নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলুপ্তির পথে যে সম্প্রদায়টি!

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬



এই ভারতীয় উপমহাদেশে একটি পেশার লোক যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে মনোরঞ্জন করে গেছে সামান্য কিছুর বিণিময়ে অথচ আজ তারা বিলুপ্তির পথে। কেউ বা তান্ত্রিক শিক্ষা করেছেন গুরুর কাছে কেউ দরগা শরীফে আবার কেউ কামা-কামরুপে গিয়ে সিদ্ধি লাভ করে গ্রাম গঞ্জে, হাটে-বাজারে মানুষদের কে বিভিন্ন ম্যাজিক ও শারীরিক কসরত দেখিয়ে ঔষধ, তাবিজ, কবজ ইত্যাদি বিক্রি করে নিজেদের পেট চালাতেন। তেমনি একটি সম্প্রদায় ছিল শরীয়তপুরের গোসাইরহাটসহ ততসংলগ্ন এলাকায়।



শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় এক সময় ফুটপাত ক্যাম্বাসার, হকার, ঔষধ বিক্রেতা, তাবিজ-কবজ বিক্রেতা, সাপুরিয়া, দরগা, মাজার শরীফের প্রতিনিধি, মসজিদ -মাদ্রাসার কাজে টাকা উঠানোর দল, মাইজভান্ডারী-মুশির্দি গানের দল, সালশা বিক্রেতা, হালুয়া বিক্রেতা, তারা বিড়ি, আকিজ বিড়ির ক্যাম্পাসার প্রভূতিদের পদ চারনায় মুখরিত থাকত হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্চ পদ ঘাট। কিন্তু এখন আর তাদের কে আগের মত দেখা যায় না। এই সব যারা দেখাতেন তাদের নাম এখনও মানুষের মুখে মুখে ফিরে আসে। তাদের মধ্যে হলো, গোসাইরহাটের রকমত আলী ভূইয়া (ম্যাজিশিয়ান) ডামুড্যা উপজেলার রশিদ মোল্লা (রইশ্যা) ম্যাজিশিয়ান কাম দাঁতের ডাক্তার, সখিপুরের দেলোয়ার মোল্লা (সালশা বিক্রেতা), রতন- তাবিজ বিক্রেতা, মোক্তার(তাবিজ + আঠারগুল্লি বিক্রেতা (রামরায়ের কান্দি, ডামুড্যা,) লিটন(রথি শক্তির সিরাপ বিক্রেতা) সহ আরো অনেকে।
তাদের পরে যুগে এই পেশায় আসেন-রকমত আলী ভূইয়ার বংশধর ফারুক ভূইয়া, রইশ্যা তিন ছেলের মধ্যে নামকরা হলো সিরাজ মোল্লা (দাঁতের মাজন বিক্রেতা), হাঁটুরিয়ার হালুয়া বিক্রেতা সূফি হুজর, কুমিল্লার ফলের টনিক বিক্রেতা আক্কাছ ভাই প্রভূতি। এছাড়াও বৈশাখের শুরুতে বরিশাল, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকে গোসাইরহাটে হকার, ক্যাম্পাসারা আসত। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখন আর হাটে খাটে দেখা যায় না। অনুসন্ধান করতে গিয়ে এর নানা বিধ কারণ পাওয়া গেছে।
- এই সম্পর্কে রকমত আলী ভূইয়ার ছেলে ফারুক ম্যাজিশিয়ান বলেন, আগে গলা কাটা, পেটে ছুরি ঢুকানো খেলা দেখালে মানুষ এসে ভির করত এবং মজা পেত আর সাধ্যমত আমাদের কে বখছিস (টাকা) দিত। কিন্তু এখন যুগ উন্নত হওয়ার কারণে মানুষ আগের মত আকর্ষণ বোধ করে না।তাই আমরা বাধ্য হয়ে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নাম লিখাবো ভাবছি। তবে রইশ্যার মাঝারো ছেলে সিরাজ ভাই বললেন অন্য কথা, তিনি জানালেন- আগে বাজারে দাঁতের মাঁজন বেঁচতে আসলে মানুষ কিনে নেওয়ার জন্য লাইন ধরত। কিন্তু এখন বিভিন্ন নামি দামী কোম্পানীর নাম করা পেষ্টের টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণে মানুষ এখন আর ছাই দিয়ে দাঁত মাজে না। তারা ভাবে এটি আদিম যুগের কাজ।


কবিরাজ দেলোয়ার ভাই জানালেন অন্য কথা, তিনি বলেন আমরা সারাদিন কষ্ট করে দুই চার টাকা আয় করি, তা থেকে আবার স্থানীয় পাতি মাস্তানদের বখরা দিতে হয়।এভাবে চলতে পারে না।

ক্যাম্পসার/হকারদে মানুষ ধান্ধাবাজ মনে করে, সমাজে তাদের ভালো চোখে দেখে না। সামাজিক আত্মীয়তা করার সময় মানুষ নানান কথা বলে বেড়ায়। তাই তাদের ছেলে মেয়েদের এই পেশায় না এনে অন্য পেশায় কাজ কর্ম শিখাচ্ছে। ফলে দিন দিন আমাদের মাঝ থেকে আমাদের পরিচিত ক্যাম্পাসার/হকার মুখ গুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।
হয়ত একদিন আর শুনতে পাওয়া যাবে না, আমি রইশ্যা, ছাতির ডাটা, আর পানের বটু দিয়ে দাঁত ফালাই।
কিংবা, আপনার সকলে হাত-পায়ের বান ছেড়ে দেন।
অথবা, বাবা শাহজালালের মাজারে যে যা পারেন আল্লাহরস্তে দান করেন।

তা সত্বেও, রইশ্যা যে জাদু মন্ত্র দ্বার রকমত আলী ভূইয়া কে মেড়া বানাইছে আর রকমত আলী ভূইয়া যে রইশ্যাকে তার পাল্টা জবাব হিসেবে ছাগল বাইছে তার কিচ্ছা কাহিনী গোসাইরহাটের মানুষের মনে থাকবে কয়েক শতাব্দি ধরে।


তবে আশার কথা হলো এখনও কিছু লোক এই পেশায় টিকে আছে। তারা এখন আর যাদু মন্ত্র দেখিয়ে ঔষধ বিক্রি করার পরিবর্তে দেশীয় গাছ গাছড়া দ্বারা বিভিন্ন সালসা/টনিক/যৌন উত্তেজক (তাদের ভাষায়) বিক্রি করেন। বেচা বিক্রিও নাকি ভালো। দেখা যাক সামনে কি হয়!


(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.