নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পরব-৭ (শেষ)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৪

পিছনে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। যেহেতু জুম ঘর আছে সেহেতু রাস্তা একটা থাকবেই। কিন্তু সেখানে যাবো কি করে? কোন রাস্তাই তো নেই সেখানে যাওয়ার। কিন্তু ঐ যে একটা কথা আছে না, ‘পথ পথিক তৈরি করে না, পথিকই পথ তৈরি করে নেয়’। আমরা প্রায় ৭৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে কোনমতে উঠে এলাম জুম ঘরে। এখান থেকে একটা ট্রেইল চোখে পড়ল ঠিকই কিন্তু পারা কত দূর তা বোঝার কোন উপায় নেই। এদিকে রাত তখন দশটা পেরিয়ে গেছে। সামনে পারা পেলেও যে আমাদের এতো রাতে থাকার বেবস্থা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। পলাশ দা আর সিয়ামকে পাঠিয়ে দিলাম পারা কত দূর দেখে আসতে। আমরা রয়ে গেলাম জুম ঘরে। সিদ্ধান্ত নিলাম পারা খুব কাছে হলে পারাতে যাবো, না হলে থেকে যাবো এই জুম ঘরে। ওরা চলে গেলে জুম ঘরটা ভাল করে পরীক্ষা করলাম। বেশ শক্ত পক্ত। রাত কাটিয়ে দেয়া যাবে। সবার সাথে কথা বলে ঠিক হল আমরা এখানেই থাকবো আজকের রাতটুকু। ঘরে অনেকগুলো লাউ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে আমাদের থাকার জন্য জায়গা করা হল। এরই মাঝে সিয়াম ফিরে এসে জানালো পারা সামনেই। তাকে বললাম, ‘তোমরা পারাতে গিয়ে থাক, আমরা এখানেই থাকবো। সকালে এসে আমাদের নিয়ে যেও’। কিন্তু ও এতে রাজি হল না। পলাশ দা কে নিয়ে সেও থেকে গেল আমাদের সাথে। আজ সারাদিনে প্রচুর হাঁটা হয়েছে। সেই তুলনায় পেটে খাবার পরেনি কিছুই। আবার আমাদের সাথে খাবার তেমন একটা নেই। তাই যার কাছে যা আছে সব খাবার একখানে রাখতে বললাম। যে পরিমান খাবার বের হল তার পরিমান খুব বেশি না হলেও একেবারে কম নয়। সকালের জন্য কিছু খাবার রেখে বাকিটুকু আমরা ভাগ করে খেয়ে নিলাম। সাথে পানি নেই বললেই চলে। তারপরও যেটুকু আছে সবাই দুই-এক ঢোক করে খেলাম। কিন্তু কারো কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন বিরক্তির ছাপ। মনটা খুশিতে ভরে গেল। আমরা যেন বারো জনের একটা পরিবার। আরও কিছুক্ষণ গল্প, হাসি-তামাশা করে আমরা ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে পড়লাম। কাঁপতে কাঁপতেই ঘুমালাম। কাঁপতে কাঁপতেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি কয়েকজন কাঁপতে কাঁপতেই ঘুমাচ্ছে, কেউ কেউ ঘুম থেকে উঠে কাঁপছে। সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে বিল্ডিং যেমন কাপে, ঠাণ্ডায় আমরাও কাঁপছি সেভাবেই। রিক্টার স্কেলে এর মাত্রা কম করে হলেও আটের নিচে না। এক সময় ভোর হল। আজ অবশ্য কাউকে ডাকতে হল না। ঠাণ্ডায় সবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমরা আমাদের শেষ দিনের যাত্রা শুরু করলাম।

সকালের লাজুক রোদ এসে পড়ছে ভোরের শিশিরের উপর। লাজুক রোদের ছোঁয়ায় মুক্ত দানার মতো চিক চিক করছে শিশির কনা। চোখের সামনে মেঘের ভেলায় চরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানান রঙের প্রজাপতি। পাখির কিচির মিচির প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পুরো পাহাড় জুড়ে। কুয়াশার চাঁদর সরিয়ে আমরা চলেছি নাফাখুমের পথে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা আমরা রেমাক্রি খালে নেমে এলাম। এ পথটা আমার চেনা। নাফাখুম আর বেশি দূরে নয়। ঝিরি পার হয়ে অল্প কিছুক্ষণ হাঁটতেই চোখের সামনে ধরা দিল নাফাখুম জলপ্রপাত।

আমিয়াখুম দেখার পর নাফাখুমকে তেমন একটা আকর্ষণীয় মনে হওয়ার কথা না। এটাও সুন্দর কিন্তু আমিয়াখুম অসাধারন। সর্বত্র পড়ে থাকা প্লাসটিকের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখলাম। । কি নেই সেখানে; বিস্কুট, চকলেট, আচারের প্যাকেট; খালি পানির বোতল, এমনকি ফেস ওয়াশের টিউব। হায়রে বাঙালী, নিজের জিনিস খুব যত্ন করেই ধ্বংস করছি নিজ হাতেই। কিছু শুকনা খাবার খেয়ে, ছবি তুলে আবার রওনা হলাম।



আবার পাড় ধরে এগিয়ে চলা। মাঝে মাঝে খাল পার হয়ে অন্য পাড় দিয়ে যেতে হচ্ছিল। একে একে পেরিয়ে এলাম চিংথোইংঅং পাড়া, পিনিদং পাড়া, পাংজরি পাড়া। এগুলো সবই মারমা পাড়া। এগারোটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম রেমাক্রি বাজারে। এখানেই রেমাক্রি খাল সাঙ্গু নদীতে এসে পড়েছে। পরিকল্পনা হল এখান থেকে নৌকাতে করে যাবো থানচি বাজার । চলে গেলাম নৌকা ঠিক করতে; কিন্তু গিয়ে দেখি একটা নৌকাও নেই। কঠিন সমস্যা; আজই আমাদের ফিরতে হবে বান্দরবানে। বান্দরবান থেকে আমাদের ঢাকা যাবার বাস আজ রাতেই।

পরে স্থানীয় একজনের সাহায্যে থাঞ্ছি থেকে নৌকা আনানোর বেবস্থা করা হল বটে কিন্তু তাতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। কি আর করা। নাই মামার চেয়ে তো কানা মামা অনেক ভালো, তাই না? এই সময় টুকু বসে থাকার কোন মানেই হয় না। চলে গেলাম রেমাক্ক্রি ফল’স এ। সেখানে ঘণ্টা খানেক দাপাদাপি করে চলে এলাম বাজারে। এরই মাঝে নৌকা চলে এসেছে। আমাদের এই অভিযানের পনেরো কলা পুরনো হয়েছে। ষোল কলা পুরনো হতে এই নৌকা ভ্রমণটাই বাকি ছিল। চরে বসলাম নৌকায়। একটি-দু’টি করে পুরনো হল আমাদের অভিযানের ষোলটি কলা।

আমাদের ইঙ্গিন চালিত নৌকা ছুটে চলেছে থাঞ্ছির দিকে। পিছনে রেখে যাচ্ছি আদিম, অকৃত্রিম, মাদকতাময় এক জগত, কিছু ভাললাগা আর কিছু সুখ স্মৃতি যা কখনো মলিন হবার নয়।



স্মৃতির পাতা থেকেঃ



কেওক্রাডং এর চূড়া



দেশের সবচে উঁচু ঝর্ণা (বাকলাই) তে



সাকা বিজয়ের পর



আমিয়খুম জলপ্রপাত



জলপ্রপাতের নাম নাফাখুম



পাহাড়ি জীবন





খাবার :



পাহাড়ি গ্রাম



বাঁশের ভেলায় আমিয়াখুমের অভিযাত্রী



ফেরা।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.