নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরবানিঃ কিছু ভুল ও সঠিক ধারণা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬



মুসলিম বিশ্বের দুটি খুশির দিনের একটি হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এই দিনের অন্যতম বড় ইবাদত হচ্ছে কুরবানি করা। একমাত্র আল্লাহর খুশির জন্য নিজের পছন্দের বা ক্রয়কৃত পশু কুরবানি করা হয়ে থাকে এই দিনে। কুরবানি যেহেতু বছরে একবার আসে তাই এর বিভিন্ন বিধি-বিধান ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এই লেখায় কুরবানি সংক্রান্ত সহিহ কিছু তথ্য থাকবে। একই সাথে থাকবে বেশ কিছু ভুল ধারণা ও বর্জনীয় কাজের বর্ণনা।

কুরবানি কার উপর ওয়াজিব
কুরবানি ঈদের প্রথম দিন, অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যে কেউ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারি হয় তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। নিসাবের পরিমাণ সম্পদের হিসাব হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদের মূল্যমান ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া। টাকার এই পরিমাণটা উল্লেখ করেছি দেশের বর্তমান সময়ে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সাথে মিলিয়ে।

এক কথায় বলা যায়, যদি জিলহজ্জের ১০ তারিখ সূর্যোদয় থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যের এই সময়ে আমার কাছে খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ, প্রয়োজনীয় বাড়ি-ঘর ইত্যাদির বাইরে উদ্বৃত্ত সম্পদের পরিমাণ ৫২-৫৫ হাজার টাকার মত হয় তাহলে আমার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য যে, যাকাতের মত কুরবানি ওয়াজিব হবার জন্য এই অতিরিক্ত সম্পদটা আমার হাতে ১ বছর গচ্ছিত থাকা শর্ত নয়। উক্ত ৩ দিনের যে কোন সময় অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলেই তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।

যার উপর কুরবানি ওয়াজিব না তিনিও চাইলে কুরবানি দিতে পারবেন। কিন্তু যার উপর কুরবানি ওয়াজিব তিনি কুরবানি না আদায় করলে ওয়াজিব ভঙ্গ করার গুনাহ হবে।

কুরবানি ও ঈদুল আযহার দিনে করণীয় কিছু কাজ
কুরবানির পশু নিজে জবাই করা। জবাই করা সম্ভব না হলে সামনে উপস্থিত থাকা। নবী (সাঃ) হজরত ফাতেমাকে (রাঃ) বলেছিলেন কুরবানির সময় উপস্থিত থাকতে।
পশু কুরবানির সময় যারাই ছুড়িতে হাত রাখবেন প্রত্যেককেই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। ছুড়িটি হতে হবে ধারালো।
কুরবানি দাতা নিজে জবাই না করে অন্য কাউকে দিয়ে জবাই করালে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি তাকে পারিশ্রমিক দেয়া উচিত। কারণ তিনি ছুড়ি ধার করা, ঝুকি নিয়ে পশু জবাইয়ের কাজটা করেন। এতে যেই পরিশ্রমটা হয় এর মূল্যায়ন আমাদের করা উচিত। মাদরাসার ছাত্ররা পশু জবাই করে দিবে যেন আমরা তাদেরকে চামড়া দেই এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। পশুর চামড়া পুরোটাও তাকে দিলেও সেটা কিন্তু তার সম্পত্তি হয়ে যাচ্ছে না। সেটা যাচ্ছে মাদরাসার ফান্ডে। তাই আমাদের উচিত পশু জবাই বাবদ তাদেরকে সম্মানী দেয়া। তবে কোন ক্রমেই এই সম্মানী চামড়া বা পশুর গোশতের দ্বারা দেয়া যাবে না। একই ভাবে কসাইদেরকেও কুরবানির চামড়া বা গোশতের দ্বারা পারিশ্রমিক দেয়া যাবে না। মেহমান হিসেবে তাদেরকে খাওয়াতে বা উপহার হিসেবে দিলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে পশুর দড়িটাও তাদেরকে দেয়া যাবে না।
কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে ঐ দিনের খাওয়া শুরু করা উত্তম।
জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে শরীরের কোন চুল, পশম বা নখ না কাটা উত্তম। বরং কুরবানির দিন কুরবানি করার পরে এগুলো কাটা সুন্নাহ। সে হিসেবে এ বছর ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যার পর থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত চুল, নখ কাটা থেকে বিরত থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদের দিন এগুলো কাটা উত্তম বা সুন্নাহ এর অংশ হবে। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে জিলহজ্জ মাসের শুরু হবে। তাই প্রয়োজন হলে শনিবার সন্ধ্যার আগেই এই কাজগুলোর সেরে ফেলা উচিত।
কারো যদি কুরবানি করার সামর্থ না থাকে তাহলে সে জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে শরীরের চুল, লোম বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে। এবং কুরবানির দিন এগুলো কেটে পরিচ্ছন্ন হবে। এটাই তার জন্য কুরবানি হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
কুরবানির গোশতের ৩ ভাগের এক ভাগ নিজের জন্য রাখা। বাকি দুই ভাগের ১ ভাগ গরিবদের আর আরেক ভাগ প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। অমুসলিমদেরকেও কুরবানির গোশত খেতে দেয়া যাবে। আমাদের গ্রামে প্রতিটা পশুর ৩ ভাগের এক ভাগ একত্রে জমা করা হয়। এরপর গ্রামে যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পরিমাণে গোশত বিতরণ করা হয়। ঈদের ঐ ২-৩ দিন আমাদের গ্রামের প্রতিটা ঘরেই গোশত রান্না হয়। গ্রামের অসংখ্য কুৎসিত জিনিসের মাঝে এই জিনিসটা সবচেয়ে ভাল একটা কাজের উদাহরণ।
যে সব কারণে কুরবানি শুদ্ধ হবে না
গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করলে
হারাম উপার্জনের টাকায় কুরবানির পশু ক্রয় করা হলে
‘আল্লাহ খুশি হবেন, আবার গোশতও খাওয়া হবে’ এমন চিন্তা করে কুরবানি করলে
কুরবানির পশুর ভাগিদারদের মধ্যে কোন একজন ভাগিদারের নিয়তে ঘাপলা থাকলে বাকিদের কুরবানিও শুদ্ধ হবে না
ভাগিদারদের মধ্যে কোন একজনেরও যদি পশু কেনার টাকা হারাম উপার্জনের হয়ে থাকে তাহলেও কারো কুরবানি শুদ্ধ হবে না
জিলহজ্জের ১০ তারিখ ফজরের আগে ও ১২ তারিখ মাগরিবের পরে কুরবানি করলে কুরবানি আদায় হবে না
‘বড় গরু কুরবানি না দিলে কি ইজ্জত থাকে?’ এমন লোক দেখানো মনোভাবের কারণেও কুরবানি শুদ্ধ হবে না

কুরবানির পর শরীকদের নাম উচ্চারণ করে পাঠ করা একটি অহেতুক কাজ

গরু কুরবানির ক্ষেত্রে একটা miss concept আছে অনেকের মধ্যে যে ভাগ হতে হবে বিজোড় সংখ্যায়। ১, ৩ বা ৭ এরকম। পুরোটাই বোগাস একটা চিন্তা। একটা গরু ১ জনের নামে কুরবানি করা যেতে পারে, ২ জন, ৩ জন, ৪ জন, ৫ জন, ৬ জন বা ৭ জনের নামেও কুরবানি করা যাবে। জোড়-বিজোরের কোন মাহাত্ম এই ক্ষেত্রে নাই। কোন একটা গরুর ৭ ভাগের মধ্যে কারো যদি আক্বিকার ভাগ থাকে তাহলেও কুরবানি-আক্বিকা উভয়ই শুদ্ধ হবে।

পশু জবাইয়ের পর হুজুররা কুরবানি দাতাদের পীড়াপিড়িতে একটা কাজ করতে বাধ্য হন। তা হচ্ছে ৭ শরীকের সবার নাম, বাবার নাম পড়া। কুরবানি নিয়ে যতটা না সবাই চিন্তিত হয় তার চেয়ে বেশি চিন্তিত হয় নামটা ঠিকঠাক পড়া হল কিনা। ব্যাপারটা এমন যে, হুজুরের মুখে কুরবানি দাতার নাম উচ্চারণ না করলে যেন আল্লাহ কুরবানি দাতার ব্যাপারে জানবেনই না (নাউযুবিল্লাহ)। শুধু শরীকের নাম বললেই হবে না, তার বাবার নাম বলতে হবে। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে আবার সিসটেম আলাদা। স্বামীর নাম বলতে হবে!!! stupidity at it’s best!!!

কুরবানির জন্য সেরেফ মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। হুজুরকে দিয়ে কুরবানি দাতার নাম ও কুষ্ঠি পাঠ করানোর মধ্যে নূন্যতম কোন extra good things নাই। আল্লাহ আমাদের সকলের মনের খবর জানেন। হুজুর জবাইয়ের পরে আপনার নামের জায়গায় ভুলে আমার নাম বললেও কুরবানি কিন্তু আপনারটাই আদায় হবে। আমারটা আদায় হবে না। তাহলে কেন এই নাম পড়ার আয়োজন করা হয়? আসুন এবারই এই অহেতুক কাজটা এড়িয়ে যাই।

কুরবানির দিন মুরগি জবাই নিয়ে গ্রাম্য একটা ভুল ধারণা
আমাদের গ্রামে কুরবানির দিন কোন বাড়িতে হাস-মুরগি জবাই করা কঠিন ভাবে নিষেধ। গ্রামের মুরুব্বিরা তাদের মুরুব্বিদের থেকে শুনে আসা ভ্রান্ত ধারণার লালন করেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। এখন থেকে ৮-১০ বছর আগে গ্রামে গিয়ে শুনি “কুরবানির দিন দো পায়া জানোয়ার জবাই করা নিষেধ”। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন ইসমাঈল (আঃ) এর মানুষ ছিলেন আর মানুষ হিসেবে তাঁর ছিল দুই পা। তাই হাস-মুরগি জবাই করলে তা ইসমাঈল (আঃ) এর দিকেই ধাবিত হয়। এই ফালতু কথা আমাদের গ্রামের লোকজন কোথা থেকে পেল জানি না। আমি মাদরাসায় পড়ার সুবাদে আমার টিচারদের সাথেও তাদেরকে কথা বলিয়ে দিলাম। তারা সেইসব কথা মানতে নারাজ। তাদের মতের বাইরের কোন তথ্য সামনে আসলেই তারা নবীর (সাঃ) যুগের ইসলাম বিরোধীদের মত বলে ওঠে “বাপ-দাদা, ময়-মুরুব্বিরা যেগুলা কইরা গেছে তারা কি ভুল আছিল? তোরা দুই লাইন সিপারা পইড়াই বিরাট তালেবর সাজোস!!! কত নতুন নতুন হাদীস শুনাবি আর???” আমাদের মানিকগঞ্জ জেলায় এইরকম বেশ কিছু কুসংস্কারের লালন-পালন হয়ে আসছে বহুদিন থেকে। অন্যান্য জেলাতে এই ধারণা আছে কিনা আমার জানা নাই। পাঠকের কাছে অনুরোধ থাকলো আপনার জেলার এরকম মনগড়া ব্যাপারগুলো শেয়ার করার জন্য।

কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে আরেকটা ভয়ংকর রেওয়াজ। যারা গরিব বা কুরবানির সামর্থ নাই তারা কুরবানির নিয়তে মোরগ জবাই দিয়ে থাকে। এটাও সম্পূর্ণ নিষেধ। কুরবানির নিয়তে গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়া, মহিষ ব্যাতিত অন্য কোন পশু কুরবানি জায়েজ নাই। ঈদের দিন সকলেই ভাল খাবার খেতে চায়। সে হিসেবে হাস-মুরগি জবাই করে খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু মনের মধ্যে এই নিয়ত রাখা যাবে না যে “আমি যেহেতু কুরবানি দিতে পারছি না, তাই মুরগি জবাই করি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য”।

তথ্য সূত্র: Click This Link


http://hellohasan.com/2016/09/02/কুরবানি-ভুল-সঠিক-ধারণা/


http://www.holyworld.org/ঈদের-গুরুত্ব-ও-তাৎপর্য-এব/



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সঠিক সিদ্ধান্তে আসা গেল না। কারণ, আমি নিজেও ব্যপারটা নিয়ে কয়েকদিন নেটে অনেক সার্চ করলাম।
১. কুরবানী ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন অনেক আলেম। এর সাথে সাথে এটাও বলেছেন যে, সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানী না দেয়ার জন্য গুনাহগার হবে না কেউ, যদিও বিপুল সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
The scholars (may Allah have mercy on him) differed with regard to the ruling on udhiyah: is it obligatory or Sunnah mu’akkadah (a confirmed Sunnah)? The correct view is that it is Sunnah mu’akkadah for the one who can afford it, but there is no sin on the one who does not do it.
https://islamqa.info/en/145105
২. কুরবানীর মাধ্যমে আকীকা দেয়ার ব্যপারে আপনি শুদ্ধ বলেছেন। কিন্তু অনেকে এটা সহীহ হবে না বলে দিয়েছেন। এমনিতে সাধারণ যুক্তিতে দেখলেই বোঝা যায় এটা সহীহ হবে না। কারণ, ছেলে হলে দুইটি ছাগল বা বকরী, মেয়ে হলে একটা ছাগল আকীকা দিতে হবে। তাহলে কুরবানী দিতে গিয়ে এক নিয়ত করে আবার ঐটার মধ্যে আকীকাকে মেলানো কি ঠিক হবে? তাছাড়া গরুর এক ভাগ কোন যুক্তিতে আকীকা দিবেন আপনি যেখানে আপনাকে নির্ধারিত ভাবে ছাগল, ভেড়া দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
৩. কুরবানীর গোশত ভাগ নিয়েও একটা কনফিউশন ছিল আমার মধ্যে। কারণ, আমরা কেউই ৩ ভাগ করে ১ ভাগ গরীব, ১ ভাগ আত্মীয়, ১ ভাগ নিজেরা খাই না। এটা করাও জটিল। তবে এখন জেনেছি এ ব্যপারটা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
আরো আলোচনা করা উচিত। ধন্যবাদ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মন্তব্য করার জন্য:

১। : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।
দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ।

যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :
(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন :
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
'তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।'[১৭]
আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন :
من وجد سعة ولم يضح، فلا يقربن مصلانا. رواه أحمد وابن ماجه، وصححه الحاكم.
'যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।'
যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।

কোরবানী সুন্নত হওয়ার পক্ষে যুক্তি: যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :
(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :
إذا رأيتم هلال ذي الحجة، وأراد أحدكم أن يضحي، فليمسك عن شعره وأظفاره، حتى يضحي. رواه مسلم ১৯৭৭
'তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।'[২০]
এ হাদিসে রাসূল স.-এর 'যে কোরবানি করতে চায়' কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।
(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়

এখন কোনটা মানবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করছে।

২। কুরবানি ও আকীকা আলাদাভাবেই করা উচিৎ। তবে একত্রে করলে আদায় হবে না তা নয়। একত্রে করলেও কুরবানী-আকীকা দুটোই আদায় হবে। কারণ আকীকাও এক ধরনের কুরবানী। হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই-
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا أحب العقوق كأنه كره الاسم، قالوا يا رسول الله! نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان مكافأتان، وعلى الجارية شاة.
(দ্র. আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়) ২৮৪২; আস-সুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪ হাদীস : ২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক, হাকিম, ৫/৩৩৭, হাদীস : ৭৬৬৬)
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.
(দ্র. আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮)
আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত)।

এখন এটাও নির্ভর করছে আপনি কোনটা নির্ভর করেছে। কারণ আল্লাহ্ আপনাকে বুঝার জ্ঞান দিয়েছেন।

৩। কুরবানীর গোশত ভাগ নিয়েও একটা কনফিউশন ছিল আমার মধ্যে। কারণ, আমরা কেউই ৩ ভাগ করে ১ ভাগ গরীব, ১ ভাগ আত্মীয়, ১ ভাগ নিজেরা খাই না। এটা করাও জটিল। তবে এখন জেনেছি এ ব্যপারটা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
আরো আলোচনা করা উচিত। ধন্যবাদ।

আসলি বিষয়টি নির্ভর করেছে আপনি কোন মতবাদ গ্রহন করেছেন। যেমন: হানাফী, নাকি শাফি, অথবা হাম্বলী নাকি প্রচলিত বিশ্বাস।

তবে তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রেখে দিয়ে আরেক ভাগ গরীব আত্মীয় স্বজন এবং একভাগ গরীব মানুষ কে দেওয়া উত্তম। এটা অনেকে আলেমদের অভিমত।

আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

আর এই সমস্ত ছোটখাট জিনিষ নিয়ে মতবিরোধ কিংবা দলাদলি না করাই উত্তম।
আপনার সামর্থ্য থাকলে কুরবানি দেন এবং তা গরীব মিসকিনদের নিকট বন্টন করুন। এতে সমস্যা হওয়ার কথা না।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১

নতুন বলেছেন: আমাদের গ্রামে প্রতিটা পশুর ৩ ভাগের এক ভাগ একত্রে জমা করা হয়। এরপর গ্রামে যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পরিমাণে গোশত বিতরণ করা হয়। ঈদের ঐ ২-৩ দিন আমাদের গ্রামের প্রতিটা ঘরেই গোশত রান্না হয়। গ্রামের অসংখ্য কুৎসিত জিনিসের মাঝে এই জিনিসটা সবচেয়ে ভাল একটা কাজের উদাহরণ।

এর ভেতরে ভিলেজ পলিটিক্স আছে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মন্তব্য করার জন্য।

দেশে দশ টাকার জন্য মানুষ খুন হয়েছে এটা অনেকে শুনেছি। কিন্তু কুরবানির গোশত নিয়ে ভিলেজ পলিটিক্স বা কোন রাজনীতি হয়েছে এটা আমার জানা নেই। আর ভবিষ্যতে হবেও না বলে আমার বিশ্বাস।

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫০

আহলান বলেছেন: ভালো পোষ্ট ...

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।
ভালো থাকবেন দিবা নিশি।

অগ্রীম ঈদ মোবারক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.