নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সাজ্জাদ খান

মোহাম্মদ সাজ্জাদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্ঞান অর্জন ফরজ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৪

আমরা সাধারণত সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাতকেই ফরজ ইবাদত বলে জানি বা মনে করি। আসলে আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি হুকুম মেনে চলার নামই হচ্ছে ইবাদত। সালাতের আগে অবশ্যই ঈমান আনতে হয় আর ঈমান আনার পূর্ব শর্ত হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞান শব্দের আরবি হচ্ছে ‘ইলম’ যা কুরআনের একটি পরিভাষা। ‘ইলম’ শব্দটি আরবি ‘আলামত’ শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। ‘আলামত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, প্রত্যক্ষ দর্শন বা বাস্তবে বোঝানো অথবা কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি ইঙ্গিত বা ইশারা করা। আল কুরআনের ভাষায় প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা প্রত্যক্ষ দর্শনকে ‘য়াইনুল ইয়াক্কিন’ বা নিজ চোখে দর্শন অথবা প্রত্যক্ষ জ্ঞান বলা হয়েছে। আমাদের সমাজে, দেশে বা সারা দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ অসংখ্য মানুষ আছেন। এসব মানুষের মধ্যে অবশ্যই সবাই মুসলমান বা ঈমানদার নন। মুসলমানের ঈমানদার মানুষের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে স্বতন্ত্র কিছু আলামত, ইশারা বা ইঙ্গিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সে স্বতন্ত্র আলামত, ইশারা বা ইঙ্গিত হলো মুসলমানের মধ্যে তার সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক বা রব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা বা জ্ঞান থাকবে।
যুগে যুগে যত নবী-রাসূল দুনিয়ায় এসেছেন আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে ওহির মাধ্যমে জ্ঞান দান করেছিলেন। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি যে, যুগে যুগে যত নবী-রাসূল দুনিয়ায় এসেছেন তাদের সবারই ওপর ওহি ও আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছিল। পৃথীবির সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও নবী মুহাম্মদ সা:-এর ওপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম যে ওহি বা নির্দেশ নাজিল হয়েছিল তাও ছিল জ্ঞান অর্জনসংক্রান্ত। আল্লাহ তায়ালা হজরত জিবরাইল আ:-এর মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ সা:-কে সর্বপ্রথম নির্দেশ করেছিলেন বা ওহি পাঠিয়েছিলেন, এই বলে যে, ‘(হে নবী! আপনি) পাঠ করুন আপনার ‘রব’ বা প্রতিপালকের নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন’, যা আল কুরআনের সূরা আল আলাকের প্রথম আয়াতে উল্লেখ আছে।
জ্ঞান অর্জনের হাকিকত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারার ২৬৯ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে (একান্তভাবে) তাঁর পক্ষ থেকে (ওহির বা কুরআন-সুন্নাহর) বিশেষ জ্ঞান দান করেন, আর যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালার এই (ওহির বা কুরআন-সুন্নাহর) বিশেষ জ্ঞান দেয়া হলো সে যেন মনে করে তাকে সত্যিকার অর্থেই প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে, আর প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ তায়ালার এসব কথা থেকে অন্য কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।’ আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ফাতির-এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জ্ঞানী লোকেরাই আমাকে বেশি ভয় করে চলে আর আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল’। আল্লাহ তয়ালা সূরা আঝ ঝুমারের ৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে ? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো (আল্লাহ তায়ালার) নসিহত গ্রহণ করে থাকে।’
জ্ঞান অর্জনের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা মুজাদালার ১১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দেবেন আর তোমরা যা কিছু করো না কেন আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে পূর্ণ অবহিত।’ তিরমিজি শরিফের হাদিসে হজরত আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: বলেছেন, মুনাফিকের মধ্যে দু’টি চরিত্রের সমাবেশ ঘটতে পারে না, এর একটি হচ্ছে নৈতিকতা ও সৎ চরিত্র আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান।’ তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ শরিফের হাদিসে হজরত ছাখবারা আজদি রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী-ইলম অন্বেষণ করে এটা তার পূর্বকৃত গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ।’
জ্ঞান অর্জন না করার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা ত্বাহার ১২৪ থেকে ১২৬ নম্বর আয়াতে বলছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ (আর কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য (জীবনে) বাঁচার সামগ্রী সঙ্কুচিত হয়ে যাবে, সর্বোপরি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ বানিয়ে উঠানো হবে। সে তখন বলবে, হে আমার মালিক, তুমি আজ কেন আমাকে অন্ধ বানিয়ে উঠালে? আমি তো দুনিয়াতে চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, আসলে তুমি এমনিই অন্ধ ছিলে! (দুনিয়াতে) আমার আয়াত তোমার কাছে পৌঁছে ছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, তাই আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম।’
কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক, হাশরের দিন আল্লাহ তায়ালা সব মানুষকে একত্র করে তাদের হাতে প্রত্যেকের আমলনামা দিয়ে বলবেন, ‘আজ তুমি তোমার আমলনামা পাঠ করো, তোমার হিসাব করার জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ যারা দুনিয়াতে আল কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে না, আল কুরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে না তারা যখন অন্ধভাবে হাশরের মাঠে উঠবে, তখন কী অবস্থা হতে পারে তা অবশ্যই চিন্তা করার বিষয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ তায়ালাকে জানার জন্য, আল্লাহর পথে চলার জন্য, তাঁর প্রতিনিধির বা খলিফার দায়িত্ব পালন করার জন্য, ঈমানের দাবি পুরনের জন্য, মুনাফিকি থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা ইসলামের সীমারেখা, হালাল, হারাম, হক-বাতিল, আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান বা আইন-কানুন, আদালত, বিচারক, সাক্ষী আর উকিল-মুক্তারের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারি। আরো আমরা জানতে পারি ব্যবসায়-বাণিজ্য, উৎপাদন আর চাষাবাদ ইত্যাদি বিষয়ে। মূলত দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণের মূল হচ্ছে জ্ঞান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.