নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

“দ্বীপ দেশে” (পর্ব- ২)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

পরদিন খুব সকালে নাস্তা সেরে আমরা বের হলাম চর কুকরী-মুকরী এবং তার আশপাশটা ঘুরে দেখার জন্য। ঢাকা থেকে যোগাড় করা কিছু তথ্য আর এলাকাবাসীর দেয়া তথ্ এক করে আমরা একটা প্লান করে রেখেছি গতকাল রাতেই। সে অনুযায়ী আজ আমরা সারাটা দিন কাটাব। কিন্তু ঘাটে গিয়ে দেখি আমাদের ট্রলার ঘাটে নেই। ফোন করে জানতে পারলাম সে এখন কচ্ছপিয়া ঘাটে। তার আসতে সময় লাগবে। এদিকে আমরা ঘাটে এসে বসে আছি! আমরা বসে আছি সবাই মিলে, কখন ট্রলার আসবে, আমরা চেয়ে আছি খালের দিকে, কখন ট্রলার ঢুকবে, , , । ট্রলারের অপেক্ষায় অর্ণবের একটি গানের প্যাঁরডি করে গান গেয়ে ফেললো একজন। একটু পরে ওসমান ভাই ও বেলাল ভাই তিড়িং বিরিং করে নাচতে নাচতে এলো।B-)B-)



নাচার কারণটা বুঝলাম এক মিনিট পরেই। তাদের সাথে এক লোকের কাঁধে অনেকগুলো কোচি ডাব! মনটা খুশিতে ভরে গেল। কোচি ডাবের কোমল পানি পান করার মাঝেই আমরা ট্রলারের শব্দ শুনতে পেলাম। কিন্তু না, এটা আমাদের ট্রলার না। প্রায় সারে দশটায় বাবুল মাঝি তাহার নৌযান খানা লইয়া আমাদিগকে দ্বীপ দ্শনের নিমিত্তে আসিয়া উপস্থিত হইলো। আমরা দেরি না করে প্রায় এগারোটার দিকে রওনা হলাম নারিকেল বাগানের দিকে। আজ সূর্যি মামা আমাদের উপর কিছুটা বিরক্ত। গতকালের মত সে আজও আমাদের পুড়িয়ে দিতে চায়, কিন্তু আজ আমরা ট্রলারে শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে দিয়েছি। ফলে সে আজ খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। পথ চলতে চলতে আমরা প্রকৃতি গিলছি। দু’ধারে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এর মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে সরু খাল। মাঝে মাঝে দু’একজন কৃষকের দেখা মেলে আর দেখা মেলে শত শত বক, সারস, মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি, গুইসাপসহ নাম না জানা কয়েক প্রজাতির পাখির। প্রায় ৪০ মিনিট পর আমরা পৌঁছে গেলাম মনুরা বাজারে। বাজার পেরিয়ে আমাদের ট্রলার এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। দু’ধারের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সংরক্ষিত কেওড়া বন। এটা সবুজের রাজত্ব। শীতকালে এই এলাকা বার্ড ওয়াচারদের স্বর্গে পরিণত হয়। এখানকার গাছে গাছে সংসার পাতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। সরীসৃপ প্রজাতিরগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রিন ভাইপার, গোখরো ও লিজার্ড।

১২ টার একটু পরে আমরা পৌঁছে গেলাম নারিকেল বাগানে। নারিকেল, তাল, কেওড়া দিয়ে সাজানো বিস্তীর্ণ বাগান। তেতুলিয়া নদীর কোমল ঢেউ লুটোপুটি খাচ্ছে অবিরাম।



বন বাদারে ঘুরে, নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে, ফটোসেশন শেষ করে আমরা চললাম ঢালচরের তারুয়া সৈকতের উদ্দেশ্যে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমরা চলে এলাম তারুয়াতে। তারুয়া মূলত দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। এ দিকটায় জনবসতি নেই বলে এর ভার্জিনিটি অনুভব করা যায় সবখানে। সৈকতে নেমেই মনে হল পুরোটাই যেন আমার। আমরা সবাই মিলে দিলাম এক ভোঁ দৌড়। ১৫ জনের মধ্যে হলাম তৃতীয়। বজলু ভাই প্রথম, দ্বিতীয় হল আমাদের হাসিব মুকরী! বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণ পুরো সৈকত জুড়ে। আমাদের লাফালাফিতে তারা একটু বিরক্ত। দুঃখিত পাখিরা। তোমাদের মতো আমাদের ডানা নেই বলে উড়তে পারি না যখন তখন। আজ একটু উড়তে দাও তোমাদের মতো, স্বাধীন হয়ে। বেশ কিছুটা সময় এখানে কাটিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য সোনার চর। ট্রলার এবার ছুটে চলেছে দক্ষিন-পশ্চিম বরাবর। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। এখন মাছ ধরা নিষেধ বলে কোথাও কোন নৌকা চোখে পড়লো না। একটু একঘেয়ে লাগছে। কে জানত এই একঘেয়েমি কি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। ঘণ্টা দেড়েক চলার পর আমাদের সামনে উদয় হল চাঁদের মতো বাঁকানো একটি চর। অনেক দূর থেকে পারে কিছু প্রাণীর নড়াচড়া লক্ষ্য করলাম। জুম লেন্স ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে নিশ্চিত হলাম ওগুলো মহিষ। জংলী নাকি! দশ মিনিট পর আমরা নেমে এলাম পাড়ে। একজন দু’জন করে প্রায় ছার-পাঁচ জন লোক চোখে পড়লো। এরা মূলত এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নয়। মহিষ এর পাল দেখাশুনা করার জন্য এখানে থাকা। সৈকতে নেমেই মনে হল এখানে একদিন থাকতে পারলে বেশ হতো। কক্সবাজার, পতেঙ্গা বা কুয়াকাটার সৈকতের মতো লোকজনের কোন কোলাহল নেই, নেই কোন হকারের বিরক্তিকর ডাকাডাকি। পুরো সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছড়াছড়ি। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝাউ বন। ফরেস্ট অফিসটা ঠিক উল্টা দিকে। ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে সেখানে আর যাওয়া হল না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সূর্য তার রাজত্ব ছেড়ে দিতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। পূব আকাশে চাঁদ উঁকি মেরে তার রাজত্বের দখল নিতে প্রস্তুত। আমরা ফিরে চলেছি চর কুকরী-মুকরীতে। আমাদের এই নিশি যাত্রার সাক্ষী হয়ে রইল পূর্ণিমার চাঁদ। আমরা গানের কলি খেলা শুরু করলাম। ইঙ্গিনের ভট ভট শব্দ আমাদের মিউজিক! এক সময় মনে হল মাঝি রাস্তা হারিয়েছে। কিন্তু না, আমাকে ভুল প্রমানিত করে রাত ৮ টার দিকে মাঝি আমাদের কুকরী-মুকরী ঘাটে পৌঁছে দিল। সারা দিন বিস্কুট, চানাচুর আর পানি খেয়ে থাকতে হয়ছে তাও শেষ বার খেয়েছিলাম সেই দুপুর বেলা। তাই ক্ষুধায় ছুঁচো পেটে ডন মারা শুরু করেছে। কিন্তু মনা ভাই আমাদের জন্য যে খিচুড়ির আয়োজন করে বসে আছে তা ভাবতেই পারিনি ! মুরগীর গিলা কলিজা দিয়ে খিচুড়ি, সাথে আঁচার! আহ্ , মধু মধু !!

খাবার শেষ করে অনেকেই চলে এলো পুকুর ঘাটে। আমি, মনা ভাই, বেলাল ভাই, সোহেল ভাই মিলে বার-বি-কিউ এর জন্য মুরগীগুলোতে মসলা মাখিয়ে রেডি করে পুকুর ঘাটে চলে এলাম। এরই মধ্যে দেখি সবাই লাইফ জ্যাকেট পরে পানিতে শুয়ে শুয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখছে। আমরা আর বাদ থাকবো কেন? নেমে পড়লাম পানিতে। পুকুরে শুয়ে শুয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার যে কি মজা তা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই, চাইও না। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর আমরা উঠে এলাম ইউনিয়ন পরিষদের ছাদে। সবাই গোল করে বসে আড্ডার সাথে চলল আমাদের বার-বি-কিউ এর আয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের ছাদে তখন চাঁদের আলোর বন্যা। গেয়ে উঠলাম, ’চাঁদের আলোর বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পরে আলো, ও রজনী গন্ধা তোমার, গন্ধ সুধায় ঢালও’। ১২ টার দিকে আমাদের বার-বি-কিউ পর্ব শেষ করে আমরা আবার আড্ডায় বসে পড়লাম। সাথে চলল গান আর গান। ‘ও ঝরা পাতা, তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথা গো, , ,’ । ‘আমায় এতো রাতে কেনে ডাক দিলি, , ,’ আরও কত কি !



রাতের আড্ডার মাঝেই শুরু হল গুরি গুরি বৃষ্টি্র সারাসি আক্রমন। আমরা প্রায় বাধ্য হয়েই তাবু সমেত নিচে নেমে এলাম। আমরা কেবল নিচে নেমে এসেছি, ঠিক তখনি বৃষ্টি্ আমাদের বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে বিদায় নিল। এরই মদ্ধে সবাই যার যার তাবুতে ঢুকে পরেছে। ফলে আর আড্ডার প্রশ্নই আসে না। আমি ছাদে পায়েচারী করতে লাগলাম।



একটু পরে রুমা আপুও ছাদে উঠে এল। এরই মধ্যে আকাশ আবার পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। চাঁদের মুখে যেন আবার হাসি ফিরে এসেছে। আর চাঁদ যখন হাসে তখন তার প্রেমে পরেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। আমিও পরে গেলাম। সারা রাত চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলাম। এক সময় চাঁদ বিদায় নিল। ঘণ্টাখানেকের জন্য ঢুকে পড়লাম তাঁবুতে। একটু ঘুমানো দরকার। আজ ফিরতি পথ ধরতে হবে আমার প্রানের শহর ঢাকার দিকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: তাহসিন ভাই, সামনে আমিও আপনাদের সঙ্গী হবো।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪১

তাহসিন মামা বলেছেন: আপনকে স্বাগতম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.