নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসমাপ্ত পূর্ণ দৈঘ্য প্রেম কাহিনী।।

১২ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৩৭


ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত

অনেক দিন পর শিলার সাথে দেখা। সর্বশেষ তিন বছর আগে হাইমচর নদী রক্ষা বাধের উপর হাঁটতে দেখে ছিলাম। সাথে তার স্বামী ছিল। নব বিবাহিত দম্পতি। আমি যে সময় তাকে দেখে ছিলাম তখন তার গায়ে কাঁচা হলুদ আর মেহেদীর গন্ধ লেগে ছিল, আমি সে গন্ধ বাতাস থেকে শুকে ছিলাম। তার পায়ে হাই হিল জোতা পরিহিত ছিল। হাতে শাড়ির ভাঁজ ধরে যখন হাঁটতে ছিল তখন তার সমস্ত শরীল যেন নৃত্য করেছে। সেদিন শিলার ভিতর এত চাঞ্চল্য দেখে অবাক হয়েছি। দুনিয়ার সমস্ত সুখ, অনুভূতি আর আবেগ তার মধ্যে খেলা করছে। মেয়েদের বিয়ে হলে প্রথমবস্থায় সোয়ামীর আদর সোহাগে এধরণের অবস্থা বিরাজ করে! সেটি শিলাকে দেখে প্রথম বুঝে আসে।

শিলার অদূরে বয়ে চলা মেঘনার বড় বড় ঢেউগুলো যখন কংক্রিটের বাধে এসে যখন আঘাত হানছে তখন জল এবং কংক্রিটের ঘংর্ষণে একটা মোহনীয় আওয়াজ তুলছে। মাঝ নদীতে বড় মালবাহী কার্গো আর জাহাজ চলাচল করে। লঞ্চগুলো চলে যায় বিভিন্ন গন্তব্যে, কিছু পাখি আকাশে এদিক ওদিক উড়াউড়ি করে। দল বেঁধে মানুষের পায়ে হেঁটে চলা। মাঝে মাঝে জেলেদের মাছ ধরা সব কিছু মিলে যেকোন বিষন্ন মনকে মহুর্তে ভালো করে দিতে পারে। কিন্তু আমি তখন দৌড়ের উপর আছি, ফেরারী। পুলিশ আমাকে পাগলের মত হন্য হয়ে খুঁজছে। বার বার স্থান পরিবর্তন করি। মোবাইল ওপেন করা একেবারে নিষেধ ছিল।

আগে মেঘনার যে চরে আত্মগোপন করে ছিলাম তার নাম ছিল মিয়ার বাজার। এটি হাইমচর উপজেলার নীলকমল এর অন্তর্ভুক্ত। মিয়ার বাজারের পশ্চিম দিকে এবং পূর্ব দিক দিয়ে মেঘনার দুটি শাখা নদী চলে গেছে। তারও অনেক উত্তরে মাঝি বাজার, আর দক্ষিণ পূর্বে দিকে কোরাইল্লা। এই মিয়ার বাজারের একটা সুবিধা হলো তার পশ্চিমে যে মেঘনার পাড় রয়েছে সেটি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, আর পূর্বে দিকে যে পাড় রয়েছে সেটি চাঁদপুরের হাইমচর। মাঝ খানে চর পরে নদীকে দুটি শাখায় বিভক্ত করেছে। তাই দুটি জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে পুলিশের দাবড়ানি এবং দৌড়ানি থেকে মুক্তি পেতে আসামীরা এখানে অবস্থান করে। দুদিকে নদী এবং সড়ক পথ না থাকায় আসামীদের বাড়তি সুবিধা হয়। আমি মাস দুয়েক এখানে ভালোই ছিলাম। কিন্তু এখানকার এক লোক আমাদের এলাকায় বেড়াতে গেলে তার মাধ্যমে আমার সর্বশেষ অবস্থান ফাঁস হয়ে যায়। পুলিশ অবস্হান নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান কে ফোন দেয়।চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে নিয়ে গাট্টি গোল করে এলাকা ত্যাগ করার জন্য আদেশ দেন। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বে বাধ্য হয়ে নদী পাড়ি দিয়ে এপারে- হাইমচরে বড় চাচাদের বাড়িতে উঠেছি। প্রিয় মানুষদের মুখ অনেক দিন ধরে দেখি না। শিলা কে নদীর বাধের উপর দেখতে পাব এটা কল্পনাতেও ছিল না। সামনে গিয়ে তার সাথে চোখাচোছি হলো। আমাকে দেখতে পাওয়াটা তার কাছে কৌতূহল এবং অদ্ভুদ মিশেলের অনুভূতি কাজ করেছে, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। আমাকে দেখেই প্রশ্ন করল-
- তুই?
- হ. আমি!
- এখানে কিভাবে আসলি?
- কেন, জেল হাজত কিংবা পুলিশের কাছে দেখলে খুশি হতি?
- বিষয়টা সেরকম না, তোকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অজ্ঞাত।
- তুই’ ত খুঁজে পেলি, এখন জ্ঞাত। তাই কি করবি বল।
- চল একসাথে হাঁটাহাটি করি, ঘুরে বেড়াই।
- তোর সোয়ামী কিছু বলবেনা।
- কিছু জিঙ্গেস করলে বলব আমার এলাকার বড় ভাই।
- আমি মৃদু হাসলাম।
- হেসে উঠলে কেন?
- ঐ দেখ তোমার সোয়ামী আসছে।
বাঁধের উপর এলাকার গরীব ছোট ছোট ছেলেরা গামলা(তাগাড়ি) করে বাদাম বিক্রি করে। শিলার সোয়ামী বাদাম কিনে ফিরে আসছে। আমি শিলাকে বললাম, এখন যাই। শিলা বলল, বাদাম খেয়ে পরিচয় হয়ে যাও। আমি কিছু না বলে দ্রুত হাটা শুরু করলাম। কিছু দূরে গিয়ে পুনরায় পিছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখি দু’জনে বাদাম খেয়ে হাঁটছে আর খুনসুটি করছে। যেন দুনিয়ার সমস্ত সুখ তাদের উপর ভর করছে। সে সময় আমার কথা জিঙ্গেস করেছিল কিনা কে জানে!

আমি দুটি কারণে সেদিন সেখান থেকে চলে এসেছিলাম-

এক. আমার আর শিলার মাঝে তৃতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি চাইনি।
দুই. আমার অবস্থানগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।

তারপর তিন বছরে নদীর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। আমি প্রশাসনিক সেফ হলাম। মানুষের কূট কৌশল আর হয়রানি না করলে আমি আজীবন সেফ থাকতাম, আর এত দিনে শিলাও আমার হত। এখন মুক্ত জীবন যাপন করছি।ক র্মস্থলের সূত্র ধরে নানান জায়গা ঘুরে বেড়াই। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে আজ বাসে শিলার সাথে দেখা। আমার পাশের সিটে বসে আছে। চিন্তে অনেক কষ্ট হয়েছে। চেহারায় আগের মত দুধে আলতা কচি রং নেই। মনে হলো জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক ভগ্ন হৃদয়ে কারো করুণায় বেঁচে আছে। আমাকে দেখে মুখ আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগে আমি তাকে আবিস্কার করে ফেলেছি। ঘোর কেঁটে বলে উঠলাম;
- তুই?
- হ. আমি।
শুধু এটুকু বলার পর বাস স্টপে এসে থামল। শিলা নেমে গেল। আমি চেয়ে রইলাম।

পরে খবর নিয়ে জানলাম, তার বিবাহিত জীবন ভালোই চলছিল। হঠাৎ এক ঝড় এসে তার জীবন কে লন্ডভন্ড করে দেয়। শিলা অসুস্থ্য হলে তাকে তার সোয়ামী ঢাকা নিয়ে আসে ভালো ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার দেখার পর ফিরতি পথে বাস এ্যাকসিডেন্টে শিলার স্বামী মারা যায়। ভাগ্য গুনে শিলা বেঁচে গেলেও পায়ে মারাত্মক আঘাত পায়। শিলা হাসপাতালে প্রায় এক মাস থাকার পর স্বামীর অকাল মৃত্যুর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে পুনরায় স্বামীর বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু মৃত ছেলের বউ দিয়ে কি হবে? অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে স্বশুর বাড়ির লোকজন প্রথম অবস্থায় রাজি ছিল না, কিন্তু পেটে অনাগত সন্তান দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি হয়। কিন্তু শিলা মেয়েটার ভাগ্য এতই দুভাগ্য যে মৃত সন্তান প্রসব করে। তাই সন্তান জন্মের পরপরই শিলার স্বশুড় বাড়ির লোকজন প্রথম অবস্থায় কটুক্তি, পরে বিভিন্ন রকম হেনস্তা শুরু করে। তাই বাধ্য হয়েই শিলা স্বশুড় বাড়ি ত্যাগ করে বাপের বাড়ি চলে আসে। কিন্তু পরিবারে ভাই ভাবীদের সংসার আর বাপ রিটায়ার্ট করার কারণে সেখানেও নিজের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য দেখতে পেয়ে অবশেষে ঢাকাতে বড় মামার বাসায় চলে আসে। মামার সহায়তায় একটি কোম্পানীতে ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ হিসেবে জব নেয়। শিলার সাথে কিভাবে আমার পরিচয় হয়েছে কিংবা তার সাথে আমার কি সম্পর্ক ছিল সে কথা পরে বলব। তার আগে ভাবছি মেয়েটাকে মানুষিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য পাশে দাঁড়ানো দরকার।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:১২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: পাশে দাঁড়ানো দরকার মানে! এখনই শীলার পাশে দাড়ান।

১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আসলেই মেয়েদের সামাজিক অবসস্হান সুরক্ষিত নয়।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।।।

২| ১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভাই, বড় দুঃখজনক গল্প, আরো দুঃখজনক মনে হল শিলার স্বামী গত হওয়া। আমার খুব খারাপ লাগছে শিলার জন্য। আপনাকে বলার মতো কিছু নেই, সাহস পাচ্ছি না, তবে আপনার শেষ লাইন পড়ে মনে একটা ভালো লাগা বয়ে গেল। আল্লাহ্ সবার গতিই করেন, দেখেন। আপনার সাথে সাক্ষাৎ আমি সেরকম কিছুই মনে করছি। শেষ পর্যন্ত ভালো লাগলো।

আপনার গল্প লেখার ধরণে ভালো লাগা রেখে গেলাম ভাই। পাঠক ধরে রাখার ব্যবস্থা আছে লেখনিতে।
শুভকামনা জানবেন শাহাদাৎ ভাই।

১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনার ম ন্তব্যে ঘটনার সার সংক্ষেপ থাকে। আর মন্তব্যের পজিটিভ দিক হলো উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণ।

বরাবরের মত এবারো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

ওমেরা বলেছেন: আল্লাহ মানুষকে বিপদ আপদ দিয়ে পরিক্ষায় ফেলেন আবার তিনিই কোন না কোন ভাবে সেখান থেকে উদ্ধার করেন । ভাল লাগল ধন্যবাদ ।

১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: একদম ঠিক কথা বলেছেন।

পাঠ ও মন্তব্য করার জন্য আপ্নাকেও ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আপনি দেখি চমৎকার গল্প লিখেন।
মন খারাপ করা গল্প হলেও ভালো লেগেছে।

১২ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ আপু, পাঠ ও মন্তব্য করেছেন।

৫| ১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:০৩

সুমন কর বলেছেন: পুলিশ আপনাকে কেন খুঁজছে, সেটা গল্পে বলেন নি। বর্ণনাও মোটামুটি। এসব মিলিয়ে ভালো লাগেনি।

১৩ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:১৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনি ঠিকই ধরেছেন, বর্ণানা মোটামুটি মানের। কয়েকবার রিভিউ দেয়া দরকার ছিল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪৩

তানুন ইসলাম বলেছেন: আসলে মনের মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গেলেও,মন থেকে কখনো হারায় না

১৩ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ঠিক কথা বলেছেন।

মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.