নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারঃ টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (তৃতীয় পর্ব)

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব


মৃন্ময়ের ঘুম ভেঙে গেল, বড় সকাল সকাল। নৃ ঘুমাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে স্নেহা। দুজনের গালে আলতো করে দুটো চুমু দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল মৃন্ময়। সূর্য উঠি উঠি করছে। দূরের গাছের আড়াল দিয়ে উঁকি দিতে চাচ্ছে, সে রোদের আলো। মনের ভিতর বড় অস্থির লাগছে। এবার ঢাকায় গিয়ে যেভাবে হোক, নৃ কে ডাক্তার দেখাতে হবে। অনেকবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে, কাজ হয় নি। নৃ কোনভাবেই যেতে চায় না ডাক্তারের কাছে। শুধু ডাক্তারের কাছে না, মৃন্ময় স্নেহার সাথে যেতেই চায় না কোথাও। বশির স্যার দুবার ডাক্তার বাসায় নিয়ে এসেছিলেন। সে ডাক্তাররা নৃকে দেখে বলেছে, কোন সমস্যা নেই। ছোট বাচ্চা তো, বয়স বাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হয় নি নৃ। বারান্দায় ভাল লাগছে না। নেমে আসল সিঁড়ি দিয়ে। নিচ তলায় নেমে চোখ বুলাল পুরো বাড়ির দিকে। চোখ গিয়ে থামল বশির স্যার এর দরজার কাছে। এই লোকটাও হয়ত ঘুমাচ্ছে। দরজার কাছে গিয়ে এমনিই দাঁড়িয়ে রইল কিছুটা সময় মৃন্ময়। কেন যেন মনে হল জেগে আছে বশির স্যার। দরজার আস্তে করে কড়া নাড়ল মৃন্ময়। ভিতর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর আসল, কে?
- আমি।
- মৃন্ময়?
- জ্বি।
বশির স্যার দরজা খুলে বেরিয়ে আসলেন।
- ঘুমাও নি?
- ঘুমিয়ে ছিলাম, ভেঙে গেল। আপনি ঘুমান নি?
- আমারও ভেঙে গেল। একটা ছবি আঁকছিলাম। কিছু বলবে?
- না, আপনি আঁকুন। আমি আসি।
মৃন্ময়ের অস্থিরতা কাটছে না। বশির স্যারের ঘরের সামনে থেকে চলে আসল বাহিরে। মৃন্ময় ভাবছে, আপন মনে ভাবছে, পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ অস্বাভাবিক। বড় অস্বাভাবিক।
এই যে এসব ভাবছে মৃন্ময় তাও অস্বাভাবিক। নৃ অস্বাভাবিক, অস্বাভাবিক স্নেহা, অস্বাভাবিক বশির স্যার। যে মানুষ গুলোকে দেখে বড় স্বাভাবিক মনে হয়, সে মানুষ গুলো আরও বেশী অস্বাভাবিক। মৃন্ময়ের মাঝে মাঝেই মনে হয়, দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে। সত্যি কি পাগল হয়ে যাচ্ছে?
দরজা দিয়ে বেরিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে অনেকটা। থামল একবার। থেমে আবার হাঁটতে লাগল। কান খাড়া করে রেখে, আবার থেমে গেল। এরপর ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল পিছন দিকে। পিছনে তাকিয়ে একটু চমকে উঠল। চমকে উঠবার কথাই। পিছনে বেশ বড় একটা রাম দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাসেল। মৃন্ময়ের ঠিক পিছনে। মৃন্ময়ের বেশ সময় ধরেই মনে হচ্ছিল, কেউ একজন হাঁটছে পিছনে, মৃন্ময় হাঁটলে হাঁটে, মৃন্ময় থামলে থেমে যায়। রাসেলই ছিল সে।
- কিছু বলবেন?
- হ, ভাইজান পাঠাইল। কইল বাড়ির সামনের জঙ্গল পরিষ্কার কইরা দিতে।
- আচ্ছা।
- রাম দা নিয়া আইলাম। কোন খানে কাটুম?
মৃন্ময় একবার তাকাল রাসেলের দিকে। এই লোক এতো বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে এনায়েত চাচার বাড়িতে। মৃন্ময় সেই ছোট বেলা থেকে দেখছে। এনায়েত চাচা যখন ছোট, তখন থেকেই নাকি এ বাড়িতে রাসেল। মানুষ আসলেই অদ্ভুত। একটা কাজের লোক হিসেবে কতটা বছর পাড় করে দিল। ইচ্ছা করলেই, এই নিচু কাজ ছেড়ে ভাল কিছু করতে পারত এই লোক। সে তা করেনি। হয়ত মনের ইচ্ছা বা ভেবে নেওয়া আমাকে দিয়ে হবে না কিছু।
- আপনার যেখানে মনে হয় গাছ পালা আছে, সেখানে কাটুন। না কাটলেও কিছু না। আমরা এখানে তো আর কয়েকদিন আছি মাত্র। এতো আয়োজনের হয় নি কিছু। এনায়েত চাচা এমন করছেন যেন সারাজীবন আমরা এখানে থাকব।
- ভাইজান, আপনাগো বড় ভাল পায়।
- জানি আমি। আচ্ছা আপনি কাটুন। আমি সামনে যাই। একটু হাঁটাহাঁটি করব।
মৃন্ময় এগিয়ে গেল সামনে। একবার চাচীকে দেখে আসতে হবে। অসুস্থ তিনি। এনায়েত চাচার সাথেও কথা বলা দরকার, বাড়িটা বিক্রির ব্যাপারে। গ্রামটাও অনেক বদলে গেছে। আগের মত কিছু নেই। আবার কিছু কিছু আগের মতই আছে। গ্রামে নতুন একটা প্রাইমারী স্কুল হচ্ছে। আগে স্কুল ছিল পাশের গ্রামে। এই স্কুলও করে দিচ্ছেন এনায়েত চাচা। গ্রামের কয়েক জায়গায় নতুন টিউব ওয়েল বসিয়ে দিয়েছেন। আগে সবাই পুকুরের পানি খেত। নিজ খরচেই সব করেছেন এনায়েত চাচা। পৃথিবীতে ভাল মানুষ কমে যায় নি। সত্যি কমে যায় নি। এনায়েত চাচার মত কেউ কেউ আছেন।

স্নেহার ঘুম ভাঙলে ঘরের মধ্যে হাঁটল কিছুটা সময়। ঘরের জানালাটা বন্ধ। একটা কাপড় দিয়ে জানলাটা মুছে খুলল। অনেক দিন খোলা হয় না, বোঝাই যাচ্ছে। কড় কড় করে শব্দ হল, সে জানালা খুলবার। জানালা খুলে তাকাল বাহির দিকে। পিছন দিকে আরও বেশী জঙ্গল, আগাছা, বুনো গাছে ভরা। কিছু গাছ বড় হয়ে প্রায় জানালা পর্যন্ত উঠে এসেছে। স্নেহা হাত বাড়িয়ে গাছের পাতা ধরল। উহ, বলে শব্দ করে উঠল সে পাতা ধরেই। হাত দিয়ে ফিনফিনিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। গাছের যে পাতা ধরেছে, তার পাশেই একটা কাঁটা লতা ছিল। সেই কাঁটা আঙ্গুলে বিঁধে গেছে। স্নেহা আঙ্গুল মুখের ভিতর নিয়ে রক্ত থামাবার চেষ্টা করল। জানালা দিয়ে এখানে কিছু পড়লে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এই জঙ্গলের ভিতর যাওয়াও যাবে না। তাছাড়া যে পরিমাণ কাঁটা লতা, ভিতর দিকে যাওয়া আরও কষ্টসাধ্য। এই গাছ গুলোর ঠিক বিপরীতেই পুকুরটা। বেশ বড়। পুকুরে পানি আছে এখনও। শ্যাওলা পড়ে সবুজ হয়ে আছে পানি। পুকুরের ঘাটের পাশটা শুধু পরিষ্কার। জানালা ধরে এসব দেখতে দেখেতেই আবার স্নেহা সেদিনের মত একই শব্দ শুনল। কাঁচের গ্লাস ভাঙার শব্দ। এবার আর দেরী করল না, দৌড়ে বাহিরে বেরিয়ে আসল। নেমে আসল সিঁড়ি বেয়ে। বেরিয়ে এসেছেন বশির স্যারও। স্নেহা অবাক হয়ে দেখল, খাবার টেবিলের পাশে একটা রাম দা হাতে দঁড়িয়ে আছে রাসেল।
- আপনি কি করেন এখানে?
স্নেহার প্রশ্নে মনে হল, একটু ভয় পেয়ে গেল রাসেল। কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ইয়ে পানির পিয়াস পাইছিল। তাই খাইতে আসছিলাম। ক্যামনে জানি হাত থিকা পইড়া গেল গ্লাসটা।
- সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি এতো ভোর বেলা এখানে কি করেন?
বশির স্যারও একটু এগিয়ে এসে বললেন, এতো বড় দা নিয়া আসছেন কেন?
রাসেল দা টা একটু ঘুরিয়ে বলল, ভাইজান পাঠাইলেন বাড়ির সামনের গাছ পালা কাইটা পরিষ্কার করার জন্য।
রাসেল লোকটা চলে যাচ্ছিল। স্নেহা কেন যেন ডাকল পিছন থেকে।
- শুনবেন একটু?
- জ্বে।
- আপনি প্রথম যেদিন এসেছিলেন, সেদিন গ্লাস ভাঙল পর পর দুইবার, কাজটা কি আপনি করেছিলেন?
প্রশ্নটা করে স্নেহার মনে হল, ঠিক হল না এই কথা জিজ্ঞেস করা। উনি কেন এই কাজ করবেন? কেন করল এই প্রশ্ন তাও জানে না স্নেহা। লোকটা অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময় স্নেহার দিকে। তাকিয়ে রইলেন বশির স্যারও।
- আমি ক্যান ভাঙব? কি কন এগুলা?
স্নেহা ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, না কিছু না। আপনি যান। আর এই জঘন্য আতর আর গায়ে দিবেন না প্লিজ।
রাসেল চুপ করে বেরিয়ে গেল, যাবার সময় বলতে লাগল নিজ মনে, ভূতুরা বাড়িতে থাকবে, ভূতে গ্লাস ভাঙবে, দোষটা দিব আমায়।
স্নেহা চুপ করে সে কথা শুনল। বলল না কিছু। লোকটার হয়ত খারাপই লেগেছে।
বশির স্যার সামনে এগিয়ে এসে বললেন, কি হইছে তোর?
- কিছু না স্যার।
- নৃ উঠেছে?
- না।
স্নেহা আর কিছু বলল না। উঠে গেল হন হন করে উপরের দিকে।

চাচীর শরীর বেশী একটা ভাল না। মৃন্ময় ঘরে যেতে কিছুটা কষ্ট করেই উঠে বসলেন। মৃন্ময় পাশে বসে বলল, চাচী আপনি শুয়ে থাকুন। উঠতে হবে না।
চাচার এতো টাকা পয়সা, তবুও যে বাড়িটায় থাকেন, দেখে মনে হয় যেন খুব অভাবে দিন কাটান। দুজন মানুষ থাকার জন্য ঘরটা বেশ ছোট। বাসার সামনের একটা ছোট আর একটা ঘরে থাকে রাসেল। আর পাশে আড়ত ঘর। চাচার অনেক কিছুর ব্যবসা আছে বাজারে। সেসবের আড়ত এটা। ধরতে গেলে, বাজারের সব বড় বড় ব্যবসা গুলোই চাচার হাতে। চালের আড়ত, মাছের আড়ত আরও যেন কিসের কিসের ব্যবসা এখন। সেসব দেখার জন্য লোকজন আছে আলাদা। চাচা বাড়িতেই ছিলেন। চাচী কাশতে কাশতে বললেন, বউ মা কে নিয়ে আসতে?
- চাচী ও ঘুমাচ্ছে।
- তোমার ছোট মেয়েটা?
- একই কাজ , ঘুম।
- চাচী আপনার শরীর কেমন এখন?
- ভাল না বাবা। বাঁচব না।
মৃন্ময় চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, ডাক্তার দেখাইছেন চাচা?
- গ্রামে ডাক্তার পাওয়া যাবে কই? কবিরাজ দেখাইছিলাম।
- এদিকে এখনও হাসপাতাল হয় নি। চাচা, চাচীকে নিয়ে এবার ঢাকা চলেন। ভাল ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসব।
চাচা মনে হল, সে কথায় একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। খুব শান্ত গলায় বললেন, আমি কখনও শহরে যাব না আর।
- কেন চাচা?
- এমনিতেই।
কথা আর বেশী দূর বাড়ল না। চাচীর কথা বলতে কষ্ট হয় । সন্ধ্যার পর থেকে অসুস্থ বেশী হন, বেলা বাড়ার সাথে সাথে শরীর একটু সুস্থ লাগে। দিনের বেলা তিন জনের রান্না তিনিই করেন। সাথে সাহায্য করে রাসেল।
চাচার সাথে কথা হল, বাড়িটার ব্যাপারে। তিনি লোক পাঠিয়েছিলেন। যার কাছে বিক্রি করবে বাড়ি তার নাম সোহরাব উদ্দিন। সোহরাব উদ্দিন নাকি বলেছেন, কাল পরশুর মধ্যে যে কোন সময় চলে যেতে মৃন্ময়কে। তিনি নাকি একবার দেখেছেন এ বাড়ি। কিনতে রাজি আছেন। শুধু গিয়ে কথা বার্তা বলে আসতে হবে। তিনিই আসতেন, কিন্তু মৃন্ময়কে নাকি একদিন দাওয়াত খাওয়াতে চান তার বাসায়। মৃন্ময় বলল চাচাকে যাবে দু এক দিনের মধ্যেই।
চাচার বাড়ি থেকে এসেই মোবাইলটা বের করল। স্নেহা আর মৃন্ময় দুজনেরই মোবাইল আছে। তবে স্নেহার মোবাইলে এখানে আসার পর থেকে নেটওয়ার্ক নেই। কল লিস্ট ওপেন করে কল করল, স্নিগ্ধা কে। অনেক দিন হল কথা হয় না স্নিগ্ধার সাথে। স্নিগ্ধা আর স্নেহাকে পাশাপাশি রাখলে কেউ আলাদা করতে পারবে না হুট করে। কিন্তু ঠিক আলাদা করতে পারে এখন মৃন্ময়। জমজ বোন হলে চেহারায় মিল থাকে এতো। স্নেহা আর স্নিগ্ধা জমজ না। স্নিগ্ধা স্নেহার চেয়ে ছয় বছরের ছোট। বিয়ে হয় নি এখনও। স্নেহার বিয়ে বরং খুব দ্রুত হয়ে গিয়েছিল। পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ কম থাকাতেই হয়ত। এ দিক দিয়ে আলাদা স্নিগ্ধা। পড়াশুনায় বরাবর ভাল। ডাক্তারিতে চান্স পেল, এম বি বি এস পাশ করেছে এবার। ইন্টার্র্নিতেও ঢুকবে কয়েক দিনের মধ্যে।
- হ্যালো স্নিগ্ধা?
- হ্যাঁ, দুলাভাই ভাইয়া। কেমন আছেন?
স্নিগ্ধা মৃন্ময়কে দুলাভাই ভাইয়া ডাকে। এই ডাকের পিছনে কারণ জানে না মৃন্ময়। বলেও নি স্নিগ্ধা।
- এইতো যাচ্ছে চলে। তোমার কি অবস্থা?
- আমারও যায়।
- অনেক দিন হয় দেখিনা তোমাকে, কথাও হয় না।
স্নিগ্ধা কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল, আমার তো আপনাদের দেখতে ইচ্ছা করেই, আপুকে, নৃকে। কিন্তু শেষ বার আপু যে একটা ব্যবহার করল।
- আরে পাগলী মেয়ে, সব কিছু ধরে বসে থাকলে হয়? তোমার আপুও পরে বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা ভুল হয়েছে। কিন্তু জানই তো তোমার আপুর ইগো একটু বেশী। নিজের ভুল বুঝেও তবুও তোমার সাথে কথা বলে নি।
- হ্যাঁ, বুঝলাম।
- স্নিগ্ধা, এক কাজ কর না।
- কি কাজ?
- তুমি এখন ফ্রি তো?
- হ্যাঁ।
- চলে আসো না, ক্লান্তিপুর। আমাদের এখানে।
- না দুলাভাই ভাইয়া, কিভাবে?
- কিভাবে মানে? ট্রেনে করে চলে আসবে।
- না দুলাভাই ভাইয়া। আপু না বললে আমি ওর সামনে যাব না। আর ওখানে গিয়ে আমি কি করব?
শেষ বার স্নিগ্ধা যখন গিয়েছিল মৃন্ময়দের বাসায়, বশির স্যার কেন আসে এ বাসায় তা নিয়ে বিশাল ঝগড়া স্নেহার সাথে। তাও আড়াই বছর আগে হবে। সেদিন স্নেহা রাগ করে বলে স্নিগ্ধাকে, আমার বাসায় কে আসবে সেটা আমি জানব? তুই বলার কে? তুই আর আসবি না আমাদের বাসায়, আর যেন তোকে না দেখি। বের হ, যা।
স্নিগ্ধা সেদিন চলে যায়। আসে না আর কখনও। স্নেহা পরদিন রাতেই মৃন্ময়ের হাত বুকের উপর মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। মৃন্ময় মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, কি হয়েছে?
- কিছু না।
- বল আমাকে।
- কিছু না।
- স্নিগ্ধার সাথে খারাপ ব্যবহার করে খারাপ লাগছে?
স্নেহা চুপ করে আরও কিছুক্ষণ কেঁদে ,আস্তে করে মাথা নাড়ে।
- কল দাও। কথা বল। তোমার বোনই তো। জানো, রাগ করে থাকতে পারবে না। রাগ কেন কর?
- না আমি কল দিব না।
- কেন?
- এমনি।
- তাহলে কি করবে? কাঁদবে?
- হ্যাঁ।
- আমি কল দেই?
- না তুমিও দিবে না। ও নিজে থেকে আসলে আসবে, না আসলে নাই। আমার খারাপ লাগছে, ওর লাগলে ও ঠিকই আসবে।
স্নিগ্ধার খারাপ লেগেছে, তবুও আসেনি আর কখনও। স্নেহা অনেক বার বলেছে, মৃন্ময়কে, দেখলে আমার বোনটার আমার জন্য কখনই খারাপ লাগে না। লাগলে অন্তত কথা বলত ফোন দিয়ে। বড় বোন রাগ করলেই ছোটটার এমন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে হবে?
সে ঝগড়া মিটেনি দুজনের এখনও। মৃন্ময়ের সাথে মাঝে মাঝে যা কথা হত, তবুও কখনও স্নেহার সাথে বলে নি। স্নেহাও রাগ করে আর এই আড়াই বছরে যায় নি বাপের বাড়ি। এখন স্নিগ্ধাকে বড় দরকার মৃন্ময়ের। সত্যি বড় দরকার। মৃন্ময় স্নিগ্ধাকে বলল, দেখো দুজনেই যদি রাগ জমিয়ে রাখো সে ঝগড়া কখনই মিটবে না।
- কি ছোট একটা বিষয় নিয়ে তোমরা এমন রেগে আছ। তার চেয়ে বরং এখানে চলে আসো, আপুকে চমকে দিবে। ঝগড়াও মিটে গেল, তোমার আপুও খুশি হল, ভাল লাগল আমারও। আর তোমার আপু, আমাদের ঢাকার বাসায় যেতে না করেছে, এখানে আসতে মানা নেই।
- আচ্ছা , আমি বাসায় কথা বলি। মায়ের সাথে কথা বলে দেখি।
- মা কে বলবে, শুধু ট্রেনে তুলে দিতে। লোক পাঠিয়ে তোমাকে ট্রেন স্টেশন থেকে নিয়ে আসা হবে। ভয় পেও না।
- আচ্ছা, আমি জানাব।
- জানাব টানাব না। আসতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি একটু একদিনের জন্য পাশের গ্রামে থাকতে পারি। সে সময়টা তুমি তোমার আপুর সাথে থাকলে। একা একা এ বাড়িটায় ও থাকতে ভয় পাবে।
- আচ্ছা দুলাভাই ভাইয়া, আসব।
মৃন্ময়ের একটু স্বস্তি লাগছে। মনটাও লাগছে শান্ত।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসেই মৃন্ময় বলল, স্নেহা, আমি একটু পাশের গ্রামে যেতে পারি।
- কেন?
- এই বাড়ির ব্যাপারে কথা বার্তা বলতে। যার কাছে বাড়ি বিক্রি করব, তিনি আবার দাওয়াত দিলেন। তার সেখান থেকে আসতে রাত হতে পারে বা একদিন থাকাও লাগতে পারে।
- কবে যাবে?
- দেখি কাল হতে পারে।
- আচ্ছা, রাত করো না প্লিজ। আমার ভয় লাগবে একা।
- তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
- কি?
- বলে দিলে আর সারপ্রাইজ থাকল? বশির স্যার কোথায়? নৃ কি বশির স্যার এর সাথেই?
- হ্যাঁ, ঘরে। কি যেন করছেন।
- চল আজ আমরা গ্রামটা ঘুরে আসি। নৃ কে রেডি কর, বশির স্যার কেও বল। তাকে ছাড়া তো যাবে না নৃ।
- আচ্ছা।

স্নেহা মিষ্টি করে একটা হাসি দিল। মৃন্ময় এদিক ওদিক তাকিয়ে, স্নেহার গলার কাছে ঠোঁট ছোঁয়াল একবার। স্নেহা সরিয়ে দিয়ে বলল, ইশ এখানে এসব, না?
মৃন্ময় হাসি দিল একটা। হাসল স্নেহাও।


দিনটা বেশ ভাল গেল। সারাদিন গ্রামটা ঘুরে দেখা হল। স্নেহার মনটাও অনেক ভাল হয়ে গিয়েছে। নৃ বশির স্যার এর কোলে বসে একের পর এক প্রশ্ন করল, এটা কি? ওটা কি?
তবে সে প্রশ্ন গুলো স্নেহা মৃন্ময় কেউ ই শুনল না। বশির স্যার এর কানের কাছে গিয়ে গিয়ে বলছে এসব। মৃন্ময় এতো কিছুর মাঝেও একটু একটু বিরক্ত হচ্ছে বশির স্যার এর জন্য। তবুও নৃর মুখে আলতো হাসি দেখে সে কষ্টটা কোন কষ্ট বলেই লাগল না। মৃন্ময়ের মাঝে মাঝেই মনে হয়, একটা লোক এতোটা কাজ ছাড়া থাকে কি করে? বশির স্যার কে বেশীর ভাগ সময়ই দেখা যায় নৃ র সাথে। ছোট বেলা স্নেহা কে গান শেখাত। শেখাত আরও কয়েক জনকে, সেখান থেকে উপার্জন হত। এখন সে কিছুই করে না।
স্নেহাকে একদিন এই কথা জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল, তুমি জানো, স্যার এর কত টাকা পয়সা? বাবা বিশাল বড় লোক তার। তিনি করেন না তাতে কি? বাবার টাকা আছে। আর তিনি গান শেখান সখে, টাকার জন্য না।
বাড়িটায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করল এনায়েত চাচার বাড়িতে। চাচী রান্না করলেন, করল সাথে স্নেহাও। স্নেহাকে খুব পছন্দও করেছেন। তবে একবার নৃ কে কোলে নিতে গিয়েছিলেন, নৃ এমন এক চিৎকার দিল, কোলে না যাবার জন্য। বেশ ভয় ই পেলেন। এতো বড় মেয়ে কোলে নেবারও বা কি দরকার ছিল? আর নৃ তো এমনি আগেই বলা উচিৎ ছিল। বাহির থেকে এসেই বশির স্যার বললেন, বড় মাথা ধরেছে। আমি বিশ্রাম নিব ।
এসেই ঘরে চলে গেলেন। রাতে খেয়েও নিল না। খাবার সময় একবার ডাকল স্নেহা, আসলেন না। কিন্তু নৃ আজ বশির স্যার কে ছাড়াই খেল, চুপচাপ। ব্যাপারটা একটু অবাক করার মত। খেয়ে উঠেই চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে যাবে হয়ত নৃও।
ঘুমাতে যাবার প্রস্তুতি চলছিল, স্নেহা আর মৃন্ময়েরও। মৃন্ময়েরও বড় ক্লান্ত লাগছে। স্নেহা দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে, মৃন্ময়ের পাশে এসে শুয়ে পড়ল।
- কি সারপ্রাইজ বললে না?
- হ্যাঁ পাবে তো। একটু অপেক্ষা করতেই হয়, তাই না?
- হুম। এই।
- বল।
স্নেহা চুপ করে রইল। মৃন্ময় আবার জিজ্ঞেস করল, বল।
স্নেহা বাতিটা নিভিয়ে কামিজটা খুলে এসে মৃন্ময়কে জড়িয়ে ধরল। মৃন্ময় হাত বুলাল স্নেহার পিঠে। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে রইল অনেকটা সময়। স্নেহার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।
মৃন্ময় বলল, কি?
- বেশ গরম পড়েছে। এই গরমে এতো অন্ধকারে এতো কাপড়ের দরকার নেই।
বলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে মৃন্ময়কে। এর পরের সময়টা শুধু দুজনের। অনেক বেশী কাছাকাছি থাকা দুজনের। এখানে দুজনের মাঝের সব দূরত্ব গুলো ভালবাসায় সরে যাচ্ছে, অনেক দূরে।
কখন ঘুমিয়ে গেল মৃন্ময় জানে না স্নেহা। আকাশে মেঘ ডাকছে। বৃষ্টি হতে পারে। স্নেহার ঘুম পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আজ সারাটা রাত মৃন্ময়ের আদরে কাটাতে। কিন্তু সারাদিনের এতো কিছুতে মৃন্ময় ক্লান্ত। বড় দ্রুত ঘুমিয়ে গেল। স্নেহা কাপড় গায়ে জড়িয়ে উঠে বসল। হঠাৎ করেই সব নীরব। মনে হল, হুট করেই মেঘের ডাক বন্ধ, বন্ধ হয়ে গেছে বাতাসের চলাচল। শুধু শব্দ হচ্ছে চার্জার ফ্যানটার। গতদিনের ফ্যানের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এনায়েত চাচা লোক পাঠিয়ে সে ফ্যান নিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে অন্য একটা। স্নেহার গা কেন যেন শিরশির করছে। হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগছে। ফ্যানটা বন্ধ করে দিল। চারপাশ এখন একদম নীরব। বড় নিশ্চুপ। ঠক করে একটা আওয়াজ হল। স্নেহা চমকে উঠে আবার কান পাতল। আবার একই রকম আওয়াজ। নিচ তলা থেকে আওয়াজ আসছে। বশির স্যার উঠে গেলেন নাকি? হতেই পারে। কিন্তু স্নেহার কেন যেন ভয় করছে। মৃন্ময়কে ডাক দিবে? না দেয়াই উচিৎ। মৃন্ময় বড় ক্লান্ত। স্নেহা আস্তে করে উঠে, দরজাটা খুলল। ধীরে ধীরে বাহিরে এসে দাঁড়াল। কেউ একজন নিচ তলায় আছে। হতে পারে বশির স্যার। বশির স্যার বলে ডাক দিবে? স্নেহা মাথা উঁচু করে তাকাল। স্নেহার হাত পা জমে গেল, কালো একটা চাঁদর মুড়ানো শরীরে কেউ একজন সিঁড়ির উপর এসে উঠেছে। শুধু চোখ গুলো দেখা যাচ্ছে অন্ধকারে। স্নেহার দিকে তাকাল। স্নেহার কি চিৎকার দেয়া উচিৎ? একবার ভাবল চিৎকার করবে। কিন্তু মনে হল গলার কাছ দিয়ে কেউ একজন টিপে ধরে রেখেছে। স্নেহার বুকের ভিতর ধক ধক করছে, হাত পায়ের শক্তি সব কমে আসছে। লোকটা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। স্নেহা কোনমতে হামাগুড়ি দিয়ে ঘরে গেল দ্রুত। মৃন্ময়কে ধাক্কা দিল। মৃন্ময় উঠল না। স্নেহার মনে হচ্ছে, সিঁড়ি বেয়ে সেই লোকটা এসে উঠছে। স্নেহা মৃন্ময়ের হাত ধরে জোরে টান দিতে মৃন্ময়ের ঘুম ভেঙে গেল। উঠে বসল। বসে জ্বালাল আলো। স্নেহার চোখ মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। স্নেহাকে ধরে বলল, কি হয়েছে? স্নেহা, এই স্নেহা, কি হয়েছে?স্নেহা হাত দিয়ে বাহির দিকে দেখাল। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না। শুধু হাঁপিয়ে যাচ্ছে স্নেহা। টেবিলের উপর রাখা পানি নিয়ে স্নেহার দিকে এগিয়ে দিল মৃন্ময়। স্নেহা ঢক ঢক করে সে পানি খেয়ে নিল। একটু শান্ত হয়ে স্নেহা বলল, বাহিরে কে যেন। মৃন্ময় তুমি দেখ বাহিরে কে।
- বাহিরে কে থাকবে? তুমি কি দেখেছ? আসো আমার সাথে।
স্নেহা বেরিয়ে আসল ভয়ে ভয়ে মৃন্ময়ের সাথে। লুকিয়ে রইল পিছন দিকে। মৃন্ময় ঘরের সামনের লাইটটা সব দিকে ধরে ধরে দেখল। কেউ নেই।
- দেখো তুমি কেউ নেই। ভয় পেয়েছ তুমি। কে থাকবে? তুমি ভেবে নিয়েছ বাড়িটা ভয়ের তাই এসব ভাবছ। আসো, পাগলী মেয়ে।
- না সত্যি আমি দেখেছি মৃন্ময়। তুমি বিশ্বাস কর। সত্যি। মুখে কালো চাঁদর পেঁচানো লোকটা।
- তাহলে যাবে কোথায় বল?
- মৃন্ময়, সে না তো?
- কে?- তোমার বাবা, চাচাদের যে মেরেছে, তোমার দাদাকে যে মেরেছেন।
- আরে ওসব কোন শত্রুর কাজ হবে। আমার সাথে কারও শত্রুতা আছে বল?
- মৃন্ময় এটা কি ভূতের কাজ?
- তুমি কি পাগল? তুমি শিক্ষিত একটা মেয়ে, তাও ভূত প্রেতের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে বসে আছ।
- আমার ভয় করছে মৃন্ময়।
- আমি আছি সাথে স্নেহা। আসো আমরা ঘুমাই।
মৃন্ময় স্নেহাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকে চমকে উঠল। বিছানায় নৃ নেই। স্নেহা নৃ বলে ডাক দিল। এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। খুঁজতে লাগল মৃন্ময়ও। ঘরে নেই কোথাও। স্নেহা মৃন্ময়ের হাত ধরে কান্না কান্না গলায় বলল, মৃন্ময়।
মৃন্ময় আলতো করে হাত বুলাল মাথায়। স্নেহাকে নিয়ে বাহিরে আসল। মৃন্ময় নেমে আসল নিচে। স্নেহা চলে গেল বারান্দায়। নৃ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। একদম কোণায়। তাকিয়ে আছে বাহির দিকে। স্নেহা এসে কাঁদতে কাঁদতে কোলে তুলে নিল নৃ কে। নৃ এখনও তাকিয়ে বাহির দিকে। স্নেহাও তাকাল সেদিকে। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছু। তবুও মনে হল, স্নেহার কেউ একজন হেঁটে চলে যাচ্ছে বাড়ির সামনে দিয়ে।
স্নেহা নৃকে বলল, মামনি তুমি এখানে কেন? কখন এসেছ?
নৃ জবাব দেয়া না কোন। মৃন্ময়ের সাথে উপরে আসলেন, বশির স্যার। নৃ কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মৃন্ময় কাছে আসাতে স্নেহা বলে, বারান্দায় ছিল।
- কখন গেল?
- বলে না নৃ।
বশির স্যার নৃ র কাছে জানতে চাইল, নৃ তুমি ওখানে গিয়েছিলে কেন? কখন গেলে?
নৃ বশির স্যার এর কানের কাছে গিয়ে বলল, মামনি যখন আব্বুর সাথে দাঁড়িয়ে ছিল ঘরের সামনে তখন। আব্বু আর মামনি যাকে খুঁজছিল। আমিও তাকে খুঁজছিলাম।
বশির স্যার অবাক হয়ে জানতে চান, তুমি কি তাকে পেয়েছ?
নৃ আস্তে করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
বশির স্যার বললেন, স্নেহা তুই কাকে দেখেছিস?
স্নেহা বলল সব। বশির স্যার তাকালেন প্রধান দরজার দিকে। সে দরজা খোলা।
- আজ দরজা লাগাস কি, তাই না?
- মনে নেই।
- চোর টোর হতে পারে। যা ঘুমা।
- চোর আমাদের এখানে কি চুরি করতে আসবে?
- চোর ছেঁড়া জুতা পেলেও চুরি করে। যা ঘুমা। এসব নিয়ে বাজে চিন্তা করিস না।
চলে আসল স্নেহা, নৃ কে কোলে নিয়ে। মৃন্ময় বসে রইল বারন্দায়। ঘুমাল না স্নেহা, ওখানে বসেই কাটিয়ে দিল মৃন্ময়। জেগে রইলেন বশির স্যারও। তার অনেক কাজ বাকি। কাজ গুলো করতে হবে।
মৃন্ময় একবার ভাবল স্নিগ্ধাকে কল দিবে। এতো রাতে নিশ্চয় জেগে নেই। ঘুমিয়ে গেছে। ডাক্তার মেয়ে, ঘুমের ব্যাপারে সচেতন হবেই। কিন্তু স্নিগ্ধাকে দরকার। জরুরী ভিত্তিতে দরকার। এখানে বেশীদিন থাকা যাবে না। এখানে থাকতেই সব কিছুর সমাধান হওয়াই ভাল। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই হ্যালো বলল স্নিগ্ধা।
- ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?
- না দুলাভাই, ভাইয়া। কি হয়েছে? সব ঠিক আছে?
- হ্যাঁ, ঠিক থাকবে না কেন? কি করছিলে?
- শুয়েই ছিলাম। গান শুনছিলাম এয়ার ফোনে। আমার ফুল ভলিউমে গান শুনতে শুনতে না ঘুমালে হয় না। এতো ভলিউমে শুনি, আশেপাশে কি হয় কিছুই টের পাই না। গান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বুঝলাম কেউ একজন কল দিয়েছে।
- ডাক্তার হয়ে এসব?
- ডাক্তার হলেই করা যাবে না? ডাক্তাররা মানুষকে বলবে, তাই বলে এই না, নিজেও তা করবে।
শুকনো করে হাসল মৃন্ময়।
- আচ্ছা।
- দুলাভাই, ভাইয়া। কি হইছে বলা যাবে?
- আসলে আজ রাতে তোমার আপু ভয় পেল কাউকে দেখে এখানে। সে বলছে ভূত, বশির স্যার বলছেন চোর। নৃও ঘুম ভেঙে উঠে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল, সেও নাকি দেখেছে তাকে। মাঝে মাঝে বড় পাগল পাগল লাগে নিজেকে। ভাল লাগে না।
- কাকে দেখছে? আমার মনে হয় এসব বশিরের কাজ।
- না স্নিগ্ধা।
তুমি চলে আসো না, কাল সকালের ট্রেনে আসতে পারবে না? একটু কষ্ট করে দেখো না।
- সকালে? আমি দেখি। ট্রেনের টিকেট পাওয়াটাও ব্যাপার।
- তুমি একটু দেখো, এখন বিশেষ কোন সময় না। ট্রেনে ভিড় কম। পাবে তুমি। মা কে বলেছ?
- হ্যাঁ, মা রাজী। আমি আপনাকে কাল জানাব।
- আচ্ছা। স্নিগ্ধা?
- বলেন, দুলাভাই ভাইয়া।
- তুমি এক ছেলের গল্প করতে না? তুমি পছন্দ করতে।
স্নিগ্ধা মনে হয় লজ্জা পেল। চুপ করে রইল। মৃন্ময় বলতে লাগল, আরে অন্য কোন ব্যাপার না। তুমি বলেছিলে সে অনেক ব্যাপারে জানে। তার সাথে একবার যোগাযোগ কর না, নৃর ব্যাপারে।
- রাদিব ভাইয়াকে তো পাওয়াই যায় না। কই কই ঘুরে। তাও আমি চেষ্টা করব।

মৃন্ময় কথা বলা শেষেও বসে রইল অনেকটা সময়। মাঝে একবার স্নেহা দেখে গেল মৃন্ময়কে। স্নেহার খারাপ লাগছে খুব। প্রচণ্ড খারাপ। স্নেহা ঘরে গিয়ে জানালাটা আবার খুলে বসে রইল। জানালাটায় কোন শিক দেয়া নেই। জানালা খুললে একদম ফাঁকা। কি অদ্ভুত জানালা। স্নেহা হাত বাড়িয়ে আবার ধরল গাছের পাতা, হাতে ফুটে গেল কাঁটা আবার। রক্ত বের হল একটু। সে রক্তের দিকে নিঃস্পৃহ চোখে তাকিয়ে রইল স্নেহা। এ রক্ত যেন কিছুই নয়। বুকের ভিতর এর চেয়েও বেশী হচ্ছে রক্তক্ষরণ।এনায়েত চাচার সাথে কথা হল। রওয়ানা দিবে একটু পরেই মৃন্ময়। সকাল সকাল গেলে চলে আসতে পারবে দ্রুত।

- রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

(পরবর্তী পর্ব আগামীকাল )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.