নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগলপ্- আমার একজন নেতা বন্ধু

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৬


মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

কলেজে ভর্তির দিনই তার সাথে আমার ভারী বন্ধুত্ব হয়ে গেল। যেন বহু দিনের চেনা। যেন অনেক দিনের চেনাজানা- কঠিন বন্ধুত্ব। তাকে মনে হলো অত্যন্ত মিশুক আর অমায়িক একটি ছেলে।
আমি আবার কথা বলি কম। অন্যের কথা শুনতে আমার বেশ ভালো লাগে। কিন্তু আমি নিজে খুব বেশী কথা বলতে পারি না। স্কুলের হাশেম স্যার বলতেন- তুই একটা ভালো ছেলে। ছাত্রও ভালো। পড়াশোনায়ও তুই অনেক ভালো । তোর মাঝে এতো জড়তা কেন? ঠিক মতো গুছিয়ে কথা বলতে পারিস না কেন? গাধা কোথাকার।
হাশেম স্যারের কথা শুনে আমার বুকের ভেতর কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেল। কেবল হাশেম স্যারই নন। অন্য যে কোন স্যারের কথা শুনলেই আমার বুকের ভেতর ধরফর শুরু হয়ে যেত। বুঝতে পারতাম না। কেন এমন হয়। আমার কেবলই মনে হতো আমি বুঝি আসলেই একটি গাধা । আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় আসার পর আমার মাঝে আরেক সমস্যা শুরু হতো। হাঁটতে পারতাম না ঠিক মতো। আমার কেবলই মনে হতো আশে-পাশের সবাই যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চলার গতি কমে যেত। পায়ে পা লেগে যেত। আমি আশে পাশের দোকানগুলোর দিকে তাকাতাম। সত্যি সত্যি কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা।
আমার এই সমস্যা আরো বেশী প্রকট হতো পাশের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাবার সময়। আমার কেবলই মনে হতো বিদ্যালয়টির সব বালিকাই বুঝি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর দাঁত বের করে হাসছে। পথ চলার কাজটি আমার একার জন্য ছিল অনেক কষ্টের। ‍তাই বন্ধু আসুদের ‍সাথেই বেশী পথ চলতাম। এক দিন তাকে বললাম- দোস্ত, একটা সমস্যা। তুই যদি কাউকে না বলিস তবে তোকে বলতে চাই।
বলনা । কি সমস্যা। কাউকেই বলবো না।
আমি যখন একা একা পথ চলি তখন আমার মনে হয় আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। পায়ে পায়ে ঠুকাঠুকি হয়ে যায়। বুক ধরফর করে। কি করি বলতো। ‍
আশেপাশের সবার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে। জেনে রাখিস, তুই ছাড়া সারা দুনিয়ার সবাই যার যার কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত । কারো সময় নেই কারোর দিকে তাকিয়ে থাকার। এসব বাজে চিন্তা মাথায় রাখিস না । দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
বন্ধুটি একজন শিক্ষকের মতো আমাকে বলেই চললো। বলে কি লাভ । আমার কি আর অত সব মনে থাকবে।
তারা সবাই বলেই খালাস। কিন্তু আমি ঠিক হলাম না। আমার এই স্বভাব/সমস্যা থেকে আমি মুক্তি পেলাম না।
পাস করার পর আসুদ ঢাকার একটি বিখ্যাত কলেজে ভর্তি হয়ে গেল। আমি জেলা শহর ছাড়তে পারলাম না। শহরের কলেজেই ভর্তি হতে গেলাম। সেখানেই দেখা রমিজের সঙ্গে। সে ফরম পূরণ করার জন্য একটি কলম খুঁজছিলো। আমাকে দেখে বলল- ভাইয়া তোমার কলমটি আমাকে দাও না। ফরম পূরন করবো।
আমি আমার কলমটি তাকে দিলাম। দু’জনে ফরম পূরন করার পর আমরা এক সাথে জমা দিলাম। ভর্তি হয়ে গেলাম মানবিক বিভাগে। ভর্তির কাজ শেষ হবার পর রমিজ বলল- চল, বাইরে গিয়ে আয়েশ করে চা খাই।
কলেজের পাশেই একটা খাবার হোটেল ছিল। সেখানে গিয়ে আমরা বসলাম। চা খাবার পর সে আয়েস করে বিড়ি ধরালো। সে এমন আরাম করে বিড়ি টানছিলে যে দেখে আমার খুব ভালো লাগছিলো। আমারও খুব ইচ্ছে করছিলো বিড়ি খেতে । কিন্তু লজ্জায় খেতে পারলাম না। কেউ যদি দেখে ফেলে। প্রায় ২ ঘন্টা আড্ডা দিয়ে আমরা যে যার গন্তব্যে চলে গেলাম।
সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমাদের ক্লাশ শুরু হয়ে গেল। অনেক বড় ক্লাস। অনেক ছাত্র-ছাত্রী। ছেলে-মেয়েরা এক সাথে ক্লাস করায় আমার হলো বিরাট সমস্যা। আমার ভারী লজ্জা লাগতে শুরু করলো। আমার কেবলই মনে হতে লাগলো ক্লাসের সব মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে। এই সময় রমিজ আমার পাশে বসতো বলে রক্ষা। সে পাশে থাকলে আমার জড়তা কিছুটা কমে আসত। সে আসলেই আমাকে অনেক সাহস দিতো। সে পাশে থাকলে আমার আত্নবিশ্বাস ফিরে আসতো।
এই রমিজ আমার কলেজ জীবনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল । সে যে ছাত্র মোটামুটি ছিল তাও বলা যায় না। অনেকটা আদু ভাই না হলে আদু ভাইয়ের চেয়ে একটু ভাল ছাত্র ছিল সে। তবে সে খুব চালু একটা ছেলে ছিলো। তার সাহস ছিল। যে কারো সামনে সে অনায়াসে কথা বলতে পারত। প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখে যেখানে অনেকেই ভয় পেয়ে কাঁপত সেখানে রমিজ তার সাথে গিয় তর্ক পর্যন্ত করতো। এমন তার ‍সাহস ছিলো।
সে বলতো- প্রিন্সিপালকে কিসের ভয়। কোন অন্যায় তো আর করিনি। মারবে তো আর না। তাহলে এতো ভয় পাবো কেন? ভয় পাওয়া আর শ্রদ্ধা করা তো দুই জিনিস। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি । কিন্তু ভয় পাই না।
এক বার তার সাথে আমার ভবিষ্যত নিয়ে কথা হলো। সামনে কি করবো না করবো ‌এই সব আলোচনা ।
তাকে ভবিষ্যতের কথা বলতেই বলত, দোস্ত, আমি কোন চাকরি করব না। চাকরি- বাকরিতে আমার পোষাবে না।
কি করবি তাহলে?
ব্যবসা করব।
কিসের ব্যবসা? ব্যবসা করতে শুনেছি অনেক টাকা লাগে। আর ঝুঁকিও নাকি খুব বেশী।
জানি না । তবে ব্যবসা একটা করব এটা ঠিক। আমি যে ব্যবসা করবো তাকে কোন ঝুঁকি থাকবে না।
তাই কর। আমার কোন উপায় নাই। গরীব মানুষ আমি। আমার চাকরি ছাড়া উপায় নাই। এম এ পাস করার পর বিরাট এক চাকরি ধরব। আমার জন্য দোয়া করিস বন্ধু।
ধর বিরাট চাকরিটাই ধর। আমি করব ব্যবসায়। অনেক বড় ব্যবসা। দুই জনের দুই লাইন।

কি জানি, আমার মনে হতো, হয়তো সব গরীব মানুষরাই চাকরি করে। কেননা তাদের পায়ের তলায় কোন মাটি নাই। কোন মূলধন নাই। বেশীর ভাগ অসহায় মানুষরাই চাকরি করে। তাদের মতো মানুষ চাকর হবার জন্যই তো জন্মায়।

আমার সেই বন্ধু হঠাৎ করেইে এক দিন যোগ দিল ছাত্র রাজনীতিতে। দারুণ অবাক করা ব্যাপার! রাজনীতিতে যোগ দেবার পর তার চেহারাই গেল পাল্টে। টি শার্ট আর স্কাই ব্লু জিন্সে তাকে দারুণ দেখাতে লাগল। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যেন নায়কের মতো দেখাচ্ছে তাকে। কলেজের সুন্দর সুন্দর মেয়ে তাকে আহলাদ করে ভাইয়া ভাইয়া করছে। দেখে আমার কি যে ভাল লাগত। বন্ধু বটে আমার একটা। আমি গর্বিত।

দোস্ত, তোকে দারুণ লাগছে।
তাই বুঝি!
হ্যাঁ,তাই। টি শার্ট আর জিন্সে তোকে সাংঘাতিক মানিয়েছে। আচ্ছা, তোদের বুঝি অনেক টাকা?
কেন, তোর কি টাকা লাগবে? লাগলে আমাকে বলিস। লজ্জা করিস না। টাকা আমার কাছে কোন বিষয়ই না।

আমি জীবনেও কারো কাছে টাকা ধার চাইনি। বরং ধার দিয়েছি। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তা আর ফেরত পাইনি। আমি কেন আমার বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাইতে যাব!

বন্ধুটি একদিন আমাকে বলল, তুই অনেক ভাল ছাত্র। পার্টি করিস না কেন?
কিভাবে পার্টি করব? আমি কাউকে ধমক দিতে পারি না, কাউকে চড় মারতে পারি না, কাউকে লাথি মারতে পারি না। আমাকে যদি পুলিশে ধরে নিয়ে তাহলে আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত হাজতে থাকতে হবে। কেননা, আমার বাবা গরীব। তার টাকা টাকা নেই। সেও আমার মতো মাটির মানুষ। আজ পর্যন্ত একটা মুরগী পর্যন্ত জবাই করতে সাহস পায়নি। সেই আমি করব রাজনীতি!!

বন্ধুটি অনেক হাসল আমার কথা শুনে। যেন আমি অনেক মজার এক হাসির গল্প বলেছি। গোপাল ভাড়ের গল্পের চেয়েও অনেক মজার যেন আমার এই গল্প।

দোস্ত, আমি তোকে হেল্প করব। তুই রাজনীতি কর । এখনো সময় আছে। রাজনীতি ছাড়া পয়সা কামাতে পারবি না। সারা জীবন গরীব থাকতে চাস? বল চাস, তুই?
আমার বন্ধুর প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব আমি দিতে পারিনি।
বন্ধুটি কঠিন নেতা হয়ে গেল। একেবারে চলনে বলনে নেতা। রাজনীতির চাপে পড়াশোনা আগে যাও করতো তাও দিলো ছেড়ে। তার চেয়ে বড় কথা তার সাথে আমার সখ্যতা গেল কমে। কারণ সে এখন চলে যারা পার্টি করে তাদের সাথে। তবে আমার সাথে মাঝে মাঝে যে কথা হয় না তা নয়। সে বেশী সময় দেয় এলাকায় যিনি এমপি নির্বাচন করবেন তার সাথে । তাকে সে বড় ভাই বলে ডাকে।
সামনে ছাত্র সংসদের নির্বাচন। তাই কলেজ গরম হয়ে গেল। ক্লাস টাস বাদ দিয়ে নেতারা মিছিল করতে লাগল। সাধারণ ছাত্ররা বাদ গেল না। তাদেরকে ধরে নিয়ে মিছিলে শরিক করা হলো। কলেজে পড়বে অথচ মিছিলে যাবে এটা কি করে হয়। প্রতি দিন ক্লাস শেষে কলেজের পুরো ভবনের সব বারান্দায় মিছিল করতে হয়। এর পর শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে জমায়েত হয়। সেই জমায়েতে গরম গরম বক্তৃতা দেয় রমিজ। শুনে কারো কারো গায়ের রক্ত গরম হয়ে যায় । চিৎকার করে তারা তার নামে জয়ধ্বনি দেয়। শুনে কি যে আারাম লাগে।
শোনা গেল নির্বাচনে ২ টা প্যানেলের মধ্যে লড়াই হবে। এই পার্টির প্যানেল আর সেই পার্টির প্যানেল। এই পার্টি সরকারে আছে। আর সেই পার্টি বিরোধী দলে। দেখা গেল এই পার্টির জোরই বেশী।
সেই পার্টির ছেলেরা বেশ সাহসী । গুটি কতেক ছেলে নিয়ে তারা কলেজের বারান্দ‍া কাঁপিয়ে ফেলত। মিছিলের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমার কেবলি মনে হতো – ইস আবার যদি স্কুলে ফিরে যেতে পারতাম।

রমিজ একবার বলেছিল- রাগ করেই বলেছিল- তোরা ক্লাসের সেরা ছাত্র । কিন্তু তাতে কি। এই আমি খারাপ ছাত্র। দেখিস- এই কলেজের কেউ যদি এমপি হয় আমি হবো। এই কলেজের কেউ যদি মন্ত্রী হয় দেখিস সেটা হবো আমি। পচা ছাত্ররা হবে মন্ত্রী আর তোরা ভালো ছাত্ররা হবি কেরানী। যারা বেশী ভালো ছাত্র তারা হবি সচিব- মানে কেরানীদের বস। আর সচিবদের বস হবো আমি- মানে আমরা।
আমি শুনতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম- রমিজ এমন কঠিন কথা কি ভাবে জানে। আসলেই তো অনেক বুদ্ধি। ওর পড়াশোনা বেশী করার দরকারাটা কি ।
আমার বন্ধুর সিদ্ধান্ত তাই সঠিক ছিল। এখন সে রাজনীতি করে। এখন সে অনেক বড় ব্যক্তিত্ববান। অনেক লোক তাকে সেলাম করে। সে যে কাউকে থ্রেট করতে পারে। কোন ভয় ডর না নিয়েই পথ চলতে পারে। তার মতো কয় জন আছে। আবার রাস্তায় বের হলে অজস্র সালাম পায়।

অনেক বছর পর এসে আজ একটা চাকরি করি। খুব বড় চাকরি নয়। কেরানী টাইপ একটা চাকরি। বেতনও খুব বেশী নয়। সব সময় বসদের বকার উপরে থাকতে হয়। মাঝে ‍মাঝে মনে হয় বকা খাওয়াটাই বোধ হয় আমার কাজ। এই কাজের জন্যই মাস শেষে কিছু টাকা বেতন হিসেবে দেয়া হয়।

আমি কিন্তু ঠিকই বুঝেছি. বাংলাদেশে চাকরি করলে মানুষের ব্যক্তিত্ব বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। যেমন এই আমি আমার সব ব্যক্তিত্ব চাকরি করে করে শেষ করে দিয়েছি।

আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ সালাম দেয়নি। সালাম দেয়া ওয়াজিব। আমি অনেক কে সালাম দিয়েছি। তারা মুখ তুলে চেয়ে একটা জবাবও দেয়নি। এখন কাউকে সালাম দিতেও শংকা হয়। যদি উল্টা বকা দিয়ে বসে!


এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে টিউশনী ধরেছি। মাস্টার্স পাসের পরও তা আর ছাড়তে পারিনি। চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছি। পুরনো জুতা পলিশ করে বছরের পর বছর ব্যবহার করেছি। প্রতি রাতে লিখেছি এক গাদা চাকরির দরখাস্ত। বাসের রড ধরে জিপিও-তে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পোস্ট করেছি সব দরখাস্ত।

জিপিওর উল্টা দিকে বাটার মূল্য হ্রাসের দোকান থেকে জুতো কিনেছি। পয়সা ছিল না বলে।

ফার্মগেট থেকে পিএসসি-তে ভাইভা দিতে গেছি পায়ে হেঁটে। হেঁটে। রিক্সা চলে না। বাসে মহাভীড়। ওঠা যায়না। সিএনজি নেয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার। হেঁটে হেঁটে কত বার যে গেছি পিএসসি-তে । বিসিএস টাইপের সব ধরনের পরীক্ষায় ভাইবা পর্যন্ত যাওয়া আমার জন্য যতটা সহজ ছিল ভাইবার উপরে যাওয়া তত সহজ ছিল না। কারণ, ভাইবার নীচের পরীক্ষাগুলোতে টাকা লাগে না। ভাইভায় টিকতে হলে টাকা লাগবে আর না হয় মামার জোর লাগবে। আমার মামাও ছিল না। ফলে হাহাকার করে ফিরেছি। আমার দীর্ঘশ্ব‍াসের শব্দ শুনেছে রাজধানী ঢাকার তপ্ত রাজপথ।

আর আমার সেই বন্ধুটি শানৈ শানৈ উন্নতি করতে লাগল। তার কোন চাকরি ছিলনা। কি ব্যবসা করে তাও জানি না। মাঝে মাঝে ফোন করলে বলত , দোস্ত, সাইটে আছি। পরে কল দিস। কথা হবে।
সাইট জিনিসটা কি তখনো বুঝিনি। নেতাদের অনেক কাজ থাকে । তার মধ্যে ঠিকাদারী একটা কাজ। এটা আমার জানা ছিলো না। আমার বন্ধুটি হয়তো ঠিকাদারীও করে। রাজনীতি করলে ঠিকাদারীও করতে হয়।

আজ আমি এক মাছি মারা কেরানী। প্রতি সন্ধ্যায় ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরি। এই বুঝি গিন্নি নতুন কোন বায়না নিয়ে আসে। ছোট্ট মেয়েটা যদি আবার কোন আব্দার করে বসে! জীবনের কাছে আমি প্রতিনিয়ত পলান্তি পলান্তি খেলছি।

আমার বন্ধুটি আমার মতো ভীতু নয়। সে পালিয়ে বেড়ায় না। অনেক বড় ঠিকাদার সে এখন। সম্প্রতি গাড়ীও কিনেছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। বসুন্ধরায় প্লট আছে।

আর আমি আজো স্বপ্ন দেখি। বাড়ির স্বপ্ন দেখি। গাড়ীর স্বপ্ন দেখি।আমার স্বপ্নগুলো কেবলই অলীক। স্বপ্নে দেখি,সাড়ে তিন হাত আমার বাড়ি। আমার গাড়ির কোন চাকা নাই। চার জনে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার গাড়ী।

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
১৮ এপ্রিল ২০১৬

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১৪

উদীয়মান সূর্য় বলেছেন: ভাই বর্তমানে এটাই হচ্ছে

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: তবে এর পরিবর্তন দরকার। পড়ার জন্য আপানেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

২| ১০ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০০

প্রামানিক বলেছেন: আপনার বন্ধুর কাহিনীর মাধ্যমে এদেশের বাস্তব সত্য তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ

১৪ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: একেবারেই কাল্পনিক। আমার এরকম কোন বন্ধু নেই। ছিলোও না। । তবে এটা ঘটছে বলেই লেখার চেষ্টা করলাম। পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আর আমি আজো স্বপ্ন দেখি। বাড়ির স্বপ্ন দেখি। গাড়ীর স্বপ্ন দেখি।আমার স্বপ্নগুলো কেবলই অলীক। স্বপ্নে দেখি,সাড়ে তিন হাত আমার বাড়ি। আমার গাড়ির কোন চাকা নাই। চার জনে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার গাড়ী।

আহারে ! এই কথা যদি সকলের মনে উদয় হইত !!!!

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে আমার খুবই ভালো লাগলো। আমি খু্বই উৎসাহিত বোধ করছি।

৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন স্বপ্ন খোয়ানো মানুষের সাধাসিধা গল্প

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে আমার খুবই ভালো লাগলো। আমার পাঠক সব সময়ই কম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০

বিদেশে কামলা খাটি বলেছেন: ভালো। আরো ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।

০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৯:২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: চেষ্টা তো করি । বুদ্ধি যে কম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.