নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিটেকটিভ, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার: মধ্য বৃত্ত (পর্ব ২)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৩

১ম পর্ব

নিবিড়ভাবে চিন্তা করলে গতকাল রাতের পরিস্থিতিটা প্রফেসর সাজিদ এলাহীর জীবনের ভয়ংকরতম অভিজ্ঞতা। তবু গত রাতের ঘটানাটা সত্যি কিংবা মিথ্যে সেই দ্বিধায় আছেন এখনও প্রফেসর সাজিদ এলাহী। অমিতের ছেলেটা এসেছিল রাত নয়টা নাগাদ। অমিতের শরীর বেশি একটা ভালো না। আগের মত আসে না এখানে। কিন্তু সময় পেলেই চলে আসে অমিতের ছেলেটা। অমিতের বিশাল ব্যবসা। দেশের বড় ব্যবসায়ীদের একজন। একদম নিজের চেষ্টায় এতটা দূর এসেছে। অমিতের ছেলেটা চাইলেই অমিতের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে নিতে পারত। ছেলেটা ও পথে আগায় নি, ভিন্ন পথে গিয়েছে। অবশ্য এই ভিন্ন পথে যাওয়াটা অমিত ভালোভাবে না নিলেও, সবসময় উৎসাহ আর সাহস দিয়ে গিয়েছেন প্রফেসর সাজিদ এলাহী। সবাই যদি ব্যবসা করে, এসব ঠিক দেখবে কে? এই ভালোলাগা থেকেই ছোটোখাটো প্রায় সব বিষয়ে তিনি কথা বলেন অমিতের ছেলেটার সাথে। অমিতের ছেলেটাও ব্যস্ততা গলে যে সময়টুকু বের করে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর কথা গুলো শুনবার জন্য, সে সময়টায় কখনও বিরক্তির ছিটেফোঁটাও দেখায় না। অদিত অর্থাৎ অমিতের ছেলের পুলিশে জয়েন করা কিংবা ডিটেকটিভ হিসাবে নাম খ্যাতি সবটাই বেশ উপভোগ করেন প্রফেসর সাজিদ এলাহী। এত লম্বা চওড়া দারুণ সুঠাম দেহের ছেলে মানুষ যদি এসবে না যায়, আর যাবেটা কে?

অদিত এসে যখন বসেছিল প্রফেসর সাজিদ এলাহীর সামনে, যেটুকু ভয়-দ্বন্দ্ব মনের মাঝে জমে জমে কঠিন একটা অস্বস্তির টুকরো হয়ে আটকেছিল বুকের ভিতর, সেটুকুও গলে গিয়েছিল, কঠিন অস্বস্তি থেকে তরল স্বস্তিতে রূপ নিয়েছিল। অদিতের কাছে প্রফেসর সকালের ঘটনার আদ্যোপান্ত সবিস্তারে বলেছিলেন। বলেছিলেন তার ভয়ের কথা, নাহিনের লাশের হারিয়ে যাবার ব্যাপারটা। অদিত আশ্বস্ত করেছিল, কোনো চিন্তা না করতে। অদিত দেখবে ব্যাপারখানা। রাতের খাবার খেতে খেতে দুজন আরও নানা বিষয়ে কথা বলেছিল, অদিত যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিল নাহিনের বিষয়টা। প্রফেসর মনে মনে ভয় পাচ্ছিলেন, বেশ বুঝতে পারছিল অদিত। তবুও প্রফেসর সাহেব যেন এসব থেকে বের করে পারছিলেন না, গরগরিয়ে বলে যাচ্ছিলেন এক নাগাড়ে নাহিনের কথা, নাহিনের বন্ধু বান্ধবদের কথা। তিনি আরও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, নাহিন ফেল করার কারণে মারা যায়নি, একটা বিষয়ে ফেল করে কেউ মরে যায় না। এর পিছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, এমন হতে পারে খুন করেছে বন্ধুদের মধ্যে কেউ। মাঝখান থেকে ফাঁসিয়ে দিতে চাচ্ছে তাকে। নাহিনের লাশ যে পালিয়ে গিয়েছে এ ব্যাপারেও কোনো শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই, এমন ভাবাটাও তো অসম্ভব কিছু না যে লাশ নাহিনের বন্ধুগুলোই কোথাও লুকিয়ে রেখে একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে, প্রফেসর সাজিদ এলাহীকে ভয় দেখাতে চাইছে। সবটাই প্রফেসর সাজিদ এলাহীর ধারণা। তিনি অদিতকে বলেছিলেন, "তুমি ডিটেকটিভ মানুষ। এসব ব্যাপার মাথায় রাখতে পারো। খতিয়ে দেখে সত্যিটা সামনে আনতে পারো। যদি তোমার সময় হয় আর কী!"

অদিত যখন কোনো বিষয়ে চিন্তিত থাকে ফর্সা মুখটায় লালচে একটা ভাব চলে আসে। তখনও তেমন একটা লালচে ভাব ছিল মুখে। অদিত ভাবছিল, কিছু নিয়ে খুব গভীর ভাবে ভাবছিল। খাবার খেয়ে উঠে বলেছিল অদিত, "প্রফেসর আঙ্কেল, একটা সিগারেট ধরালাম।"
"সিওর।"
অদিত সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলেছিল, "আপনি যেগুলো বললেন, সব গুলো বিষয়ই ভাবার মতন। সব গুলো বিষয় সত্যি হতে পারে, আবার সব গুলো বিষয় মিথ্যে। আমি এগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে কিছু বলতে পারছি না, আপনাকে কোনো মতামতও জানাতে পারছি না।"
প্রফেসর অদিতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিলেন, বলছিলেন না কিছু। অদিত বলে যায়, "এখন সবচেয়ে ভাবার যে বিষয়টা, তা হলো নাহিনের লাশ কোথায়? আপনি ব্যাপারগুলো আমার উপর ছেড়ে দিন। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান। আর অবশ্যই অপরিচিত কিংবা নাহিনের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ আসলে দরজা খুলবেন না। আমি আসি এখন, রাত হয়েছে অনেক।"
সিগারেটের শেষ অংশটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে অদিত বিদায় নিয়েছিল প্রফেসর সাজিদ এলাহীর কাছ থেকে। অদিত চলে যাবার মুহূর্তে পিছন থেকে ডাক দিয়েছিলেন প্রফেসর, "অদিত।"
"জি আঙ্কেল।"
"দুটো সিগারেট দিয়ে যাও। সিগারেট খেলে মাথা ঠান্ডা থাকবে।"
"আঙ্কেল সিগারেট খেলে, মাথা ঠাণ্ডা গরম কোনোটাই থাকে না। শুধু মস্তিষ্কে, ফুসফুসে অসুখ জমে। যাই হোক, আপনি চাচ্ছেন যখন, নিন।"
অদিত সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা প্রফেসর সাজিদ এলাহীর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রফেসর সিগারেটের প্যাকেটটা নিতে নিতে বলেছিলেন, "আমি আগে চেইন স্মোকার ছিলাম। অমিত আর আমি পাল্লা দিয়ে সিগারেট খেতাম। আমি ভার্সিটিতে টিচার হয়ে জয়েন করার পর, ছেড়ে দিলাম, অমিত আর ছাড়ল না।"
কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রফেসর। তিনি এই কাজটা সবসময় করেন। কেউ তার সাথে কথা বলতে আসলে, সে চলে যাবার মুহূর্তে তিনি তাকে দরজার কাছ থেকে ডাক দিবেন এটা অভ্যাসের মতন হয়ে গিয়েছে। একটা না একটা কিছু জিজ্ঞেস করবেনই। সে কথাগুলোর মানে কখনও থাকে, কখনও থাকে না। এই যেমন সকাল বেলা দীপ্ত আর আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, ওরা ছাত্র ইউনিয়ন করে কিনা? এটা একটা অপ্রয়োজনীয় কথা, ওরা যাই করুক তাতে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর কিছুই যায় আসে না। চে গেভারার ছবি যুক্ত টি-শার্ট যে কেউ পরতে পারে। তিনি শুধু অভ্যাসবশত ডাক দিয়েছিলেন ওদের। অদিতকে তেমনি ডাক দেয়ার পিছনেও তেমন কোনো কারণ ছিল না। তার সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছিল না। তবুও তিনি ডাক দিয়েছিলেন। হয়ত সাজিদ এলাহী একাকীত্বটা খুব ভয় পান, তিনি চান তার সাথে কেউ থাকুক, গল্প করুক, অনেক কথা বলুক, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় কাটাক। চলে যাবার আগ মুহূর্তে তাই ফিরিয়ে আনার আরেকবার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কেউ ফিরে আসে না। সবাই যে যার জীবনে ব্যস্ত, শুধু মনে হয় একমাত্র ব্যস্ততাহীন মানুষ প্রফেসর সাজিদ এলাহী। কোনো ব্যস্ততা তাকে ছুঁয়ে যায় না। অদিত চলে যায়, নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছিল, সে গাড়িতে চেপে।

অদিত চলে যায় যখন রাত তখন এগারোটা, আর ঘটনাটা তারও ঘণ্টা দুয়েক পরে ঘটে। রাত একটা হবে যতটা সম্ভব। প্রফেসর সাজিদ এলাহী অদিতের দেয়া সিগারেটগুলো একটা একটা করে ধরিয়ে পুড়তে দেখছিলেন। প্রফেসরের সাথে একবার এক কম বয়স্ক ডাক্তারের পরিচয় হয়েছিল, সে ডাক্তার বলেছিল, সিগারেট জ্বালিয়ে পুড়তে দেখলে না-কি মনের মাঝে শান্তি লাগে, ভালো লাগে, চিন্তা গুলো পরিষ্কার হয়। হুট করেই চমকে উঠেন প্রফেসর সাজিদ এলাহী, কলিং বেলের শব্দে। হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে যায় ফ্লোরে। তার মনের মাঝে এমনিতেই ভয় জমেছিল, অল্পতে তাই চমকে উঠেছিলেন। নয়ত কলিং বেলের শব্দে তিনি কখনও চমকান না। একটানা কলিং বেল বেজে যায়। তিনি উপর থেকে নিচে তাকাবার সাহস পান না। কে আসবে অত রাতে? আর এতবারই বা কেন কলিং বেল চাপবে? প্রফেসর সাজিদ এলাহী, উপর থেকে নিচে তাকান। নিচে অল্প আলো, অল্প অন্ধকার। চশমা ছাড়া তিনি কিছু দেখতে পান না। চশমাটা টেবিলের উপর, আলসেমি লাগে নিয়ে আসতে। উপর থেকে তিনি চিৎকার করে বলেন, "কে?"
নিচ থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসে না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, "এত রাতে কে কলিং বেল বাজায়?"
তাও নিরুত্তর। সাজিদ এলাহী সরে আসেন বারান্দা থেকে। আবার কলিং বেল বেজে ওঠে। ভয়ের সাথে বিরক্তিও ফোটে সাজিদ এলাহীর মুখে। তিনি চশমাটা চোখে দিয়ে আবার বারান্দায় যান। এবার স্পষ্ট নিচটা, কিন্তু নিচে কেউ নেই। তাহলে কলিং বেল বাজাল কে? সাজিদ এলাহী আবার চিৎকার করেন সাহস নিয়ে, "কে বাজায় কলিং বেল?"
একবার ভাবেন, নিচে গিয়ে দেখে আসবেন। নিচের ফ্ল্যাট গুলোর কাউকে নিয়ে নিচে যাওয়া যায়, একা একা যাওয়াটা ঠিক হবে না। কিন্তু এ বাড়ির নিচ তলার সব গুলো ফ্ল্যাটের লোকদের সাথে তার ঝামেলা। কেউই দেখতে পারে না প্রফেসর সাজিদ এলাহীকে। তিনি কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলেন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন নিচে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে। আচমকা তিনি নিচে কিছু একটা আবিষ্কার করলেন। কেউ একজন নিচের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে বের হচ্ছে। প্রফেসর সাজিদ এলাহী মনোযোগ বাড়ালেন সে দিকে। তবে তিনি যা দেখলেন, তা দেখার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। এ ব্যাপারটা সত্যি হতে পারেই না। নিচের আধো আলো আধো অন্ধকার হতে, উপর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাহিন। কেমন একটা নিস্পৃহ দৃষ্টি, ক্ষুধার্ত মুখ। প্রফেসর সাজিদ এলাহী ছিটকে দূরে সরে গেলেন ভয়ে বারান্দা থেকে। তার গায়ে লেগে বারান্দার একটা টব পড়ে ভেঙে গেল। তিনি আর সাহস করতে পারলেন না আবার বারান্দায় যাবার। প্রফেসর সাজিদ এলাহীর, প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে মনে হয়। কপাল দরদরিয়ে ঘামে, শরীর কেমন অবশ হয়ে আসে। তবুও প্রফেসর সাজিদ এলাহী নিজেকে বোঝান, এটা মনের ভুল, দেখার ভুল, কলিং বেলের শব্দ শোনাটাও ভুল। এসব ভাবতেই আর একবার কলিং বেল বেজে উঠল। ভয়ে ভয়ে প্রফেসর সাজিদ এলাহী বারান্দার দিকে তাকালেন, ভাঙা টবটা পড়ে আছে, ভাঙা টবের সাথে নিজের মনের মিল পাচ্ছেন তিনি। নিজেকে সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত মনে হচ্ছে। সিজোফ্রেনিয়া শব্দটা যে দুটো গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে তার অর্থ দাঁড়ায় ভাঙা বা টুকরো মন। এরপর আর কলিং বেল বাজেনি। তবে যে ভয় পেয়েছিলেন, প্রফেসর সাজিদ এলাহী তাতে সারা রাত ঘুম হয়নি। সকাল বেলাও সে ভয়ের রেষ কাটেনি। তিনি সকাল বেলা আজ হাঁটতেও যাননি। বারান্দায় চায়ের কাপ নিয়েও বসেননি। গতকাল রাতের ঘটনাটা সত্যি না মিথ্যে তা নিয়েই তিনি এখনও দ্বিধায় আছেন। ঘটনাটা জানানো দরকার অদিতকে। টেলিফোন হাতে আবার তিনি অদিতের নাম্বারটা ডায়াল করলেন।

অদিত তখন দিদারের বাসার সামনে। কিছু কথা বলা দরকার দিদারের সাথে। ঘটনার আদ্যোপান্ত জানা জরুরি। কী হয়েছিল সে রাতে, এত সকাল বেলা বাইরে কারও যাওয়ার কথা নয়, সে হিসাবে বাসায় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রফেসর সাজিদ এলাহীর কলটা রিসিভ করল অদিত, ওপাশ থেকে ভয়ার্ত এক কণ্ঠ ভেসে আসলো। প্রফেসর সাজিদ এলাহী যে ঘটনা বললেন, সেটা বিশ্বাস করবে কিনা অদিত বুঝতে পারছে না। হতে পারে প্রচণ্ড ভয়ে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়াতে তিনি এসব দেখছেন। তবে শেষ মুহূর্তে প্রফেসর সাজিদ এলাহী যে কথাটা বললেন, সেটাও গুরুত্ব সহকারে নেয়া যায়। তিনি বললেন, "তুমি যেহেতু ওখানে আছ, ব্যাপারটা একটু দেখো। আমার বিশ্বাস নাহিন মারা যায়নি। আমাকে ভয় দেখাবার জন্য ওরা একটা সুন্দর নাটক সাজিয়েছে। নাহিনকে কোথাও লুকিয়ে রেখে বলছে, মারা গিয়েছে নাহিন। আবার রাতের বেলা নাহিনকে দিয়েই আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তুমি ওদের জিজ্ঞেস করো, সবটা বেরিয়ে আসবে।"
অদিতের দিদারের বাসা খুঁজে পেতে বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি। গতকাল রাতেই নাহিনের ঠিকানাটা নিয়ে নিয়েছিল অদিত, প্রফেসর সাজিদ এলাহীর কাছ থেকে। প্রফেসর ভার্সিটির একাডেমিক সেকশন থেকে ঠিকানা গতকাল দিনের বেলাই যোগাড় করে নিয়েছেন। দরজার কাছে এসে দুইবার কলিং বেল বাজাতেই, দরজা খুলে খাটো করে একটা ছেলে বেরিয়ে আসলো। অদিত জিজ্ঞেস করল, "আপনি কি নাহিনের বড় ভাই?"
ছেলেটা ঘুম ঘুম চোখ মুছতে মুছতে বলল, "না, আমি নাহিনের বন্ধু। দীপ্ত। দিদার ভাই অসুস্থ। উনি ঘুমাচ্ছেন।"
অদিত ছেলেটাকে একটু ভাল করে দেখল। হাতের পেশী বেশ শক্তিশালী, বুকের কাছেও দারুণ শেপ। দেখেই বোঝা যায়, নিয়মিত জিম করে। দীপ্ত পাল্টা প্রশ্ন করল, "আপনি?"
অদিত নিজের আইডি কার্ডটা বের করে, "ডিটেকটিভ অদিত পোদ্দার। আর উনি আমার সহযোগী ইমরুল কায়েস।" অদিতের পাশে দাঁড়ান সানগ্লাস চোখের সহযোগীকে দেখিয়ে বলল।

দীপ্ত হাতের উলটো পাশের তালু দিয়ে চোখ মুছল, ঘুম কাটাবার জন্য। দীপ্তর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দীপ্ত বেশ স্বাভাবিক আছে, ডিটেকটিভ দেখে ভড়কে যায়নি। কোনো অপরাধ না করলেও মানুষ, পুলিশ প্রজাতির আগমনে ভীত হয়, দীপ্তর মাঝে সেসবের কোনো ছাপ নেই। অদিত যথেষ্ট লম্বা, তাই ঘাড় উঁচু করে কথা বলতে হচ্ছে দীপ্তর। পুলিশ, ডিটেকটিভ এদের কে খবর দিলো, তাই ভাবছে মনে মনে। যে ঝামেলার কথা ভাবছিল দীপ্ত, সে ঝামেলাটাই হলো। অদিত একটু কেশে জানতে চাইল, "আমরা ভিতরে আসতে পারি?"
দীপ্ত দরজার কাছ থেকে সরে জায়গা করে দিলো ভিতরে আসবার জন্য। অদিত এবং কায়েস দুজনে ভিতরে ঢুকে, চারপাশটাতে চোখ বুলালো। বেশ এলোমেলো ফ্ল্যাটটা। গোছানো কিছুই নেই। ফ্ল্যাটের ভিতরের পরিবেশ দেখেই বোঝা যায়, এ ফ্ল্যাটে ব্যাচেলর ছেলেপেলের বসবাস। কোনো নারীর এ ফ্ল্যাটে বসবাস থাকলে পরিবেশ এমন থাকত না। অদিতকে নিয়ে দীপ্ত দিদারের রুমে চলে গেল। দিদার বিছানায় শুয়ে আছে। কপালে জল পট্টি দেয়া। ফ্লোরে আরও দুজন শুয়ে ঘুমাচ্ছে। অদিত রুমে ঢুকতেই একজন চোখ মেলে তাকাল, তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। অদিত দিদারের বিছানার একপাশে বসে সোজা দীপ্তর দিকে তাকাল, দীপ্ত দাঁড়িয়ে আছে ভাবলেশহীন চেহারায়, যেন খুব স্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটছে। অদিত একটু হেসে নিচে শুয়ে থাকা দুজনকে দেখিয়ে বলল, "এদের একটু ঘুম থেকে উঠিয়ে, চোখে মুখে পানি দিয়ে আসতে বলেন। আমি কিছু কথা বলে চলে যাব। খুব জরুরি না কথাগুলো, সাধারণ কথা বার্তা। কিছু তথ্য জানব শুধু।"
শরীরে নাড়া দিয়ে মিশু আর আরিফকে জাগাল দীপ্ত। ফ্রেশ হয়ে আসতে বলল, গোয়েন্দা পুলিশ এসেছে। আরিফের দুই ভ্রুর মাঝখানটা কুঁচকে আছে, চেহারার ছাপেই প্রতীয়মান বিরক্তির চরম পর্যায়ে আরিফ এখনি, মিশু ভালো মাত্রায় ভড়কে গিয়েছে। চোখ ডলতে ডলতে বলল, " আমরা আবার কী করলাম? গোয়েন্দা, পুলিশের আমাদের কাছে কী?"
অদিত বিছানার উপর থেকেই বলল, "আপনারা কিছুই করেননি। আমরা শুধু কিছু তথ্য জানতে এসেছি। অত সিরিয়াস কিছু না। টেনশন করবেন না।"
"আমরা আবার কী তথ্য দিব?"
মিশুর কথায় অন্য পাশ থেকে ইশারা করে দীপ্ত, মিশুকে থামতে বলল। দীপ্ত অদিতের দিকে তাকিয়ে বলল, "স্যার, কিছু মনে করবেন না। ও অল্পতেই হাইপার হয়ে যায়, এই যা। আপনি আপনার কাজ করেন। যা যা জানতে চান, আমাদের জানা থাকলে অবশ্যই সাহায্য করব।"

দীপ্ত, আরিফ আর মিশুকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল। হাত মুখ ধুয়ে ফিরে আসলো কিছুক্ষণ পর। এর মাঝে অদিত একবার দিদারের শরীরে হাত দিয়ে দেখল, জ্বর আছে এখনও। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। একে এভাবে কেনো ঘরের মধ্যে রেখে দিয়েছে তাই ভাবছে অদিত। একে অতিসত্ত্বর হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার।
দীপ্ত, আরিফ আর মিশু এসে বসল অদিতের সামনেই। অদিতের পাশে বসা কায়েস, একটা ছোটো লেখার প্যাড আর কলম হাতে। অদিত বলতে শুরু করল, "প্রথম কথা হলো, এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, আপনাদের পুলিশের কাছে জানানো দরকার ছিল। যাই হোক জানাননি যখন, তখন কিছুই করার নেই। কেনো জানাননি সে ব্যাপারে আমি যাচ্ছি না। আমি আপনাদের কিছু প্রশ্ন করব, যতটুকু পারেন সত্য উত্তর দেবার চেষ্টা করবেন।"
দীপ্ত আর আরিফ মাথা নাড়ল একসাথে। মিশু চুপচাপ বসে আছে। অদিত দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনাকে দিয়েই শুরু করি।"
দীপ্ত আবার মাথা নেড়ে সায় দিল। অদিত শুরু করল, "নাম?"
"দীপ্ত।"
"পুরো নাম?"
"দীপ্ত শাহরিয়ার।"
"নাহিনের সাথে পরিচয় বা সম্পর্ক?"
"বন্ধু আমার। ক্লাসমেট ছিলাম আমরা।"
"নাহিন মারা যায় কখন?"
"ডিসেম্বর চার, বিকাল বেলা।"
"স্থান এবং ঘটনার যে টুকু জানেন।"
"আমি আর আরিফ মাঠে বসে গল্প করছিলাম। বন্ধের দিন, অমন কেউ মাঠে ছিল না। মাঠের পাশের ছাউনির নিচে বসা দু চারটা কাপল ছিল। আমাদের গল্পের বিষয় ছিল আমাদের রেজাল্ট। আমাদের রেজাল্ট দিয়েছিল সেদিন। মোবাইলে রেজাল্ট এসেছে। ভার্সিটির শেষ এক্সাম। ভালোয় ভালোয় পাস করাতেই খুশি। কিছুক্ষণ পর টলতে টলতে নাহিন এসে হাজির। আমি নাহিনকে কখনও এমন দেখিনি। মনে হচ্ছিল তখনি পড়ে যাবে। আমাদের সামনে এসে প্রথম কথাটাই ছিল, সাজিদ স্যার আমাকে ফেল করিয়ে দিলো রে। বলেই নাহিন বুকের বাম পাশটায় হাত দিয়ে মাঠের মধ্যে টলে পড়ল। আমরা বললাম, নাহিন, কী হইছে? বুকে ব্যথা করছে না-কি? নাহিন তখনও প্রাণপণে বুকের উপর হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে। শুধু বলল, বুকের ভিতর ছিঁড়ে যাচ্ছে। এরপর আর কী কী বলল, বুঝলাম না কিছু। আমরা ধরে নাহিনকে উঠাবার চেষ্টা করলাম। নাহিন হুট করেই শরীরে একটা ঝাঁকি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল। আমরা চিৎকার করে নাহিনকে ডাকলাম, নাহিন কোনো কথা বলে না। এর মধ্যে চারপাশে আরও ছেলেপেলে এসে হাজির হলো। আমি নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখলাম, নাহিন শ্বাস নিচ্ছে না। বুকে হাত দিয়েও দেখলাম হার্ট চলছে না। বুঝলাম যা হবার হয়ে গিয়েছে।"
অদিত খেয়াল করল দীপ্ত বেশ স্পষ্ট গলায় কথা গুলো বলে গেল, গলাটা একবারও কাঁপল না। একটা বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনা এত স্বাভাবিকভাবে কেউ বলতে পারে, ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে। অদিত সে বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করল না। দীপ্তর পাশে বসা আরিফের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, "আপনার নাম?"
আরিফের বিরক্তি ভরা চোখ এখন ছলছল করছে। আরিফ ধরে আসা গলায় বলল, "আরিফ জামান।"
বিছানায় শুয়ে থাকা দিদার একটু কুকিয়ে উঠল। অদিত সেদিকে এক নজর দেখে আবার আরিফের দিকে তাকাল, "আচ্ছা আপনিই আরিফ। তাহলে দীপ্ত সাহেব যা যা বললেন, সেসব আপনার কমন। আপনি ওনার সাথেই ছিলেন, পুরোটা সময়, ঠিক?"
"জি।"
"তাহলে আর সে প্রসঙ্গে না যাই। নাহিনের মৃত্যু কি আপনারাই নিশ্চিত করেছিলেন? হাসপাতালে নিয়ে যাননি?"
আরিফের গাল বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ল, আরিফ গালের পানি মুছে বলল, "জি, নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের ভার্সিটির পাশেই সরকারি হাসপাতাল। ওখানে নিয়ে যাই। ওখানে নিয়ে যাবার পর, এক ডাক্তারের দেখা পেলাম, ডাক্তারও নাহিনকে মৃতই ঘোষণা করল।"
আরিফের চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। অদিত তবু জিজ্ঞেস করে যায়, "এরপরে আপনাদের কাজ কী ছিল?"
"আমরা নাহিনের মোবাইল নিয়ে ওর বড় ভাই, মানে দিদার ভাইকে ফোন করি। দিদার ভাই তখন চিটাগং থেকে ফিরছেন। ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সায়দাবাদের কাছাকাছি চলে এসেছেন। তাকে আমরা খবরটা তখন দেইনি। ওনাকে হাসপাতালে আসতে বলি। উনি হাসপাতালে এসে নাহিনকে মৃত অবস্থায় দেখেন। সেদিন রাতেই উনি পিকআপ ভাড়া করে লাশ নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।"

অদিত পাশে বসা কায়েসের দিকে তাকাল। কায়েস ছোটখাটো বিষয়গুলো সব টুকে নিচ্ছে প্যাডে। অদিত মিশুর দিকে তাকাল। মিশু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, মানে মনের ভিতর ভাবছে কিছু। অদিত জানতে চাইল, "আপনার নাম?"
মিশু নাকের নিচের সরু গোঁফে একটু চুলকে বলল, "জি?"
অদিত আবার একই কথা জানতে চাইল, "আপনার নাম?"
"জি, মাজহার মিশু।"
"আপনি কখন জানেন, নাহিন মারা গিয়েছে?"
"জি, আসলে, জি, আমাকে দীপ্ত ফোন করে জানায়। আমি তখন ভার্সিটির হলে। জি আমাকে বলল, হাসপাতালে যেতে, নাহিন মারা গিয়েছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। ভাবলাম মজা করছে ওরা। জি আমার সাথে মাঝে মাঝেই ওরা সিরিয়াস মজা করে। পরে বুঝলাম এটা মজা না।"
"কীভাবে বুঝলেন ওটা মজা ছিল না?"
"জি?"
"বললাম, আপনি কীভাবে বুঝলেন যে দীপ্ত সাহেব আপনার সাথে মজা করছে না?"
"জি, ওর কথা শুনে মনে হচ্ছিল। আমি পরে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি ব্যাপারটা আসলেই সত্যি।"
"আচ্ছা, এবার আপনি বলুন, নাহিনের লাশ হারিয়ে যাবার ব্যাপারে আপনি কী কী জানেন?"
মিশু কেঁদে ফেলল, ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক দেখল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, "স্যার, আমি তো কিছুই জানি না।"
"কিছুই জানেন না মানে কী? আপনি কি এটাও জানেন না যে লাশ হারিয়ে গিয়েছে?"
"জি?"
মিশুকে থামিয়ে দীপ্ত বলল, "স্যার, ও অল্পতেই ভড়কে যায়। আমি বলি ব্যাপারটা?"
অদিত দীপ্তর দিকে ফিরে বলল, "অবশ্যই। বলেন।"
"আসলে আমরা ওভাবে এই ব্যাপারটার কিছুই জানি না। দিদার ভাই নাহিনের লাশ নিয়ে রওয়ানা দিলেন, তখন রাত দশটা। বারোটার দিকে ফিরে আসলেন। বাসায় ফিরে আমাকে ফোন দিলেন, আমি আমার নাম্বার তাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, পথে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে। আমরা যেতে চেয়েছিলাম সাথে। উনি মানা করলেন। কোনোভাবেই আমাদের নিলেন না। উনি রাত বারোটার দিকে আমাকে কল করে বললেন, নাহিনের লাশ না-কি হারিয়ে গিয়েছে। আমি ব্যাপারটা বুঝলাম না। ওনাকে বার কয়েক জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? উনি কথা বলার মাঝে হাঁপাচ্ছিলেন, আমাকে বললেন, পিকআপে করে যাবার সময় নাকি নাহিনের লাশ উঠে কথা বলেছে, পিকআপ থেকে নেমে পালিয়ে গিয়েছে। আমরা রাতের বেলাতেই এখানে চলে আসি। এসে দেখি ওনার বিধ্বস্ত অবস্থা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে, উনি নির্বিকার বসে রইলেন, কিছুই বললেন না। বার দুয়েক উনি সংজ্ঞা হারালেন, আমরা মাথায় পানি দিলাম, সকাল বেলার দিকে জ্বর আসলো। আর কিছুই আমরা জানতে পারলাম না।"

অদিত মাথা নাড়ল, কায়েস তখনও বিষয়গুলো টুকে যাচ্ছে। অদিত একটা হাই তুলে তারপর বলল, "এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। যদি আপনারা কিছু মনে না করেন?"
দীপ্ত উত্তর দিলো, "যে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেন, সমস্যা নেই।"
"আপনারা কাল সকালে কী কারণে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর বাসায় গিয়েছিলেন?" সোজা দীপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে চট করে প্রশ্নটা করল অদিত, দীপ্তর কথা শেষ হবার আগেই।
অদিত ভেবেছিল এ প্রশ্নে অন্তত স্বাভাবিক ভাবটা অস্বাভাবিক হবে দীপ্তর। এবারও অমন কিছু হলো না। দীপ্ত স্বাভাবিক ভাবেই বলল, "স্যারের জন্যই তো নাহিন মারা গেল। তাই ভাবলাম স্যারকে বিষয়টা জানানো দরকার।"
"এর মাঝে আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না?", অদিত গলার স্বরে একটু পরিবর্তন এনে কথাটা জিজ্ঞেস করল।
"না।"
অদিত এবার উঠে দাঁড়াল। দীপ্তর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, "আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। অনেক বিরক্ত করলাম। আবার আসতে হতে পারে। দিদার সাহেবের সাথে তো কথা বলা হলো না, উনি খুব অসুস্থ। এভাবে ঘরে না রেখে হাসপাতালে ভর্তি করান দ্রুত।"
এরপর হ্যান্ডশেক করল ক্রমান্বয়ে আরিফ আর মিশুর সাথে। শেষমেশ বেরিয়ে আসার সময় একটু আলতো হেসে বলল, "আচ্ছা আপনাদের একটা খবর তো দেয়াই হয়নি। আপনাদের বন্ধুকে কাল রাতে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর বাসার সামনে দেখা গিয়েছে। আপনাদের স্যার ওনাকে দেখেছেন। আপনারাও সাবধান থাকবেন। একজন মৃত মানুষকে হুটহাট দেখতে পাওয়াটা তো ভালো কিছু না।"
আলতো হাসিটাকে আরও প্রশস্ত করে, অদিত তিনজনের দিকে তাকাল। মিশুর মুখটা মনে হলো রক্ত-শূন্য হয়ে গিয়েছে। আরিফ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। দীপ্ত তখনও স্বাভাবিক, বেশ স্বাভাবিক। অদিত আর কায়েস বেরিয়ে আসলো ও বাড়ি থেকে। নিজের গাড়িটায় গিয়ে বসল অদিত ড্রাইভিং সিটে, কায়েস তার পাশেই। অদিত কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল, "কী কায়েস, কী মনে হচ্ছে, ঘটনা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?"
কায়েস গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বলল, "ঘটনা তো আপনি যেদিকে বলবেন, সেদিকেই যাবে। সেভাবেই চলবে।"
অদিত মাথা নেড়ে বলল, "উঁহু, এবারের ব্যাপারটা কিন্তু অতটাও সোজা না। আমি বললেই এটার সমাধান হবে না, আমার ইচ্ছা মত কিন্তু হবে না এবার।"
কায়ের হেসে দিলো। হেসে হেসে বলল, "এসব স্যার আপনার মুখে মানায় না। আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আপনি যখন যা বলেছেন, তাই কিন্তু সত্যি হয়েছে।"
অদিত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল, "দেখা যাক।"
গাড়ি চলতে লাগল অলিগলির মধ্য দিয়ে। খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে। অদিত ভেবে পায় না, এ রাস্তা গুলোর জন্য দেয়া টাকা গুলো যায় কোথায়? ঢাকার কোনো অলিগলির রাস্তারই ঠিক নেই, একটু বৃষ্টিতে পানি জমে নদী, শুকনো দিনে খানাখন্দে ভরা। একবার এসব নিয়ে নামতে হবে। এখন অবশ্য মাথায় অন্য জিনিস ঘুরছে, একটা জটিল সমস্যা, আর সে সমস্যা সমাধানের ছক। সমস্যা না সমাধান কোনটা নিয়ে আগে আগাবে তাই ভাবছে অদিত। সমাধান ধরেও সমস্যার দিকে আগানো যায়, কিংবা সমস্যা ধরে সমাধান। কেউ সমাধান ঠিক করে সমস্যা বানায়, আর কেউ সমস্যার সমাধান খুঁজে।


প্রফেসর সাজিদ এলাহী জীবনে যত প্রশংসা শুনেছেন কোনো মানুষের ব্যাপারে তার মধ্যে এই ছেলেটা অন্যতম। তিনি বার কয়েক বলেছেন, তিনিই যাবেন দেখা করতে ছেলেটার সাথে। কিন্তু ছেলেটা না করল, নিজেই চলে আসলো। কিন্তু খুবই লজ্জার ব্যাপার এই যে, ছেলেটার নাম তার ভার্সিটির কলিগ সুলতানা ম্যাডাম এতবার বলার পরও তিনি ভুলে গিয়েছেন। ছেলেটা সোফায় বসে আছে, ছোট-খাটো শরীর, চুলগুলো এলোমেলো, চেহারায় এখনও বাচ্চা সুলভ ভাব। প্রফেসর সাজিদ এলাহী বললেন, "তোমাকে তুমি করেই বললাম, তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটো। যদিও ডাক্তারকে রুগিরা কখনও তুমি সম্বোধন করে না, তবুও। তুমি কিছু মনে করবে না তো?"
"না স্যার। বরং আপনি বললেই আমার অস্বস্তি লাগত। আপনি তুমি করেই বলেন।"
"ঠিক আছে। তবে আমি আসলে কয়েকদিন ধরে মেনটালি খুব খারাপ অবস্থায় আছি। বুঝতেই পারছ, অনেক কিছু মনে করার চেষ্টা করেও পারছি না। এই যে দেখো, তোমাকে এতদূর নিয়ে আসলাম, আমি কিনা তোমার নামটাই ভুলে বসে আছি।"
"স্যার, আমার নাম রাদিব।", হেসে উত্তর দিলো রাদিব।
প্রফেসরও রাদিবের সাথে হেসে ফেললেন, তিনি বললেন, "এই যে দেখো, নামটা আমার কেনো যে মনে পড়ল না। তোমার এতো প্রশংসা শুনি প্রতিদিন। এতবার সুলতানা ম্যাডাম নাম করে, তাও ভুলে গেলাম।"
রাদিব বিনয়ী ভাবে বলল, "ব্যাপার না স্যার। আসলে আমি অত প্রশংসা পাবার মত কেউ না কিংবা কিছু করিও নি। আমি স্যার, খুবই সাধারণ একজন ডাক্তার। কোনমতে এমবিবিএস। আপনি তো শিক্ষক মানুষ, আপনার মতে পিছনের সারির ছাত্র ছিলাম।"
"এই যে একটা ভুল করলে। তুমি প্রশংসার দাবীদার বলেই প্রশংসা পাচ্ছ। আর আমি এখন তোমার রুগি, আমার কাছে নিজের দুর্বলতা গুলো কেনো দেখাবে? বরং এমন কিছু বলবে, যেন মনে হয় ইউ আর দ্য বেস্ট ডক্টর ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। সমস্যা যাই হোক, এক নিমিষে সেটা সমাধান করতে পারবে।"
"হাহা, স্যার, আপনিই আমার কাউন্সিলিং করছেন।"
"ওহ, সর‍্যি। আসল কথায় আসি আমরা এখন।"

রাদিব বেশ মনোযোগ সহকারে প্রফেসর সাজিদ এলাহীর দিকে তাকাল। এই লোকটার সাথে আগেও একবার দেখা হয়েছিল রাদিবের। স্নিগ্ধা একবার জোর করে সুলতানা ম্যাডামের এক অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে এমন ভাবে রাদিবের কথা বলেছিল স্নিগ্ধা, যেন রাদিব পৃথিবীর এমন কোন সমস্যা নেই যে সমাধান করতে পারে না। আর সুলতানা ম্যাডামও তাই বিশ্বাস করে নিলেন। মেয়েরা অতি সরল সত্যি কথার চেয়ে, অতিরঞ্জিত মিথ্যে কথাই বেশি বিশ্বাস করে, সে জিনিসেই বেশি আগ্রহ দেখায়। সুলতানা ম্যাডামও তাই সেই অতি রঞ্জিত মিথ্যে গুলোই মেনে নিলেন। অতি রঞ্জিত মিথ্যে গুলোই সব জায়গায় প্রচার করতে লাগলেন। তিনি এমন একজন অসাধারণ মেধার মানুষকে চিনেন, সেটাও তো একটা গর্বের বিষয়। সেই গল্প ও গর্বের কারণে একবার রাদিব প্রফেসর সাজিদ এলাহীর ভার্সিটিতে গিয়েছিল, সুলতানা ম্যাডাম রাদিবকে ওর বাসা থেকে পারলে তুলে নিয়ে যান তার ভার্সিটিতে নিয়ে যাবার জন্য। তিনি তার সব কলিগের সাথে রাদিবকে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। সেদিন কী এক দারুণ বিপদে পড়েছিল রাদিব, জীবনে সত্যি এতটা অস্বস্তি কখনও অনুভব করেনি। সবাই দেখতে চায় রাদিবকে, আর রাদিব সবার সামনে বসে নিজেকে দেখাচ্ছে। এ যেন বিয়ের পাত্রী দেখার মত অবস্থা। তবে শেষমেশ পছন্দ হয়েছিল কিনা রাদিবকে তাদের, তা রাদিব জানে না। সবার পক্ষ থেকে সুলতানা ম্যাডাম জানতে চেয়েছিলেন, "আমরা টিচাররা এই রুটিন মাফিক জীবনে চলতে চলতে মাঝে মাঝেই খুব হতাশ হয়ে যাই। তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই মনোযোগ আসে না। চিন্তাগুলোও কেমন ভোঁতা হয়ে যায়। তুমি আমাদের কিছু সাজেশন দাও, কীভাবে ঐ সময়টায় আমরা এ সমস্যা কাটাতে পারি।"
সবাই যখন খুব মনোযোগ নিয়ে রাদিবের দিকে তাকিয়ে, রাদিব উত্তরের আশায় বসে, রাদিব উত্তর দিল, "একটা সিগারেট ধরাবেন, তারপর সে সিগারেট পুড়তে দেখবেন। খাবেন না। শুধুই পুড়তে দেখবেন। এতে চিন্তা পরিষ্কার হবে, তখন নিজেই বুঝতে পারবেন কী করা উচিৎ, কী করলে ঐ হতাশা কাটবে।"
হয়তবা এই উত্তর শোনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। সবাই অপেক্ষা করে এই উত্তর শুনে মোটামুটি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। রাদিব শুধু, "আজ উঠি, কাজ আছে।" বলে চলে এসেছিল। তাদের মাঝে প্রফেসর সাজিদ এলাহীও ছিলেন। আজ তিনি রাদিবকে ফোন করেছিলেন, নিজের সমস্যার জন্য, তিনি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন। অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছে তার সাথে। রাদিব দেখল টেবিলের উপর একটা বাটিতে সিগারেটের ছাই, তার মানে তিনি রাদিবের সেই বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছেন এবং স্বভাবতই ব্যর্থ হয়েছেন।

রাদিব প্রফেসরের দিকে ঝুঁকে বলল, "স্যার, আপনি বলেন, আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?"
প্রফেসর চোখের চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলেন, বলতে শুরু করলেন, "দেখো, আমি জানি না, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে কিনা, তবুও বলছি।"
রাদিবের মুখের বাচ্চা সুলভ ভাবটা চলে গেল হুট করেই, এবার চেহারায় বেশ জ্ঞানী একটা ভাব ভর করেছে, রাদিব একটু গম্ভীর গলায় বলল, "স্যার, আপনি বলেন। আমি বিশ্বাস করব।"
প্রফেসর সাজিদ এলাহী বলতে শুরু করলেন, "আমার এক ছাত্র মারা গেল গত পরশু। নাহিন নাম। হার্ট এটাকে মারা গিয়েছে। অনেকে আমাকে দোষারোপ করছে সে জন্য, আমার বিষয়ে ফেল করার জন্য না-কি ও মারা গিয়েছে। সে যাই হোক, ঐ ব্যাপারটা নিয়ে আমি এমনিতেই কিছুটা ভেঙে পড়েছিলাম। এর মধ্যে কী এক কাহিনী, ঐ ছেলের লাশ নাকি গ্রামের বাড়িতে নেবার পথে, হারিয়ে গিয়েছে, হারিয়ে গিয়েছি কী, নাহিনের মরা লাশ না-কি একা একা হেঁটে হেঁটে পালিয়ে গিয়েছে। এটা কী ধরণের কথা হলো বলো? এর মাঝে কাল রাতে আমি আবার ঐ ছেলেকে আমার বাসার সামনে দেখেছি, রাতের বেলা। আমার ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছি না, কী হচ্ছে না হচ্ছে।"

প্রফেসর এক দমে পুরো ঘটনা বলে গেলেন। রাদিব মনযোগী ছাত্রের মতন পুরোটা শুনল। রাদিব বলল, "আমাকে আরও খুঁটিনাটি বিষয় গুলো বলেন প্লিজ। মানে আপনি এই ব্যাপারে যা যা জানেন আর কী।"
প্রফেসর সাজিদ এলাহী ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললেন রাদিবকে। রাদিব প্রফেসরের দিকে তাকালেন, তিনি যে খুব বেশী মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন, চেহারা দেখেই সে সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছে। রাদিব সোফায় একটু হেলান দিয়ে বসল, প্রফেসর সাজিদ এলাহীর দিকে তাকিয়ে বলল, "স্যার এটার দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। এক, আপনি ভয় পেয়েছেন খুব। ছেলেটা মারা গিয়েছে এজন্য নিজেকে দোষী ভাবছিলেন। যখন শুনলেন ছেলেটার লাশ হারিয়ে গিয়েছে, আপনার অবচেতন মন ধরেই নিল, আপনার সাথে নাহিন দেখা করতে আসবে, আপনাকে ভয় দেখাতে আসবে। আপনার অবচেতন মন থেকেই হ্যালুসিনেশন হয়ে আপনি নাহিনকে দেখলেন, কলিং বেলের শব্দ শুনলেন। আর দুই, আপনার অবচেতন মনে আপনি প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলেন, আপনার সাথে নাহিনের দেখা হওয়া বা কথা হওয়াটা অবচেতন মনে একদম অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবে কেনো আপনি নাহিনকে আপনার নিজের রুমে দেখলেন না, বাহিরে দেখলেন? এটা দ্বিতীয় কারণ। দ্বিতীয় কারণটা আমি পুরোপুরি বললাম না। আপাতত আপনি ধরে নেন, আপনার সাথে প্রথমটা হয়েছে। এটার সমাধান, আপনার এখানে একা থাকা যাবে না। যে কেউ পরিচিত কিংবা কাছের মানুষকে এখানে এসে আপনার সাথে রাখতে হবে। আর ঘুমাতে হবে। রাত না জাগলে হ্যালুসিনেশন হবে না আর। আর ভয়টায় তো সমস্যা, ভয়টা কেটে গেলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।"
রাদিব এমনভাবে কথাগুলো বলল, যেন সত্যি সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তবু তার মনে উশখুশ করছে দ্বিতীয় কারণটা জানার জন্য। তিনি বলেই ফেললেন, "তুমি দ্বিতীয় কারণটা বললে না?"
রাদিব একটা আলতো করে শুষ্ক হাসি দিলো। প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি কাল আবার আসব, আজ কী হয় দেখেন, কাল আপনাকে দ্বিতীয় কারণটা বলব।"

রাদিব উঠে দাঁড়াল। প্রফেসরের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য, হাতে হাত মিলানো অবস্থায় বলল, "ভয় পাবার কিছু হয়নি স্যার। এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। জীবনে কোনো না কোনো সময় মানুষের এমন হ্যালুসিনেশন হয় এক দুবার। আমি আজ আসি। কাজ আছে স্যার। কাল আবার আসব।"
রাদিব দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই, পিছন থেকে প্রফেসর ডাক দিলেন, "শোনো একটু।"
রাদিব পিছন ফিরে বলল, "বলেন, স্যার।"
"তুমি যে আমাকে দ্বিতীয় কারণটা বললে না, এখন আজ রাতেই যদি নাহিনের লাশ এসে আমাকে মেরে ফেলে, তবে আমি তো কারণটা না শুনেই মরে যাব।"
রাদিব আবার সেই শুকনো হাসি হেসে বলল, "অমন কিছুই হবে না স্যার। মরা লাশের কাউকে মারার ক্ষমতা নেই। আসি আমি। কাল আসব আবার।"
রাদিব কী মনে করে বেরিয়ে যেতে গিয়েও ফিরে আসলো। প্রফেসর সাহেবের টেবিলের উপর সিগারেট রেখে বলল, "আজ এটায় কাজ হবে।"

রাদিব চলে আসলো প্রফেসরের বাসা থেকে। শীতের আমেজ ঝেঁকে বসেছে আস্তে আস্তে। এ শহরে শীত ধীরে ধীরে বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা কাটেনি এখনও দুপুর হয়ে গেলেও। হাতিরপুলের সারি সারি টাইলস, সিরামিকের দোকানগুলো আজ খুলেনি, মঙ্গলবার আজ। আজ এদিকের সব দোকান বন্ধ থাকে। সকাল থেকেই ভেবে রেখেছিল একবার নিউ মার্কেট যাবে রাদিব, শীতের জন্য কিছু কেনা দরকার। টাইলসের দোকান বন্ধ দেখে বুঝতে পারল, আজ মঙ্গলবার নিউ মার্কেটও বন্ধ। রাদিবের সাথে এই ব্যাপারটা মাঝে মাঝেই হয়, ও যেদিনটাতে নিউ মার্কেট বা নীলক্ষেত যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, দেখা যায় সেদিনটাই মঙ্গলবার। মনে মনে ভাবে রাদিব, ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে, রাদিবের অবচেতন মন হয়ত চায় না, রাদিব নিউ মার্কেট যাক, নীলক্ষেত যাক। অবেচতন মন বড় সূক্ষ্ম বোধের জিনিস, কখন কী করছে, কী বলছে, বুঝতে পারা ভার। বড়ই ভার।


নাহিনের মৃত্যু ও মৃত দেহ হারিয়ে যাবার ঘটনার মাঝেই আরেকটা খুনের ঘটনা ঘটে গেল।

(২০১৮ সালে প্রকাশিত আমার তৃতীয় উপন্যাস মধ্য বৃত্ত।)
৩য় পর্ব

রিয়াদুল রিয়াদ





মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৩৫

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনি কি আবারো নতুন করে টাইপ করছেন?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আসলে পুরোটা টাইপ করছি তা না। আগের টাইপ করা ফাইলটা আবার পড়ে, আপাতদৃষ্টিতে যে বানান ভুলগুলো চোখে পড়ে তা শুধরে নিচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনছি। আবার যদি রিপ্রিন্টে যাই, তাহলে তো টুকটাক সম্পাদনা করতেই হবে। সে কাজটা একটু এগিয়ে রাখছি, ব্লগে পোস্ট করার মাধ্যমে।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৩৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:






অনেক বড়।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: পুরো উপন্যাস ৩০ হাজার শব্দের। পর্বগুলো একটু বড় তো হবেই। যদিও ৩০ হাজার শব্দ উপন্যাস হিসাবে বেশ ছোটো। উপন্যাসিকা বলা যায় এটাকে।

আবার ব্লগের পোস্ট হিসাবে এটা বেশ বড়। বেশ জটিল পরিস্থিতি।

বেশি বড় মনে হলে পড়তে হবে না, পরে ছোটো পোস্ট দিলে পইড়েন। ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: পোস্ট'টা পড়তে হবে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:১৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অবশ্যই পড়ে ভালো মন্দ জানাবেন। এটা দ্বিতীয় পর্ব। আগের পোস্টটাই প্রথম পর্ব।

বা এখান থেকেও ১ম পর্ব পড়তে পারেন।

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
ভালোই তো লাগছে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই। আমার সব পোস্টেই মনে হয় আপনার কমেন্ট পাই। ব্যাপারটা ভালো লাগে।

৫| ১০ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:২৮

মিরোরডডল বলেছেন:




এই পর্বে কাহিনী বেশি দূর যায়নি।
এতো বড় একটা লেখা পড়ার পর যদি কাহিনী খুব সামান্য আসে, তখন কিন্তু পাঠক হতাশ হয় :(

১০ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৫৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: লেখক হিসাবে এই পর্বের স্লো কাহিনীবিন্যাসের দায় মেনে নিলাম। যদিও এই পর্বের প্রতিটি ছোটোখাট বিষয়ের গুরুত্ব পরবর্তী পর্বগুলোতে আছে৷ তবু এই পর্বে কাহিনী না জমার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.