নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি’ সফিক কাকা ও তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯



রাত তিনটা। মোবাইলের টোনটা বেজে উঠল,

সূর্যোদয়ে তুমি
সূর্যোস্তেও তুমি
ও আমার বাংলাদেশ
প্রিয় জন্মভূমি।

অপরিচিত নাম্বার।
মনে মনে বিরুক্ত হলাম। এত রাতে কে? শিলা! ইদানিং মেয়েটার কান্ড জ্ঞান লোপ পেয়েছে। নিজে সারা রাত জেগে থাকে আর কাছের মানুষকে ফোন দিয়ে রাজ্যের আলাপ শুরু করে দেয়। প্রথম প্রথম সহ্য করলেও বতর্মানে সহ্যের সীমা ছেড়ে গেছে। সাত পাঁচ ভেবে ফোনটা রিসিভ করলাম। না শিলা নয় সবচেয়ে পরিচিত কণ্ঠ, নানুমনি। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল; তোর ছোট খালাকে সাপে কাঁটছে। ট্রলার যোগে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিতে হবে। তোকে ট্রলারের সাথে করে যেতে হবে।

ছোট খালার কথাটা শুনে কেমন জানি হয়ে গেলাম। আমার খালা (সেকেন্ড মাদার)। বয়েসে চার-পাঁচ বছরের বড় হলেও আমার সাথে ছিল গলায় গলায় ভাব। খালার বান্ধবী মহলে ছিল আমার বিশেষ নাম ডাক। তাদের বিশেষ কোন অভিযানে মেয়েদের পক্ষে যেটা দু:সাধ্য সেরকম কিছু হলে আমার ডাক পড়ত। আমিও আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিষ্ঠার সাথে পালন করতাম। আজ ছোট খালার বিপদ। বিছনা থেকে এক লাপে উঠলাম। গায়ে হাতা কাটা জামাটা জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম খালা বাড়ির উদ্দেশ্যে। খালা বাড়িটা ছিল আমাদের বাড়ির পূর্বে। মাঝখান দিয়ে এক বিশাল বিল। বিলের মাঝে একটা উন্মুক্ত ডোবা আছে। বর্ষার শেষের দিকে পানিতে যখন টান পড়ে তখন বিলের মাছ এই ডোবাতে আশ্রয় নেয়। শীত শুরু হলে মানুষজন সেখানে মাছ ধরতেন। আমাদের পাড়ার ছেলেদের ছোট বয়সে একটা কথা সব সময় শুনে বড় হতে হয়েছে, ভুলেও যেন একা ডোবাতে না যাই। সন্ধ্যার পরে 144 ধারা জারি। পরে যখন বড় হয়েছে তখন পাড়ার ছেলেরা মেলে সেখানে রাত্রে পিকনিক করেছি।

আমি হাটছি খালা বাড়ির দিকে, বিশাল বিল। জোছনা রাত। হালকা শীত, হুহু করে বাতাস বইছে। মনে খালাকে নিয়ে দু:শ্চিন্তার ছাপ। হাঁটছি। এমন সময় পিছনে থেকে পায়ে চলার শব্দ এল। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি সফিক কাকা। গাঁয়ের লোম হালকা খাঁড়া হয়ে গেল। আমি সহজে ভয় পাওয়ার ছেলে নই। তারপরও মনে অটো বিপ্ দিল। আমি কতক্ষণ থ’ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। আমার নিরবতা ভাঙতে সফিক কাকা মুখ খুললেন। আরে শাহাদাৎ, তুই কই যাস?
ছোট খালার বাড়ি।
এত রাত্রে?
খালাকে সাপে কাঁটছে।
বলিস কি! আমরা ত’ জানলাম না।
হয়ত কেই বলেনি তাই জানেন না। মনে হয় বেশিক্ষণ আগে কাঁটেনি। রাত্রে ঘুমিয়ে ছিল, ঘুমের মধ্যে কামড় দিছে।
ও আচ্ছা।
ত’ কাকা এত রাত্রে আপনি কই যান?
কোথাও যাই না। বটতলায় বসে ছিলাম। দেখলাম এই পথে কে জানি আসে। সামনে এগিয়ে দেখলাম তুই। তারপর ভাবলাম ছেলেটাকে এগিয়ে দেই। ডোবার পাড়ে গিয়ে ভয় পেতে পারে।

না কাকা আমি ভয় পাব না। আর ভয় পাবার ছেলে আমি না।
জানি। তয় সাহু (শাহাদাৎ কে পাড়ার মানুষে সংক্ষেপে ‘সাহু’ বলে ডাকে) আমার আর ভালো লাগে না। দেশে যে হারে হাসু আপার বিদ্যুৎের জোয়ার বইছে তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।
বিদ্যুতায়ন হলে ত’ ভালো। মানুষের উন্নতি হইবে।
মানুষের উন্নতির কথাই ভাবলি। আমাদের কি হইবে?
ধর্য ধরেন, আল্লাহ্ একটা ব্যবস্থা করে দিবে। আপনি মাস্টার্স পাস করেও বেকার। বর্তমান ঘুষের বাজারে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। আপনি গরিব। আপনার মামা-খালু নাই। দেশে আপনি যোগ্যতা অনুসারে কাজ করতে পারছেন না। এটা আমি জানি। আমার অবস্থাও বেশি ভালো না। সামনে যে ভালো কিছু করমু তার আশা নাই।

জানিস সাহু। আমার তোকে খুব পছন্দ হই। মাঝে মাঝে মন চায় তোরে আমার সঙ্গী করে রাখি। কিন্তু তোর ভিতর কি জানি একটা জিনিস আছে, তার জন্য আগাতে পারি না।

কাকা আপনি আমারে বিপদের-আপদে ডাকবেন। যটতা পারি শান্তনা দেব।

বিপদ!
বিপদ কথাটা শুনে সফিক কাকা হুহু করে হেসে উঠলেন। তারপর আমার দিকে চোখ একটু বড় বড় করে তাকালেন। আমার পাশাপাশি হাঁটা সফিক কাকার দিকে জোছনার আলোতে তাকিয়ে কিছুটা ভরকে গেলাম। সফিক কাকার মুখে বিপদ কথাটা শুনে রাগের অবয়ব কেন ফুটে উঠল ! তারপর নিরবতা ভেঙ্গে আমি আবার মুখ খুললাম।

কাকা বটতলায় কি করছিলেন।
অহেতুক প্রশ্ন করিস না। তাহলে তোকে এখন বটতলায় নিয়ে দেখাব সেখানে কি করেছিলাম।
না থাক, আমি আপনার মনটাকে খারাপ করে দিছি। সেই জন্য দু:খিত। তবে কাকা আমার একটা আবদার, আপনার চাকরি হলে আপনার অফিসে আমাকে একটা চাকরি দিবেন। আমিও দু’বছর গ্যাপ খেয়ে এবার মাস্টাস পাস করব।

হু; সাহু তোর খালা বাড়িটা দেখা যায়। আর ডোবার পারটাও পার করে এসেছি। এখন যাইতে সমস্যা হবে না তো?

না কাকা। আমি যাইতে পারমু। আপনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন সেই জন্য ধন্যবাদ।
তাহলে আমি যাই?
যান কাকা। পরে কথা হবে।

এ কথা বলে সফিক কাকা হনহন করে পিছনের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। আমি শুধু একবার পিছনের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখলাম সফিক কাকার দুই মিনিটের পথ 2 সেকেন্ডে অতিক্রম করেছেন। আস্তে আস্তে এই গতিবেগ বাড়তে থাকল। আমার বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে গেল। কিছুক্ষণ তাজ্জব মনে গেলাম। আমি কার সাথে কথা বললাম। একি সফিক কাকা!

পরক্ষণে মনে পড়ল। সফিক কাকা’ত দু বছর আগে নিঁখোজ হয়েছেন। কাকার বাড়ির মানুষ বলে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। পরে থানায়, র্যা ব সদর দপ্তর এমনকি ডিবিতে যোগাযোগ করেও তার কোন হদিস পায় নাই। কাকার মা’ এখনও ছেলের কথা স্মরণ করে বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন। নতুন করে কারো সাথে দেখা হলে জিঙ্গেস করেন, আমার সফিরে দেখছ, সফিরে? কেউ উত্তর দিতে পারে না। সবাই নিরব থাকে।

ভয়ে আমার শরীল কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি জোরে চিৎকার দিবো ভাবছি, “সফিক কাকাকে পাওয়া গেছে, সফিক কাকাকে; কে কোথায় আছ সফিক কাকাকে পাওয়া গেছে”।
কিন্তু ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম সফিক কাকা নেই। জোছনার আলোতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার সম্মিত ফিরে এলো। কিছুক্ষণ পর কানে জোড়ে জোড়ে ড্রামের বাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজটা আমার খালা বাড়ি থেকে আসছে। খালা যে ট্রলারে করে যাবেন তার সাথে ওজারাও (বৈদ্য বা সাপে কাঁটা গ্রাম্য চিকিৎসক) যাবে। তারা সাপের বিঁষ নামার সময় ড্রাম বাজিয়ে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীর দোহাই দিয়ে থাকেন। যাতে বিষ দ্রুত নামে। আমিও মনে মনে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীর দোহাই দিয়ে বললাম, সফিক কাকাকে ফিরিয়ে দাও। সফিক কাকাকে ফিরিয়ে দাও।। সফিক কাকাকে ফিরিয়ে দাও।।। বলে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নিচে তাকালাম। না সফিক কাকা ফিরে আসেনি।
তারপর খালা বাড়ির দিকে আবার হাটা শুরু করলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

গ্যাব্রিয়ল বলেছেন: সফিক কাকারা আর ফিরে আসবে না। জোছনা.. হয়ে গেছে।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: তবে আশায় থাকি সফিক কাকা একদিন ফিরে আসবে। এসে বলবে, জানিস সাহু আমার বড় চাকরি হয়েছে। বাড়ি থেকে মেয়ে দেখতে শুরু করেছে। মা’ একটা মেয়ে পছন্দ করেছে। মেয়েটা দেখতে সুমির মত। আরে ঔযে সুমি!

আর একটা কথা। আমার অফিসের বস্ কে তোর কথা বলেছি। সে মনে হয় তোকে পছন্দ করবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.