নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারঃ টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (ষষ্ঠ পর্ব)

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৬



প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব

১১
বাড়িটায় আসার পর সকাল বেলা, এমন একটা ঘটনা শুনবার জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না রাদিব। এক রাতের মধ্যে এসব হল কী করে? এখন মনে হচ্ছে কাল রাতে এনায়েত চাচার বাড়িতে না থেকে এখানটায় থাকাটাই বোধহয় উচিৎ ছিল। বশির স্যারের মত, স্নেহাকেও পাওয়া যাচ্ছে না সকাল থেকে। রাতের বেলায়ও নাকি একসাথে ঘুমিয়েছে দুজন। সকালে উঠে মৃন্ময় দেখে ঘরে স্নেহা নেই, প্রধান দরজা খোলা। আর কি অদ্ভুত এক ব্যাপার, নৃও সকাল থেকে মায়ের যে ছবিটা দেয়ালে টাঙানো ছিল তার উপর একটা পানি খাবার গ্লাস নিয়ে বসে আছে। সে ছবির উপর গ্লাসটা একবার রাখছে, একবার তুলে নিচ্ছে। ছবিটাও দেয়াল থেকে নিচে পড়ে আছে। মৃন্ময় বিমর্ষ মুখে বসে আছে। আর স্নিগ্ধা পাগলের মত কাঁদছে, স্নেহা আপু, স্নেহা আপু বলে। রাদিব যে পরিবেশ দেখে দিয়েছে গতকাল এখানে, তার পুরোটাই এখন বদলে গেছে। সবটাই আলাদা।, একদম আলাদা। এই খবর পেয়েছেন এনায়েত চাচাও। তিনিও এসেছেন রাসেলকে সাথে নিয়ে। রাসেল বার বার বলছে রাদিবকে, এটা ভূতুড়ে বাড়ি আমি বলছিলাম না? এই বাড়ি থেকে মানুষ এমনেই হারাইয়া যায়।
রাদিব শুধু একবার তাকায় রাসেলের দিকে। তাকিয়ে জানতে চায়, আচ্ছা কাল রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?
প্রশ্নটায় হঠাৎ করে একটু চমকে উঠল রাসেল। একটু আমতা আমতা করে বলল, না মানে। ইয়ে, কই থাকুম? বাজারে আড়তে ছিলাম ভাইজানের।
- আচ্ছা।
রাদিব আবার একবার দেখল রাসেলের দিকে। এই লোকটাকে সন্দেহ করার মত কিছু নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই মৃন্ময় খুব চিন্তিত হয়ে বলল, আচ্ছা রাসেল কি রাতে আপনার সাথে ছিল?
- না। আমাকে মনে হয় ওনার ঘরেই ঘুমাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু উনি ছিলেন না। ওনাকে অন্য কোথাও পাঠিয়েছিলেন ঘুমাতে।
-ওওও।
- এই কথা জিজ্ঞেস করলেন?
মৃন্ময় মাথা চুলকে উদাস দৃষ্টিতে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে বলে, না এমনি। ডাক্তার সাহেব, আমরা আর এখানে থাকব না। চলে যাব অতি দ্রুত।
- আপনারা এখানে এসেছিলেন চারজন। এর মধ্যে দুজন উধাও। আপনি এই অবস্থায় চলে যেতে চাচ্ছেন?
- হ্যাঁ চলে যাব। বাড়িটা আসলেই ভাল না। আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না।
- আপনি এসব বলছেন? এসব বিশ্বাস করেন আপনি?
- না করার কী আছে? চোখের সামনে যা ঘটছে তা অবিশ্বাস করার কোন কারণ তো দেখছি না।
- আপনার চোখের সামনে তো কিছুই ঘটেনি, না আপনার স্ত্রী হারিয়েছে আপনার চোখের সামনে, না বশির স্যার। না হারিয়েছিল আপনার বাবা আর চাচা। কেউ ই আপনার চোখের সামনে হারায় নি।
- আমার চোখের সামনে না হোক। হারিয়েছে তো? আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না।
বলেই মৃন্ময় ঘরের ভিতর চলে যায়। নৃ ঘরে তখনও মায়ের ছবির উপর গ্লাসটা ফেলছে আর তুলছে। বাবা ঘরে আসাতেই যেন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। ছোট একটা চিৎকার দিয়ে, দুই হাঁটুর মাঝখানে মুখ লুকাল। মৃন্ময় যখন কোলে নিতে চাইল, তখনও উঠল না। আরও ভয়ে কুঁচকে গেল। ব্যাপারটা লক্ষ্য করল রাদিব।
রাদিব ঘরের ভিতর যায় নি, দাঁড়িয়েছিল দরজার কাছেই। স্নিগ্ধা ঘরের মধ্যে যেতেই নৃর অন্য এক রূপ। মনে হচ্ছে স্নিগ্ধাকে ঠিক সহ্য করতে পারছে না। রেগে যাচ্ছে। গ্লাসটা দিয়ে একবার মারতেও আসল স্নিগ্ধাকে। ব্যাপার গুলো অস্বাভাবিক। তবুও এই ব্যাপার গুলোর মাঝেই যেন স্বাভাবিক কিছু আছে, জানে রাদিব। নৃর কাছে কেন যেন গেল না রাদিব। মৃন্ময়কে ডেকে বলল, নৃ একা থাকুক। আপনার সাথে কথা বলি কিছুক্ষণ।
মৃন্ময় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে সব গোছগাছ করতে। এখানে আর থাকতেই চাচ্ছে না। তবুও রাদিবের জোরাজুরিতে খাবার টেবিলে বসল কথা বলতে। রাসেল আর এনায়েত চাচা চলে গেছেন। স্নিগ্ধা বসে আছে বারান্দায়। বসে বসে কাঁদছে।
- দেখুন ডাক্তার সাহেব, আসলে পৃথিবীতে অনেক কিছুই থাকে যেসবের ব্যাখ্যা নেই। না ডাক্তারি বিদ্যা পারে তার ব্যাখ্যা দিতে, না পারে বিজ্ঞান। আপনি চাইলেই সব কিছু ঠিক করতে পারবেন না।
রাদিব সে কথা শুনে মিষ্টি করে হাসল। সে হাসি দেখতে বড় অসহ্য লাগে। এই বিপদের মুহূর্তে হাসিটা ঠিক সহ্য করার মত না। রাদিব আস্তে করে বলে, আমরা যদি ঠিক করার চেষ্টা না করেই ভেবে নেই, ঠিক হবে না, তাহলে আসলেই কখনও কিছু ঠিক হয় না। আপনি শান্ত হয়ে বসুন, আমার সাথে স্থির হয়ে কথা বলুন। আপনি বলবেন, আমি শুনব সবটা। আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি বা না পারি, শুনতে তো সমস্যা নেই।
- শুনালে শুধু শুধু কষ্ট বাড়বে আমার, আর কিছুই না।
- তবুও আপনি বলুন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মৃন্ময়। চেহারায় একটা ক্লান্ত ছাপ। মৃন্ময় বলল, আপনি করুন বা না করুন, এই বাড়িটা ভাল না। এটা হল প্রধান কথা। আমার দাদা এখান থেকে হারিয়ে গেলেন, হারিয়ে গেলেন বাবা, দুই চাচা, তাদের সবার হারিয়ে যাবার সাথেই একটা করে চিরকুট পাওয়া গেল, মারা গেছেন তারা এটা লেখা।
- আমি এটা জানি। আপনি চিরকুটটা দেখেছেন?
- হ্যাঁ, আমার কাছে বাবা আর ছোট চাচা মারা যাবার সময়কার চিরকুট আছে। মা দিয়েছিলেন।
- আমাকে দেখাতে পারবেন?
মৃন্ময় উঠে দাঁড়াল। খানিক পরেই ফিরে আসল একটা ছোট পলিব্যাগ নিয়ে। ভিতর থেকে বের করল দুইটা কাগজ। এর মধ্যে একটাতে লেখা, মৃত্যুটা রহস্য জনক।
এই চিরকুটই পাওয়া গিয়েছিল, মারা যাবার সময় মৃন্ময়ের চাচা আর বাবা।
রাদিব হাতে নিয়ে দেখল সেটা। দেখে আবার দেখে দিল টেবিলের উপর।
- আপনার মনে হয় এটা ভূত প্রেতের কাজ?
মৃন্ময় মাথা নিচু করে আস্তে করে বলল, অবিশ্বাস করার তো নেই কিছু।
- ভূত প্রেত লিখতে পারেন এটাও আপনি বিশ্বাস করে বসে আছেন?
- আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এসব ঘটছে আশেপাশে, অবিশ্বাস করি কী করে?
বলে যায় মৃন্ময়, ঠিক একই ভাবে হারিয়ে গেল বশির স্যার হুট করে, আর এখন স্নেহা।
- কোন চিরকুট পাওয়া গেছে?
মৃন্ময় মাথা উঁচু করে তাকাল রাদিবের দিকে। রাদিব প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষা করছে।
- না যায় নি।
- তাহলে আপনি এই দুই বিষয়কে এক করছেন কী করে? বশির স্যার কোথায় গেছে যতটা সম্ভব আপনার স্ত্রী জানতেন। আর আপনিই বললেন, স্নেহা আপুকে খুঁজে না পাওয়ার সময় থেকে দরজা খোলা। মানে তিনি নিজে থেকেই কোথাও যেতে পারেন।
- স্নেহা আমাকে না বলে কোথাও যাবে না। আমি জানি। এ বাড়িতে আরও অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে, আপনি কেন বুঝতে পারছেন না?

উপর থেকে চিৎকারের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মৃন্ময় উঠে গেল, পিছন পিছন আসল রাদিব। স্নিগ্ধা গিয়েছিল নৃর কাছে। নৃ চিৎকার জুড়ে দিয়েছিল তাতেই। স্নিগ্ধা আবার ঘরের ভিতর যেতেই, নৃ গ্লাস নিয়ে দৌড়ে আসছে স্নিগ্ধার দিকে। আর বলছে, তুই মারলি কেন? তুই মারলি কেন?
রাদিব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা তাকায় অসহায় মুখ করে সবার দিকে। রাদিব ঘরের ভিতর ঢুকতেই নৃ চুপ। রাদিব জানতে চায়, কাকে মারল?
নৃ বোকা বোকা চোখে তাকায়। উত্তর দেয় না কোন। যেন মনে করতে চাচ্ছে কিছু। সে কিছুটা মনে পড়ছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থেকে কিছুটা সময় আবার বসে পড়ে মায়ের ছবিটার উপর।
গ্লাসটা হাতে নিয়ে বসে থাকে। রাদিব বলাতেই বেরিয়ে আসে সবাই ঘর থেকে। রাদিব আবার বসে মৃন্ময়ের সাথে। এবার বারান্দায়। মৃন্ময় বলে যায়, অস্বাভাবিক সব ঘটনা ঘটছে এখানে আসার পর থেকেই। স্নেহা ভয় পাচ্ছিল, প্রথম প্রথম আমিই সাহস দিয়েছিলাম। কিন্তু স্নেহার ভয়টাই সত্যি ছিল। প্রথম দিন দুই বার গ্লাস ভাঙার শব্দ পেল স্নেহা। নিচে এসে দেখে গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে, আশেপাশে কেউ নেই। স্নেহার সেদিনই সন্দেহ হয়। একই কাজ এরপর আরেক দিন। গ্লাস ভাঙার কাজটা এবার করে রাসেল। স্নেহা এই রাসেল লোকটাকে বড্ড ভয় পেত।
- আমি তো ওনাকে ভয় পাবার দেখি না কিছু। বেশ সহজ সরল একটা মানুষ।
- আমারও প্রথম দিকে তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু সেদিন গভীর রাতে স্নেহা কাউকে দেখে আমাদের বাড়ির সিঁড়িতে। দেখে ভয়ে চিৎকার করে। আমি এসে খুঁজে পাই না কাউকে। রাসেল শরীরে একটা আতর ব্যবহার করে। আমি প্রথম দিকে খেয়াল করি নি। খেয়াল করি পরে। সে আতরের ঘ্রাণটা সেদিন পেয়েছিল স্নেহা।
রাদিব একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।
- ব্যাপারটা মনের ভুল হতে পারে না?
মৃন্ময় বারান্দা থেকে বাহিরে তাকিয়ে রইল অল্প কিছুটা সময়। সেদিকে তাকিয়েই বলল, একই সাথে দুটি মানুষের ভুল হতে পারে না।
- মানে?
- আমার সাথেও একটা ঘটনায় আমিও একই ঘ্রাণ পেয়েছি। যদিও সে ঘটনার কথা আমি কাউকেই বলি নি।
রাদিব তাকিয়ে রইল মনোযোগ নিয়ে মৃন্ময়ের দিকে। মৃন্ময় বলে যায়, সেই বৃষ্টি দিনে সোহরাব উদ্দিনের বাড়িতে যাবার পথের ঘটনা, ভ্যান চালকটার পথের মাঝে রহস্যজনক ভাবে ভ্যান থামাবার কথা, সোহরাব উদ্দিনের বাসায় খুব করে রাখতে চাইবার ঘটনা, ফিরে আসার সময় যে ঘটনা ঘটল সে কথা, কেউ একজন বাঁচাল সে কথা। তখন একই ঘ্রাণ পেল সেই কথাও। মৃন্ময় শেষ মুহূর্তে খুব শান্ত গলায় বলল, আমি যে সময়টায় এই ঘ্রাণটা পাই, তখন আমি রাস্তায়। রাস্তা অর্ধেক বাকি। সন্ধ্যা পেরিয়েছে তখন। সন্ধ্যার পর দিকেই একই ঘ্রাণ স্নেহাও পায় ওর ঘরের ঠিক বাহিরে।
কিন্তু মৃন্ময় জানে না, কি করে এটা সম্ভব। রাদিবের দিকে তাকিয়ে বলল, রাসেল লোকটা আসলেই রহস্য জনক।
- আচ্ছা আমি ওনার সাথে কথা বলব। আপনি বলে যান, আপনার কাছে আর কী কী অস্বাভাবিক লেগেছে?
মৃন্ময় রাদিবের দিকে চুপচাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, চলেন নিচে বসি।
নিচে নেমে আসল রাদিব মৃন্ময়ের সাথে। এসে বসল আবার খাবার টেবিলটায়।
- ডাক্তার সাহেব, আমার জীবনের অনেক বড় একটা ভুল ছিল, বশির লোকটাকে আমার বাসায় আসা যাওয়া করার অনুমতি দেয়া। আমি জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না, বিশ্বাস করতাম না আমিও। তবুও পরিস্থিতি আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে, বশির লোকটা কালো যাদুর চর্চা করত। এই জিনিসটা খুব খারাপ। মানুষের মৃত আত্মাকে কাজে লাগিয়ে অন্য মানুষের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করা, নিজের কাজ আদায় করা, এসবই এর কাজ।
রাদিব চোখ বন্ধ করে মুখে একটা অদ্ভুত ভঙ্গিমা করল, এর মানে রাদিব কথাটা শুনে হতাশ হয়েছে। প্রচণ্ড রকম হতাশ। তবুও শুনে যাচ্ছে মৃন্ময়ের কথা। সবটা শোনা জরুরী।
- স্নেহা বশির লোকটাকে অনেক পছন্দ করত, সে পছন্দ করার পিছনে কোন কারণ ছিল না। কারণ ছিল কালো যাদু। কালো যাদু দিয়ে বশ করেছিল স্নেহাকে।
রাদিবকে নিয়ে বশির স্যারের ঘরে আসল মৃন্ময়। ঘরের নানা জায়গা থেকে নানা রকম পুতুল, সুতা, ছোট ছোট হাড় মানুষের, স্নেহা, নৃ, মৃন্ময়, মৃন্ময়ের মায়ের ছবি দেখাল। দেখিয়ে দেখিয়েই বলল, বশির লোকটা এতোটা মারাত্মক, সে আমার মাকে পর্যন্ত কালো যাদু করেছিল। আমার মা শেষ দিকে বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। একা একা কথা বলতেন কার সাথে। কীসের একটা গন্ধ পাচ্ছেন বলতেন। এখন জানি আমি সেটা কীসের গন্ধ ছিল।
- কীসের গন্ধ?
- সেটা রাসেলের শরীরে আতরের যে গন্ধ আসে সে গন্ধ।
- আপনি এমন উদ্ভট কথা বলছেন কেন? আপনার মা কী করে রাসেলের শরীরের আতরের গন্ধ পাবে?
- আমার মনে হয় আমাদের বাড়িতে যত কিছু রহস্য জনক ঘটনা ঘটছে তার পিছনে রাসেল আছে। যদি রাসেল না থাকে তবে আমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, সবাই যা বিশ্বাস করে, বাড়িটা ভূতুড়ে।
- আমি রাসেল লোকটার সাথে কথা বলেছি কাল অনেক। আমি কিন্তু তাকে সন্দেহ করার মত দেখি না কিছু। এটা আপনাদের সাধারণ একটা অনুমান ছাড়া আর কিছুই না।
-মানুষকে এতো সহজে চেনা যায়? সে ছোট বেলা থেকে চিনতে পারে নি বশিরকে স্নেহা। আর আপনি এক দিনে চিনতে চাচ্ছেন? হাহ।
রাদিব চোখ ছোট ছোট করে তাকাল মৃন্ময়ের দিকে। মৃন্ময়ের চেহারা বদলে গেছে কথাটা বলার সময়। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ করতে পারল না। কিংবা ইচ্ছা করেই বলল না। মৃন্ময়ের চোখে মুখে একটা করুণ ভাব চলে এসেছে। রাদিব মৃন্ময়ের দিকে ঝুঁকে বলল, আপনি কি কিছু লুকাচ্ছেন?
করুণ হয়ে থাকা চোখ গুলো নিয়েই বলল, কী লুকাব? আপনি যা যা জানতে চাচ্ছেন তার সবটুকু বলেছি। যা যা ঘটেছে, আমি যা জানি তার সবটাই বলেছি। বিশ্বাস অবিশ্বাস বা আপনার কাছে কোন যুক্তি থাকলে আপনি দিবেন।
রাদিব আবার হাসল।
- আচ্ছা আপনি বলেন। আমি এখানে যে কারণে এসেছি, সেই কথা বলেন। নৃর কথা।
মৃন্ময়ের চোখে জল টলমল করছে। ছেলে বলেই হয়ত অনেক কষ্টে তা আটকে রাখতে পেরেছে।
- আমি আমার মেয়েটাকে বড় ভালবাসি। এই মেয়েটার জন্য আমি করতে পারি সব। কিন্তু জানেন, মেয়েটা কখনও আমার সাথে কথা বলে না। কখনও বাবা বলে ডাকে না। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসেও না। আমার বড় কষ্ট হয়, যখন দেখি আশেপাশে সব নৃর সমবয়সী ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করে আর নৃ চুপচাপ বসে থাকে ঘরের কোণে। বাচ্চারা নানা কিছু খাবার আবদার করে। নৃ কখনই তা করে না। নৃ সাবান খায়, কাঠ খায়। নৃর প্রিয় খাবার রঙ। এসব কিছুও বশিরের কাজ। বশির আমার মেয়েটাকেও কালো যাদু করে নিজের বশে নিয়ে গিয়েছে। নৃ ছোট বেলা থেকে শুধু বশিরের সাথেই কথা বলে। বশিরের কথাই শুনে। বশির সাথে সাথে থাকলেই হাসি হাসি থাকে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই শুধু বশিরকে বাসায় আসতে দিতাম। মেয়েটার মাঝে অস্বাভাবিক আরও অনেক কিছু আছে। আমার মা মারা যাবার আগে, কার সাথে যেন কথা বলতেন একা একা। ঠিক একই কাজ করে নৃ। একা একা হাসে, কার সাথে কথা বলে। আমরা সামনে যেতেই চুপ করে থাকে। আর এখন কী অবস্থা দেখতেই পাচ্ছেন।
মৃন্ময়ের চোখের দু পাশ দিয়ে কান ঘেঁষে পানি পড়ছে। বলে যাচ্ছে মেয়েটার কথা। মেয়েটার কথা বলল মৃন্ময় আরও অনেক কিছু। সে অনেক কিছু খুব মনোযোগ নিয়েই শুনল রাদিব। সব শুনে চুপ করে রইল কিছুটা সময় রাদিব। মৃন্ময় রাদিবের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি কোনটার উত্তর পেয়েছেন?
রাদিব মাথা দু দিকে নেড়ে বলল, না।
মৃন্ময় মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এনে বলল, জানতাম পাবেন না। এসবের কোন উত্তর নেই।
- আমি একটু বাহিরে যেতে চাই, এনায়েত চাচা আর রাসেলের সাথে কিছু কথা বলব।
- আচ্ছা যান।
রাদিব বেরিয়ে আসল বাড়িটা থেকে। কিছু কথা বলা দরকার এনায়েত চাচার সাথে, কথা বলা দরকার রাসেলের ব্যাপারে। রাসেল লোকটা কবে থেকে এখানে, কত বছর ধরে কাজ করে। এর আসল কাজটা কী? আরও অনেক গুলো জানার জিনিস।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল, বাড়িটায় আসতে রাদিবের। রাদিব অনেক সময় ছিল এনায়েত চাচার সাথে, ছিল রাসেলের সাথে। হল অনেক কথা। বাকিটা সময় ঘুরে বেরাল, গ্রামের এদিক ওদিক। সন্ধ্যার পর এসেও দেখল ঠিক ওভাবেই মায়ের ছবি নিয়ে বসে আছে নৃ। গ্লাসটা দিয়ে একটু পর পর মায়ের ছবির উপর অনবরত আঘাত করছে। সারাদিনের মধ্যে যতবার মৃন্ময় গিয়েছিল নৃ কাছে, একই রকম ভয় পেয়ে লুকিয়েছিল মুখ। ঠিক তেমনি স্নিগ্ধা যখন গিয়েছিল সামনে একই ভাবে এগিয়ে আসছিল মারতে। আর রাদিব সামনে যেতেই একদম চুপ। কোন কথা নেই। রাদিব যখন জানতে চায়, কেমন আছ নৃ।
- নৃ ভাল আছে।
বলে জবাব দেয় নৃ। সারাদিনে খায় নি নৃ। কিন্তু রাদিব বলতেই চুপচাপ চলে আসল খাবার খেতে। খাবার খেলও চুপচাপ।
রাদিবকে কোন ভাবেই হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না নৃ। হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাদিব অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করল নৃ সাথে। ঘুমিয়ে গেল নৃ ওখানেই।
-রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

(শেষ পর্বের আগের পর্ব আগামী কাল)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন: শেষ পর্ব কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না তো।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: শেষ পর্বের আগের পর্ব

শেষ পর্ব

ব্লগে কেনো শেষ পর্ব দেই নি ঠিক মনে করতে পারছি না। ফেসবুকে আছে। উপরে লিংক দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.