নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রফেসর সাবের একটা দিন

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৪১





গ্রামের বাঁশের সাঁকোটা পার হতে হয় অনেক কষ্টে। পা পিছলে যে কোন সময় নিচে পড়ে যাওয়াটা তেমন কোন বিচিত্র ঘটনা নয়। তার ওপর সারারাত শিশিরে ভিজে পিছল হয়ে আছে সাঁকোটা। পায়েও বাটা জুতো। সাত সকালে অনেক কষ্টে পা টিপে টিপে পার হবার পর হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।



তারপর হাঁটতে লাগলাম। মিনিট খানেক হাঁটলেই ইট বিছানো পাকা সড়ক। একটু দাঁড়ালেই দু চারখানা রিক্সা মেলে। সেখান থেকে বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া মাত্র ৫ টাকা। কিন্তু আমার কাছে ৫ টাকা মানে অনেক টাকা । এক একটি টাকা একশ টাকার সমান। প্রতিদিন অনেক হিসাব করে চলতে হয়।



বেকার মানুষ। বেকারই তো! একটি বেসরকারি কলেজে কৃষি শিক্ষা পড়াই। সবাই বলে প্রফেসর সাব। তো প্রফেসর সাবের মাসিক বেতন ৪৮০ টাকা! তাও কাগজে-কলমে। কোনো মাসেই হাতে পাওয়া যায় না। অনেক আগে, তার মানে গত বছর অর্থাৎ ২০০২-এর জুন থেকে হিসাব করলে প্রায় ৮ মাস তো হবেই, এমপিও-র জন্য ডিজি অফিসে কলেজ থেকে আমার আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন মিলেনি। কবে যে অনুমোদন মিলবে আর বেতনের সরকারি অংশ পাবো, কে জানে!



এখন বলা চলে, আমি বিনা বেতনের প্রফেসর সাব। কলেজে কৃষি শিক্ষা কেউ প্রাইভেট পড়ে না। এলাকায় দুই চারটা টিউশনি করিÑ স্কুলের ছাত্রদের ইংরেজি, গণিত পড়াই। যে টাকা পাই তা দিয়ে কোনোমতে মাসটা পার করি। কাজেই রিক্সা চড়া আমার কাছে মার্সিডিজে চড়ার মতো বিরাট এক বিলাসিতা। তার চেয়ে ১০ মিনিট হাঁটতে রাজি। হাঁটলে তো আর পয়সা খরচ হচ্ছে না। রাস্তার নানান দৃশ্য দেখতে দেখতে ১০ মিনিট পার করে দেয়া আমার কাছে তো কোন বিষয়ই না। প্রতি দিন তাই করি।



যেখানে যাই, হেঁটে যাই। ইশ হেঁটে হেঁটে যদি কলেজেই যাওয়া যেত! কিন্তু দোহার থেকে লৌহজং ম্যালা পথ। বাস ছাড়া উপায় নেই। তাই দ্রুত বেগে হাঁটতে লাগলাম। আজ একটু দেরিই হযে গেছে। আটটার বাসটা ধরতে না পারলে এগারোটার ক্লাশটা মিস হযে যাবে। আর তা যদি প্রিন্সিপাল স্যারের কানে যায় তাহলে জবাবদিহি করতে হবে। বেতন না পাও, তাতে কি, জবাবদিহিতা আছে। যদিও প্রিন্সিপাল স্যার খুব কড়া কিছু বলবেন না, তবু তার মুখোমুখি হওয়া কিংবা একটা অজুহাত দাঁড় করানো, খারাপই লাগে। তার চেয়ে ক্লাশটা নেয়ার চেষ্টা করাই ভালো।



দ্রুত বেগে ১০ মিনিট হাঁটার পর আরাম বাস স্ট্যান্ডে আসতে পারলাম। আরামই এক মাত্র বাস যা কিনা সরাসরি ঢাকা যায়। কাউন্টার ছাড়া অন্য কোথাও থামে না। তাও অবশ্য কাগজেকলমেই। যাত্রী পেলে থামে। তবে অন্য বাসের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় না। একারণে ভাড়াও বেশি?। অন্য বাসের ভাড়া ৪০ টাকা হলে, এর ৫০। বাসটির কাউন্টার স্কুলের জায়গায়। স্কুল হোস্টেলের একটি রুমও বাসের মালিক সমিতি দেদারছে ব্যবহার করছে। শুনি এখানেও নাকি ম্যালা রাজনীতি। তা থাক, আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কী? কাউন্টারে বাসটা পেয়ে গেছি। এখন তাড়াতাড়ি বাসে উঠা দরকার। তা না হলে সিট পাওয়া যাবে না। বাদুরের মতো ঝুলে ঝুলে যেতে হবে।



কাউন্টারে গিয়ে টিকিট চাইলাম, ‘ভাই, একটা টিকিট দেন, শ্রীনগরের।’

২০ টাকা এগিয়ে দিলাম।

‘আজ শ্রীনগরের টিকেট শেষ। ঢাকার টিকেট নেন।’

‘কিন্তু আমি তো যাব শ্রীনগর, ঢাকার টিকিট তো ৫০ টাকা। আমি ৫০ টাকা দিয়ে শ্রীনগরের টিকেট কেন নেব?’

‘যদি যেতে চান তাহলে তো নিতেই হবে। দেরি করলে সিট পাবেন না।’

তাই তাড়তাড়ি ২০ টাকার টিকিটই ৫০ টাকায় কিনে বাসে উঠলাম। মাঝামাঝি একটা সিটে বসে পড়লাম। কিন্তু ভালো লাগছে না। রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা। ৩০ টাকাই লস। বাসের অনেক সিট এখনো ফাঁকাই পড়ে আছে। এখানে টিকিট না কেটে যদি সামনের স্টপেজ থেকে কাটতাম, তাহলে ৩০ টাকা লস হতো না। কথায় বলে নাÑ চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আমার হলো সেই অবস্থা। মাথায় খালি গোবর ভরা!

অনেক সিট ফাঁকা নিয়েই বাস ছেড়ে দিলো। তাও ভালো। তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে।



ছুটে চলছে বাস। জয়পাড়া থেকে লৌহজং, এই পথ আমার অনেক চেনাজানা। পথের আশে পাশের প্রতিটি বাড়িঘর, গাছগাছালি বলা চলে মুখস্থই। সপ্তায় চারদিন আমি এসব দেখতে দেখতে কলেজে যাই, আবার ফিরে আসি। কিছুদূর যাওয়ার পরই জিন্স আর গেঞ্জি পরা কযেকটি ছেলে উঠল। তারা নাকি সামনের কলেজে পড়ে। তার মানে পদ্মা কলেজের। কিন্তু যাবে ঢাকা। ভাড়া চাইতেই তারা হৈ চৈ শুরু করল। কলেজে পড়লে তো ভাড়া দিতে হয় না। তাছাড়া তারা রাজনীতি করে। মান ইজ্জতের একটা ব্যাপার আছে না। ছাত্ররাজনীতি করে যদি বাসে চড়েও ভাড়া দিতে হয় তাহলে আর রাজনীতির কী মানে হয়! কন্ডাক্টর ছেলেটাও কিছুটা বেয়ারা কিসিমের। ওদের বলেÑ টাকা বড় না ইজ্জত বড়। অবশ্যই ইজ্জত বড়। ২০/৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে ইজ্জত খোয়ানোর কোন মানে হয়? এসব কথা বলেই সে ক্ষান্ত হয় না, নেতাদের আইডি কার্ডও দেখতে চায়! এটা কোনো কথা হলো! আরে ব্যাটা, তোকেই যদি আইডি কার্ড দেখাতে হবে, তাইলে আমরা কিসের নেতা? তোর কি আর আইডি কার্ড দেখার কোন যোগ্যতা আছে? সেটাই যদি থাকত তাইলে কি আর বাসের ভাড়া কাটতি, ফাজিল কাহাকা! এই নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ছাত্রনেতাদের সাথে কন্ডাক্টর ছেলেটার হাতাহাতির দশা। শেষ পর্যন্ত ড্রাইভারের হস্তক্ষেপে গ্যাঞ্জাম মিটে। নেতারা ভাড়া তো দেয়ই না। উল্টো তার কাছে হাতজোড় করে মাফ চায় ড্রাইভার। গোস্বায় শরীর জ্বলে যায় আমার। বিনা বেতনের প্রফেসর না হয়ে ছাত্রনেতা হলেই তো ভালো হতো! অন্তত ত্রিশটি টাকা গচ্চা দিতে হতো না।



আমার পাশে বসেছে এক ভদ্রলোক। বয়স, বোধ হয় চলি¬শ পেরিয়েছে। সম্ভবত ঢাকা যাবে। সিটে বসার পর থেকেই সে ঝিমুচ্ছে, চোখ মেলছে না। ঝগড়ার সময় একবার শুধু সে চোখ মেলে তাকিয়েছিল, কিছু বলেনি। ঘুমিয়ে পড়েছে। এসব ঝগড়ায় কান দেবার চেয়ে ঘুমটাই বোধ হয় তার বেশি দরকার। বোঝা যাচ্ছে, গন্তব্যে যাওয়ার আগে আর সে চোখ মেলবে না। সামনের সিটে বোরখা পরা দু’টি মেয়ে। তার আগের সিটে আরো কয়েকজন। ডানপাশের সিটেও আছে। আগের স্টপেজ থেকে উঠেছে তারা। কারোরই মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে অনেক ব্যস্ত তারা। মুখে কথার ফুলঝুরি ছুটছে যেন। সামনের সিটের এক জন তার পাশের জনকে বলছেÑ ছোট্ট মেয়েটির শরীর খারাপ। কলেজে আসতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু কলেজে না এলে তার ভাল লাগে না। এতো আগে বিয়ে হয়ে যাওয়াতে কলেজ জীবনটাকে সে ঠিক মতো উপভোগ করতে পারছে না। তার মানে পদ্মা কলেজেরই ছাত্রী সে! হয়তো একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এরই মাঝে সন্তানের মা হয়ে গেছে সে! দোহারে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার এই এক বড়ো বাধা। বাবা তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে। আর মেয়েটি সুন্দরী হলে তো কথাই নেই। যে সকল ছেলেরা দেশের বাইরে থাকে, ডলার, পাউন্ড, ইউরো কামায়, তারা তাদের বউ করে নেবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। অনেক সময় এসব মেয়েদের এসএসসি পাস করাই কঠিন হয়ে পড়ে। বিয়ের পর সংসারকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হযে পড়ে। শ্বশুর-শাশুরির সেবাযত্ন করে। না হয় একদিন সাতসমুদ্দূর তের নদী পাড়ি দিয়ে চলে যায় বিদেশ বিভুইয়ে স্বামীর কাছে।



আমার মতো প্রফেসর সাবকে সমাজের লোক শুধু সম্মানই করে। মেয়ে বিয়ে দেবার ব্যাপারে তাদের অধিকাংশেরই অনীহা। অনেকে তো রাজিই হয় না। কারণ প্রবাসী ছেলেদের মতো আমাদের তো আর ডলার, পাউন্ড, ইউরো নেই। তাই প্রফেসর সাব হয়েও আমি বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে পারছি না।



আর কিছুক্ষণ পরই ছনবাড়ি। শ্রীনগরের সাথে এখানেই দোহারের সড়ক মিলেছে। এখানেই প্রতিদিন নামতে হয় আমাকে। তারপর গাঙচিলে লৌহজং। সবদিন অবশ্য গাঙচিল পাওয়া যায় না। কারণ গাঙচিলের কোনো কাউন্টার নেই ছনবাড়িতে। তবে মাঝে মাঝে ওয়েবিল চেক করার সময় রিকোয়েস্ট করতে হয়। সব বাস অবশ্য নেয় না। মাঝে মাঝে ফেলে রেখে চলে যায়। তাছাড়া সব সময় গাঙচিল পাওয়াও যায় না। আজ ছনবাড়িতে নামার সাথে সাথে পেয়ে গেলাম গাঙচিল। উঠার সময় হেলপার বাঁকা চোখে তাকাচ্ছিল। সাথে সাথে প্রফেসর পরিচয় দিতেই কাজ হলো। আর কিছু বললো না হেলপার ছেলেটি। বাসে উঠে পড়লাম। কোথাও সিট খালি নেই। অতঃপর কী আর করা, ওপরের রড ধরে অনেকটা বাদুরের মতো ঝুলে থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কারণ একটাই, তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। ক্লাশটাও মিস হবে না। গাঙচিল পাওয়া না গেলে কী যে সমস্যা হতো! লোকাল বাসের ঠাসাঠাসির মধ্যে জায়গা করে নিতে হতো। তখন যাত্রীদের ঠেলাধাক্কা আর চেঁচামেচির মধ্যে ঘেমেনেয়ে একেবারে কাহিল অবস্থা। জামাকাপড়ের অবস্থাও বড়ো সঙ্গিন। প্রফেসর বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা! লোকাল বাস পাওয়া না গেলে নসিমন বা শ্যালো ইঞ্জিনের গাড়িই একমাত্র ভরসা। সেখানে অবস্থা আরো খারাপ। রোদে পুড়ো, না হয় বৃষ্টিতে ভিজো। তাছাড়া ফট ফট শব্দ তো আছেই । ইঞ্জিনের কালিতে প্রায়ই পোশাকের অবস্থাও খারাপ হয়।



যাক, আজ এসব ঝক্কি থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। একারণে মনটাও খুব ফুরফুরে লাগছে। আজ ক্লাশের পর, সময় সুযোগ পেলে বাংলা বিভাগের জমির ভাইর সাথে পদ্মার ভাঙন দেখতে যাওয়া যাবে। উন্মমত্ত পদ্মার হিংস্রতা ভয়াবহ। সবকিছু একের পর এক গ্রাস করে নিচ্ছে। কোনদিন কলেজটাই গ্রাস করে ফেলে কে জানে! একারণে প্রায়ই আমরা পদ্মার ভাঙন দেখতে যাই। মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গ দেয় ইংরেজির নুরুন্নাহার আপা। তার অবশ্য ঘুরে বেড়ানোর খুব শখ। কিন্তু সময় পায় না। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছে। ছোট ছোট ভাইবোনদের মানুষ করছে। বেশির ভাগ সময় প্রাইভেট নিয়েই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়।



স্টেশনে বাস এসে থামলো। তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম। স্টেশন থেকে কলেজ বেশি দূরে নয়। হেঁটেই যাওয়া যায়। জোরে জোরে হাঁটতে লাগলাম কলেজের দিকে। এগারোটার ঘণ্টা বুঝি পড়ে পড়ে। কলেজ প্রাঙ্গণে ঢৃুকে পড়লাম। ঘণ্টা বাজলো। আর কোথাও না গিয়ে সোজা ক্লাশে ঢুকে পড়লাম। ওপরে ফ্যান ঘুরছে। তারপরও ঘামছি। কোনো ছাত্রছাত্রী আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আর আমি গরু লালনপালনের লেকচার দিচ্ছি।



লেকচার শেষ করে শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে ঢুকতে না ঢুকতেই পিয়ন দুলাল মিয়া এসে বললো, ‘স্যারে সালাম জানাইছে আপনারে।’



কী আর করা, ছুটলাম প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে। কী অভিযোগ আছে কে জানে? তবে রুমে ঢোকার পর সেরকম কিছু মনে হলো না। বেশ খোশ মেজাজেই আছেন তিনি। আমাকে বললেন, ‘বসেন।’ বসে পড়লাম তার সামনে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছেন? ভালো তো?’

‘ জ্বি স্যার।’

তারপরই তার মুখটা কিছুটা থমথমে হয়ে গেল। ভাবলাম এবার নিশ্চয় ক্লাশটা একদিন বড়িয়ে পাঁচদিন নেবার কথা বলবেন। কিন্তু না, সেরকম কিছু না। তিনি বললেন, ‘অনেকদিন তো হয়ে গেল, আপনার এমপিওটা হচ্ছে না। ওভাবে পড়ে থাকলে ওটা বোধ হয় হবেও না কোনোদিন।’

আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। চুপ করে রইলাম। কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। স্যার বললেন, ‘ডিজি অফিসের লোকগুলো এতো হারামি না, পয়সা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।’



আমি মাথা নিচু করে রইলাম।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, ‘কিছু টাকা জোগাড় করতে পারবেন? জিডি অফিসে আমার এক পরিচিত লোক আছে। আমি আলাপ করেছি। সে করে দেবে কাজটা।’

আমি স্যারের মুখের দিকে তাকালাম। স্যার বললেন, ‘খুব বেশি টাকা না। ছয় হাজার টাকা। কষ্ট করে পারবেন না ম্যানেজ করতে?’

‘আমার অবস্থা তো সবই জানেন স্যার। এতো টাকা কোত্থেকে এখন ম্যানেজ করবো।’

‘যেভাবেই পারেন করতে হবে। তা না হলে সামনের নতুন এমপিওর লিস্ট থেকে আপনার নাম বাদ পড়ে যাবে। তারপর আবার কবে এমপিও হয়... যেভাবেই পারেন, চেষ্টা করেন। এতো কম টাকায় এখন এমপিও করানো যায় না। আমার পরিচিত বলেই অনেক বলেকয়ে রাজি করিয়েছি। কালকের মধ্যেই যদি টাকাটা দিতে পারেন, তাহলে ভালো হয়। দেরি হলে, তখন বেশি টাকা দিলেও কিন্তু কাজ হবে না। ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখবেন।’



মুখটা কালো করে বসে রইলাম।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, ‘এছাড়া কোনো উপায় নেই। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন, আমাদের কলেজেই অনেকে এমপিওর জন্য এর চেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে। অন্য কলেজ থেকে এবার যারা দিচ্ছে, তারাও এরচেয়ে অনেক বেশি দিচ্ছে। এতো টেনশন করবেন না। যান বাড়ি যান। একটু চেষ্টা করেন। ম্যানেজ হয়ে যাবে।’

আমি জানি স্যার মিথ্যে বলছেন না। একটু চেষ্টা করলে আমিও ধারদেনা করে ছয় হাজার টাকা ম্যানেজ করতে পারবো। কিন্তু তারপরও আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। জীবনে এই প্রথম আমাকে ঘুষ দিতে হবে। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। স্টাফরুমে যাবো না ভাবছিলাম। কিন্তু বারান্দায় দেখা হয়ে গেল জমির ভাইর সাথে। সে-ই ধরে নিয়ে বসালো। তার জেরার মুখে বৃত্তান্ত খুলে বলতে বাধ্য হলাম। সে বললো, ‘কী আর করবেন ভাই। যে দেশের যে নিয়ম... না দিলে আপনার কাজটাই হবে না। ওভাবেই পড়ে থাকবে। কিছু মনে করবেন না, সমস্যা হলে বলবেন, আমি না হয় কিছু ম্যানেজ করে দিবো। তারপর যখন বেতন হয়...।’



আমি বললাম, ‘ধন্যবাদ স্যার। আমি এখন বাড়ি যাবো।’



কলেজ থেকে বের হয়ে বাস ধরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকি অনেক ক্ষণ। কোন কারণে বাসটি আজ খুব দেরি করছে। ৪০/৪৫ মিনিট পার হয়ে গেল। এখনো বাসটি আসছে না। আমি দাঁড়িয়েই থাকি বাসের প্রতীক্ষায়। কখন যে বাস আসবে।



(২০০৩ সালের ১৩ ইএপ্রিল থেকে ২০০৫ সালের ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত আমি বিক্রমপুরের লৌহজং কলেজের মাস্টার ছিলাম। )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

আজমান আন্দালিব বলেছেন: বাস্তব ছবি আঁকলেন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ।আপনি অনেক অনেক ভাল থাকুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.