নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ পাপচক্র

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৪

- আস্তে।
- তুমি দিন দিন আরও সুন্দর হচ্ছ।
- না বুকে হাত দেয়া যাবে না।
- কেন?
- এমনি, আমার পছন্দ না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এসব যদি আসাদ জানতে পারে কী হবে বুঝতে পারছ?
- তুমি আমাকে চাও না?
- চাই।
- তাহলে যা করছ চুপচাপ কর। আসাদ কিছুই জানতে পারবে না।

পাশের রুম থেকে সব শুনছে আসাদ। মাথার ভিতর কেমন যেন ঝিম ধরে আছে। শিরা উপশিরার রক্ত গুলো মনে হচ্ছে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। নিস্পিতাকে বড় বিশ্বাস করে আসাদ। এমন কিছু হচ্ছে, এমন কিছু ঘটছে বাস্তবে তা মানতে চাচ্ছে না আসাদ। মনে মনে ভাবছে শোনা সব কথা গুলো মিথ্যা হোক, একটু পরেই ঘুমটা ভেঙে দেখুক নিস্পিতা পাশে শুয়ে আছে গুটিসুটি মেরে। ঘুম ভেঙে দেখুক সবটাই ছিল দুঃস্বপ্ন। চাইলেই আসাদ পারছে না, কান দুটো চেপে বসে থাকতে। বাসা থেকে বেরিয়ে যেদিকে দু চোখ চায় চলে যেতে। ভালবাসার মানুষটার শরীরে অন্য কারও হাতের ছোঁয়া লাগুক, শরীরে শরীর মিশুক, এটা মেনে নেয়া কষ্টের। সত্যিই খুব কষ্টের।

মাথার কাছটায় একটা চকচকে চাকু। একদম নতুন। চাকুটার দিকে তাকিয়ে রাতুল বলল, এখানে এটা কেন?
- ওহ, সরাতে ভুলে গেছি। তরকারি কাটার জন্য। একটু সরিয়ে রাখো তো।
রাতুল চাকুটা সরিয়ে টেবিলের উপর রেখে নিস্পিতাকে জড়িয়ে ধরল। ওপাশ থেকে শব্দ শুনছে আসাদ, মৃদু মৃদু শব্দ নিস্পিতার মুখের। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে সে শব্দ শুনে। মনে হচ্ছে টেবিলের উপর রাখা চাকুটা দিয়ে খুন করে দিয়ে আসে রাতুলকে। রাতুল এর আগেও এ বাসায় এসেছে কয়েক বার। শেষ বার এসেছিল নিতিকে বিয়ে করতে চায় এ কথা বলতে। নিতি নিস্পিতার ছোটবোন, রাতুল আসাদের অনেক কাছের বন্ধু। এ হিসাবে রাজী ছিল আসাদ, ভেবেছিল রাজী হয়ে যাবে নিস্পিতাও। কিন্তু তেমন হল না, নিস্পিতা মোটামুটি খারাপ আচরণই করেছিল রাতুলের সাথে। একটা মেয়ের বয়স হলে তার বিয়ের প্রস্তাব আসতেই পারে, এতে রাগ দেখাবার কী ছিল জানা ছিল না আসাদের। রাতুল সেদিন চলে যাবার পর আসাদ জানতে চেয়েছিল নিস্পিতার কাছে, কী হয়েছে?
- কিছু না।
- রাতুলের সাথে এমন আচরণ করলে যে?
- সর‍্যি।
- বল আমাকে কী হয়েছে?
- তোমার বন্ধুকে আমার পছন্দ না। তাকে বলে দিবে যেন আমাদের বাসায় আর না আসে।
- আমার বন্ধু আসতেই পারে। তোমার কোন বান্ধবী বাসায় আসলে আমি কি না করি?
- তুমি যদি না বল, আমার কোন বান্ধবী এ বাসায় আসবে না। তবুও তুমি তোমার বন্ধুকে মানা করে দিবে আমাদের বাসায় আসতে। ঠিক আছে?
- আমি বুঝতে পারছি না, আসলে কী হয়েছে।
- কিছুই হয় নি।

সেদিনের পর আজ আবার আসল রাতুল। যে নিস্পিতার অনিচ্ছায় আর কখনও আসে নি এ বাসায় রাতুল, সেই নিস্পিতার ইচ্ছাতেই এসেছে এবার। সে নিস্পিতার সাথেই সময় কাটাচ্ছে। আসাদ কখনও ভুলেও চিন্তা করে নি, রাতুলের সাথে নিস্পিতার কোন সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক থাকতে পারে। রাতুলকেও খুব বিশ্বাস করত আসাদ। বরং রাতুলই এসে বলেছিল হাসানের ব্যাপারে। সব কিছু। যে কিছুর কিছুই জানত না রাতুল যদি এসে না বলত।
প্রায় ঘণ্টাখানেক থাকার পর রাতুল চলে গেল। অন্তর্বাস পরা অবস্থায় নিস্পিতা এক কাপ কফি হাতে নিয়ে রুমটায় এসে ঢুকল। আসাদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিস্পিতার দিকে। নিস্পিতার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। আসাদের পাশে এসে গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কেমন আছ?
আসাদ নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রইল, কোন উত্তর দিল না।
- ওহ, তোমার মুখ তো আটকানো। আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।
আসাদের মুখ থেকে টেপটা টান দিয়ে খুলে দিল নিস্পিতা। আসাদ হাত পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসা। টেপ খুলে দেবার পরও আসাদ কোন কথা বলল না। নিস্পিতার দিকে চুপচাপ দেখতে রইল। যেন জানা কারও খুব অপরিচিত একটা মুখচ্ছবি দেখছে। নিস্পিতাই বলল, এভাবে দেখছ কেন? খুব ঘৃণা হচ্ছে আমার উপর?
- বুকে হাত দেয়াটা তুমি পছন্দ কর। না করলে কেন?
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিস্পিতা বলল, সব কিছু সবার জন্য না।
- রাতুল আর হাসান কার ব্যাপারটা আমি সত্যি ধরব?
- দুইটাই তুমি সত্যি ধরতে পারো।

হাসানের সাথে নিতির বিয়ে হয়েছিল। ছেলে হিসেবে হাসানকে পছন্দ করেছিল নিস্পিতাই। নিস্পিতার সাথে একই সাথে পড়ত হাসান, ভাল ছেলে, ভাল একটা ব্যাবসা আছে, সে ব্যাবসায় ভাল লাভও হচ্ছে। নিজের বোনের জন্য এর চেয়ে ভাল ছেলে পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া নিস্পিতার পরিচিত। আসাদের এ ব্যাপারে না থাকার কথা ছিল না, ছোট বোন নিস্পিতার। এছাড়া আসাদের সাথে সম্পর্ক বেশ একটা ভাল ছিল না কখনও নিতির। নিতির সাথে হাসানের বিয়ে হওয়াতে নিতির থেকে মনে হত নিস্পিতাই বেশী খুশী। তবু কিছুই আঁচ করতে পারে নি আসাদ তখন।

- আমি তোমাকে ভালবাসি নিস্পিতা।
কাঁপা গলায় বলল আসাদ। নিস্পিতা শান্ত ভঙ্গিতে আর একটু পাশ ঘেঁষে বলল, কতটা?
- অনেকটা ভালবাসি।
- আমি তো খারাপ মেয়ে, তাও ভালোবাসো?
- হ্যাঁ তাও ভালবাসি। আমিও তো খারাপ।
- তুমিও খারাপ? সত্যি? জানতাম না তো। বলনা প্লিজ কী কী খারাপ কাজ করেছে?
আসাদ ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বেঁধে রাখা হাতে খুব ব্যথা হচ্ছে। সে ব্যথার চেয়ে বহুগুণ বেশী ব্যথা হচ্ছে বুকের ভিতর। নিস্পিতাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল আসাদ। ভাল কখনও বেসেছিল কিনা নিস্পিতা জানা নেই। খালার সংসারে দুই বোন বড় হয়েছে। নিস্পিতার খালুর সাথে ব্যাবসায়িক কাজে প্রায়ই বাসায় যেত আসাদ। সেখানেই ভাল লাগা, বিয়ের প্রস্তাব, বিয়ে করা।

- নিস্পিতা তুমি এমন করতে পারো না।
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে শেষ করে পাশে রেখে নিস্পিতা বলল, কেমন?
- আজ রাতুলের সাথে যা করলে।
- কেন?
- আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে।
- আমি রাতুলের সাথে যা করলাম তাতে তোমার কষ্ট হচ্ছে? আমাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে?
- আমি তোমাকে ভালবাসি।
- আমার উপর রাগ লাগছে না?
- না রাতুলের উপর রাগ লাগছে।
নিস্পিতা শুকনো একটা হাসি দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল। খানিক পরেই আবার ফিরে আসল, হাসানের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল এই কথাটা তো রাতুলই তোমাকে বলেছিল, তাই না?
আসাদ মাথা তুলে তাকাল। উত্তর দিল না। নিস্পিতা বলে যায়,রাতুল ছেলেটা অনেক চালাক। নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছুই করতে পারে।
- তোমার হাসানের সাথে কিছু ছিল না?
- ছিল।
- আর রাতুল?
- পাশের রুম থেকে সবই তো শুনলে তুমি।

হাসানের সাথে নিস্পিতার ভালবাসার সম্পর্ক ছিল, ব্যাপারটা বলেছিল রাতুলই আসাদকে। হাসানকে দেখতে ইচ্ছা করত বিয়ের পরও, কথা বলতে ইচ্ছা করত, কাছে পেতে ইচ্ছা করত। কাছে রাখার জন্যই নিজের ছোট বোনের সাথে বিয়ে দিয়েছিল নিস্পিতা। এজন্যই রাতুলের বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয় নি। নিতির সাথে বিয়ের পরও হাসানের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায় নিস্পিতা, নিতি আর আসাদের অগোচরে।
সবটাই জানা রাতুলের কাছ থেকে। রাতুল অনেকদিন থেকেই হাসানের পিছন পিছন ঘুরছিল, একটা সুযোগের অপেক্ষায়। খেয়াল রাখত কোথায় যায়, কি করে, কার সাথে মিশে। সুযোগ পেলেই নাই করে দিত হাসানকে।
- হাসানকে এভাবেই বেঁধে রেখেছিলে না চেয়ারের সাথে, তুমি আর রাতুল মিলে?
নিস্পিতার প্রশ্নে স্তব্ধ হয়ে গেল আসাদ। স্তব্ধতার রেষ কাটতে একটু সময় লাগছিল। চোখ বড় বড় করে নিস্পিতার দিকে অনেকটা সময় তাকিয়ে রইল। কপালটা আস্তে আস্তে ঘামছে।
- কি বলছ তুমি?
- মিথ্যা বলছি?
- আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছ।
পাশের ঘর থেকে চাকুটা নিয়ে এসেছিল নিস্পিতা। কাপড়ে মোড়ানো চাকুটার মাথাটা বের করে আসাদের দিকে ধরে বলল, এভাবে বেঁধে রেখে গলার কাছ থেকে এভাবে চাকু দিয়ে কেটে দিয়েছিলে। পেটের ভিতর এমন করে চাকুটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলে, তাই না?
- নিস্পিতা প্লিজ, বুঝতে চেষ্টা কর। আমি এসব কিছুই করি নাই। হাসানকে কে বা কারা মেরেছে আমি জানি না।
নিস্পিতার চোখে রক্তলাল আভা। আসাদের মুখের কাছটায় বুকটা এনে বলল, তোমার তো আমার এগুলোই সবচেয়ে বেশি পছন্দ তাই না, বল?
আসাদ কাঁপছে। কাঁপা গলায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
- আর বুকের একদম মাঝখানটায় তুমি যখন খুব বেশি উত্তেজনায় থাকো, কামড় দাও, এটাও তো ঠিক, তাই না?
নিস্পিতা বুক থেকে অন্তর্বাস খুলে দাগ দেখিয়ে বলল, এই দাগ গুলো তো তোমারই বানানো আশা করি। হাসান বা রাতুল কারও না। ঠিক বলেছি না?
আসাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। নিস্পিতা বলে যায়, হাসানের সাথে রাতুলের ব্যাবসায়িক ঝামেলা ছিল। রাতুল আর হাসানের যে ব্যাবসায় শেয়ার ছিল, সে ব্যাবসার টাকা হাসান মেরে দিয়েছিল। অনেক টাকা ক্ষতি করেছিল হাসান রাতুলের। হাসানের উপর রাতুলের রাগ থাকতেই পারে। হাসানের তোমার বউয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তোমারও রাগ থাকতেই পারে হাসানের উপর। কিন্তু আমার বোনের দোষ ছিল কি?
আসাদ হতভম্ব হয়ে বসে রইল। গতকাল দুপুরের বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে, আসাদের হাত পা বাঁধা চেয়ারের সাথে। মুখে লাগানো টেপ। আগের রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাতে এই কাজ করেছে নিস্পিতা। দিন পনেরো আগে মারা গিয়েছে হাসান আর নিতি। হাসানকে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় লাশ পাওয়া গেছে। নিতিকে কেউ ধর্ষণের পর খুন করেছে। নিস্পিতা জানে কাজটা কার। তবুও চুপই ছিল। নিতির বুকের মাঝখানটায় কামড়ের দাগ ছিল। ঠিক যেমন করে কামড় দেয় আসাদ নিস্পিতাকে। নিস্পিতা তাও চুপ ছিল। যে রাগ জমে ছিল ভিতরে, তার সবটা দেখাবার সময় এসেছে। রাতুলের সাথে কয়েকদিনের কথা বলাতেই নিস্পিতার সাথে সময় কাটাতে রাজী হয়ে যায় রাতুল।
- বল, আমার বোনের দোষটা কী ছিল?
আসাদের চোখ জ্বলছে, খুব বেশি অনুশোচনা হচ্ছে। হাসান নিস্পিতার সাথে সময় কাটায় এটা মানতে কোনভাবেই পারত না আসাদ। রাগের মাথায় কাজটা করে ফেলছিল। নিতিকে কিছু করার কোন ইচ্ছা কখনও ছিল না আসাদের। রাতুলের কারণেই সব ওলটপালট হয়ে গেল।
আসাদ ভেজা চোখে বলল, নিস্পিতা আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও প্লিজ।
- ভুল তো আমারও ছিল। অনুভব করতে পারছ, হাসানকে বেঁধে রেখে নিতির উপর যখন তোমার অত্যাচার করেছ, কেমন লাগছিল হাসানের। আজ রাতুলের সাথে আমি যখন করছিলাম, তোমার যেমন লাগছিল ঠিক তেমন।
- আমরা সব ভুলে যাব। আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করব। আমাদের অতীতে কি ভুল ছিল, আমরা মনে রাখব না।
- এতোই সহজ। কিছু জিনিস কখনই ভুলতে পারবে না তুমি। না পারব আমি। কিছু ভুল শুধরাবার মত না। আমার সাথে যতদিন তুমি থাকবে, তুমি যতই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা কর তোমার মাথায় আসবে, আমি হাসানের সাথে বিছানায় শুয়েছি, শুয়েছি রাতুলের সাথে। আমার মনে হবে, তুমি আমার ভালবাসার মানুষটাকে খুন করেছ, আমার বোনকে খুন করেছ। আমি তোমার ভাল বাসি বা না বাসি, আমি তোমাকে সম্মান করতাম। তুমি আমাকে করতে বিশ্বাস। এসবের সবটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আর কিছুই বাকী নেই আমাদের। সম্মান আর বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্ক কখনও টিকে থাকতে পারে না। অসম্ভব।
কাপড়টা দিয়ে চাকুটা ধরে আসাদের গলার কাছটায় ধরল নিস্পিতা।
- নিস্পিতা, প্লিজ।
- না, এভাবে অবিশ্বাসে বেঁচে থাকার চেয়ে, মরে যাওয়া ভাল। তুমি পাপ করেছ, তোমার শাস্তি পাওয়া দরকার। আমি পাপ করেছি, আমার পাওয়া দরকার। প্রথমে তুমি এরপর আমি।
নিস্পিতা চাকুটা দিয়ে আসাদের গলার কাছ থেকে একটা আঁচড় দিল। পেটের ভিতর এরপর পুরোটা ঢুকিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলল, আমিও হয়ত তোমাকে ভালবাসতাম। কিন্তু হাসানের চেয়ে বেশি না।
নিজেও নিজের পেটের মধ্যে চাকুটা ঢুকিয়ে দিয়ে নিস্তেজ শরীর নিয়ে ফ্লোরে পড়ে রইল। দুটি পাপ করা মানুষ পাপের সমাপ্তি দেখে হারিয়ে গেল।
বাসা থেকে বের হবার দরজার কাছটায় দুদিন আগেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কে আসে যে যায় সব রেকর্ড হবে। পুলিশ ওটা ঘাঁটাঘাঁটি করে রাতুলকেই পাবে। শেষ যে এসেছে, শেষ যে বের হয়ে গিয়েছে। খুন করা চাকুটাতেও রাতুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাবে। মাথার কাছ থেকে সরিয়ে যখন টেবিলের উপর রেখেছিল চাকুটা হাতের ছাপ ওটায় বসে গিয়েছিল। একজন পাপ করা মানুষও নিজের পাপের সমাপ্তি দেখবে।
যে পাপের শুরুটা ছিল নিস্পিতা থেকে, একটা অসুস্থ মস্তিষ্কের চিন্তা থেকে, সে পাপের রেষ ধরে একটা পাপ চক্র পূরণ হল। মাঝ থেকে নিরীহ হয়েও নিতির করুণ পরিণতি ঘটল।

পাপ গুলো কখনও পাপের বৃত্ত হতে বের হতে দেয় না। একটা পাপ অন্য পাপের জন্ম দেয়, একটা পাপ চক্র পূরণ করে, সব ধ্বংস করে, নিশ্চুপে আবার অন্য কারও মনে জায়গা দখল করে নেয়। মনের আঁধার গুলোর চাওয়া গুলোকে কখনও আলোর মুখ দেখাতে নেই। ওগুলো আঁধারে থাকাই ভাল। বন্দী হয়ে একসময় হারিয়ে যাওয়াই ভাল।

- রিয়াদুল রিয়াদ

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অমর একুশে বইমেলা ২০১৬ তে প্রকাশিত হচ্ছে আমার দ্বিতীয় উপন্যাস একা আলো বাঁকা বিষাদ
প্রকাশনীঃ বর্ষা দুপুর

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

প্রামানিক বলেছেন:
পাপ গুলো কখনও পাপের বৃত্ত হতে বের হতে দেয় না। একটা পাপ অন্য পাপের জন্ম দেয়,

চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। পড়ার জন্য এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য। :)

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার গল্প| শেষের বিশ্লেষণগুলো দেয়ার দরকার ছিল না| গল্পেই তো সব বলা হয়েছে| এটা গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ, পড়ার জন্য এবং গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য। :)

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: - না, এভাবে অবিশ্বাসে বেঁচে থাকার চেয়ে, মরে যাওয়া ভাল। তুমি পাপ করেছ, তোমার শাস্তি পাওয়া দরকার। আমি পাপ করেছি, আমার পাওয়া দরকার। প্রথমে তুমি এরপর আমি।

এখানেই মনে হয় গল্পটা শেষ করে দেয়া যেত। শেষের ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন ছিল না।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: :) ধন্যবাদ। পরবর্তীতে ব্যাপার গুলো মাথায় রাখব।

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়লাম... ভাল লেগেছে। তবে নিস্পিতা আত্মহত্যা না করলেও পারতো।
+++

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: কিছু না হবার হয়েও হয়ে যায়। চক্র যেভাবেই হোক পূরণ হয়।

:)

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০১

রাজসোহান বলেছেন: নিস্পিতার সুইসাইড করেছে এই জিনিসটা বেশ কষ্ট দিলো।

এই যে রাতুল নিস্পিতাকে জড়িয়ে ধরছে, বুকে হাত দিচ্ছে এটা আবার হাসান পাশের রুম থেকে শুনছে দেখছে আর বুকের ভেতর ভেঙে পড়ছে, ঠিক এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি ছিলাম। এই সময়টায় আসলেই ভেঙেচুড়ে যায় সব, বিশ্বাসগুলো মরে যায়, তবুও কেন জানি ভালোবাসার মানুষের ওপর রাগ ওঠেনা, হাহা! ইমোশন যে কি একটা বালছাল আজও বুঝি নাই।

গল্পে প্লাস, নস্টালজিক করে দিছে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: বিশ্বাস বা অবিশ্বাস। ভালবাসা অদ্ভুত এক মায়ায় জড়ানো থাকে। খুব দূরে ঠেলে দিয়েও কাছে চায়, অনুভূতির দেয়ালে বারবার আঘাত করে হলেও ভালবাসতে চায়।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.