নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যস্ত মানুষ https://www.facebook.com/sajjadustc

সাাজ্জাাদ

আমিতো গিয়েছি জেনে ,প্রণয়ের দারুণ আকালে,নীল নীল বনভূমি ভিতরে জন্মালে,কেউ কেউ এভাবে চলে যায়,চলে যেতে হয়..................... কেউ কেউ এভাবে চলে যায়বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন।

সাাজ্জাাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব ৪)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮

আগের পর্বগুলো পড়তে নিচে ক্লিক করুন।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব - ২)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব -৩)

পর্ব - ৪


অবশেষে ২ দিন জ্বরের ঘোরে থেকে তারপর চোখ খুলে চাইলো।বুঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে আর কি সমাচার।মনে করার চেষ্টা করল সব কিছু। পাশে এক ভদ্রলোক বসে আছেন তার দিকে তাকিয়ে।চোখ মেলতে দেখে বলল, ভাই, শরীরটা কি একটু ভালো লাগছে আগের চেয়ে? ২দিন তো জ্বরের ঘোরে অজ্ঞান ছিলেন আর কি যেন আবোল তাবোল বলছিলেন। রঞ্জুর তখন সব মনে পরল। মাথাটা এখনও ভারি হয়ে আছে।আবার চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল।তার মায়ের কথা মনে পড়তে লাগলো।জ্বর হলে মা একটুখানি খাওয়া মুখে দেয়ার জন্য কতো আবদার। যতই চিৎকার-চেচামেচি করুক,মায়ের লক্ষ্য থাকতো একটু করে খাওয়া মুখে দেয়ার। কি স্বার্থ ছিল তার? কোনও স্বার্থও তো ছিল না।আর এখন?মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।কি করছে এখন?মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলো ,”হে আল্লাহ,এই মায়ের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি,এই মায়ের সেবা করার জন্য হলেও আমাকে বাচিয়ে রেখ।“ পাশ থেকে ঐ ভদ্রলোক ডাক দিয়ে বললেন, ভাই কি এতো বিড়বিড় করছেন।জ্বর এখনও কমেনি?-এই বলে কপালে একটা হাত দিয়ে দেখল।আসেন অল্প কিছু মুখে দিয়ে নেন। খাওয়ার সময় হয়েছে। রঞ্জু উঠে বসে একটু খাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু অত্যাদিক দুর্বলতার কারনে একটু করে খেয়ে আবার শুয়ে পড়ল।
পুরো নৌকার ঠিক মাঝখানে নিচে একটি ঘরের মতো আছে যেখানে পুরাতন মালপত্র,দড়ি ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র রাখা হয়। কিছু লোক সেখানে অবস্থান করছে।এই ঘরটি থাকাতে ভালো হয়েছে।ট্রলারের মধ্যে কারও মারামারি হলে দুজনকে দুইরুমে নিয়ে রাখা হয়।তাছাড়া উপর থেকে নিচে সবাই ঘুরাঘুরিও করে।এতে মন কিছুটা শান্ত হয়। এখন যেহেতু এই নৌকাটাই তাদের পৃথিবী।
মজার ব্যাপার হল, যে কেউ যতবারই উপর থেকে নিচে বা নিচে থেকে উপরে যাক না কেন তাকে সাগরেদের গালাগালি অবশ্যই খেতে হবে।বিশেষ কয়েকজন আছে যাদেরকে নড়াচড়া করতে দেখলেই সাগরেদরা মারতে আসেন।রঞ্জু তাদের মধ্যে একজন।কেন জানিনা তাকে দেখলেই সাগরেদের মাথা খারাপ হয়ে যায়।
মারামারির কথা এসে যাওয়াতে বলতেই হয়, এখানে মারামারি নিত্যসঙ্গি।কথায় কথায় মারামারি হচ্ছে বিশেষ করে খাবার আর খাওয়ার পানি নিয়ে।কয়েকবার রক্তারক্তিও হয়েছে।এসব কারনেই মনে হয় সাগরেদদের স্বভাব এমন হয়ে গেছে।তাদের কয়েকজনকে ছুরি বহন করতেও দেখা যায়।
রঞ্জুর জ্বর আরও বাড়তে লাগলো।সে পাশে থাকা লোককে গায়ে হাত দিয়ে বলল ভাই,আমার খুব খারাপ লাগছে,আমাকে একটু পানি দেন।রঞ্জুর কথা শুনেও লোকটি ঝিম মেরে বসে রইল।রঞ্জু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ভাই, আপনি আমার ভাইয়ের মত,আমাকে বাচান, আমি আমার বাবা-ভাইকে না দেখে মরতে চাই না।আমার ভাই টা কথা খুব কম কথা বললেও আমার খেয়াল রাখত।আমি তার সাথে একবার দেখা করতে চায়,এটা বলেই সে কাঁদতে লাগলো এবং পুনরায় অজ্ঞ্যান হয়ে গেল।
দ্বিতীয়বার যখন জ্ঞ্যান ফিরে এলো দেখল লোকটি তাকে নৌকার কিনারায় মাথা নিয়ে সমুদ্র থেকে বোতল করে পানি নিয়ে মাথায় ঢালছে।সে জিজ্ঞেস করলো ভাই, এখন কোন বেলা?লোকটি জবাব দিল এখন বিকেল। রঞ্জু বলল,ভাই আমার সূর্যের আলো সহ্য হচ্ছে না, আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যান।লোকটি ঠিক আছে, দেখছি বলে সাগরেদের সাথে কথা বলতে চলে গেল।সাগরেদ কোনও ভাবেই রাজি না।ফলে তর্কাতর্কি চলতে লাগলো। রঞ্জু দূর থেকে দেখলো লোকটি সাগরেদকে জামা ধরে মারছে আর আরেক সাগরেদ লোকটিকে মেরে মেরে দুজনকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন।রঞ্জু চিন্তা করতে লাগলো, যে লোকটি এতদিন কাছে থেকেও এতো দূরে ছিল,সেই লোকটি আজ দূরে থেকেও কতো কাছে।
লোকটি রঞ্জুকে কোলে করে এনে নিচে শুইয়ে দিল।অন্ধকার রুমটাতে কেমন যেন ভ্যাপ্সা গন্ধ।আগে কোনও কালে হয়ত মাছ শিকার করে এই রুমে রাখতো।সেই গন্ধগুলো থেকে গেছে।রঞ্জুর মাথাটা দপদপ করছে।গন্ধটা এখন ওর কাছে আগরবাতির গন্ধের মতো লাগছে।মানুষ মারা গেলে আগরবাতির একটা বিষাদ গন্ধ থাকে,ওর কাছে ঠিক সেই রকমই লাগছে।ওর বন্ধু জয়নাল যার সাথে ট্রলারেই পরিচয় হয়েছিল,তাকেও মরার আগে এই রুমে এনে রাখা হয়েছিল।মরার আগে তার সেকি কান্না,শুধুমাত্র তার ছোট মেয়েটিকে দেখার জন্য।সেও কি এই বিষাদ আগরবাতির সুগন্ধ পেয়েছিল?সে তো কাফন, মাটি কিছুই চায়নি, মরার পর তার লাশটা শুধু টুপ করে পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছিল।
রঞ্জুর মনে হতে লাগলো একের পর এক সবাই মারা যাবে।পুরোটা একটা প্রক্রিয়া।এখন তার পালা,সে মরবে এরপর আরেকজন, এরপর আরেকজন। এভাবে সবাই মরা ছাড়া গতি নাই।
হটাত রঞ্জুর মাথা আউলিয়ে গেল।সে তার বাবা-মা কে না দেখা ছাড়া মরবে না।সে চিৎকার দিয়ে উঠলো।সে নিজে দাড়িয়ে ঐ রুম থেকে উপরে উঠে যেতে চাইলো।তার মনে হচ্ছে এই রুমে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে তার মৃত্যুর জন্য।
যে লোকটি সাথে ছিল সে রঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে রাখল এবং বলতে লাগলো, ভাই আপনি শান্ত হন, কি হয়েছে আপনার, সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু রঞ্জু ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে সরিয়ে কাঠের মই বেয়ে উপরে উঠে গেল এবং উপরে উঠেই সাগরেদের সাথে দেখা হয়ে গেল।সাগরেদ এমনিতেই রেগে ছিল,এবার পাগলামি করার উছিলায় রঞ্জুকে সুযোগে পেয়ে মনের ঝাল মিটিয়ে নিলো।
রঞ্জু উপুড় হয়ে পড়ে রইল,তার ঠোট কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছিল।তার নিঃশ্বাস ভারি হতে থাকলো। তার কিছুই করার নাই,কারোরই কিছু করার নাই কারন এখানে সবার প্রতিটি নিঃশ্বাসই ভারি।

(চলবে)

কেনো যেন সিরিজটা একটু বড় হয়ে যাচ্ছে। আগামি পর্বে শেষ করার ইচ্ছা রাখি।
কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হচ্ছে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০১

রাজীব নুর বলেছেন: এই অভিজ্ঞতা কি আপনার?
না অন্যের মুখে শোনা?

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

সাাজ্জাাদ বলেছেন: আমার না ভাই তবে ঘটনা সত্য।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৭

তারেক ফাহিম বলেছেন: বাস্তব অভিজ্ঞতা??

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৮

সাাজ্জাাদ বলেছেন: হুম। বাস্তব অভিজ্ঞতা।
ভালো থাকু।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮

করুণাধারা বলেছেন: রুদ্ধশ্বাসে পড়ছি। দালালদের হাতে এই নিগ্রহ, নির্যাতন, ও বিপদের ঝুঁকির গল্প পত্রিকায় আসে না, তাই পড়তে ভালো লাগছে।

মোটেও বড় হচ্ছে না, এভাবেই বিস্তারিত লিখুন।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৮

সাাজ্জাাদ বলেছেন: ধন্যবাদ করুনাধারা। আপনার কমেন্ট আমাকে অনেক উৎসাহিত করে।
আপনার পড়তে ভাল লাগছে জেনে খুশি হলাম।
আশা করি পাশে থাকবেন সব সময়।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: অবিশাষ্য মর্মান্তিক এবং ভয়ঙ্কর!! অথচ কঠিন বাস্তব। আপনার পর্বগুলো একসাথে করে একটি বই লিখুন। বইমেলায় ছাপানোর কথা ভাবুন। মানুষের সচেতনতার জন্য এই কাহিনীগুলো ছড়িয়ে পড়া দরকার।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৫

সাাজ্জাাদ বলেছেন: আসলে এর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা ঘটে এসব যাত্রায় কিন্তু সব অপ্রকাশিত থেকে যায়।
বই এর চিন্তা আপাতত নাই।
ধন্যবা।

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি! বা নিহতের সংবাদ
কখনো হয়তো শিরোনামে চোখ বুলিয়েই চলে যাই, খবরের অন্য পাতায়!
কিন্তু সেই খবরের ভেতরর কষ্টগুলো, যাতনা গুলো, খবরের পেছনের নির্মম সত্যগুলো যেন উঠে আসছে
তুলির আঁচড়ে শিল্পীর ক্যানভাসে।

ভুক্তভুগিদের জন্য সহানুভূতি, সমবেদনা আর একরাশ শুভকামনা।

সিরিজে ভাললাগা

++++

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪০

সাাজ্জাাদ বলেছেন: আসলেই , খবরের পেছনের নির্মম সত্যগুলো উঠে আসা উচিত।
আপনার কমেন্ট অত্যন্ত উতসাহদায়ক।
আশা করি পাশে থাকবেন সব সম।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০০

চাঙ্কু বলেছেন: কি ভয়ানক অভিজ্ঞতা!! আপনার সিরিজের প্রতিটা পর্ব পড়তে শুরু করলেই মন খারাপ হয়ে যায় :(

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৩

সাাজ্জাাদ বলেছেন: গল্পটাই তো মন খারাপের।
আমরাও চাই গল্পটা সুখের হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.