায়হানকে দিয়েছিল সেটা দেশে আসার পর বন্ধ পেয়েছে। তাদের বাসার ফোনটাও কয়েকদিন ধরে ডেড হয়ে আছে। তাই সরাসরি যোগাযোগের কোন উপায় নেই। রায়হানের মোবাইল নাম্বার নাতাশা জানে। কিন্তু সেই নাম্বারেও নাতাশা কোন রেসপন্স করেনি। মোটকথা দেশে আসার পর পুরো প্রেক্ষাপটটাই কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল। এই নিয়ে রায়হান অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। আসলেই কি নাতাশা নামের কেউ আছে! না জান্নাত এই নাটকের মঞ্চায়ন করেছে। সে কোন কিছুরই সিদ্ধান্ত টানতে পারছে না। উপরন্তু জেট ল্যাগে মাথাটাও ভনভন করছে।



গাড়ী এখন লঞ্চে উঠে পড়েছে। দু'জনের কেউই আগে কখনো পদ্মা নদী দেখেনি। কিছুক্ষণ পর তারা লঞ্চের ডেকে চলে আসে। পদ্মা নদীর হাওয়ায় তাদের দুজনের চুল উড়ছে। শরীরে আলাদা একটা অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে। শামীমকে বেশ উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। এর আগে লঞ্চে এরকম ভ্রমণ কখনো হয়নি বলে হয়ত আরও বেশী আনন্দিত। নদীর ফ্রেস হাওয়ায় রায়হানের শরীররটা এখন কিছুটা ভাল ঠেকছে। কিন্তু মনে সেই হাজারো সংশয়। নাতাশা নাম্নী কেউ এই ধরাধামে আছে কিনা!



দুপুর দেড়টার দিকে তারা ফরিদপুর শহরে পৌঁছে। একটা হোটেলে ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে তারা নাতাশার আশায় পথে নামে। রায়হানের প্রথম টার্গেট বাস টার্মিনালের পাশেই দক্ষিণ গলির শিকদার ফার্মেসী খুঁজে বের করা। সেই মোতাবেক তারা বাস টার্মিনালে যায়। দক্ষিণ দিকের গলিতে প্রবেশ করে। কিন্তু এই গলিতে কয়েকটা মুদি দোকান, একটা সেলুন ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। এক মুদি দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে বলে, 'এখানে শিকদার, দফাদার কোন ফার্মেসীই নাই। আমার জন্মে আমি দেখি নাই। আমার বাপ দাদায়ও দেখেছে কিনা সন্দেহ।' বলার পর বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসে। এই মুহূর্তে এই পরিস্থিতির জন্য রায়হান মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ইচ্ছে করছে আহাম্মক লোকটার গালে ঠাস করে চড় মারে। আবার ভাবে এই অচেনা জায়গায় কোন ঝামেলা না পাকানো উচিত। কিছু লোক আছে বেশী কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না। তারা কথা বলতে বলতে জাবর কাটে। অন্য আর একজন দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে এক কিলোমিটার দূরে মেইনরোডের পাশে এক দোকানের কথা বললো। তারা একটা রিকসা নিয়ে দ্রুত সেই জায়গায় গেল। কিন্তু উল্টো পাশে কোন বাড়িঘর নেই। তিন তলা খয়েরী বাড়ী তো দূরের কথা। এরপর আশেপাশে আরও খোঁজ নেয়। শিকদার নামের কোন ফামের্সীর খোঁজ কেউ জানে না।



নাতাশা সুপারমার্কেটের আনারকলি নামক এক দোকানে প্রায়ই যেত। এখানে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ব্রান্ডের কসমেটিকসের সমারোহ। নাতাশা যেহেতু ঘনঘন ওখানে যেত সেহেতু দোকানদার হয়ত তার খোঁজ জানবে। সুপারমার্কেট গিয়ে আনারকলি নামক দোকান খুঁজে পেয়ে রায়হান বেজায় খুশী। কিছুটা আশার আলো দেখতে পেল যেন। কিন্তু সেই আলোতে প্রকৃত বস্তুর দেখা মিললো না। প্রতিদিন কত সুন্দরী না আসে এখানে। কে জানে কোন সুন্দরীর নাম নাতাশা। বা নাতাশা হলেও তার বাসা কোথায় কে জানে। দোকানদার কোন তথ্য দিতে পারলো না। এভাবে সম্ভাব্য কয়েক জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে রাত দশটা বেজে গেছে। শহরের অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা। কিছুটা শীতের আমেজ এখনো আছে। তারপরও তাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝড়েছে। রাতে একটা থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। তারা টার্মিনালের কাছে এক হোটেলে উঠে পড়লো। রাতে দু'জন মিলে একটা বুদ্ধি আটলো। নাতাশার ছবি রায়হানের মেইল আইডিতে আছে। সেই ছবি দিয়ে খুঁজে বের করা সহজ প্রক্রিয়া হবে।



পর দিন সকালে উঠে নাস্তা সেরে তারা নাতাশার কলেজের কাছে গেল। একটা ছোট সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে মেইল আইডি ওপেন করলো। নাতাশার ছবি দেখে শামীম তাজ্জব বনে গেল। সে অবাক করা কন্ঠে বলে উঠলো " দোস্ত এতো দেখি মডেল মৌ।"

---হ তোরে কইসে। একটু ভালভাবে তাকা। শামীমকে আরও কয়েকটা ছবি দেখায় রায়হান।

---না না। ঠিক আছে দোস্ত। মৌ না এটা। এটা তোর বৌ। হাহাহা।

কালকে থেকে এই পর্যন্ত তারা শুধু দৌঁড়িয়েছে। কোন হাসির খোরাক পায়নি। এখন এই মুহূর্তে পেয়ে তারা বেশ কিছুক্ষণ প্রাণ খুলে হাসে।

শামীম মনে মনে ভাবলো আল্লায় জানে মেয়েটা রায়হানের জন্য কোন ফাঁদ তৈরী করেছে কিনা!

সাইবার ক্যাফের ডেস্কের ছেলেটাকে দেখাতে সে চিনতে পারলো না। আশেপাশের এক দুইজনকে দেখালো। একজন কিছুটা ঠাওড় করতে পারলো। যে ঠিকানার কথা বললো, সেটাও আবার শহর ছেড়ে দুই কিলোমিটার দূরে। তালবাড়ী গ্রামে।

রায়হান জিজ্ঞেস করলো, সে কি আইয়ুব চেয়ারম্যানের মেয়ে?

---লোকটা আমতা আমতা করে বললো, না তো। সে জয়নাল মাস্টারের মেয়ে হতে পারে। একদম হুবহু চেহারা।

---তার নাম কি নাতাশা

মেয়ের নামটা জানি না। এই কলেজে পড়ে।

রায়হানের হিসেবে গড়মিল হতে থাকে। গড়মিল হতে হতে কোথাকার হিসেব কোথায় গড়ায় এটাই এখন দেখার বিষয়।

তারা রিকসা নিয়ে তালবাড়ী গ্রামের দিকে যায়। রাস্তার দুপাশে সারি সারি তাল গাছ। চারিদিকে সরিষা ক্ষেতের ছড়াছড়ি। থেকে থেকে সরিষা ফুলের গন্ধ ভেসে আসে নাকে। রায়হান উন্মনা হয়ে পড়ে। জীবনটা এলোমেলো হতে থাকে। তার চোখে দেশের প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য বহুদিন পর নতুন করে ধরা দেয়। সারাজীবন শুধু নারী সৌন্দর্যই খুঁজে এসেছে। এই সব সৌন্দর্যকে সেভাবে উপলব্ধি করেনি। আজ নিজেকে উদভ্রান্তের মত মনে হচ্ছে। কত ছোটখাট বিষয়ও যে আনন্দ দিতে পারে আজ এই অজানা পথে না আসলে টেরই পেত না। তার চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ঝরে নিভৃতে।



তারা তালবাড়ী গ্রামে এসে পৌঁছেছে। লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করাতে তারা দেখিয়ে দিল জয়নাল মাস্টারের বাড়ী। বাড়ীটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রায়হানের মনে হচ্ছিল নাতাশা স্বাগত জানাতে এখনই ছুটে আসবে। জীবনে কিছু কিছু মিথ্যে সত্যি হয়ে গেলে মন্দ হতো না।



গ্রামের মানুষেরা অতি অভিসন্ধিৎসু। এক বাড়ীতে মেহমান আসলে দশ বাড়ী। মাঝে মাঝে পুরো গ্রাম জেনে যায়। তাতে যদি শহুরে অত্যাধুনিক পরিচ্ছদে মেহমান আসে আরও বেশী জিজ্ঞাসা বারে। রিকসাওয়ালার এক আত্মীয়ের বাড়ী এ গ্রামে। তারা ঠিক করলো রিকসাওয়ালার আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে আগে খোঁজখবর নিবে। সেই মত তারা সেই আত্মীয়ের বাড়ি গেল। জয়নাল মাস্টারের পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু সেই বর্ণনায় নাতাশার কোন অবস্থান নেই। জয়নাল মাস্টারের দুটি মেয়ে। বড় মেয়ে সামিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে সালেহা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরে।



এরপর আর এই গ্রামে এক মুহূর্তের জন্য থাকতে ইচ্ছে করছে না রায়হানের। পারলে যে গতিতে এসেছে তার কয়েকগুন গতিতে পালিয়ে গেলে বাঁচে। রিকসাওয়ালার আত্মীয় নাছোড়বান্দা। গরীবেরা অতিথি পেলে সর্বোচ্চ আপ্যায়নের চেষ্ঠা করে। চা বিস্কুট না খেলে তাদেরকে উঠতেই দিবে না। অগত্যা সামান্য অতিথি সেবা গ্রহণ করতে হলো। এরপর সেই তালবাড়ী ছেড়ে ফরিদপুর শহর। ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা। পথের দূরত্ব খুব বেশী না হলেও মনে হলো যেন কয়েক হাজার মাইল পথ হেঁটে এসেছে রায়হান। জীবনের একটা ব্যর্থতম অভিযান। যে অভিযানে হতাশা, দূরাশা, বিষণ্ণতা ছাড়া কিছুই সঞ্চয় হয়নি।





গত কিছুদিনের ধকলে রায়হান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। মানসিক আর শারীরিক কষ্ট মিলে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে ঘুম ছাড়া কোন কিছু্রই এখন খোঁজ নেই। সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। যতটুকু সময় জেগে থাকে নাতাশার চিন্তা গ্রাস করে থাকে।



এ কয়দিন মোবাইল বাজলেই সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যেত। এই বুঝি নাতাশা কল করেছে। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে বিশ তারিখের দিকে অজানা নাম্বার থেকে একটা কল আসে। ফোন ধরলে ওপাশ থেকে সেই পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসে। রায়হান অস্থির হয়ে যায়।



---দেশে আসার পর থেকে তোমাকে কত খুঁজেছি। তোমার দেখা নাই। মোবাইল টোবাইল সব অফ করে বসে আছো।

-আমি মোবাইল অফ করিনি তো। আমার মা আমার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে রেখেছে।

---কেন মোবাইল কেড়ে নিয়েছে?

-তাদের পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়েতে অমতের জন্য তারা আমার উপর টর্চার চালাচ্ছে। তারা চায় ঐ পাত্রের সাথেই আমার বিয়ে হবে। তাদের বিশ্বাস এরকম ভাল স্ট্যাব্লিস পাত্র চলে গেলে আর পাওয়া যাবে না।

---তুমি আমার কথা কি কিছু বলেছো?

-আমার বড় বোনকে কিছুটা টাচ দিয়েছিলাম। সে মা বাবাকে বলার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। বলেন, ছেলে বিদেশে থাকে কবে আসবে না আসবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। উনি তার বউ সেজে বসে আছেন। এরপর মোবাইল কেড়ে নিয়ে রেখে দেয়। বাসাতে আমাকে এক প্রকার বন্দী করে রেখেছে।

---তুমি কোথায় আছো এখন?

-আমি বাবা-মার সাথে ঢাকায় বড় ভাইয়ার বাসায় এসেছি পরশু। উত্তরায় ভাইয়ার বাসা। তারা বিয়ের কেনাকাটা করবে। এজন্য নিয়ে এসেছে।

---তুমি কার নাম্বার থেকে কল দিয়েছো?

-এটা আমার ভাতিজী তন্বীর নাম্বার।

---আচ্ছা শোনো।

-বলো

---তুমি কি আমার সাথে একবারের জন্য হলেও দেখা করতে পারো।

-আমার দেখা করার প্রচন্ড ইচ্ছে। কিন্তু কিভাবে দেখা করবো?

---খুব সহজ। বাসায় কিছু কসমেটিক্স কেনার কথা বলে তন্বীকে সাথে নিয়ে বের হও। ছয় নম্বর সেক্টরের রোডের মাথায় কুপার্স এ চলে আসো। আমার এদিক থেকে যেতে এক ঘন্টার মত সময় লাগবে। তোমার বাসা থেকে ওখানে আসতে হাইয়েস্ট পনের মিনিট সময় লাগবে। তুমি পৌনে চারটার দিকে রিকসা করে রওয়ানা দিবে।

-ঠিক আছে। আমি আসছি। বেশী দেরী করো না যেন।



চারটার দিকে তারা কুপার্সে দেখা করে। নাতাশাকে বাস্তবে দেখার পর রায়হানের মাথা কয়েক ডিগ্রী ঘুরে যায়। এই মেয়েটা আমার প্রেমিকা! ভাবতেই তার হৃদয় যেন সপ্তাকাশে পাখা মেলে।পরক্ষণেই যখনভাবে কাল বাদে পরশু সে অন্যের হয়ে যাবে তখন সপ্তাকাশ থেকে ভূপতিত হয়।



-কেমন আছো রায়হান? নাতাশার ভগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন।

---ভাল নেই নাতাশা। একদম ভাল নেই। ভূপৃষ্ঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। যেন একটু হাওয়াতে খাঁদে পরে যাবো।

রায়হানের এই উত্তরে নাতাশার বুক খর চৈত্রের জমিনের মত খাখা করে ওঠে।

-আচ্ছা আমি দেখতে কেমন তাতো বললে না। নাতাশার কৌতুহল মেশানে প্রশ্ন।

---তুমি ছবিতে যা তার চেয়ে কয়েকগুন সুন্দরী। কয়েক গুন! মনে হচ্ছে স্বর্গীয় কোন প্রতিমা এই পৃথিবীতে নেমে এসেছে।

নাতাশা পুলকিত হয়। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই মুছে যায়। একটা বিষাদ এসে ঢেকে দেয় চরাচর।

রায়হান ভাবে, জীবনের প্রথম ভাললাগা, ভালবাসা জান্নাত হারিয়ে গেল। এখন এই দ্বিতীয় ভাললাগা যদি হারিয়ে যায়। তবে আমি কি করে বাঁচবো!

-কি ভাবছো অমন করে?

নাতাশার প্রশ্নে রায়হান সম্বিৎ ফিরে পায়।

---না তেমন কিছুনা। ভাবছি তোমার বিয়েতে কি পড়ে যাবো।

ঠোঁটে ম্লান হাসি ফোটানোর ব্যর্থ চেষ্ঠা করে নাতাশা।

-রায়হান আমার আর দেরী করা যাবে না। এমনিতে নজরবন্দী করে রেখেছে। তার উপর যদি এতক্ষণ বাসায় অনুপস্থিত দেখে তাহলে আমাকে শেকল পরিয়ে দিতে পারে।



রায়হান অনেকক্ষণ হয় মৌনভাবে বসে আছে। এখানে বসে থাকা আর মরুভূমির মাঝখানে বসে থাকা একই রকম মনে হচ্ছে তার কাছে।

বিদায়! বিদায় শব্দটা বলতে তার বুক কেঁপে উঠবে না তো! অনেক ভেবে চিন্তে সে শুধু হালকা ইশারায় বিদায় নেয়।



বিদায়ের আগমুহূর্তে বিয়ের কার্ডটা ধরিয়ে দেয় নাতাশা। সেটা হাতেই ছিল। পথে নেমে সে বিমর্ষ চিত্তে হাঁটছে। আজ যেন সে হাঁটতে পারছে না। পা আটকে যাচ্ছে পথের মাঝে। আবার গাড়ীতেও উঠতে ইচ্ছে করছে না একদম। প্রায় মাইলখানের হাঁটার পর এখন অনেকটা ক্লান্ত। এক জায়গায় ফুটপাথের ধারে বসে পড়লো। মনে পড়লো কার্ডটা খুলে দেখা দরকার। সে আস্তে আস্তে প্রসারিত করলো কার্ডের পাতা দুটি। পুরো কার্ড ছাপিয়ে বরের নামের জায়গায় চোখ আটকে গেল তার। বর: আহমেদ ইমতিয়াজ (অনিক)।

অনিক! অনিক! অনিক!

নামটা উচ্চারণ করতে করতে গন্তব্যের দিকে অবশ পা চালাতে থাকলো।





ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

আমিভূত বলেছেন: গল্পের শেষ দেখার জন্য খুব দ্রুত পড়ে ফেললাম । কিন্তু শেষে এসে বুঝলাম না আহমেদ ইমতিয়াজ (অনিক)।
অনিক! অনিক! অনিক!
! কেন এই নামের সাথে কি রায়হানের কোন সম্পর্ক আছে ?

গল্পে ভালো লাগা ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৩

সায়েম মুন বলেছেন: প্রথম পাঠক হিসেবে আপনাকে দেখে ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ আমিভূত।
অনিক রায়হানের বন্ধু। জান্নাতের এক সময়ের প্রেমিক। :)

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫২

ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: আহ, প্রেম !!!

সুন্দর, সুন্দর।

শুভ বসন্ত সায়েম মুন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৯

সায়েম মুন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ফ্রা...
শুভ লেট বসন্ত! :)

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪২

আমিভূত বলেছেন: ওহ :P খুব দ্রুত পড়ে ফেলাতে মিস করে ফেলেছি :!>
আবারও শুভ কামনা :)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

সায়েম মুন বলেছেন: সেটা গল্পকারেরও দূর্বলতা বলা চলে। /:)

শুভকামনা নিরন্তর। :)

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: অনেক সুন্দর একটা গল্প ভ্রাতা +++++++++++

ভালো থাকবেন :)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

সায়েম মুন বলেছেন: ব্লগ সাপেক্ষে গল্পটা বড়। পড়েছেন জেনে অনেক ভাল লাগলো অপূর্ন।আন্তরিক শুভকামনা।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৩

জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
সিনেমাটিক গল্প। মোটামুটি লেগেছে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১

সায়েম মুন বলেছেন: মাঝেমাঝে জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানায় :P
গল্পটা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো।

৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধৈর্য্য নিয়ে পড়লাম। কিছুই পাইলাম না। হতাশাজনক |-)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৮

সায়েম মুন বলেছেন: এত বড় গপ পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
বড় কিছু ল্যাখতে পারি কিনা ট্রাই করছি আরকি। মাকাল ফল ছাড়া কিছুই হইলো না :(
তবে একজন লোক যে শাস্তি পাইলো এইটাই দ্যাখাইতে চাইছি।
আবসোস! আপনার জন্য কোন প্রকার রসদ দিতে পারলাম না। :(

৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

না পারভীন বলেছেন: ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমিও একটি গল্প লিখেছি , মজার ব্যাপার হল দুটো গল্পে কিছু একটাতে মিল আছে ।



আপনার গল্পটি ভাল লেগেছে ।
ভাল থাকবেন ভাইয়া ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৯

সায়েম মুন বলেছেন: আপনি গল্পটা পড়েছেন জেনে খুব ভাল লাগলো। একটা কোয়েন্সিডেন্সের কথা বললেন। বেশ মজার ব্যাপার হবে বোধয়। আপনার গল্পটা শীঘ্রই পড়ে দেখবো। :)

আন্তরিক ধন্যবাদ রইলো। ভাল থাকুন সর্বদা :)

৮| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০

মেহেরুন বলেছেন: +++++++ অনেক ভালো লাগলো।

কেমন আছো ভাইয়া???

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

সায়েম মুন বলেছেন: এত বড় পোস্ট পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ভাল আছি। আশা রাখি আপনিও ভাল আছেন। শুভকামনা সব সময়।:)

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৫

মাক্স বলেছেন: বুকমার্কড! অনেক বড় সময় নিয়ে পড়ব।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭

সায়েম মুন বলেছেন: ধন্যবাদ মাক্স। সময় করে পড়ে মন্তব্য দিয়েন :)

১০| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৯

মেহেরুন বলেছেন: Click This Link

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯

সায়েম মুন বলেছেন: দেখেছি তো :D

১১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৯

জাওয়াদ তাহমিদ বলেছেন: অনিক রায়হান রে খাইল রে। :P :P

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

সায়েম মুন বলেছেন: থ্যাংকস জাওয়াদ। :D

১২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪২

জুন বলেছেন: জানো মুন আমার ভাইয়ের ছেলের নাম আহমেদ ইমতিয়াজ রাতুল :)
গল্প পুড়োটা পড়িনি।একটু চোখ বুলিয়েছি মাত্র। ভালো করে পড়ে মন্তব্য করবো কেমন ।
ভালো থেকো।

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

সায়েম মুন বলেছেন: তাই নাকি! :)

থ্যাংকস আপু। সময় করে পড়ে মন্তব্য জানাইয়েন।

১৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

জুন বলেছেন: আর শোন জাওয়াদ আমার ছেলের নাম :)

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫০

সায়েম মুন বলেছেন: সুন্দর নাম :)

১৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৬

ফারজানা শিরিন বলেছেন: গল্পটা অনেক বড় হয়ে শেষে তাড়াহুড়া করে পড়তে ইচ্ছা করলো !!! মাঝের কিছু বর্ণনা অহেতুক লাগছে ।

কিন্তু কনসেপ্টটা দারুণ । আপনার লেখনি চমৎকার ।

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

সায়েম মুন বলেছেন: আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ফারজানা।

শুভসকাল।

১৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:০৮

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: আপনি গল্প লেখেন না কেন বেশী বেশী?

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

সায়েম মুন বলেছেন: ধন্যবাদ উদা। আগে লেখার চেষ্ঠা করতাম। মাথায় প্লটও ঘুরতো। ইদানীং গল্প নিয়ে ভাবাই হয় না। তবে মাথায় প্লট এসে গেলে লেখার চেষ্ঠা থাকবে সব সময়।:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.