নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেমা-কালেঙ্গার জঙ্গলে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬





হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ছোট্ট শান্ত শহর চুনারুঘাট। সেখান থেকে মাত্র ১৬ কিঃ মিঃ দূরে শান্ত শুনশান পাহাড়ের কোলে সবুজ বনাঞ্চল। সেই সবুজ সৌন্দর্যের মাঝে বন্য পরিবেশে বাগানঘেরা এক বনবাংলো। সেখানে নিশ্চিত নির্জনতার ছায়া আগলে রাখে অলস আরামদায়ক মুহূর্তগুলো। প্রিয় ছুটি আর উড়ু উড়ু মন নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা।:DB-)



যাত্রার শুরুটা ২৫শে মার্চ রাতের ঢাকা-সিলেট ট্রেন ধরে। ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর ১২ জন এবারের সফর সঙ্গী। সময় মত ১১ জন কমলাপুরে হাজির হলেও রাসেল ভাইয়ের দেখা নেই। আমরা সবাই ট্রেনে উঠে পড়েছি। ট্রেন চলতেও শুরু করেছে কিন্তু রাসেল ভাই নেই। এমন সময় রাসেল ভাইয়ের ফোন। রিসিভ করে হ্যালোও বলতে পারিনি, ওপাশ থেকে ভেসে এলো, আমি উঠছি, আমি উঠছি! B-):D



ট্রেনটি আমাদের শায়েস্তাগঞ্জ নামিয়ে দিয়ে চলে গেল সিলেটের দিকে। স্টেশনের এক কোনে চাদর বিছিয়ে বসে বসে ভোরের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে লাগলাম। কেউ কেউ আবার ঘুমের রাজ্য হতে ঘুরেও এলো কিছুক্ষণের জন্য। সকালে একটা ম্যাক্সি ভাড়া করে চলে এলাম চুনারুঘাটে। এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আমাদের গাইড আব্দুর রহিম ভাই। নাস্তা সেরে তাকে নিয়ে রওনা হলাম ‘দ্যা বিউটিফুল ভার্জিন ফরেস্ট’ খ্যাত রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারন্যে।



অনায়াসেই চলে এলাম রেমা-কালেঙ্গায়। প্রথম দেখাতেই মন জয় করে নিল ছোট্ট অরণ্যনিবাসটি।

সামনে একফালি বাহারি বাগান। এর নামটিও চমৎকার। নিসর্গ তরফহিল রিসোর্ট। ফ্রেশ হয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম কালেঙ্গার আশেপাশের বন ঘুরে দেখার জন্য। প্যাঁচালো পাহাড়ি পথের দু’পাশে বিভিন্ন চিরহরিৎ গাছগাছালি দিয়ে সাজানো সংরক্ষিত সবুজ বন। ডালপালার ফাঁক ফোঁকর গলে সকালের লাজুক রোদ এসে পড়ছে পথের ওপর। রাস্তা জুড়ে রৌদ্রছায়ার খেলা।

কিছুদূর এগিয়ে আমরা আধ ঘণ্টার একটা েট্ট্রইল ধরে এগুতে শুরু করলাম।

আস্তে আস্তে জঙ্গল কিছুটা ঘন হয়ে এলো। এরই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল পাখ-পাখালির বিচিত্র ডাক। কোথাও ময়না-টিয়ারা গল্প করছে আপন মনে, কোথাও বা কাঠবিড়ালী এ গাছ হতে ওগাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভবঘুরের মতো। বেলা ১২ টা নাগাদ আমরা দেখা পেয়ে গেলাম বেশ কিছু চশমা পরা বানর ও মুখ পোড়া হনুমানের। চিৎকার আর চেঁচামেচি করে তারা জানিয়ে দিল তাদের রাজ্যে আমরা মোটেও স্বাগত নইX(X(। দুপুরে ফিরে এলাম রিসোর্টে। খাবার সেরে একটু বিস্রাম নিয়ে ৪ টার মধ্যে আবার বেড়িয়ে পড়বো অন্য একটি েট্ট্রইলে।

বিকালে কালেঙ্গা বন বিট অফিসের েট্ট্রইল ধরে এগুনো শুরু করলাম। এদিকটা যেন পাখিদের স্বর্গরাজ্য। নাম নাজানা নানান পাখির বিচরণ লক্ষ করলাম। কিছুদূর এগিয়ে আমরা মূল েট্ট্রইল ছেড়ে জঙ্গলের েট্ট্রইল ধরলাম। এই েট্ট্রইলে নাকি বন মোরগের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর আমরা দেখা পেয়ে গেলাম বন মোরগের। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। আমরা রাস্তার ধারে এক জায়গাতে বসে বিস্রাম নিলাম কিছুক্ষণ। জমাট বাঁধা নৈঃশব্দের মধ্যে মাঝে মাঝে বেজে উঠছিল পাখির মিষ্টি ডাক। অকৃএিম এক ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠলো। আমরা যখন রিসোর্টে ফিরলাম তখন অন্ধকার তার রাজ্য বিস্তার করেছে বহুদূর পর্যন্ত।

রেমা-কালেঙ্গা দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক পাহাড়ি বনভূমি। এ বনের বিস্তার মূলত শুরু হয় ১৯৪০ সালের দিকে। ঢাকা হতে আনুমানিক ১৩০কিঃমিঃ উত্তর-পূর্বে এবং সিলেট হতে ৮০কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে এর অবস্থান। প্রায় ১৭৯৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে এর বিস্তৃতি। বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের নিসর্গ কর্মসূচির অধীনে সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০৪ সালে। প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখি এ বনের বাসিন্দা। এছাড়াও বিরল প্রজাতির মালায়ন বড় কাঠবিড়ালী, কমলা বুক কাঠবিড়ালী, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা বানর, লজ্জাবতী বানর, হরিণ, মেছবাঘ, বন্য শুকরসহ প্রায় ১৮ প্রজাতির সরীসৃপের পদচারনা রয়েছে এ বনে। ৬০০ এর বেশি উদ্ভিদ রয়েছে এখানে। এর মধ্যে বড় বড় চাপালিশ, জাম, হরীতকী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পরদিন সকালে নাস্তা সেরেই আমরা রওনা হলাম রেমার উদ্দেেশ্য। আকাশে সামান্য মেঘ। বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু না, বেলা একটু বাড়ার সাথে সাথে মেঘের চাদর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে সূর্য। প্রকৃতির উস্কানিতে ছায়াছন্ন মায়ামাখা দিনে আমরা হেঁটে চলেছি রেমা-কালেঙ্গার অভয়ারন্যে। বনপথে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম ঝিঁঝিঁ আর পাখির নিরন্তর কনসার্ট। খোয়াই নদি বয়ে চলেছে জঙ্গলের এক ধার দিয়ে। প্রায় ১২ টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম একটি ত্রিপুরা পাড়াতে। পাড়া পেরিয়েই পেয়ে গেলাম একটি িস্নগ্ধ, সবুজ চা-বাগান। ঘণ্টাখানেক বিস্রাম নিয়ে আমার আবার ছুটে চললাম প্রকৃতির টানে। শ্যামা, পাপিয়া, বসন্তবৌরির অবাধ বিচরনভুমিতে কখন যে আরও ৫ টি ঘণ্টা কেটে গেল টেরই পেলাম না। হঠাৎ করেই সামনে উদয় হল খোয়াই নদী। নদীর ওপারে মানুষের রাজ্য। আমরা যাচ্ছি সেদিকেই। আবার হয়তো কোন একদিন ফিরে আসব ঝিঁঝিঁ আর পাখির কনসার্ট শুনতে, অরণ্য-সবুজের মাঝে লুটোপুটি খেতে। :):)



মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পোস্টে ভালোলাগা। পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো আমিও আছি সাথে।

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৬

তাহসিন মামা বলেছেন: চমৎকার জায়গা। ঈদ এ কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.