নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমুদ্র বিলাস

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২



যেতে যেতে মাথার উপর এত বি-শা-ল আকাশ এর আগে আর কখনো দেখা হয়নি। চতুর্দিকের নীল- সাদা আকাশের নিচে যেদিকেই তাকাই শুধু পানি আর পানি। নীল পানিতে আকাশটা যেন হঠাৎই ঝুঁকে পড়েছে ওল্টানো বাটির মতো। সেই আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ ভেসে বেড়ানো মেঘের মতোই যেন ভেসে চলেছে আমাদের জাহাজ ‘এল সি টি কুতুবদিয়া’। অবিরাম সেই ছুটে চলা নাক বরাবর দক্ষিনের দিকে। যেন খেলনার পুতুলের মতো চাবি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সমুদ্রের মাঝে। অনড় দৃশ্যপটে হয়তো ক্ষণিকের রিলিফ দিতে হঠাৎ হঠাৎ উড়ে যায় পাখির দল। এ যেন এক অন্য অভিজ্ঞতা। ট্রেনে, বাসে কিংবা বিমানে ভ্রমণের সাথে যার কোন তুলনা চলে না। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষেই ছুটে চলা দেশের দক্ষিনের দ্বীপ ‘সেন্ট মার্টিনে’। ‌

টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্রগর্ভে শান্ত, সিগ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের এ দ্বীপটি বাংলাদেশের এক মাত্র প্রবাল দ্বীপ। সৈকতজুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা ছাড়াও সমুদ্র তীরের সারি সারি নারিকেল গাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি, বড় বড় সামুদ্রিক কচ্ছপ এ দ্বীপের মুল আকর্ষণ। প্রায় ১০ হাজার লোকের বাস এই দ্বীপে।

আমরা যখন টেকনাফ হতে এল সি টি কুতুব্দিয়াতে চড়ে সেন্ট মার্টিনের উদেশে রওনা হলাম তখন সময় প্রায় ৯.৪০ মিনিট। দুধ সাদা জাহাজটি অসংখ্য জেলে নৌকার জটলা কাটিয়ে সাগরের বুক চিরে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। জাহাজের ডেকে বসে জেলেদের মাছ ধরা আর দূরের মায়ানমারের পাহাড় দেখতে দেখতে আমরা চলেছি স্বপ্নের দ্বীপে। আমাদের সাথে বিশ্বস্ত সঙ্গীর মতো চলেছে অসংখ্য সিগাল। বন্ধুরা মিলে গল্প করতে করতে প্রায় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট কিভাবে যেন কেটে গেল টেরই পেলাম না। এদিকে অসংখ্য মাছ ধরা নৌকার জালের ফাঁক-ফোঁকর পেরিয়ে সূর্য তখন মাথার উপরে। ঐ দূরে দেখা যাচ্ছে সেন্টমারটিন। আমরা প্রায় চলে এসেছি দ্বীপের কাছে। আমাদের জাহাজ জেটিতে ভিড়ল। হৈ-হুল্লর করে সবাই নেমে পড়লাম সবুজ সমুদ্রের সাদা বালিতে। হোটেল ব্লু মেরিনের ঠিক পাশেই সমুদ্দ্র পুরীতে আমাদের রুম রিজার্ভ করাই ছিল। সেখানে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম খাবারের সন্ধানে। বাংলাদেশের অন্যতম স্কুবা ডাইভার মুজিব ভাই সন্ধান দিলেন খাবারের হোটেলের। তার নির্দেশনাতেই চলে গেলাম প্রাসাদ প্যারাডাইসে। কোরাল মাছ, দুই রকমের ভর্তা ও মন ভুলানো ঘন ডাল দিয়ে সেরে নিলাম দুপুরের খাবার। খাবার সেরে চলে এলাম সমুদ্রের পাড়ে। অক্সিজেনে ভরা তাজা বাতাস আমাদের মন- প্রান দুটোই ভরিয়ে দিল। দীর্ঘ জার্নির ধকলে সবাই বেশ ক্লান্ত। তাই আমরা কয়েকজন চলে এলাম রুমে। ওদিকে মনা ভাই, হাসান ভাই, মিনি ভাবী সহ বেশ কয়েকজন রয়ে গেলেন সেখানেই। পড়ন্ত বিকালটা তারা সমুদ্রের পারেই কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা তাদের সাথে আবার যোগ দিলাম। আড্ডা আর গল্প চলল। এদিকে সূর্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। কিছুক্ষণ পর আকাশ-বাতাশ-পানি রাঙিয়ে টুপ করে সূর্য ডুব দিল সমুদ্রের বিশাল জলরাশির বুকে। এক খণ্ড কমলা আগুন যেন অনায়াসে হারিয়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে পূব দিক থেকে এক কালো ঘোমটা কে যেন বিছিয়ে দিল গোটা আকাশে। হোটেল অবকাশের পিছনে প্রায় ৮টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে আমরা ঘুরে দেখতে বের হলাম সদ্য আধুনিকতার ছোঁয়া লাগা রাতের সেন্ট মার্টিন। বাইরে রাতের খাবার সেরে ফিরে এলাম হোটেলের সামনে। মাথার উপর তখন অসংখ্য তারার চুমকি। গ্রহ, গ্রহানুপুঞ্জ, তারা, ছায়াপথের কারিকুরি। আকাশের সেই মায়াবী রাতের খেলা দেখতে দেখতে মনটা কেমন যেন ভাবুক হয়ে গেল। গান শুরু করলাম। ‘ও সাগর এত জল তুই কই পেলি’।

পরদিন সকালে হঠাৎই যেন নীল পানি যেখানে দিগন্তে আকাশে মিশেছে সেখান থেকে টকটকে লাল সূর্য মুচকি হেসে বেরিয়ে এলো। অপূর্ব সুন্দর এক মুহূর্ত। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক মায়াবী জগৎ। প্রকৃতির এই বিশাল ক্যানভাসে লাল- নীল- সবুজ- সাদা ়়় কত রং! সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম পুরো দ্বীপটা ঘুরে দেখতে। চমৎকার এক অভিজ্ঞতা। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে মৃত কোরালের বকে। এ যেন মৃত প্রিয়জনকে হারানোর মাতম। অথবা বলতে পারেন দ্বীপের ওপারের প্রিয় সঙ্গীর সাথে দেখা করতে চায় সে। তাই অবিরাম চরম আক্রোশে আছড়ে পড়ছে বাঁধা দানকারী বালিকনার উপর। ঘুরতে ঘুরতে আমরা যখন কিছুটা ক্লান্ত তখনই আমাদের চোখে পড়লো এখানকার বোধহয় সবচে বিখ্যাত জিনিসটি। ডাব! এখানকার ডাবের মিষ্টি পানি আর তার নরম শাঁসের আপ্যায়নে প্রান মন জুড়িয়ে যায়। দুপুরের দিকে প্রায় ঘণ্টা খানেক পানিতে দাপাদাপি করে খাবারের সন্ধানে ছুটলাম খাবারের হোটেলে। বন্ধুদের অনেকের অনুরোধে আজ আমাদের খাবারের মেনুতে রুপচাঁদা মাছ রাখা হয়েছে । কি অদ্ভুত তার স্বাদ। কি সুন্দর তার চেহারা। আহা ! প্রান জুড়িয়ে যায়। ভুরিভোজ সেরে আমারা ফিরে এলাম আমাদের হোটেল রুমে।

একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা সালাম মাঝির নৌকায় চরে রওনা হলাম ছেঁড়া দ্বীপের উদ্ধেশে। ৫০ মিনিটের সুখ-রোমাঞ্ছে ভরপুর এক যাত্রা। ছেঁড়া দ্বীপে নেমে শুরু হল ফটোসেশন আর ঘুরা ঘুরি।চারদিকে মৃত কোরালের আস্তর। পানির নিচেই রয়েছে এক আশ্চর্য অজানা জগৎ । কোরাল বা প্রবালের সেই সংসার দেখতে ছুটে আসা এই চমৎকার দ্বীপটিতে। আজ আবার সময় হল সূর্যি মামাকে বিদায় জানাবার। মুচকি হেসে পূর্ণিমার চাঁদের কাছে পৃথিবীর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন আমাদের সবচেয়ে রাগী আর তেজী মামাটি। আমরা ফিরে এলাম সেন্টমারটিনে। এসে দেখি টুটু ভাই বার-বি-কিউ করার জন্য মুরগী রেডি করে ফেলেছেন। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম ইয়া বিশাল এক কোরাল মাছ ও বার-বি-কিউ হওয়ার জন্য যোগাড় করে ফেলেছেন তিনি। রাত ৯ টার পর শুরু হল আমাদের বার-বি-কিউ পর্ব। আড্ডা, নাচ, গান চলল অনেকক্ষণ। পূর্ণিমার আলোয় গোল হয়ে বার-বি-কিউ এর স্বাদ এক কথায় অসাধারণ। খাবার পর আমরা চলে গেলাম সমুদ্র পাড়ে। গিয়ে বসলাম নোঙর করা একটি নৌকায়। চুপ করে শুনতে থাকলাম বালির, ঢেউয়ের, সমুদ্রের আলাপ চারিতা। ফিরে এলাম আমাদের কটেজ সমুদ্র পুরীতে। ঘুমের রাজ্য থেকে ডাক এসেছে।

পরদিন সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। আজ আমাদের মুজিব ভাইয়ের সাথে স্কুবা ডাইভিং করার কথা। সকালের নাস্তা সেরে আমি, রতন দা, আফজাল ও ভাবি ডাইভিং সুট পরে নেমে পড়লাম পানিতে। প্রথমবার কোন কিছু করার অনুভুতি বলে প্রকাশ করা যায় না। শুধু বলতে পারি ‘অন্যরকম’। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের ভয়-আনন্দ-নতুনত্ব মিশানো এক অনুভুতি নিয়ে উঠে এলাম সমুদ্র-গর্ভ থেকে।

আশ্চর্য সুন্দর জগতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এক সময় যে ফিরতেই হয়। ফিরতে হবে জাহাজে। দিগন্তে অস্তগামী সূর্যকে পিছনে ফেলে জাহাজ আবার ছুটে চলেছে ঘরের দিকে। পিছনে পড়ে থাকে আশ্চর্য এক মায়াবী সবুজ জগৎ। দুই দিনের অপূর্ব সুখসৃতি। এক অন্য পৃথিবী। অন্য এক ভালোলাগা।

কিভাবে যাবেনঃ টেকনাফের দমদমিয়া থেকে সেন্টমারটিনের উদ্দেশে প্রতিদিন ৯.৩০ মিনিটে ছেড়ে যায় সমুদ্র চলাচল উপযোগী কয়েকটি জাহাজ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কেয়ারী সিন্দাবাদ, এল সি টি কুতুবদিয়া, ঈগল, এল সি টি কাজল ইত্যাদি। এগুলোতে টেকনাফ- সেন্টমারটিন- টেকনাফ দুই পথের ভাড়া ৫৫০-১৬০০ টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ থাকার জন্য লোকেশান অনুসারে ভাল মানের হোটেল হল সেন্টমারটিন পর্যটনের অবকাশ রিসোর্ট। এ ছাড়াও অন্যান্য ভাল মানের হোটেল হল- ব্লু মেরিন রিসোর্ট, প্রাসাদ প্যারাডাইজ, সীমানা পেরিয়ে, নীল দিগন্ত রিসোর্ট ইত্যাদি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৫

জামান ইবনে জিয়া বলেছেন: Pic gulo sundor hoice... ;) ;)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.