নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পর্ব- ৫

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫

পাহাড়ে উঠার চেয়ে নামাটা সবসময়ই কঠিন। তাই কষ্ট কম হলেও নামতে হয় খুব সাবধানে। আর এখন তো কোন আছাড় খাওয়া যাবেই না। হাজার হলেও আমরা এখন সাকা সামিটারস! এই কথা বলে আমি ইকা আপুকে বার বার সাহস যোগাতে লাগলাম। গতকালের শেষ পথটুকু তাকে কিছুটা ভীত করে তুলেছে। মাঝ পথে শাহাদাত ভাই জানালো এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। আরে তাই তো! টপাটপ মনা ভাই, আবুবক্কর ভাইকে ফোন করে আমাদের সাকা সামিটের কথা জানিয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে আমরা আবার নেমে এলাম নেফিউ পারাতে। বেলা তখন সাড়ে এগারটা। পারাতে পৌঁছে দেখলাম নাকলিন দা আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে। আমরা রাতে রেখে দেয়া খিচুড়ি দিয়ে চটপট খাওয়া সারলাম। সাথে আচার তো আছেই। পেট পুরে খেয়ে মনে হলো একটা ঘুম দেই। কিন্তু তার কি আর উপায় আছে; যেতে হবে সাজাই পাড়া। সবকিছু গুছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। আমাদের সাকার গাইডকে সাজাই পারা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বলায় সে রাজি হলো । শুরু হল আমাদের আমিয়াখুম অভিযানের প্রথম ধাপ। খাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ পথ চলতে কষ্ট হচ্ছিল। ধীরে ধীরে গতি বাড়ল। সূর্য অকৃপণের মতো তাপ বিলিয়ে যাচ্ছে। ঘন্টা খানেক চলার পর রাস্তার চরাই উতরাই কমে গেল। পথ চলতে এখন আর তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না। গাইডসহ ১৫ জনের দলটা ৩ ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কেউ কেউ বেশ এগিয়ে গেছে। আমি মাঝের দলে। আমাদের পিছনে আরও কয়েকজন। কিছু দূর এগিয়ে দেখি সামনের দলটি একটা ঝিরির পাশে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দুই পাহাড়ির সাথে সেখানে দেখা হয়ে গেল। তারা বন্দুক নিয়ে শিকার করতে বেরিয়েছে। কথা বলে জানলাম বন্য শূকর, কাঠবিড়ালি, মাঝে মাঝে হরিণ হল তাদের প্রধান শিকার। আমরা ঝিরিতে পানি খেয়ে, খালি বোতলগুলো ভরে নিলাম। কিন্তু পিছনের দলটি এখনো আসছে না কেন? এতক্ষণ তো লাগার কথা না। একটু পরে পিছনের দলটিকে দেখে মন খুশি হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের একটি দুঃসংবাদ দিল রুবিনা আপু। জানালো রুপমের মাসল পুল করেছে। সে ঠিক মতো হাটতে পারছে না। জাহিদ ভাই রুপমের অবস্থা পরীক্ষা করে জানালেন হাটতে পারবে, তবে তাড়াহুড়া করা যাবে না। আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর আমরা ঝিরিতে এসে পড়লাম। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ঝিরিতে পানি নেই তেমন একটা। তবে ঝিরিটা এক কথায় অসাধারন। দু’পাশের খাড়া পাহাড় চারদিকটাকে কেমন যেন অন্ধকার করে রেখেছে। এই ভর দুপুরেও সন্ধ্যার আমেজ পেয়ে গেলাম। গয়ালের দেখা পেলাম বেশ কিছু। ঝিরির ডান দিকে একটা রাস্তা চোখে পড়লো। বুঝলাম পারা খুব দূরে নয়। ছোট্ট একটা বাঁক পার হতেই চোখের সামনে ধরা দিল ঘর বাড়ি। আমরা পৌঁছে গেছি সাজাই পারাতে।

পাড়ার আদি নাম মাঠভারা পারা হলেও এখন সবাই সাজাই পারা নামেই চেনে। এটা একটা খিয়াং পারা। পারাটা খুব সুন্দর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মাত্র নয়টা পরিবার বাস করে। সবাই ভালো বাংলা জানে। মাঝখানে ফুটবল খেলার একটা মাঠ; ঘরগুলো মাঠের চারপাশে। চারদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা। ঠিক যেন একটা ভ্যালী। ঝিরিটা পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ দিক হয়ে পাড়ার গা ঘেষে বয়ে চলেছে। পশ্চিমে আছে জ্যোতি পারা (ত্রিপুরা পারা) আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মংখাই পাড়া (খিয়াং পারা)।



রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো অংফউ খিয়াং এর বাড়িতে। পেশায় শিক্ষক। শিক্ষক সাহেবের সাথে কথা বলে পরবর্তী দিনের প্ল্যান তৈরি করলাম। প্ল্যান হল খুব ভোরে আমরা রওনা হব আমিয়াখুমের উদ্দেশে। সব কিছু ঠিক থাকলে দুপুর ১২ টা নাগাদ আমরা পারাতে ফিরতে পারব। ব্যাগ রেখে সবাই ঝিরিতে গিয়ে গোসল করলাম। রাতে খাবার জন্য মুরগীর ব্যবস্থা করা হলো। পেঁপে কেনা হল মুরগীর সাথে রাধার জন্য। আমাদের রন্ধন শিল্পীরা লেগে গেলেন রান্নার কাজে। রাতের মেনু ভাত, ডাল, মুরগীর মাংস। সেদিন পূর্ণিমা ছিল না তবে দু’দিন আগের পূর্ণিমার চাঁদের রূপ ম্লান হয়নি এতটুকুও। ভাত খাবার আগে তাই খেলার মাঠে বসে চাঁদের আলো খেয়ে নিলাম অনেকেই। শুধু মনে হচ্ছিল এমন চাঁদের আলো মরি যদি সেও ভালো সে মরন স্বর্গের সমান। খাবার পর পারার কারবারির সাথে দেখা করলাম। একে বারেই যুবক। বয়স আমাদের অনেকের চেয়ে কম হবে। ভাল গান গায়, গিটার ও বাজাতে পারে! কারবারি, অংফউ খিয়াং দা আর আমরা বেশ ভাল একটা আড্ডা দিয়ে ফেললাম। এরই মাঝে নাকলিন দা বাকলাইয়ের ফিরতি পথ ধরেছে। তাই পর দিন একজনকে গাইড হিসেবে আমাদের সাথে দিতে বলায় কারবারি তাই ভাইয়ে কথা বলল। আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের আসর ভাঙল। একে একে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। ২১ তারিখ সকালে আমিয়াখুম যাবার জন্য তৈরী সবাই। সাথে নিলাম বিস্কুট, খেজুর আর চকলেট। পরিচয় হল আমাদের নতুন গাইড পলাশ দা এর সাথে। পারার উত্তর পাশের পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। পথটা উত্তর থেকে পশ্চিমে ঘুরে নিচে নেমে গেছে। প্রথমে অনেকক্ষণ খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠলাম(প্রায় ৪৫০ ফুট); তারপর কিছুটা সমতল রাস্তা। তারপর আবার উঠতে হলো। একটা জুম ঘর চোখে পড়লো। একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা সবে চলতে শুরু করেছি এমন সময় রুবিনা আপু পরে গিয়ে হাত কেটে ফেলল। আবার আমাদের ডাক্তার জাহিদ ভাই এগিয়ে এলেন। হাতে হালকা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। আগেও একবার বলেছিলাম উঠা মানেই নামা, আর নামা মানেই উঠা। এতক্ষণ উঠেছি, এবার নামার পালা। নামতে নামতে চলে এলাম সজারুর রাস্তায়। পথ একটা আছে কিন্তু ঘন ঝোপের কারণে সেখান দিয়ে সোজা হয়ে হেঁটে যাবার উপায় নেই। চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে হয় বলে পলাশ দা রাস্তার নাম দিয়েছেন সজারুর রাস্তা। বেশ কসরত করে নিচে নামছি সজারুর রাস্তা দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাত পা ধরে এলো; কিন্তু রাস্তা শেষ হয় না। কিছু কিছু জায়গাতে তো পলাশ দাদা টার দা দিয়ে পাহাড়ে খোপ করে করে রাস্তা তৈরি করে দিল ! সব কিছুর মত রাস্তাও শেষ হলো এক সময়। চলে এলাম রেমাক্রি খালে। খালের ওপাশের পাহাড়ে ত্রিপুরাদের একটা পাড়া আছে। খাল ধরে এগিয়ে চলেছি। মনে হচ্ছে যেন রূপকথার পাথরের রাজ্যে এসে পড়েছি। খালের মাঝে, পাশে বিরাট বিরাট পাথর পড়ে আছে। তিন্দুর বড় পাথর এগুলোর কাছে কিছুই না। একটা পাথর চোখে পড়ল যার উপরে মানুষ বসা যাবে এরকম একটা গর্ত আছে। একসময় পৌঁছে গেলাম সাত ভাই ঝর্ণার কাছে; যার আরেক নাম মাঠভারাকুম। এখানে বর্ষা থেকে শীতের আগ পর্যন্ত পাহাড় বেয়ে সাতটি ঝর্ণা নেমে আসে। খাল এখানে অনেক গভীর। তাই ডান পাশের পাহাড় বেয়ে উঠতে হলো কিছুক্ষণ। একটা জায়গায় বানরের মত ঝুলে ঝুলে যেতে হলো। পথটা নিচে নেমে খালের পাড়ে এসে মিশেছে। আবার পাথরের মাঝ দিয়ে পথ চলা। পাড়ের কাছে যে পাথরগুলো ডিঙিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম সেগুলো আগের গুলোর চেয়েও বড়।

এক সময় বাম পাশে একটা বড় ঝিরি দেখলাম যা খালে এসে পড়েছে। জানলাম এটাই সাজাই পারার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঝিরি। বেশ কিছু পাহাড়ি মানুশের দেখা পেলাম এখানে। মাছ ধরছে। বিচিত্র তাদের মাছ ধরার কৌশল। স্বচ্ছ পানিতে মাছের ছুটে চলা দেখা যাছে। আমরা মন্ত্র মুগ্ধের মতো দেখছি সবকিছু। পাহাড়গুলো এখানে আরও উঁচু। কেমন একটা শীত শীত ভাব। পায়ে হাঁটার পথ এখানে শেষ। যেতে হবে বাঁশের ভেলায় চেপে। কিন্তু এপারে ভেলা নেই; আছে ওই পারে। জামা কাপড় খুলে সাঁতারের জন্য প্রস্তুত পলাশ দা। আর কেউ যেতে রাজি হলো না। সিয়ামকে পলাশ দা এর সাথে যেতে বলব বলে তার দিকে ফিরে দেখি সে রীতিমত ভয়ে কাঁপছে। পলাশ একাই পানিতে নেমে পড়ল। সাঁতরে গিয়ে নিয়ে আসলো ভেলাটা। তিনজন তিনজন করে ভেলা দিয়ে পার হতে হবে আমাদের। এখানে ভেলায় উঠার ঠিক আগে সামান্য একটু জায়গা নামতে হয়। কিন্তু এটুকু আজকের সবচে বাজে জায়গা নামার জন্য। ধরার কোন কিছু নেই। একজন একজন করে হাত ধরে ধরে নামতে হচ্ছে। প্রথম দু’দফায় ৬ জনকে রেখে ফিরে আসছে পলাশ দা। আমরা বাকিরা তাকিয়ে আছি তার দিকে। এমন সময় ঝুপ করে কারো পানিতে পরে যাওয়ার শব্দ কানে আসলো। আমাদের কেউ একজন পরে গেছে গভীর পানিতে!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমার দুঃখ কি তাহসিন ভাই জানেন ? আপনি এতো কাছে থেকে ও শাহাদাত ভাইয়ের পানিতে পড়ে যাওয়ার সময়ের ছবিটা উঠাইলেন না :-B :-B

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৪

তাহসিন মামা বলেছেন: ছবি তুলবো কি করে? সে তো ক্যামেরা নিয়েই পানিতে পরে গেল!!!

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৪

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ :D

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: মামা কি এখনও ওয়াচে ?
সেফ হন নাই ?
এত ভাল ভাল পোষ্টে হিট এত কম কেন ?
পোষ্টে অনেকগুলো প্লাস।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫০

তাহসিন মামা বলেছেন: কি আর করা ভাই, এডমিনরা মনে হয় আমার লেখ পছন্দ করে নাই :(

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: দাড়ান দেহাতেসি !

৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৫

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: এতসুন্দর লেখেন "তাহসিন মামা" এরপরও এতদিন ধরে ওয়াচে !

মামা কাজ হবে আশা করি, আমিনুর ভাই পোষ্ট দেখেছেন, উনি অনেক পাওয়ারফুল!

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২২

তাহসিন মামা বলেছেন: আমি চাই আমার লেখা পরে আমাকে সাফে করা হোক :প

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.