নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পরব-১

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০১







‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর ১৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এবার বাংলাদেশের সবচে পাহাড় ‘সাকা হাফং’ কে ঘিরে ট্যুর প্ল্যান করা হল। এ বছরটা ছিল ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর জলের বছর। অর্থাৎ এ বছরের বেশির ভাগ ট্যুর হয়েছে হাওরে, নদীতে, সমুদ্রে। কিন্তু যে ক্লাবটির সূচনাই হয়েছে কেওকারাডং এর চূড়ায়, পাহাড়ের ডাক সে উপেক্ষা করে কি করে? ;);)



প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ করে আমি,রুবিনা আপু আর ইকা চলে এলাম ফকিরাপুল বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে কমর, সিফাত, শাহাদাত ও জাহিদ ভাই ইতিমধ্যে চলে এসেছে আর কামাল ভাই উঠবে চিটাগাঙ রোড থেকে। প্রায় ১০.৩০ এর দিকে আমরা রওনা হলাম বান্দরবানের পথে। বাসে পরিচয় হল কমর এর বড় ভাই হেলাল এর সাথে। তারাও বান্দরবান যাচ্ছে ৪ বন্ধু মিলে। যেহেতু আমাদের রুট প্ল্যান একই তাই তারা আমাদের সাথে যোগ দিতে চাইলে রাজি হয়ে গেলাম।

সকল ১১ টায় আমরা বান্দারবান পোঁছে গেলাম। বান্দরবানে নাস্তা সেরে, সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার পোঁছতে পোঁছতে প্রায় ২.৩০ বেজে গেল। দুপুরে মামুন ভাইয়ের হোটেলে সিয়াম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। নাস্তা বেশ দেরিতে করায় দুপুরের খাবারের প্রতি কারও তেমন মনোযোগ ছিল না। আর্মি ক্যাম্পে ঝটপট রিপোর্ট করে আমরা যখন বগা লেকের উদ্দেশে রওনা হলাম তখন প্রায় ৪ টা।

এদিকে পুলিশ ক্যাম্পে আমাদের আটকে দিলেন ডিউটি অফিসার! তার বক্তব্য হল ৪ টার পর রুমা থেকে বগা লেকের দিকে গাড়ি যাবে না। আমরা তাকে যতই বুঝাই যে আমার ৪ টার আগেই এখানে এসেছি আমাদের যেতে দেন, তিনি নাছোড় বান্দা। অবশেষে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পের ও সি সাহেবকে অনুরোধ করে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বগা লেক যাওয়ার অনুমতি পেলাম।



পাহাড়ি উঁচু নিচু পথ বেয়ে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি বগা লেকের দিকে। কোথাও কোথাও পথ ৬০-৭০ ডিগ্রি খাড়া ঢাল বেয়ে উঠে গেছে। এই বুঝি গাড়ি উল্টে যাবে! কিন্তু না, আমরা উঠেছি চান্দের গাড়িতে। এই গাড়ি চাঁদ পর্যন্তও মনে হয় যেতে পারবে, বগা লেক যেতে সে উল্টাবে না।

এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অন্ধকার তার রাজত্ব বিস্তার করতে বেস্ত, কিন্তু পূর্ণিমার রুপালী চাঁদ কিছুতেই অন্ধকারের দাসত্ব মানতে নারাজ! প্রায় ৭ টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশের সবচে উঁচু লেক বগা তে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ক্যাম্পে রিপোর্ট করেই আমরা কেওক্রাডং এর দিকে ট্র্যাকিং শুরু করব। সামিট করে আমরা চলে যাব কেওক্রাডং এর অপর পাশের পাসিং পাড়াতে। রাতটা ওখানেই কাটাবো। এর জন্য রাতে ট্র্যাকিং করতে হবে; কোন ব্যাপার না, গিয়েছি তো ট্র্যাকিং করতে রাত কি আর দিনই বা কি।

কিন্ত সারা রাত, সারা দিন জার্নি করে সবার শরীর ছেড়ে দিয়েছে। /:)কি আর করা, থেকে গেলাম বগা লেক পাড়াতে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো সিয়াম দিদির (আমাদের পোর্টার সিয়াম না) ঘরে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চতম লেক বগা লেকে গোসল করলাম সবাই। সিয়াম দিদির রান্না করা ভাত, ডাল, ডিম ভাজি, মিষ্টি কুমড়া আর আলু ভর্তা দিয়ে রাতের খাবার সেরে শুয়ে পড়লাম সবাই। পর দিন ভোরে উঠতে হবে। ভোর ৪ টায় সিয়াম দিদির ডেকে দেয়ার কথা। কিন্তু কিসের কি? ৪.৩০ এও যখন সিয়াম দিদি ডাকল না, তখন আর দেরি না করে সবাইকে ডেকে তুলে রেডি হতে বললাম। সময় মত না ডাকলেও আমাদের জন্য খিচুড়ি ঠিকই রান্না করে রেখেছে। খিচুড়ি আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে আমার ৫.৫০ এর দিকে রওনা হলাম কেওক্রাডং এর দিকে। শুরু হয়ে গেল আমাদের মূল অভিযান। B-)B-)

এগিয়ে চলেছি পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে। চরাই উতরাই থাকলেও রাস্তা বেশ ভাল। আদা-হলুদের সময় চাঁদের গাড়ি বগা লেক পেরিয়ে দার্জিলিং পাড়া পর্যন্ত যাতায়াত করে। চওড়া রাস্তা দিয়ে হাটাঁর সময় মনে হচ্ছিল না পাহাড়ের পথ ধরে চলেছি। সত্যি বলতে কি পথ যদি বন্ধুর, বিপদসঙ্কুল না হয় তবে ট্র্যাকিং এর মজা নেই। তাই সহজে হাটঁতে পারলেও মন ভরছিলো না। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম আশেপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতে। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবে শীত আসতে শুরু করেছে তাই শীতের প্রকপ এখনো জেঁকে বসেনি। তাই প্রকৃতির ক্যানভাসে সবুজের ছোঁয়া লেগে আছে এখনো। নিচে ছোট পাহাড়্গুলোর মাঝে মেঘের দল আটকা পড়েছে। প্রায় ৪০ মিনিট হাটার পর আমরা দেখা পেলাম চিংড়ি ঝর্ণার।:D এখন পানি তেমন একটা নেই, তবে বর্ষায় এটি কিশোরীর মতই দুরন্ত। খালি হয়ে যাওয়া পানির বোতলে পানি ভরে নিলাম এখান থেকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে সবাই। এক সময় পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং পাড়া।:)

কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি দেয়া হলো। বিস্কুট, পানি খেয়ে নিলাম। খুঁজে বের করলাম এ পারার মেয়ে আরিয়ানা কে। শাহিন ভাই তার জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। উপহার পেয়ে আরিয়ানা বেশ খুশি হল। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা আবার রওনা হলাম। রাস্তা আগের মতই ভালো। বিশ্রামের পর চলার গতি বেড়ে গেল। এক সময় চোখে পড়ল কেওক্রাডং, বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম চূড়া, উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। একে একে সবাই পৌঁছে গেলাম সেখানে। চূড়াতে বিশ্রামের জায়গা আছে। খাবার হোটেল আছে, আছে রাত্রি যাপনের বেবস্থা । চূড়ার শেষ অংশটুকু আবার পাকা সিঁড়ি করে দেয়া! কেওক্রাডং এখন শুধু পাহাড় নেই, এ যেন ফাইভ স্টার পাহাড়। ;);)বিশ্রাম আর ছবি তোলা চলতে থাকল। ১০ টা নাগাদ আমরা কেওক্রাডংকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম বাকলাই পারার পথে।



আকাশ বেশ পরিষ্কার। সূর্যি মামা তাই রোদ বিলাচ্ছে অকৃপণের মত। প্রায় ২০ মিনিট পর আমরা পৌঁছে গেলাম পাসিং পারা তে। এটা বাংলাদেশের সবচে উঁচু পারা। এ দিকটায় গাছ গাছালি খুব কম। কোথাও একটু ছায়া নেই, নেই কোন ঝিরি। তবে রাস্তা আগের মতই। তাই চলার গতি বেশ ভাল। বেশ কিছুদূর এগোনোর পর হাতের বামে খুব সুন্দর একটা জলাশয় চোখে পড়ল। সবাই হাত মুখ ধুয়ে নিল। শুরু হল আবার পথ চলা। সামনেই ক্যাপিটাল পিক। একসময় ক্যাপিটাল পিক পার হয়ে গেলাম। গরমে সবার অবস্থা খারাপ। সবার পানির বোতল খালি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।



প্রায় ১.৩০ নাগাদ আমরা পানির একটি উৎস খুঁজে পেলাম। আহামরি তেমন কিছু না। পাহাড়ের ফাটল বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে। ফোটায় ফোটায় পানি বোতলে ভরা অনেক সময়ের ব্যাপার। তাই আমরা কলার খোলের সাহায্যে বোতলে পানি ভরে নিলাম। নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই, তাই আবার হাতা শুরু করলাম। আমাদের আজ বাকলাই পারাতে পৌঁছাতেই হবে। কিছুদূর হাটার পর ডান দিকে একটা সরু পথ চোখে পড়ল। এটাই বাকলাই যাওয়ার পথ। পথটা খাড়া নেমে গেছে; তবে সমস্যা হলো আলগা মাটি । পা দিলেই পিছলে যায়। সাবধানে একে একে নেমে গেলাম সবাই। সত্যিকারের ট্র্যাকিং শুরু হলো এবার। :D:)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৪

ইকা বলেছেন: সেইরকম মজা হইসে, , পরের পর্ব কবে পাচ্ছি ? ?

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

তাহসিন মামা বলেছেন: অনেক কজ তো জমে গেছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে লিখছি। তবে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। পেয়ে যাবেন।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভাই লিখা ভালা লাগিছে। কিন্তু বোকা মাইনসের ছবি দিখতে মুঞ্চায় যে... :P

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩০

তাহসিন মামা বলেছেন: ছবি আসতেছে। অপেক্ষা করেন। জানেন তো, অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়।ঃ)ঃপ

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: তাহসিন ভাই, আপনার তোলা চমৎকার কিছু ছবি দিলে আরো মনোমুগ্ধকর হতো।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২০

তাহসিন মামা বলেছেন: ভাই, এই ছবলাও মনে হয় আমার তোলা। আপনি তো জানেন আমি ক্যামেরা বের করসি অনেক পরে। তাই আপনাদের কাছ থেকে ছবি না নেয়া পর্যন্ত ছবি দিতে পারছি না। একটু অপেক্ষা করেন।

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: হুমম, আপনারই তোলা :D :D

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৩

সৌম্য বলেছেন: কংগ্রাটস।
হেলার আর কমর...দুই ভাই এর একসাথে তল্যাং ময় বিজয় আগে ঘটছে কি না মনে করতে পার নাকি? দুই থার্ড ইয়ার সহ দলের সবাইকে শুভেচ্ছা।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৩

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ সৌম্য ভাই, আমার জানা মতে দুই ভাই এর এক সাথে সাকা বিজয় আর নেই।

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২৬

সবুজ সায়াহ্নে বলেছেন: ভাল লিখে যাচচো, পুরা লিখাটা শেষ করে ছবিসহ দিলে বেশি ভালো হতো। শুভো কামোনা রইলো।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪

তাহসিন মামা বলেছেন: ছবি আপলোড এ একটু সমস্যা হচ্ছে তাই ছবি দিতে পারছি না। লেখার শেষ পর্বে প্রচুর ছবি পাবেন ইনশাআল্লাহ্‌। ছবির জন্য এই লিংক আ যেতে পারেন Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.