নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয়পাড়া গেলে মাধবকে খুব মনে পড়ে। **********************

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:২০

মাধব কুমার বালো-র পিতৃ নিবাস হরিরামপুর। সে খুব বেশী ভালো ছাত্র ছিল না। জয়পাড়া কলেজে বি কম পড়তো। নিদারুণ আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে কঠিন হস্তে মোকাবেলা করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল।

অনেকগুলো টিউশনী করতো হতো। পড়াশোনার খরচ তো আছেই । সেই সাথে বাড়িতে দরিদ্র মা-বাবাকে সম্ভবত সে সাহায্য করতো। প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতো বলে দিনের কোন সময় তাকে পাওয়া যেত না।

রাত ৯টার পরে সর্বশেষ টিউশনীটি করে বের হলে তার সাথে দেখা হতো। আমাকে দেখে খুবই খুশী হতো।
- সাজ্জাদ ভাই, বলেন তো আপনাকে কী খাওয়াই?
- চল, তোমাকে চা খাওয়াই।

রাসেলের চায়ের দোকানে গিয়ে বসা মাত্রই শুরু হয়ে যেত তার অনর্গল কথা বলা। কাউকেই যেন ফ্লোর দিত না। তাই চুপচাপ শুনে যেতাম তার কথা। তবে তার গল্প বলার স্টাইল ছিল ভালো। কষ্টের গল্পগুলোও অনেক মজা করে বলতো।


******মাধব কুমার বালো******

- ভাই, আর বাঁচুম না। একবার ইন্ডিয়া যাওয়া দরকার। যদি তারা বাঁচাতে পারে।
তার কণ্ঠে হতাশার সুর স্পষ্ট। এক সময় জয়পাড়া ছেড়ে ময়মনসিংহ ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ নিই। জীবনের প্রয়োজনে আমরা ছড়িয়ে যাই দেশ থেকে দেশান্তরে। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কে কাকে মনে রাখে।


এরই মধ্যে পৃথিবীতে আসে ফেসবুক। এখানে মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। এক সময় মাধবকে খুঁজে পেলাম। তার একটি মোবাইল নম্বরও হয়েছে। ঢাকার একটি কোম্পানীতে কাজ পেয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে তার কাজ। এই কাজের জন্য সারা দেশ চষে বেড়ায় সে। এরই মাঝে এক সময় ঢাকা এসে খবর পাই মাধব কাজ উপলক্ষে ঢাকার হেড অফিসে এসেছে। বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে যেতে পারলে মতিঝিলের অফিসে তাকে পাওয়া যাবে।


তাকে পাওয়া গেল। সেই হাসি মুখ। সেই প্রাণখোলা উচ্চ হাসি। মাধবকে দেখে বড় ভালো লাগলো। এরই মাঝে ফোন এলো জানে আলম ভাই এর । তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক জয়পাড়া শাখায় কাজ করতেন। তিনি ব্যাংকের হেড অফিসে আছেন দিলকুশা। মাধবকে বললাম- চল- আমরা দুই জনেই যাই। আলম ভাই কে দেখি না অনেক দিন।


মাধবকে নিয়ে গেলাম মার্কেন্টাইলে ব্যাংকের হেড অফিসে। সেখানে থেকে বের হতে ৯টা বেজে গেলে । বের হয়ে যার যার পথে চলে গেলাম।


অনেক দিন পরে বেশ কয়েক বছর আগে খবর পেলাম- মাধব হঠাৎ করে মারা গেছে। শুনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। চটপটে হাসিখুশী একটা ছেলে হুটহাট মরে যাবে এটা কোন কথা?!


মাধব চিরতরে চলে যাবার পর ফেসবুকে ওর ছবি খুঁজলাম। কোন ছবি পেলাম। তার কোন ফেসবুক হিসাব ছিল কিনা তাও বুঝতে পারছিলাম না। পরিচিত অনেকের কাছেই খোজ নিলাম তাদের কাছে মাধবের কোন ছবি আছে কিনা।


কারো কাছে হয়তো সে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ফলে তার ছবি কারো কাছেই পেলাম না। হতাশ হয়ে আবার অনলাইনে খোজা শুরু করলাম গুগুলে, মুগুলে সব জায়গায় । যদি কোথাও কেউ কোন ভাবে ছবি পোস্ট করে থাকে তাহলে গুগুল হয়তো খুঁজে বের করতে পারবে।


অবশেষে একদিন পেয়ে গেলাম তার ছবি। কেমন যেন দুঃখী দুঃখী। সেই মাধব। সেই হাসিখুশী মাধব। সামান্য মজার কথা শুনলেই যে প্রচন্ড জোরে হা হা হা করে হাসতে পারতো। সেই এখন ধরা ছোয়ার বাইরে। এখনো মাঝে মাঝে যখন জয়পাড়া যাই মাধবকে খুব মনে পরে। সামান্য একজন অখ্যাত মানুষ । তাকে মনে রাখতে কার ঠ্যাকা পরেছে। কিন্তু আমার খুব মনে পরে।


মাধব কুমার বালো, দ্বিতীয় জগতে তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো। সেই জগতে নিশ্চয়ই কোন অভাব অনটনের টেনশন নাই। কেবলই শান্তি, শান্তি আর শান্তি।
*******

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:২০

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আজকের পৃথিবীতে সরল মনের ভালো মানুষ বেশ বিরল। ওপারে তিনি শান্তিতে থাকুন এটাই প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৩২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


কোন এক অজানা কারণে সে আমাকে খুব পছন্দ করতো।
তার সহজ সরল ব্যবহার আমাকে সব সময় মুগ্ধ করতো।
ভাবতেই কষ্ট, সেই মানুষটা আর নেই।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৩০

সামরিন হক বলেছেন: কিছু মানুষ স্মৃতিতে থাকলে স্মৃতি মধুময় হয়ে ওঠে।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



কিছু কিছু স্মৃতি আছে যা কেবলই শোক বাড়ায়।
কষ্ট জাগানিয়া স্মৃতি তবু বার বার ফিরে আসে ।

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: মাধবের জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।
আর শুনুন আর কোনো জনম নেই। মৃত্যুর পর সব শেষ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


মানুষ বড্ড কল্পনা বিলাসী ।
কল্পনায় মানুষ সুখে থাকতে চায় ।
আমিও চাই সে কল্পনাতে সুখে থাকুক ।
অনেক ভালো থাকুক।

৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৫

অপূর্ব সাহা ৩৭৫ বলেছেন: লেখাটি পড়ে কষ্ট লাগলো। আসলেই এমন কিছু মানুষ থাকে সবার জীবনেই। ঘটনাচক্রে তাদের সাথে দেখা হয় আর তাদের সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ আমাদের হাজারো স্মৃতির অংশ হয়ে উঠে। বহু মানুষের কাছে এই গুরুত্বহীন মানুষগুলোর গুরুত্ব শুধু অল্প কয়েকজনই জানেন। আপনি হয়তো ভাগ্যবান তার মতো এক বন্ধু পেয়ে; যদিও তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই। তবুও, আশাকরি উনি সুখে থাকবেন পরপারে। আপনার মনের মধ্যে উনি আজীবন বেচেঁ থাকবেন।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৪২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

বাস্তবতা হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যাপারটির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে তার সাথে আমার ব্যাপক মিল আছে।
সেও টাকা-পয়সার টানাটানির মধ্য দিয়ে গিয়েছে।
আমি ও টাকা -পয়সার টানাটানির মধ্য দিয়ে গিয়েছি।
পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতায় আমরা ছিলাম অসহায়।
আমি এখনো টিকে আছি; অথচ সে টিকতে পারেনি ।
এটাই বাস্তবতা।
আফসোস।

৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: যে মানুষটাকে কেউ মনে রাখে না, তারও কারও জীবনে প্রভাব থাকে। খুব সামান্য কোনো স্মৃতি অথচ মানুষ আজন্ম মনে রাখে। কারও স্মৃতিতে বেঁচে রয় বহু বছর। মাধবের মৃত্যু সংবাদ ব্যথা দিলো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


দারিদ্রের সাথে লড়াই করতে করতে বেচারা শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে।
আমি যখনই জয়পাড়া যাই তাকে খুব অনুভব করি।
কেবলই মনে হয় এই বুঝি সে সামনে এসে দাঁড়াবে।

৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: মাধব যেখানে থাকুক ভালো থাকুক...

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের আর কিই বা করার আছে।
আমি তাই বলি- জগতের সকল প্রাণী সুখে থাকুক।

৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সোনাগাজী বলেছেন:



জানতে পেরেছিলেন, কি ঘটেছিলো?

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


পরিবারের খোঁজ খবর সামলাতে গিয়ে নিজের খোঁজ করতে পারেনি।
অনেক কষ্টের জীবন। ছোটখাট চাকরি। সংসার চালানো কঠিন।
এর মাঝে পেটের কোন একটা অসুখ হয়েছিল।
ইন্ডিয়া যেতে চেয়েছিল চিকিৎসার্থে।
টাকা ম্যানেজ করতে পারেনি।

৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:১৪

ভুয়া মফিজ বলেছেন: সবাইকেই একদিন যেতে হবে। এইটা নিয়ে টেনশানের কিছু নাই।
মাধব কুমার বালো যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক। পৃথিবীর দুঃখ কষ্টের পুনরাবৃত্তি তার অন্য জীবনে যেন না ঘটে, এটাই প্রার্থনা।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


মরে যাবো এটা কোন টেনশনের কিছু নাই।
সমস্যাটা হলো বেঁচে থাকা। কোন কোন মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য যে অমানুষিক কষ্ট করতে হয় যা ভাবলেই খারাপ লাগে।
পৃথিবীতে এতো এতো খাবার-দাবার। অথচ সামান্য এক মুঠো ভাত জোগাড় করতে অনেকেরই দম বেরিয়ে যায়।

মরে গেলাম তো শান্তি। মরণরে তুহু মম শ্যাম সমান।

৯| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২

নিবারণ বলেছেন: মাধবের লাইগা ভালোবাসা রইলো। আমরাও একদিন মইরা যাব। আমাগো ভাইবাও কি কেউ এমন স্মৃতিচারণ করবো, কন দেখি ?

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

পৃথিবী খুবই খারাপ একটি জায়গা ।
এখানে কেউ কাউকে মনে রাখে না ।
কেননা মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এতটাই ব্যস্ত থাকে যে কাউকে মনে রাখার মত সময় তার নেই।
এটা সম্ভবও না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.