নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঘের ডেরায় - পরব-২

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪

আমরা যারা পিছনে ছিলাম তারা সবাই তাড়াতাড়ি পা চালালাম। ধুর! কিসের বাঘ। সামনে হঠাৎ করেই উদয় হল জামতলা বীচ। লাফালাফি আর হইহুল্লরের কারণ এটাই। ২০০৭ এর সিডর কিছু ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে এই বীচের চারপাশ। বীচে ঘণ্টা দেড়েক চমৎকার একটা সময় কাটিয়ে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। এরই মধ্যে বেশ ক্ষুধা লেগেছে। আসার সময় দেখে এসেছি বড় বড় চিংড়ি মাছের দোপেয়াজার আয়োজন চলছে। দুপুরের খাবার সেরে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নিয়ে প্রায় ৪ টার দিকে আমরা ট্রলার নিয়ে বের হলাম কটকা জেটির উদ্দেশে। আগের মতই দু’দফায় আমরা সবাই কটকা জেটিতে এসে পোঁছালাম। এখানে আমরা প্রচুর হরিণের দেখা পেলাম। বোনাস হিসেবে পেলাম বেশ কিছু বানর। বাঘবাজির ক্ষেত্রে বানরের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে জঙ্গলের জীবনযাত্রায়। কারণ, গাছের উঁচু ডাল থেকে ওরা লক্ষ রাখে বাঘের আনাগোনা। আর তার সামান্য আভাস পেলেই ওরা সাবধান করে দেবে অন্যদের। এখানেও আমরা বাঘের দেখা পেলাম না ঠিকই কিন্তু কটকা বীচের সূর্যাস্ত এক কথায় অসাধারণ। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ আমরা ফিরে এলাম লঞ্চে। এসেই দেখি বার-বি-কিউ এর আয়োজন চলছে পুরোদমে। টুটু ভাই নিজে সবকিছু দেখাশুনা করছেন আর তাকে সাহায্য করছে আমাদের দুই বাবুর্চি টুলু ও এবাদুল। ৯০ জনের জন্য মুরগি ৬০ টা ! আমি নিশ্চিত, মুরগিদের কোন আদালত থেকে থাকলে এই মুরগি হত্যার অপরাধে টুটু ভাইয়ের ফাঁসি হয়ে যেত এতদিনে! তৈরি হল মুরগির বার-বি-কিউ, পোলাও আর টুটু ভাইয়ের স্পেশাল সালাদ। যেই সালাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি দিনের পর দিন, এক বার-বি-কিউ থেকে আর এক বার-বি-কিউ পর্যন্ত। খাওয়াটা কেমন হল তা না হয় নাই বললাম কিন্তু খাবার নিয়ে অনেকেই একটা অভিযোগ করলেন। আর তা হল টুটু ভাই নাকি সবাইকে খাইয়ে খাইয়ে মোটা করে ফেলার গভীর এক ষড়যন্ত্র করেছেন। রাতে খাবার পরে জমিয়ে একটা আড্ডা দিলাম সবাই মিলে। চলল গানের আসর। বেসুরো গলায় কে কারচে বেশি গাইতে পারে এ যেন তারই এক প্রতিযোগিতা। আস্তে আস্তে আসর ভাঙল। তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই করছে। সবাই ঘুমাতে চলে গেলে আমি গিয়ে বসলাম ডেকের মাথায়। নদীর স্রোতের কূল কূল ধ্বনি কানে আসতে লাগলো। সেই অবিরাম কুলু কুলু স্রোতে মিশে থাকে অরণ্য-ভাললাগা। নজর চলে যায় নদীর দু’ধারে কালো জমাট বাঁধা জঙ্গলে, যা ক্রমশ জেগে ওঠে নিষ্ঠুর পাশবতায়- খাদ্য ও খাদকের আদি অকৃত্তিম নেশার রক্ত-মন্ত্রে। এর এক মাত্র সাক্ষী হয়ে থাকে শুধু নীলচে আকাশের ওই তামাটে পূর্ণিমার চাঁদ। সমস্ত প্রকৃতি যেন এক অধরা রহসসের মাধুরীতে গাঁথা।



শেষের দিনের গল্পঃ আজকের সকালটা এক কথায়া অসাধারণ। আমাদের লঞ্চ নোঙর করেছে হারবারিয়ার কাছে। লঞ্চ থেকে হারবারিয়া জেটি দেখা যায়। মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে কোনরকমে চা-বিস্কুট মুখে দিয়েই রওনা হলাম হারবারিয়ার উদ্দেশে। পেছন থেকে মন পাগল করা খিচুড়ির সুগন্ধ আমাদের ডাকতে লাগলো বার বার। জেটি পার হয়েই সামনে পরল একটা মিঠা পানির পুকুর। পুকুরে অসংখ্য শাপলার মেলা। তারা যেন সারাক্ষণ খেলা করছে ভ্রমর আর প্রজাপতির সাথে। এখানে বাংলাদেশ বন বিভাগের তৈরি করা করা একটা ট্র্যাক আছে।



মাঝে একটা ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারের উপর থেকে সবুজ গাছপালা, নিস্তব্ধ পরিবেশ আমাদের মনকে ভাবুক করে তুলছিল বার বার। এরই মধ্যে বারোটা বেজে গেছে। না, আমাদের নয়, ঘড়ির। আমি, মনা ভাই, প্রিন্স ভাই, অদিতি আপু ও সুমন ছাড়া হারবারিয়াতে কোন পর্যটক এই মুহূর্তে নেই। আমরা সবাই ওয়াচ টাওয়ারে বসে প্রকৃতি গিলছি। অদ্ভুত এক ভাললাগায় ভরে গেছে মনের প্রতিটি পরত। সজীব ভাই ওয়াকি টকির মাধ্যমে আমাদের জেটিতে ফিরতে অনুরোধ জানালেন। আমরা জেটি হয়ে সবাই মিলে ফিরে এলাম লঞ্চে। লঞ্চ রওনা হল করমজলের উদ্ধেশে। এখানে কুমিরের বেশ বড় একটি প্রোজেক্ট রয়েছে। বুড়ো কুমির, বাচ্চা কুমির এমনকি গুড়া কুমিরেরও দেখা মিলবে এখানে। এখানকার বাঁদরগুলো এতোই বাঁদর যে বাঁদরামি কত প্রকার ও কি কি সংজ্ঞা সহ উদাহরণ এরা দিয়ে দেয় অবলীলায়। আর ভাবখানা এমন যে আমরা বাঁদর থেকে মানুষ হয়ে কি বোকামিটাই না করেছি। তা না হলে তাদের মতো আমরাও বাঁদরামি করতে পারতাম অবলীলায়। যারা ঝটিকা অভিযানে সুন্দরবন যেতে চান, তারা করমজল মিস করবেন না। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক করমজলে কাটিয়ে আমরা ফিরে এলাম লঞ্চে। লঞ্চ ছুটে চলেছে খুলনা ঘাটের দিকে। ঐ দূরে মংলা বন্দর। বিদায় সুন্দরবন। আবার কোন একদিন নিশ্চয় ফিরে আসব তোমার কোলে। কোন অরণ্য প্রেমী কি উপেক্ষা করতে পারে অরণ্যর ডাক?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

শায়লা িসিদ্দক বলেছেন: আরও কিছু ছবি থাকলে মনে হয় আরও ভালো লাগত :)
ভালো থাকবেন :)

২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ। আরও কিছু ছবি সংযুক্ত করলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.