নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পর্ব- ৪

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯

জীবনকে ধরাধরি করে টেনে তোলা হল। গুড়িটা ভেঙে যাওয়াতে আমরা পড়লাম বিপদে। সামনে যাবো কি করে? কিন্তু বিকল্প কোন রাস্তা নেই। তাই গাছের শিকড় ধরে কোন মতে আমরা উঠে এলাম জায়গাটুকু। কয়েকজন সামনের ছোট্ট একটি ঝিরিতে পিছিয়ে পরাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। সবাই সেখানে এসে পৌছালো একে একে। অল্প কিছু খেজুর খেয়ে আমরা সামনে রওনা হবো এমন সময় সামনে থেকে এক লোককে আসতে দেখলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম নেফিউ পারা আর কত দূর? সে জানালো এইটা নেফিউ পারার রাস্তা না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও মনে হয় এতো মেজাজ খারাপ হতো না। কাঠের গুড়িটা যেখানে ভেঙে গেছে সেটা পার হবো কি করে এটা ভেবে ভয় পেয়ে গেলাম। ইকা আপুর তো ভয়ে চোখে পানিই চলে এলো। কিন্তু ভয় পেয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না। যে করেই হোক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সাকা হাফং যে আমাদের ডাকছে। নাকলিন দা কে ওই লোকের সাথে রাস্তা চিনে আসার জন্য পাঠিয়ে দিলাম আর সিয়ামের ভরসায় আমরা ফিরে চললাম পিছনের দিকে। খুব সাবধানে আমরা একে একে সেই জায়গায় এসে পোঁছালাম যেখানে জাহিদ ভাই গোসল করতে চেয়েছিলেন। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করেও যখন নাকলিন দা কে ফিরে আসতে দেখলাম না তখন সিয়ামকে পাঠিয়ে দিলাম নাকলিন দা কে খুজে আনার জন্য। ব্যাপারটা অনেকটা মায়ের কাছে মাসীর গল্প করার মতো হল। আমাদের এক গাইডকে খুজতে গেল আরেক গাইড! আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের দুই গাইডের ফিরে আসার জন্য। কিন্তু অপেক্ষা করার প্রয়োজন কি? আমরা তো নেমে পরতে পারি পানিতে। সবাইকে পানিতে নামতে বলায় সবাই খুশিতে ধেই ধেই করে নেচে উঠলো। আমরা টপাটপ নেমে গেলাম পানিতে। ভুলে গেলাম রাস্তা হারানোর কষ্ট। সবাই সবাইকে পানি ছিটিয়ে, লাফালাফি করে আনন্দ করছি এমন সময় সিয়াম ফিরে এলো। জানালো রাস্তা পাওয়া গেছে। নাকলিন দা অপেক্ষা করছে সেখানে। তাড়াতাড়ি সবাইকে উঠতে বললাম। ঘণ্টা দুয়েক সময় নষ্ট হলেও আজকেই সাকা হাফং সামিট করার সুযোগ এখনো আছে। সবাই মিলে আবার হাটা শুরু করলাম। একটু সামনে গিয়ে দেখি নাকলিন দা বসে আছে আমাদের অপেক্ষায়।

আমরা উপরে উঠছি, আরও উপরে। সবার মনে শঙ্কা, আমরা ঠিক পথে যাচ্ছি তো। এবার কিছুটা নেমে একটা ঝিরি পার হলাম। ঝিরি পার হয়ে ঢুকে পড়লাম বনের মধ্যে। পায়ে চলা পথ ধরে এগিয়ে চললাম। পাতার ফাঁক ফোঁকর গলে অসংখ্য রোদের টুকরো এসে ঝরে পরছে বনভূমিতে। উঁচু, মোটা গাছ; বনটা যেন অত্যন্ত নিবিড়। অনেক চালতার গাছ চোখে পড়ল। চালতা পেকে, মাটিতে পড়ে পচে আছে। কেউ একজন একটা কাঁচা চালতা তুলে নিল। রুবিনা আপু চালতা ভর্তা করে খাওয়াবে জানালো। আরও এক বার ঝিরি পার হলাম। পুরোটা পথেই ডান পাশে সঙ্গী হিসাবে পেলাম রেমাক্রি খালকে; তবে অনেক নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে। হাটঁছি শান্ত, নিরিবিলি বনপথ ধরে। মাঝে বিশ্রাম নিলাম বার কয়েক। একটা ঝর্ণা পার হলাম। হেলাল ঝর্ণাতে যেতে চাইল। কিন্তু কাউকে খুব একটা আগ্রহী মনে হল না বিধায় আর ঝর্ণাতে যাওয়া হল না। পথটা এখানে বাঁক নিয়েই খাড়া ভাবে উঠে গেছে। আর ট্র্যাকের কথা কি বলব, ঝুর ঝুরে আলগা মাটি। ধুলায় নিশ্বাস নেয়া কঠিন। ব্যাগের ওজন কাঁধের উপর চেপে বসেছে। গ্রিপ করার কোন জায়গা নেই। কোনমতে বহু কষ্টে চার হাত-পা দিয়ে কোন মতে উঠলাম আমরা। সাথে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত শরীর পুড়িয়ে দেয়া রোদ তো আছেই। একটানা শ’খানেক ফুট উঠার পর সমতল জায়গায় পৌঁছালাম। নেপিউ পাড়ার (ত্রিপুরা পাড়া) দেখা পেলাম। দূরে, নিচে দেখা যাচ্ছে নয়াচরন পাড়া। নেপিউ পাড়া পেরিয়ে চোখ চলে গেল পাড়ার পিছনের পাহাড়ের দিকে। ওটায় সাকা হাফং। সবে তিনটা বাজে। আজকেই সাকা সামিট করা যায়। কিন্তু সবার চেহারা দেখে তা আর সাহস হল না। শেষ ১০০ ফুট উঠতে সবাই এতো ভয় পেয়েছে যে, সারাদিন ট্র্যাক করে আমরা যতটুকু না ক্লান্ত তারচে বেশি ক্লান্ত ভয়ে। তা ছাড়া জীবনের পায়ের অবস্থা বেশি ভালো না। পায়ে চার চারটা ফোস্কা নিয়ে সে যে এতটা পথ আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে এসেছে সেটাই বা কম কিসের ? নেফেউ পারার সবচে বড় ঘরটিতেই আমাদের থাকার বেবস্থা হল। বিশাল এক ঘর। চুলাতে যথারীতি গরম পানি, নুডুলস, পেঁয়াজ কাটা, মরীচ কাটা, বেশি করে ঝাল দিয়ে চালতার ভরটা, আরও কত কি ! আজ আমাদের হাতে অনেক সময়। তাই বিকালে বের হলাম আশপাশটা ঘুরে দেখতে। ওই দূর পাহাড়ের আড়ালে মুখ লুকালো সূর্যি মামা। কিন্তু তার আবীর যেন ছড়িয়ে দিল পুরো আকাশে। আকাশ যেন নীল শাড়ি পালটে গায়ে জড়িয়েছে টকটকে লাল একটি শাড়ি। কপালে তার লাল টিপ। সে যেন আজ মনের মাধুরী মিশিয়ে সেজেছে শুধু আমাদেরই জন্য। ধীরে ধীরে গায়ে কালো চাদর জড়ায় আকাশ। আমরা ঢুকে পড়ি আমাদের ঘরে। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুয়ে পরলাম। আজ কি ঠাণ্ডা রে বাবা ! ঘরের সব দিক দিয়ে বাতাস ঢুকছে হু-হু করে। ঠাণ্ডায় কে যে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়েছে আর কে যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেঁপেছে বোঝা দায়! ঠাণ্ডার কারনেই হোক আর সাকা হাফং জয়ের উত্তেজনাতেই হোক আজ সবাই উঠে পরলাম খুব ভোরে। চটপট রেডি হয়ে নিলাম সবাই। আজ পুরন হতে যাচ্ছে আরও একটি স্বপ্ন।

স্থানীয় একজন গাইড আর সিয়ামকে সাথে নিয়ে আমরা রওনা হলাম। নাকলিন দা রয়ে গেল পারাতে। দ্রুত এগিয়ে চললাম সবাই। মানুষের ছোঁয়া লাগা হালকা বনের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। ডান পাশে খাদের অবস্থা দেখে মনে হলো বর্ষায় এখান দিয়ে প্রবল প্রতাপ নিয়ে ঝর্ণা বয়ে চলে। কিছু কিছু জায়গায় ভূমি ধ্বস হওয়ায় ট্র্যাক কিছুটা বিপদজনক। ঝোপের ভিতর দিয়ে তৈরী করা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছি। এরপর আবার বনের ভিতরে ঢুকলাম। কিছু দূর এগোনোর পর পথ নিচে নেমে আবার উপরে উঠল, দেখা মিললো ঘন বাঁশ ঝাড়ের। অভিযাত্রীদের চলাচলের ফলে ঘন বাঁশ ঝাড়ের ভেতর দিয়ে পথ সৃষ্টি হয়েছে। এগিয়ে চলার গতি কমে গেলেও রূদ্ধ হলো না। সাবধানে চলতে হয় এখানে; তা না হলে শরীর কেটে যেতে পারে। এভাবে চলতে চলতে চূড়ায় পৌঁছে গেলাম সবাই। তখন প্রায় ৯ টা। আমরা দাঁড়ালাম বাংলাদেশের উচ্চতম স্থানে; যার উচ্চতা ১০৫৩ মিটার (জি পি এস রিডিং)। সত্যি হলো আমাদের স্বপ্ন। আর অসাধারন এক মাইলফলক স্থাপন করলো হেলাল ও কমর সহোদর। তারাই বাংলাদেশের প্রথম সহোদর যারা এক সাথে সাকা হাফং সামিট করলো। সবাই মিলে ছবি তুললাম। যেদিক দিয়ে আমরা উঠেছি তার অন্য পাশটা মায়ানমার।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

ইকা বলেছেন: পথ হারিয়েই সুখ B-) (খাড়া ট্র্যাক টার কথা বাদ দিলে), নিফিউ পাড়ার স্মরণীয় ঠান্ডা :#
তবে নিফিউ পাড়া ওঠার রাস্তা টা আসলেই ইন্টারেস্টিং, , নতুন অভিযাত্রীদের স্বাগত জানাই :P :P

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৪

তাহসিন মামা বলেছেন: ওঠার রাস্তা টা আসলেই ইন্টারেস্টিং, , তাই নাকি। ছলেন আবার ওই রাস্তা পার হই !!! আপনাদের তখনকার চেহারা যদি এখন একটু দেখাতে পারতাম ! :) :দ

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভ্রমণ বাংলাদেশ দলের সবাইকে অভিনন্দন। পুরো সিরিজের লেখা পড়ে মনে হয়েছে যেন আমি নিজেই সাকা সামিট করে এসেছি।

অশেষ ধন্যবাদ তাহসিন মামাকে, এত সুন্দর একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্য।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২২

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ, বোকা মানুষ বলতে চায়। আপনার সাথে নিশ্চয়ই একদিন সাকাতে কথা হবে।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমি শীতে কাপতে কাপতে চাঁদের আলোতে সেভটা সেরে নিলাম ওটা কিন্তু বললেন না।

চুপি চুপি বলি কাউকে বলবেন না যেন, আমার আসলে সবগুলো দাড়িই পাকা তাছাড়া এই আগাছা গুলো একদিনেই ভালো বড় হয়ে যায়, তাই এটা না করে আর উপায় কি ? ক্যামেরায় তো পাকা ডাড়িওয়ালা বুড়ো লোক পোজ দিতে পারে না =p~ =p~ =p~

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৭

তাহসিন মামা বলেছেন: আরে তাই তো। এতো রসালো একটা জিনিশ আমি ভুললাম কি করে !!! ঠিক আছে কোন এক লেখাতে যোগ করে দেব। :প

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:০৫

রাত ১২ টা বলেছেন: ভাই জীবনের গুড়ি ভেঙ্গে পড়ার একমাত্র সাক্ষী আমি ছিলাম, ওটা ভাঙ্গার পর জীবনের পিছনে থাকা সিয়াম আমার দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতেছিল, "আমাকে উঠাবে কে?"
ঐ চেহারা আমি জীবনেও ভুল্ব না.।
আর ভাই আপনার উল্লেখিত পথ ভুল করে আমরা যে সুন্দর জায়গাটায় গোসল করেছিলাম, ঐ জায়গাতার আমরা একটা নাম দিয়ে এসেছি.।
আপনি সেটা উল্লেখ করতে ভুলে গেছে্ন।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৪

তাহসিন মামা বলেছেন: হা হা হা ! ওই নামটি তোমার লেখাতে নিশ্চয়ই পাবো আশা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.