নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরের জনসংখ্যা, মাথা ব্যাথার কেউ নেই। আছে কেবল এই মাথা মোটা’র !!!

০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০২



দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া.... এই প্রবাদ বাক্যটি আমি সরল মনে বিশ্বাস করি। মার্চে ছুটিতে দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। তাই ইচ্ছা হলো আমাদের এলাকা থেকে কাছে অথচ দেখা হয় নাই এমন এলাকায় ঘুরতে যাব। এলাকায় আশে পাশে এমন কোন যায়গা নেই যেখানে আমার পদে পদদূলিত হয় নাই। খুঁজতে লাগলাম। পেলাম না।অবশেষে হাতে ম্যাপ নিলাম।অনেকক্ষন খুঁজাখোজির পর তিনটি যায়গা লাল কলম দ্বারা চিহ্নিত করলাম। এলাকা তিনটি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চর জানপুর গ্রাম ও আলাওলপুর (সাবেক গরিবের চর ) ইউনিয়নের মাঝেরচর ও নতুনচর গ্রাম তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এই গ্রাম তিনটির চতুর্দিকে পদ্মা-মেঘনা নদী ও এর শাখা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম এলাকা তিনটি পরিদর্শনে বের হবো। এখানে উল্লেখ করারমত ব্যাপার হলো তিনটি এলাকায় আমার নিজ গ্রামের বাড়ি গোসাইরহাটের অত্যান্ত দুর্গম ও চর এলাকা। মানুষ একে বারে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সেখানে যায় না তাই আমারও এর আগে কোনদিন সেখানে যাওয়া হয়নি।প্রয়োজনীয কিছু জিনিসপত্র সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এলাকা তিনটি পরিদর্শনে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম....

চর জালালপুর আশ্রায়ন প্রকল্পের নতুন মুখ।

গোসাইরহাটের চর গুলিতে নূ্ন্যতম পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌঁছায় না। আর এর মধ্যে 3টি চরের কয়েক হাজার সক্ষম দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে। দিন দিন বেড়ে চলেছে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি। পাশাপাশি বেড়েই চলেছে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হার । এর জন্য দুর্গম এই চরাঞ্চলে কোন ধরনের পরিবার পরিকল্পনা সেবা না থাকাকেই এর জন্য দায়ী করছেন এলাকাবাসী। তাই এই চরবাসীদের সেবা প্রাপ্তির জন্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্থাপন এবং কর্মী নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

যদিও এস. ডি. এস এর মতো এন.জিওরা বিনামূল্যে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন এবং সেলাম মেশিন সহ নানা ধরণের সামগ্রি বিতরণ করছেন কিন্তু কোন এন.জিও কিংবা বেসরকারী সংগঠন পরিবার পরিকল্পনা এবং শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস করার জন্য এগিয়ে আসেনি।

তাই এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর এই লোকগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত বহুবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে বসবাস করে। এই ৩টি দ্বীপে বিভিন্ন এলাকার নদী ভাঙায় সর্বস্ব হাড়ানো মানুষেরা এসে বসবাস শুরু করেছে। এরা পেশায় সকলেই প্রান্তিক চাষি, জেলে ও নৌকার মাঝি। চরগুলোতে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু এই এলাকায় পরিবার পরিকল্পনার কোন কার্যক্রম নেই। সরকারিভাবে এখনও কোন পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌছায়নি, নেই কোন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বা এর উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে চারবাসীদের নেই ন্যনতম ধারণা। আর প্রায়ই সেখানে ঘটে যায় মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক শিশু মৃত্যুর মত ঘটনা।

গোসাইরহাটের উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী আছে তারা চরগুলোতে ‘পরিবার পরিকল্পনা’ সম্পর্কে কোন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করেন না। মাসে এবং কি বছরে একবারও চরে যান না স্বাস্থ্য কর্মীরা। অভিযোগ আছে কর্মীরা ঘরে বসে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকেন। নিয়ম অনুসারে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সর্ম্পকে জনগনকে সচেতন করার কথা। সেখানে পরিদর্শন কালে মাঝেরচরের তাসলিমা বেগম (ছদ্ম নাম) বলেন, আমাগো এইহানে প্রত্যেক ঘরে ৭ থেকে ৮ জন কইরা পোলাহান আছে। পরিবার পরিকল্পনা কি এই প্রশ্নের জবাবে তাসলিমা বলেন, আমাগো এ্যানে কোন লোকোই তো আহে না আমরা বুজমু কইত্যন। চরজানপুরের ফাহিমা বেগম(ছদ্ম নাম) বলেন, আমাদের মতো গরিবদের সন্তান মানুষ করা অনেক কষ্টের। দুই বেলা খাওয়াই যেখানে দায় সেখানে প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়া আর তাদের লালন পালন করার খরচ বহন করা অসম্ভব হলেও আমাদের কোন উপায় থাকে না। আমরা নারী কোথায় যাব, কি করব জানি না। সরকার তো কোন ব্যবস্থা আমাদের চরের মানুষের জন্য রাখে নাই।




গুগল আর্থে এরকমই দেখা যায়


আমার চিহ্নিত এলাকা

আবার অনেকে এ নিয়ে মাথা ঘামান না। তারা ভাবে জন্ম মৃত্যুর মালিক আল্লাহ্। আমাদের এখানে কোন হাত নেই। আবার কারো কারো ভাষ্য, “মুখ যিনি দিয়েছেন তিনি আহার দিবেন”। কেউ কেউ জননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে ধর্মের সাথে অসংগতি মনে করে এড়িয়ে চলেন। চরের আদি অশিক্ষিত কৃষক, চাষা ও নৌকার মাঝিরা মনে করে, বেশী ছেলে সন্তান হলে আয় রোজগার বাড়তে এতে পারিবারিক জীবনের স্বচ্ছলতা আসবে। সুতরাং অনেক ছেলে মেয়ে তাদের জন্য আর্শিবাদস্বরুপ।

তবে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা সেবা না পৌঁছার জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করেন অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
কিন্তু চরাঞ্চলের মানুষজন আশা করে অচিরেই ‘পরিবার পরিকল্পনা’ সেবা প্রদান করার জন্য সরকারী কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবেন।
এলাকা তিনটি নিয়ে পর কয়েকটি পোষ্ট দেয়ার আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরার জন্য শত সালাম।

দুঃখের কথা হলো পাড়ের মানুষদেরকে নিয়েই যেখানে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, সেখানে চরের মানুষদের কথা তো সুদূরের ব্যাপার। ভাল থাকুন।

০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সালাম,

হক কথা বলেছেন।

................................ মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০২

ৈতয়ব খান বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা।

০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সালাম,

ধন্যবাদ...........................
............................আশা করি সব সময় কাছে থাকবেন।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৯ রাত ১১:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রায় তিন বছর আগে লেখা আপনার এ পোস্ট পড়ে মুগ্ধ হ'লাম। পোস্টে প্লাস + +
বিষয়টি নিয়ে যে আপনি ভেবেছেন এবং ব্লগে জনসচেতনতামূলক পোস্ট লিখেছেন, তা দেখে ভাল লাগলো। আবার এ পোস্টে মন্তব্যের খরা এবং পঠিত সংখ্যাটি এত কম দেখে খারাপও লাগলো।
অনেকদিন ধরে আপনাকে ব্লগে দেখছি না। আশাকরি, ভাল আছেন।
ভাল থাকুন, শুভকামনা...

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

নাসির ইয়ামান বলেছেন: সরকারের মাথায় কাঁঠাল ভাঙলে পরে হয়তো টের পাবে।
চরবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছাতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.