নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

“চায়ের দেশে”

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০





বাঙ্গালির আড্ডার চরিত্র যে কত বিচিত্র রকমভাবে বদলে যাচ্ছে, তা নিয়ে তর্কের ঝড় উঠতেই পারে মহল্লার মোড়ে মোড়ে, ডাইনিং টেবিলে । কিন্তু আড্ডার অনুষঙ্গ হিসেবে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে যদি কথা ওঠে, কোথাকার চা সেরা ? তা নিয়ে তর্কের কোনও আবকাশই থাকতে পারে না। কারণ সেরা চায়ের দেশ দশ-বিশ বছর আগে যা ছিল আজও তাই আছে। ফলে সত্যিকারের চা রসিকরা চায়ের দেশ নিয়ে তর্ক করে সময় অপচয় না করে এক বাক্কে যেখানকার নাম বলবেন তা হল শ্রীমঙ্গল। আর সে ক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গলের চা শুনলেই অনেকে আজও চায়ের চাপে ঠোঁট ঠেকাবার আগে কাপ ঠেকান নাকে। চায়ের সুবাস নিতে।

তাই বর্ষার পর পর আমরাও বেরিয়ে পড়লাম চায়ের দেশের উদ্দেশে। চলেছে রাতের ট্রেন। ঝুম-ঝুম, ঝুম-ঝুম। খুব ভোরে আমাদের নামিয়ে দিয়ে ট্রেনটি চলে গেল সিলেটের দিকে। আমরা পোঁছে গেছি আমাদের গন্তবে। শ্রীমঙ্গলে। পূর্বনির্ধারিত হোটেলে উঠে ফ্রেশ হতে হতে সকাল হয়ে গেল। আমরা বেরিয়ে পড়লাম চা বাগানের সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। চা বাগানের সকাল এক কথায় অতুলনীয়। প্রথম কারণ, পাগল করা ফ্লেভারের কাপ ভর্তি চা আর দ্বিতীয় কারণ, ভোরের আলোয় প্রকৃতির সাজুগুজু দর্শন। গাছের পাতা বেয়ে মায়াবী আলো এসে লুটিয়ে পরে পাহাড়তলিতে। চারদিকে ফুলেরা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

বেলা একটু বাড়লে আমরা বেরিয়ে পড়লাম শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন টি-এস্টেট ঘুরে দেখতে। দেশের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত ব্রান্ডের টি-এস্টেট রয়েছে এখানে। তাদের এই চা কিন্তু গুনে মানে প্রথম সারির। এখানকার বেশির ভাগ চা-ই উৎপাদনের আগেই বিক্রি হয়ে যায় বিদেশে। যাক সে কথা। ঘুরতে ঘুরতে খেয়াল করলাম চা বাগানে প্রচুর রেইন ট্রি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সব জায়গায়। এটি অবসশ চা বাগানের একটি বৈশিষ্ট্য। আমরা ঘুরছি এক টি-এস্টেট থেকে আর এক টি-এস্টেট। চারদিকে পাখি আর প্রজাপতির রাজত্ব। আর চা বাগানে ফেটে পড়ছে অনুপমা প্রকৃতির রূপ। ঢালু জমিতে পাহাড়ে ঢেকে যাওয়া চায়ের ঝোপগুলো দেখলে মনে হয়, যেন আকাশ ছোঁয়া সবুজ-সমুদ্র। কোনও জাদুকর যেন মন্ত্র বলে ঢেউগুলো অনড় করে রেখেছে। সেই সবুজ-সমুদ্রে অগুনিত রঙ্গিন ভেলার মত ভেসে বেড়ান রঙ্গিন পোশাক পরা মহিলারা। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি তুলে ভরে তোলেন পিঠের টুকরিতে। তাদের সাথে মিশে শখ করে কাজ শিখতে কোনও বাধা নেই এখানে। আমরা বেশ মজা করে তাদের সাথে কাজ করলাম বেশ কিছুক্ষন। আমাদের আনাড়ি হাতের কাজ দেখে তো তারা হেসেই খুন! দুপুরে শহরে ফিরে এসে খাবার সেরে কিছুক্ষণ বিস্রাম। বিকালে আমরা বেরিয়ে পড়লাম খাসিয়া পল্লী ঘুরে দেখতে। ছোট ছোট ঝুপড়ি দিয়ে যেন সাজানো এই খাসিয়া পল্লীগুলো। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। দু’এক জনের সাথে কথা বললাম। সবাই খুব আন্তরিক। আমরা মজা করে তাদের কাছে চা খেতে চাইলে তারা রাজি হয়ে গেল সাথে সাথে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল এর পরপরই। চা বানাবে কি দিয়ে? চা পাতা থাকলেও তাদের কাছে যে দুধ নেই। শহুরে বাবুদের তো আর দুধ ছাড়া চা দেয়া যায় না। সারা পারা ঘুরে দুধ যোগাড়করে বেশ আয়োজন করেই তৈরি করা হল চা। আহ, আহ! সে কি চা! না না, ভাববেন না সে চায়ের স্বাদ অসাধারন। প্রচুর চিনি আর দুধে ভারা চা খেতেও কষ্ট হয়। কিন্তু যতটুকু দরদ ও ভালবাসা দিয়ে তারা আমাদের জন্য চা বানিয়েছে তার স্বাদ আজও অন্তরে লেগে আছে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমাদের ফিরতে হবে।তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম সহরে। রাতের শ্রীমঙ্গল উপভোগ করে ডিনার সেরে আমরা চলে এলাম হোটেলে। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হলাম। রাতের বাসে ফিরে যাব যানবাহনের ধোঁয়ায় মোড়া ঢাকার বুকে। সাথে নিয়ে যাবো চমৎকার প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা সহজ সরল মানুষগুলোর সাথে কাটানো কিছু সুখস্মৃতি।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা হতে সকালে ও বিকালে ট্রেন ছেড়ে যায় সিলেটের উদ্দশে। সেগুলোর যে কোননাতে চলে যেতে পারেন। বাসে যেতে চাইলে সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড হতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস ছেড়ে যায় শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে।

কোথায় থাকবেনঃ শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এছাড়াও টি-এস্টেটের রিসোর্টেও থাকা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে।

কি কি দেখবেনঃ চা বাগানের অপার সৌন্দর্য, সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। তবে হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন সাতছরি, লাউয়াছরা ও মাধপপুর লেক এমনকি হামহাম ঝর্ণাতেও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.