নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের দিন।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৩



পান্তা ভাতের সাথে একটু খানি লবণ, পেয়াজ আর কাচা মরিচ নিয়ে ধান ক্ষেতের আইলের এক পাশে খেতে বসে আবুল মিয়া। সেই ভোর বেলা থেকে খাটুনির পর সকাল ১০ টার দিকে নাস্তার আয়োজন দেখে মন ভরে যায় আবুল মিয়ার।পান্তাভাত, পেয়াজ, কাচা মরিচ তার খুবই প্রিয় খাদ্য। এর চেয়ে মজার আর স্বাদের খাবার আর দুনিয়ায় আছে বলে তারা জানা নেই।


মোরগ ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মাঠে যাবার তোড়জোর। সূর্য উঠে গেলে গরম হয়ে যায় চারিদিক। কম আলোতে আর কম গরমে কাজ করার আরামই আলাদা। দুপুর হয়ে গেলে মাথার উপর জ্বলন্ত আগুনের মতো সূর্য। সেই সময় কাজ করা বড় কঠিন। তাই সকাল সকাল মাঠে গিয়ে যত বেশী কাজ করা যাবে তত বেশী আরাম।
মাঠ থেকে ফিরে গরুগুলোকে গোসল করিয়ে নিজে গোসল করে বাজার যেতে হবে। এই কাজে তার বরাদ্দ ২/৩ ঘন্টা। পড়ন্ত বিকেলে রোদ কমে এলে আবার মাঠে যেতে হবে। ফসলে সাথে মিতালী করে তাদের যত্নআত্নি করে সন্ধ্যার সময় আবার বাড়ি ফিরে আসা। এরই মাঝে সুখ খুজেঁ বেড়ায় সে।
পাড়ার সম্পর্কে চাচা আর ভাতিজা তারা। মাঝারী দরিদ্র ধরনের কৃষক। কামলা নেবার সামর্থ্য নেই বলে একে অপরের ক্ষেতে কাজ করে । তাদের মাঝে দারুণ বোঝাপড়া। অনেক কষ্টে সৃষ্টে সংসার চলরেও তারা খুবই সুখী মানুষ। তাদের চলনে বলনে তাই মনে হয়।
নিজের ক্ষেতের কাজ শেষ করার পর তারা অনেক সময় প্রতিবেশীদের কাজে সাহায্য করে। প্রচলিত অর্থে তারা কামল নয়। তবে তারা কাজ করে প্রচুর।
বুঝলেন নি রমিজ চাচা, দুনিয়ার সব চাইতে মজার খাওন অইল গিয়া পান্তা ভাত আর কাঁচা মরি। যদি এর লগে একটু আলু ভর্তা আর ডাইল অইলে কি যে অমৃত।
রমিজ চাচা পোড় খাোয়া মানুষ। তিনি দুনিয়ার অনেক দেখেছেন। এক সময় কি যে মাছ ছিলো দেশে। কি যে ছিল তার স্বাদ। আর গোয়াল ভরা গরু। বাসন ভর্তি মাছ ভাত আর শেষে দুধ ভাতের স্বাদ কি আর এই জমানার পোলাপান বুঝব। গাঙ্গে নাইতে নামলেই লুঙ্গিতে আটকে যেত হরেক রকম মাছ। মাঝে মাঝে পায়ে কিল বিল করত ইচা মাছ।
ভাইস্তা, তুই কি খাইতে বইয়া গেলি। আমার তো খেয়ালই নাই । কহন যে নাস্তার বেল অইছে। একটু থাম বাপ। তোর চাচী আলু ভর্তা দিছে মনে অয়। চাচা ভাইস্তা ভাগ কইরা খাই।

চাচীর রান্না বান্নার হাত যে খুবই ভাল। আলু ভর্তা নয় তো যেন রাজভোগ। অবাক হয়ে একটু একটু করে লোকমার ভিতর ভরে তারপর পুরো ভাতের লোকমাটা পেটে চালান করে দেয় আবুল।আল্লাহ তালা সব স্বাদ দিয়া রাখছেন এই আলুর ভর্তার মইধ্যে। মনে মনে বলে আবুল।
চাচা, একটা আবদার আছে।
কি আব্দার রে বেটা।
তোমাগো বউরে এই সব ভর্তা বানানোর কায়দাটা শিখাইয়া দিওন লাগবো। চাচীরে একটু কইয়া দিও। উনার মতোন গুণী মানুষ পুরা অঞ্চলে আছে কিনা সন্দেহ।
আইচ্ছা, দিমুনে। তুই এবার খা। কাল আমার ক্ষেতে কাম করনের সময় আরো ভর্তা বানাইয়া নিয়া আসুমনে। পেট ভইরা খাইস তুই।
গালগল্পে নাস্তা শেষ হয়। নাস্তার শেষে বিড়ি না হলে চলে না রমিজ চাচার। আগের দিনে হুকা খেত। এখন এই সব জিনিসের কোন কদর নাই। তবু তার বাড়িতে একটা হুকো আছে। নাড়িকেলের মালার তৈরি হুকো। তার বাপজান খেতেন। বাপজানের স্মৃতি সে হারাতে চায় না। বাজারে এখন আর হুকো পাওয়া যায় না। তাই ইচ্ছে থাকলেও আর হুকা টানা হয় না রমিজ চাচার। বিড়িই এখন এক মাত্র ভরসা। কিন্তু হুকোর স্বাদ কি আর বিড়িতে পাওয়া যায়। রমিজ চাচা অস্থির বোধ করে। খুব দ্রুত বিড়িটি টেনে শেষ করেন । তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে বলে উঠেন- আল্লাহ মাবুদ, তুমিই ভরসা।তুমি বিনা যাওনের জায়গা নাই।

ভাইস্তা, চল কামে নাইমা পড়ি। রইদ উঠলে কাম করন বড়ই কঠিন।
ধান ক্ষেতের সবগুলো ঘাস নিড়িয়ে শেষ করতে হবে। নিড়ানো শেষ হয়ে গেলে সার দিতে হবে। ধানের ফুল আসতে বেশী বাকি নেই। এই সময় সার দিতে পারলে বৃষ্টি এলে খুব কাজ দেবে।

কাজ করতে করতে উদাস হয়ে চাচা এক সময় গান ধরে। তার গানে সবই যেন না পাওয়ার বেদনা। শিশুকাল থেকে এই পরিপূর্ণ বয়সে এসেও সে দেখে জীবনে না পাওয়ার ভাবগই বেশী। মন উদাস হয়ে যায় এই সব গান শুনলে।
গান শুনতে শুনতে আবুলের মনে হয় ধান চাষ মনে অন্য একটা কথা।
চাচা, ধান চাষ মনে অয় বাদই দেওন লাগবো
এই কতা কস ক্যান। ধান চাষ বাদ দিলে খামু কি আমরা। আমাগো চেৌদ্দ পুরুষ বরাবরই ধানের আবাদ করছে। ধান ছাড়া আমাগো চলবো।তুই ক’?
আগের কতা তো আলাদা চাচা। আগে তোমাগের খাওন লাগত কম। তোমাগোর মাছ আছিল, গরু আছিল। আর আমাগো ধান ছাড়া আছে কি? ধানের কি কোন দাম আছে। হাটে যাইয়া দেহ ধানের দামের কি অবস্থা। মহাজনরা ধান কিনবারই চায় না। যেই ট্যাহা খরচ কইরা ধান চাষ করি, ধান বাজারে বেচলে হেই ট্যাহা আর খরচ কি উডে, তুমি কও? মনে হয় আমরা ধানরে আবাদ কইরা বিরাট পাপ করছি। একটা বুদ্ধি বাইর করন লাগবো। এই ভাবে আর চলবার পারে না।

ক্ষেত খোলা করন ছাড়া আমাগো আর উপায় কি ক’? তুই তো টাউনেও তো গেলি। টিকবার পারলি হেইখানে? করবার পারলি কিছু? আমাগো ভাগ্যে কিছুই অয় না।
চাচা, টাউন আমাগো জইন্য না। আমাগো জন্য গেরাম। আমরা গেরামেই থাকবার চাই। ঢাকা শহরে যাইয়া রিক্সা চালানোর চাইয়া গ্রামের ক্ষেতের কাম অনেক ভালো। নিজের কাম নিজে করুম। কারো গোলামী করুম না। এক বেলা খাই আর দুই বেলা খাই নিজের বাড়িতেই খামু।
ক্ষেতের কাজ যে ভালো এটা তারা যুগ যুগ ধরেই জানে। তাদের বাবা, দাদা, পরদাদা সবাই কৃষক ছিলেন। কৃষক হচ্চেন পৃথিবীর সেরা কারিগর । তারা মানুষের মুখের আহার যোগায়। সব ধরনের প্রাথমিক কাচামাল তারাই উৎপাদন করে। অথচ তাদের কোন অহংকার নেই। সামান্য আহার করেই তারা তৃপ্তি ঢেকুর তুলে। তারাই সুখী মানুষ। অনেক কম পেয়েও তারা সুখ লাভ করে।

রাতের বেলা ঘুমিয়ে সে ঠিক করে ফেলে ফসলের চাষের পরিবর্তন আনত হবে। খালি ধান চাষ কোন কাজের কথা নয়। ধান বেচতে গেলে দাম কম। আবার চাল কিনতে গেলে দাম বেশী। তার চেয়ে বছরে যেই পরিমাণ ধান খোরাকের জন্য লাগবে তাই চাষ করবে। ধান বেচার ধার ধারবে না। বাকি জমিতে চাষ করবে তরিতরকারি। দূধের গরু পালবে। ডিমের জন্য মুরগী। ফলের বাগান করার স্বপ্ন জাগে তার মনে।ছোট্ট যে আরাটা আছে সেটাকে কাটিয়ে আরো গভীর করবে। তারপর করবে মাছ চাষ। কিছু হাসো থাকবে সেখানে।
সাহসের উপর ভর করে উপজেলার কৃষি অফিসে গিয়ে হাজির হলো। কৃষি অফিসার রহমান সাহেব নিরহঙ্কারী মানুষ। তাকে পেয়ে খুশী হয়ে সব ধরনের পরামর্শ দিতে লাগলেন। আধুনিক কৃষির নানা কৌশল শুনে মন ভরে গেল তার। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলে সে।
কোন জায়গা ফেলে রাখা ঠিক না। কোন জলাশয় ফেলে রাখা ঠিক না। জমি আর জলাশয়ে কাজ করলে সোনা ফলে। জমি যেমন প্রদিতান দেয়। তেমনি জলাশয়ও প্রতিদান দেয়। জমি দেয় বুক উজার করে ফসল। জলাশয় দেয় মাছ আর সেচের পানি। জমি আর জলাশয় কতই না উদার মানুষ জাতির প্রতি। তাদের অযত্ন করতে নেই।

সে ভেবে দেখল- আগাম কিছু ফসলের ভালো দাম পাওয়া যায়। যেমন আলু, শাক, ধনে পাতা, শিম। বুদ্ধি খেলে যায় তার মনে। কম করে চাষ করলেও লাভ পাওয়া যাবে। কৃষি অফিসার রহমান সাহেবও তাকে এই সব বলেছেন।

বর্ষার পানি নেমে যেতে না যেতেই সে জমি তৈরী করে ফেলে। ছোট্ট ছোট্ট প্লট বানিয়ে তাতে বপন করে, আলু, ধনে পাতা, কপি ইত্যাদি। লকলকিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে চারা গাছগুলো।

নিজের হাতে বানানো ফসলের ক্ষেত দেখে অবাক হয়ে যায় আবুল। এতো সুন্দর। সবুজের সমারোহ। কেবলই তাকিয়ে থাকতে মন চায়।

মাঠের নতুন ফসলের সবুজ দেখে তার মনে যেন দোলা দিয়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে নানান স্বপ্ন ময় ছবি। অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে।

তখন পুব আকাশে সবে মাত্র সূর্য উঠতে শুরু করেছে। আলোর ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছে সব খানে। সেই আলোর দিকে তাকিয়ে বুকটা ভরে যায় আবুল মিয়ার। অনেক কাজ করতে হবে তাকে। দ্রুত কোদাল আর কাস্তে হাতে নিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়ায় আবুল। ঝিরঝিরে বাতাসে তার মনের মধ্যে গান জেগে উঠে। জেগে উঠে হাজারো স্বপ্ন।

আহা, মানুষের সব স্বপ্ন যদি পূরণ হতো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৬

সোহানী বলেছেন: এক টুকরো সত্যিকারের জীবনের গল্প। হাঁ, তাদের এই বঞ্চনার জীবনের বিনিময়ে আমাদের এ আয়েশী জীবন। কোনকালেই কেউই তাদের দাম দেয়নি।

দীর্ঘদিন ব্লগে আছেন, অথচ আপনার সাথে কোন কথা হয়নি.........

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আজকাল খুব একটা লেখাই হয় না। পড়ি বেশী। আপনার লেখা ও পড়ছি।

ভালো থাকুন সব সময়।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


সুন্দর, বাংলার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক কাহিনী

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি আমার প্রিয় ব্লগার। আপনার লেখা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ধন্যবাদ দিয়ে আপনকে খাটো করা চলে না।

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪

মিরোরডডল বলেছেন: anek shundor
gram bangla
panta vat kancha morich alu vorta dal
shotti e amrito!

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকুন সব সময়। শুভ কামনা।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৯

প্রামানিক বলেছেন: বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন কাহিনী চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: প্রামাণিক ভাই আমার লেখা পড়েছেন, আমি ধন্য। আপনি অনেক অনেক ভালো থাকুন।

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: পড়ন্ত বিকেলে রোদ কমে এলে আবার মাঠে যেতে হবে। ফসলে সাথে মিতালী করে তাদের যত্নআত্নি করে সন্ধ্যার সময় আবার বাড়ি ফিরে আসা। এরই মাঝে সুখ খুজেঁ বেড়ায় সে - গ্রামীন কৃষকের দৈনিক দিনপঞ্জীর সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।
কৃষক হচ্চেন পৃথিবীর সেরা কারিগর - ঠিক বলেছেন।
শিরোনামটা সুন্দর হয়েছে। ছবিটাও।

৬| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮

নিয়াজ সুমন বলেছেন: সুপ্ত স্বপ্নের সুন্দর গল্প। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.