নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পর্ব- ৩

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫

পরদিন সবাই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। প্ল্যান হল সিয়াম আর নাকলিন দা কে নিয়ে সবাই চলে যাবে বাকলাই ঝর্ণা (বাংলাদেশের সবছে উঁচু ঝর্ণা) দেখতে। আর আমি পারাতে বাধ্য বালকের মতো সবার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় তাকিয়ে থাকবো বাকলাই ঝর্ণার পথে। /:)/#

সবাইকে তাড়া দিয়েও ৬ টার আগে কোন ভাবেই পাঠানো গেল না। আমি কোন ভাবেই চাচ্ছি না আজ সময় নষ্ট হোক। তা ছাড়া কাল পরে গিয়ে ব্যথা পাওয়া জায়গাটা রাতে বেশ ভুগিয়েছে আমাকে। ওদের ফিরে আসার আগেই এর একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে হবে। একে একে সবার চলে যাওয়া দেখলাম করুন চোখে। কেউ জানলও না আমার জ্বর এসেছে। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে পড়লাম। চুলার কাছে গিয়ে কিছুটা লবণ গরম করে সেক দিলাম প্রায় আধ ঘণ্টা। সকালে জাহিদ ভাই কিছুটা নুডুলস রেখে দিয়েছিল আমার জন্য। সেটা খেলাম কিছুটা জোড় করেই। :((:((

ব্যথার ওষুধ খেয়ে বসে রইলাম সবার আসার অপেক্ষায়। সময় যেন কাটে না, বড় একা একা লাগে, , , -গানটির মর্মার্থ বুঝা গেল। এখন বেলা সাড়ে দশ। ঘরের দিদি কে বলে চলে গেলাম ঝিরিতে। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল সেরে বেশ খানিকটা চাঙ্গা মনে হল। ফিরে এসে রাতের রান্না করা তরকারী গরম করলাম। আমাদের টিম যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। আমি ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছি, গরম করা তরকারী ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কিন্তু কারো দেখা নেই। মনটা কেমন অস্থির হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর শাহাদাত আর সিফাত কে দেখে মনটা খুশিতে ভরে গেল। নাচতে নাচতে গিয়ে আবার তরকারী গরম করতে দিলাম।:)B-)

একে একে সবাই চলে এলো। সবার একটাই অভিযোগ আমি ইচ্ছা করে যাইনি এই বাজে রাস্তার কথা আগেই জানতাম বলে। বাংলাদেশের সবচে উঁচু ঝর্ণা দেখতে হলে একটু যে কষ্ট করতেই হবে তা আমি সবাইকে বুঝাই কি করে? এসেই যে যার মতো ব্যাগ গুছিয়ে নিল আর আমি খাবার বেড়ে বসে রইলাম। সবাই ক্ষুধার্ত তাই রাক্ষসের ছোট ভাই খোক্কসের মতো খাবার খেয়ে (গিলে বললেই মনে হয় যথার্থ বলা হবে);)

আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। গন্তব্য সিম্থলম্পি পারা। পারা থেকে বেরিয়েই আমরা নামতে শুরু করলাম। বেশ খানিকটা নেমে আবার উঠা। সেই উঠা মানেই নামা, আর নামা মানেই উঠা! একটি ছোট পাহাড়ে উঠতেই আর্মি ক্যাম্প চোখে পড়লো। ক্যাম্পে রিপোর্ট করে হাঁটা শুরু করলাম। বেশ খানিকটা নেমে আমারা প্রায় সমতলে হাঁটতে শুরু করলাম। সামনে একটা মাঠ চোখে পড়লো। ফুটবল খেলছে বেশ কয়েকজন পাহাড়ি ছেলে। আমাদের দেখে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা চলল কিছুক্ষণ। মজা পেলেও বুঝতে না দিয়ে মাঠ পেরিয়ে এলাম। আবার শুরু হল সেই চরাই উতরাই। মাঝে মাঝে ঝিরি চোখে পরলেই ভরে নেয়া হয় আমাদের খালি পানির বোতল। এক সময় শুরু হল উপরে ওঠা। উঠছি তো উঠছি। হঠাৎ একটা রাস্তা ডানে মোড় নিল। চোখের সামনে উদয় হল সিম্থলম্পি পারা। পিছনে ওই দেখা যায় তাজিংডং। অল্প কিছু ছবি তুলে আমরা রওনা হলাম থান্দুই পারার উদেশে। বেলা পরে গেছে। সূর্যের তেজ আর নেই। তবে খাড়া একটা পাহাড় নামতে হবে। আলো থাকতে থাকতেই নামতে চাই। পাড়া থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাবার পর পথটা খাড়া নেমে গেছে। আর পুরোনো শত্রু এখানেও উপস্থিত; আলগা মাটি, পা রাখায় দায়। পাহাড়ে সন্ধ্যা খুব দ্রুত নামে। একে বারে ঝুপ করে। সবাইকে আগেই টর্চ রেডি রাখতে বলেছিলাম। একটা একটা করে টর্চ জ্বলত শুরু করলো। আমরা ঘড়ি ধরে একটা ঘণ্টা শুধুই নেমেই গেলাম। তাও নামা যেন শেষ হতে চায় না। একসময় নামা শেষ হলো। মোটামূটি সোজা পথেই এগিয়ে যেতে লাগলাম। থান্দুই পাড়া (বম পাড়া) ঢোকার আগে একটা জায়গায় না থেমে পারলাম না। পূর্ণিমার চাঁদের যে কি যাদু তা এই চাঁদ না দেখলে বোঝা দায়। ও চাঁদ এতো রুপ তুমি কোথায় পেলে, আমার হল চোখ ফেরানো দায়। কিন্তু চোখ আমাদের ফেরাতেই হল। পারাতে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। একটু ছড়ানো ছিটানো পারাতে মোট ১৩ পরিবার বাস করে। কারবারির নাম সিমতন। কারবারির ঘরেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল। বেশ অমায়িক মানুষ। কথায় কথায় জানালো তার এক ছেলে চট্টগ্রামে পড়াশুনা করে। শুনে ভাল লাগলো। গত দিনের মতো আমরা সবাই মিলে রান্না-বান্নার কাজটি সেরে ফেললাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুতে শুতে প্রায় ১২ টা বেজে গেল।

পরদিন সকালে রাতের বেঁচে যাওয়া খাবার খেয়ে রওনা হলাম নয়াচরণ উদ্দেশে। থান্দুই একটু নিচের পারা হওয়াতে চারদিকে মেঘ এসে জমেছে চারদিকে। আমরা মেঘের চাদর ভেদ করে চলেছি সামনের দিকে। আমার চশমার কাঁচ বার বার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। সূর্যের আলো মেঘ ঠেলে আমাদের ছুয়ে দিতে চায় আর মেঘ আগলে রাখতে চায় সূর্যের আলো হতে। আর আমরা চাই আজকেই সাকা হাফং জয় করতে। দূরে ফিতার মতন পাহাড়ের গায়ে পথ দেখা যাচ্ছিল। সেই পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ পিছন থেকে হেলালের চিৎকার শোনা গেল:-/:-/

সিয়াম ও সিফাত ছুটে গেল কি হয়েছে দেখার জন্য। একটু পরে হেলাল, সিফাত ও সিয়ামকে আসতে দেখলাম। আসার পরে যা শুনলাম তাতে আমরা হেসেই খুন। হেলাল পিছনে থাকায় রাস্তা ভুল করে গয়াল যাওয়ার একটা ট্রেইলে উঠে গিয়েছিল। পরে বুঝতে পেরে তাড়াহুড়া করে একটি বাশের বেড়া পার হতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার সময় বাশে ব্যাগ আটকে গিয়ে ঝুলে ছিল। একটু মজা করে আবার শুরু হল আমাদের পথ চলা। চলতে চলতে এক সময় বড় একটা খালে নেমে এলাম। বুঝলাম এটাই রেমাক্রি খাল। বাম পাশে একটা রাস্তা সোজা উপরে উঠে গেছে। সেটা ধরে চলতে শুরু করলাম। কিছুদূর গিয়ে স্থানীয় দু’একজনের সাথে দেখা হয়ে গেল। নয়াচরণ এর কথা জিজ্ঞাসা করতেই জানালো সামনেই পারা। ৮ টার মধ্যে আমরা পারাতে পৌঁছে গেলাম। কারো মাঝেই ক্লান্তি নেই তেমন একটা। ১৫ মিনিটের একটা বিরতি নিয়ে আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। গন্তব্য হাঞ্জরাই পারা। কিছুটা সামনে এগিয়েই দেখা পেলাম হাঞ্জরাই পারার। তবে সেটা সমতলে নয়। বেশ খানিকটা নীচে। রেমাক্রি খালের কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে মাত্র কয়েকটি ঘর নিয়ে ছবির মতো একটি পারা। ঝিরির অবিরাম কূল-কূল ধ্বনি এদের চিরসঙ্গী। এই শব্দে কেমন জানি একটা মাদকতা আছে। আছে বিমোহিত করার এক অপার শক্তি। আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আরও অনেকটা পথ পারি দিতে হবে। সাকা আমাদের ডাকছে, আয় আয়! রেমাক্রি খাল ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। চলতে চলতে এক সময় চমৎকার একটি জায়গায় এসে পড়লাম। খালের পানি ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে। জাহিদ ভাই এখানে গোসল করতে চাইলেন। মনে করিয়ে দিলাম আমাদের হাতে সময় কম। জাহিদ ভাইয়ে একটা কথা এখনো বাজছে আমার কানে,’এত সুন্দর একটা জায়গায় গোসল না করা অপরাধ’। কিন্তু আমাদের হাতে সময় নেই। বামের একটা রাস্তা উঠে গেছে উপরে। আমরা সে পথে হাঁটা শুরু করলাম। বেশ খাড়া পাহাড়। এর মাঝে কিছু জায়গা বেশ ভয়ানক রকম খাড়া। এক জায়গাতে তো গাছের গুড়ি কেটে সিঁড়ির মতো বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা একে একে সেটা পার হলাম। কিন্তু ‘জীবন’ পার হতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি। তার ভারে গুড়িটা ভেঙ্গে সে সহ কোন মতে আটকে রইল পাহাড়ের খাঁজে!/:):-/:P:-*

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১১

ইকা বলেছেন: " ও চাঁদ এতো রুপ তুমি কোথায় পেলে, আমার হল চোখ ফেরানো দায় "। রাতেরবেলায় ট্রেকিং করা আসলেই দারুণ, তারপরে যদি থাকে বিশাল চাঁদ, তাহলে তো কথাই নেই।
তবে লাস্টের ছবিটা অভিযাত্রীদের অনুভূতি চীৎকার করে ব্যক্ত করছে :P :P

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

তাহসিন মামা বলেছেন: মনে রাখতে হবে এটা বাংলাদেশের সবচে বড় ঝর্ণা। একটু কষ্ট তো হবেই :প

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: প্রতিটি ঘটনা আপনি পুংখানুপুংখ ভাবে বর্ণনা দিলেন, খুব ভালো লাগলো, আমি আসলে এতো সুন্দর করে লিখতেও পারি না, আর এতো কিছু মনেও থাকে না।

চমৎকার পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ তাহসিন ভাই।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

তাহসিন মামা বলেছেন: আমরা যে সব জায়গাতে যাই সেখানে তো সবাই যেতে পারে না, কিন্তু আমাদের ও কিছু দায়িত্ব আছে লেখা ও ছবির মাধ্যমে এই দেশ কে নতুন করে সবার কাছে তুলে ধরার। উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:
বাকলাই পাড়া সেনা ক্যাম্প :(

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

তাহসিন মামা বলেছেন: ওই যে আমাকে দেখা যায় :)

৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২১

মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার ভ্রমন সিরিজ । ছবি আর বর্ণনা ভাল লেগেছে ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৯

তাহসিন মামা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। জেনারেল না হওয়া পর্যন্ত এই মন্তব্য গুলোই উৎসাহের উৎস হয়ে রইল। :)

৫| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: তাহসিন মামা, সবরে মেওয়া ফলে। লিখতে থাকেন, আমরা পড়তে থাকি। আমি যাইনি এই ভয়ে যে, আমার ভারে যদি পাহাড় ভাইঙ্গা যায়!!! ;) :P :D

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

তাহসিন মামা বলেছেন: আমি কোন দিন সবুর করে মেওয়া ফলতে দেখি নি। মেওয়া পেতে হলে গাছ লাগাতে হয় :) ঃ)। হা হা হা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.