নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্থানীয় ক্ষমতাসীন লোকদের প্রভাবে গোসাইরহাট চরাঞ্চলে চলছে আদিম যুগের বর্বর সমাজ ব্যবস্থা!!! (২য় পর্ব)

১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:২৯



সত্যের ছায়া: পদ্মার চরে এখনো আদিম যুগের মানুষের মতো বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বিজ্ঞানের যুগেও চরের গোত্রপ্রধান হচ্ছেন সমাজপতি, বাকিরা সবাই প্রজা। গোত্রপ্রধানের ইচ্ছায় চাষাবাদ হয়, বিচার ব্যবস্থা চলে। ঘরে ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে; চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। নদীতে পানি থাকলে মাছ পাওয়া যায় সংসার চলে; পানি কমে গেলে জালে মাছ পড়ে না ভাত জোটে না। কৃষিজীবীদের অবস্থাও একই। বছরের অর্ধেক সময় ঘরবন্দী থাকতে হয়। ভোটের সময় ভোটারদের কদর নেই; আছে শুধু সমাজপতিদের জুলুম আর অত্যাচার। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা সংগলগ্ন চরজানপুর, মাঝের চর আর চর জালালপুরে দেখা গেল এক অমানবিক চিত্র।

১৫/২০ জন ছেলেমেয়ে নদীতে লাফালাফি করছে। অধিকাংশের গায়ে জামা নেই। কয়েকজন আবার উলঙ্গ। প্রখর রোদ। ভর দুপুরে দীর্ঘ সময় ধরে তারা পানিতে। দল বেঁধে উঠছে আবার একসঙ্গে পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছে। উচ্ছল প্রাণবন্ত ছেলে-মেয়ের দল খেলছে নদীর পানিতে। ল্যাংটার দল ছেলেমেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সঙ্গী ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ছবি তুলতে লাগলেন। আর যায় কোথায়? নদী থেকে হুড়মুড় করে উঠে ক্যামরা ওয়ালা মোবাইল দেখে দৌঁড়ে এলো সবাই। ‘আমার ছবি তোলেন’। ‘সবার ফটো তোলেন’। ‘ছলেমনের নংটো ফটোক তোলেন’। ‘স্যার আমার আর আমার বোনের ফটো এক সাথে তোলেন।’ নানা আবদার ছেলেমেয়েদের। দুই ভদ্রলোককে দেখে ততক্ষণে বয়স্ক লোকজনও জড়ো হতে শুরু করেছে। সবার উৎসুক দৃষ্টি- এরা কারা? কোথা থেকে এবং কিভাবে এলো? এই চরে ভদ্রলোকের পা তো পড়ে না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘিরে ধরলো অর্ধশতাধিক মানুষ। মানুষ নয়; যেন অন্য প্রজাতি। অভাবে হোক আর গরম থেকে বাঁচতেই হোক সব পুরুষের গা খালি। মহিলারাও ক্লাউজ ছাড়া। তরুণীদের কারো গায়ে ওড়না দেখা গেল না। সাহস করে একজন জানতে চাইলেন কিভাবে এসেছেন; কোথা থেকে এবং কি জন্য এসেছেন? কারণ জানতে পেরে বললেন, হঠৎ করে ভরদুপুরে এখানে আসার উপায়তো নেই। সকালে এবং বিকেলে ছাড়া পদ্মার ওপাড় থেকে এপাড়ে আসার উপায় নেই। ‘পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরা জেলেদের কিছু টাকা দিয়ে অনুরোধ করার পর তারা পার করে দিয়েছে।’ জানার পর একজন বললেন, তাই বলেন। পানির অভাবে মাছ পাচ্ছি না। সংসার চলে না। অথচ পানির মধ্যে অবরুদ্ধ আছি।


শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার চরজানপুর, মাঝের চর, চর জালালপুর জেলার মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। পদ্মা নদীর পেটে জেগে উঠা এই চরগুলোতে গড়ে উঠেছে বসতি। এক সময় সবাই জেলে ছিল এখন কেউ কেউ কৃষি কাজ করেন। দীর্ঘ বছর ধরে এ চরে মানুষের বসবাস। তবে মানুষ না বলে আদিম মানুষ বলাই ভাল। বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য আর আধুনিক যুগের এই মানুষগুলো আদিম যুগের মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। ইতিহাসে লেখা রয়েছে আদিম যুগে মানুষ ফলমূল খেয়ে জীবনযাপনের এক পর্যায়ে দলবদ্ধভাবে (গোত্র) নদী তীরে বসতি স্থাপন করে। চাষাবাদ শুরু করে। মাঝের চরে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাপন অনেকটা এখনো তেমনই। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আদিম যুগকেও হার মানিয়েছে। আদিম যুগে মানুষ যেখানে খুশি মন যা চাইতো সে ফসল উৎপাদন করতো। মাঝের চরের মানুষের সে সুযোগ নেই। গোত্র প্রধান (স্থানীয় সরকার দলীয় বা চেয়ারম্যানের লোকজন) জমিতে যে ফসল ফলাতে বলবেন সে ফসল কৃষককে ফলাতে হবে। কেউ মোড়লের কথার অবাধ্য হয়ে ইচ্ছামতো ফসল ফলাতে গেলে তা গোত্র প্রধান জোর করে কেটে নেবেন এবং ওই কৃষক সমাজপতির আদেশ অমান্যের অপরাধে জমি হারাবেন। শরিয়তপুরের গোসাইরহাটের পদ্মা ও মেঘনার অধিকাংশ চরের সমাজব্যবস্থা গোত্র নির্ভর। একেক গোত্রের একজন থাকেন গোত্রপ্রধান। তিনিই সেখানের জমিদার। তার ইচ্ছা অনিচ্ছায় চলে সমাজ। সকলকে তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে হয়। অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবী হলেও কৃষিজীবীর সংখ্যাও কম নয়। স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছু নেই। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে যে যার ঘরে ঢুকে যান। অসুস্থ হলে বা কেউ বিপদে পড়লে চিকিৎসা নেয়ার কোনো উপায় নেই। মাইলের পর মাইল ধুঁ-ধুঁ বালুচর। নদী পার হয়ে চিকিৎসা নেয়া দুরূহ। সরকারি সেবা বলতে কিছু নেই। পরিবার পরিকল্পনা কাকে বলে তারা জানেন না। প্রতি পরিবারে ৫ জনের বেশি সন্তান। বিচ্ছিন্ন জনপদ। খাসজমি প্রচুর কিন্তু তা ভোগ করছে গোত্রপ্রধানরা, তারা উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের লোক, তাদের কথা অমান্য করলে নির্ঘাত জামেলা পোহাতে হবে। অধিকাংশ প্রকৃত চাষিকে অন্যের জমি চাষ করতে হয়। চর থেকে যারা সমতলে কাজ করতে আসেন তারা সকালে আসেন এবং সূর্য ডুবার আগে ঘরে ফেরেন।


শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের উসাইপাটির মাঝের চরের ভৌগোলিক অবস্থান হলো পদ্মা নদীর পেটের ভিতর। একদিকে চাঁদপুরের হাইমচর, লক্ষীপুরের রায়পুর আর অন্যদিকে বরিশালের হিজলা। নিচের তপ্ত বালু আর উপরে সূর্যের প্রখর রোদে পুরছে মানুষ। শিক্ষা-স্বাস্থ্য দেখার কেউ নেই; শোনারও কেউ নেই। নির্বাচনের সময় তাদের ভোট নিয়ে তেমন মাতামাতি করে না রাজনৈতিক দলগুলো। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ সে প্রক্রিয়ায় যুগের পর যুগ ভোট হয়ে আসছে; নির্বাচিত হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি। বিগত ইউনিয়ন নির্বাচন সুষ্ঠ হলে ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রচুর কারচুপি করে তাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, ফলে দেশের অন্যান্য জায়গায় ভোটের সময় ভোটারদের যে মূল্য বাড়ে, বিড়ি-সিগারেট-চা খাওয়ার ধুম পড়ে যায় চরে তেমন ঘটে না এবং চেয়ারম্যান সাহেবদের কাছে গেলে তাদের মূল্যায়ন করে না। কুসাইপট্টি ইউনিয়ন ও আলাওলপুরের কয়েকজন কৃষক জানালেন, বন্যা-সাইক্লোনে ঘর বন্দী থাকেন। প্রাণ হারায় মানুষ। কিন্তু সে খবর কেউ রাখে না। জনপ্রতিনিধিরা কোনো দিনই এ চরে আসেন না। চরগুলোতে প্রচুর খাস জমি। কিন্তু সরকারের নীতিমালা বা আইন মেনে সে জমি বন্দবস্ত দেয়া হয় না।

প্রভাবশালী আওয়ামী লোকজন জমির ফসল নিয়ন্ত্রণ করেন। চরের কৃষকদের গোত্রপ্রধানের ‘রায়ত’ হিসেবে চাষাবাদ করতে হয়; চলতে হয়; ‘কর’ দিতে হয়। ব্যতিক্রম করার চেষ্টা করলে চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয়। সমাজকর্মী মজিবুর রহমান জানালেন, “মাঝের চর না গেলে ‘চরের মানুষের জীবনযাপনের’ প্রকৃত চিত্র পাবেন না। পানিই তাদের জীবন পানিই তাদের মরণ। পদ্মায় পানি থাকলে মাছ ধরেন বিক্রি করেন। পানি না থাকলে মাছ পান না সংসারও চলে না। আবার পানি তাদের ঘিরে রেখেছে।” আমরা এ চরে নতুন এসেছি শুনে এক কৃষাণি মহিলা খেতে দিলেন সেদ্ধ মিষ্টি আলু। 28 বছরের জীবনে অনেক মিষ্টি আলু সেদ্ধ খেয়েছি। মাঝের চরের অচেনা মহিলার মিষ্টি আলুর স্বাদের মতো স্বাদ কোথাও পাইনি। আব্দুর রহমান নামে এক লোক জানালেন, ক’দিন আগেও মাছ ধরা ‘নিষিদ্ধ’ থাকায় জেলেদের ওই সব পরিবারের সদস্যদের উপোস থাকতে হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা চেয়াম্যানের লোকজন 40 কেজি চাউল দেওয়ার কথা থাকলে তারা দিচ্ছে-30-35 কেজি চাউল। আবার অনেকে জেলে হয়েও তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি, কিন্তু যারা জেলে নন অথচ চেয়ারম্যান সাহেবের লোক তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে চাউল দেওয়া হচ্ছে।

চরের বাসিন্দারা জানালেন, বিদ্যুৎ পাবেন এটা তারা বিশ্বাস করেন না। দু’তিনটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের ‘সোলার’ চক চক করা টিনের ঘরে শোভা পেলেও শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েন। কারণ কেরোসিন তেল কেনার মতো অনেক পরিবারের সচ্ছলতা নেই। চেয়ারম্যান সাহেব নির্ধারিত গোত্র প্রধান পরিবারগুলোর সদস্যদের অনেকেই দামি কাপড় পড়েন। আর এখান সাধারণ পরিবারের মহিলার এখনো একটি শাড়ি সম্বল। যৌতুক প্রথা ভয়াবহ হওয়ায় অসংখ্য তরুণী-যুবতী বাবা-মায়ের ঘরে রয়েছেন; টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছে না। কন্যাদায়গ্রস্ত কৃষক পিতারা মরমী শিল্পী আবদুল আলিমের ‘জমিদারের ইচ্ছামতো দেই না জমি চাষ/তাইতো ফসল ফলে নাকো দুঃখ বারো মাস’ নয়; গোত্র প্রধানদের ইচ্ছামতো জমি চাষাবাদ করে ভাল ফসল ফলালেও বারো মাস তাদের দুঃখ যায় না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:২৭

আরিফুর রহমান খান বলেছেন: প্রসঙ্গ নির্বাচনের জন্য অনুপ্রেরণা জানবেন

১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ,
উৎসাহ প্রদান করার জন্য।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

রমিত বলেছেন: এই আধুনিক যুগেও ভয়াবহ এক চিত্র তুলে ধরেছেন।

আপনার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

জনি চৌধুরী বলেছেন: ভাবতে অবাক লাগে আমরা বাইরে চাউল রপ্তানি করছি, বাইরে ত্রাণ পাঠাচ্ছি কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এখনো না খেয়ে মারা যাচ্ছে। আধুনিক সভ্যতা থেকে তারা অনেক দূরে! সমাজপ্রতি,রাজনীতিবিদ এবং সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। শুধু খাতা কলমে সম্পদ বৃদ্ধি না করে এই সব মানুষকে দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।

১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সালাম,
...........আপনার সাথেও সহমত পোষণ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.