নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হইলাম মামা :)

তাহসিন মামা

ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই, সুন্দরের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

তাহসিন মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুমার কোলে একদিন

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭

ওপারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে চিম্বুক। তার তলা দিয়ে ছেদহীন অনন্ত অরন্য। বান্দরবান থেকে রুমা। আলোয় ধোয়া আকাশের নিচে পৃথিবীর বুক ঠেলে ওঠা বিভিন্ন গাছে ভরা জঙ্গল। আর পাশ দিয়ে কুল কুল করে বয়ে চলেছে পাহাড়ী নদী সাঙ্গু। পার্বত্য জেলাগুলোর প্রাণকেন্দ্র বান্দরবান শহর থেকে রুমা যাওয়ার রাস্তাটি যেন কোন মহান চিত্রকরের তুলিতে আঁকা কতগুলো দৃশ্যাবলির এক অবাক সমন্বয়। যেতে যেতে এর প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে। অন্তত কয়েক’শ মোড়, পাহাড়ী রাস্তার চড়াই উতরাই আপনাকে অভিবাদন জানাবে রুমা পর্যন্ত।

এটাকে আমি বেড়ানো না বলে অভিযান বলতেই বেশি পছন্দ করবো। যারা পাহাড় ভালবাসেন, এই সোনার বাংলার না দেখা সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চান প্রাণ ভরে, রুমা হতে পারে তাদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। :):DB-);)

বান্দরবান হতে রুমা প্রায় ২.৩০ মিনিটের পথ। দূরত্ব ৪৮ কি:মি। আমরা আট জনের একটা দল । বান্দরবানে হোটেল ম্যানেজারের কাছে জানলাম সকাল ৮.৩০ মিনিট হতে ১ ঘন্টা পর পর বাস এবং চাঁন্দের গাড়ি দুটোই যায় রুমাতে। তাই রাতেই সিন্ধান্ত নিলাম সকাল ৮.৩০এর গাড়িতেই রওনা দেব। সুতারাং সকাল ৮টার মধ্যে আমরা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু আফসোস, গাড়ির ছাদে কোন জায়গা পাওয়া গেল না মাল বোঝাই থাকার কারনে (যদিও নিচে সিট খালি ছিল)। ঠিক করলাম পরের গাড়িতে যাব এবং ছাদেই যাব। সেই অনুযায়ী গাড়ির লোকের সাথে কথা বলে ছাদের জায়গাটি পোক্ত করলাম।



সকাল ৯.৩০ মিনিট। শুরু হল আমাদের রুমা অভিযান। সাপের মতো আঁকাবাকা পাহাড়ী রাস্তা। কিছু দূর যেতেই চোখে পড়লো বান্দরবানের বিখ্যাত শৈলপ্রপাত। এই ১৪ই মে’তেও যেখানে পাথরের ফাঁক ফোকর দিয়ে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। এরপর আবার সেই আঁকাবাকা রা¯তা। আমরা চিম্বুকের দিকে উঠছি। উঠছি তো উঠছি। রাস্তার এক পাশে পাহাড়ী দেয়াল আর অন্য পাশটা খাদ। যেতে যেতে মনে হচ্ছিল ফ্যান্টাসি কিংডমের রোলার কোষ্টারের দু-চার’শ ট্রাক যেন একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা রওনা হয়েছি রোলার কোষ্টারে চড়ে। উঠতে উঠতে আমরা প্রায় দু’হাজার ফিট উঠে গেলাম। চিম্বুক আর মাত্র ৩ কি:মি:। ওখান থেকে রুমা যাওয়ার রাস্তাটা আলাদা হয়ে গেল। আমাদের বাস ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলো। বাসের ছাদ থেকে ছোট ছোট পাহাড়ী গ্রাম পাশ দিয়ে বয়ে চলা সাঙ্গু নদীর যে অপরূপ দৃশ্য তা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব।

পাহাড়ী রাস্তা পাক খেয়ে খেয়ে যেখানে এসে থেমেছে সেটাই রুমা। প্রায় ১২টায় আমরা পৌছে গেলাম রুমা বাস স্ট্যান্ডে। জানতে পারলাম ওখান থেকে যেতে হবে রুমা বাজার। সেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল দাঁড় টানা নৌকা। আমরা ওসমান মাঝির নৌকায় চড়ে প্রায় ঘন্টা দেড়েক এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম রুমা বাজার।

‘রুমা’ পাহাড়ের কোল ঘেসে এক অপরূপ সৌর্ন্দযমন্ডিত জনপদ। সে যেন দিন রাত ঝুঁকে পড়ে নিজের রূপ দেখতে চায় সাঙ্গু নদীর আয়নায়। দু’তিনটের বেশি হোটেল রুমাতে এখনো গড়ে উঠেনি। তাই রুমার প্রকৃতির উপর সার্জারি করে কৃত্রিম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করতে হয়নি। যাক সেখানে হোটেল হিলটনে একটি রুম ভাড়া করলাম চারজন থাকবো বলে। আর বাকি চারজন নৌকায়। আমাদের ওসমান মাঝিকে বলে আগেই ব্যবস্থা করে রাখলাম। দুপুরের খাবার সেরে হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করতে বললো রিজুক ঝর্না ও বগালেকের কথা। সিন্ধান্ত নিলাম রিজুকে যাব। বের হয়ে স্থানীয় এক লোককে জিজ্ঞাসা করতে আমাদের সে রিজুকের রাস্তা দেখিয়ে দিল এবং মাত্র ২০ মিনিটের পথ সেটা বলতেও ভুল করলো না। শুরু হলো রিজুক যাত্রা। আমরা পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে হাটছি। ২০/২৫ মিনিট হাটার পর এক উপজাতিকে পেলাম। সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় জানালো আরো ১.৩০ মিনিট হাটতে হবে, দু’বার নদী পার হতে হবে, পার হাতে হবে ছোট একটা টিলা। সেটা পেরিয়ে মগ উপজাতিদের একটা গ্রাম পড়বে। সেই গ্রাম পার হয়ে কিছুদূর হাটলে দেখা মিলবে রিজুকের। ভয় পেয়ে গেলাম। কারন তখন প্রায় ৪টা বাজে। কিন্তু ফিওে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আবার হাটা দিলাম রিজুকের উদ্দেশ্যে। রবীন্দ্রনাথের সেই বৈশাখ মাসের হাটু জল থাকা নদী পার হলাম। টিলা পার হয়ে মগদে্র গ্রামে পৌছে গেলাম। তখন প্রায় ৫টা। ওখানে অনেকক্ষন ধরে একজনকে বুঝানের চেষ্টা করলাম রিজুক কিভাবে যাবো? উত্তরে অনেক সুন্দর করে বললো “বাংলা ণ বুঝি” (বাংলা বুঝি না)। হতাশ হলাম না। আর একজনকে ধরলাম। দেখিয়ে দিল রিজুকের রাস্তা। মাত্র ২০ মিনিট লাগবে বলে দিল। পাহাড়ী রাস্তা শেষ করে নদীতে এসে পড়লাম। আবার নদী পার হলাম। তীর ঘেসে হাটছি তো হাটছি। লোকজন নেই। অবশ্য মাঝে মাঝে দু’এক জন উপজাতির দেখা মেলে। বিকাল ৫.৩০। আমরা সবাই বিরক্ত। কিছুটা হতাশও বটে। ভাবছি ফিরে যাব কিনা। সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিলাম আর ১০ মিনিট হাটবো। ব্যাটা রিজুকের দেখা না পেলে ফিরে যাবো। অবশেষে প্রায় ৫.৪৫ মিনিটে রিজুকের দেখা মিললো।



যেখানে দু’দিনের আগেও দেখলাম রাঙ্গামাটির বিখ্যাত শুবলং ঝর্না কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে প্রায়, যেখানে রিজুক কেঁদেই চলছে অবিরাম। নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা হাটার ক্লান্তি দূর হয়ে গেল এক নিমিষেই। মনে হতে লাগলো আমরাই যেন পুরো ঝর্নাটার মালিক। ছোট ছোট মাছ ছুটোছুটি করছে স্বচ্ছ পানিতে। এটা যেন মাছেদের একটা সুইমিং পুল। ঝর্নায় মনের আনন্দে দাপাদাপি করলাম সবাই। এবার ফেরার পালা তখন প্রায় ৬.৩০ মিনিট। একটু ভয় পেয়ে গেলাম। প্রায় সন্ধ্যা, পাহাড়ী আচেনা রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে। সাথে একটা টর্চ ও নেই। সবাই একটা করে লাঠি যোগার করলাম। রওনা দিলাম রুমা বাজারের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৮.৫০ মিনিটে বহাল তরিয়তে আমাদের রুমে এসে পৌছালাম।

রাতে খারার শেষ করে গেলাম ঘাটে। কিন্তু মাঝির কোন দেখা নেই। নদীর পাড়ে বসে রইলাম মাঝির অপেক্ষায়। কিন্তু মাঝি আর আসে না। পাড়ে বসেই সবাই মিলে হেড়ে গলায় গান গাইলাম হাজার হাজার তারা দেখতে দেখতে। মন না চাইলেও এখন ফিরতে হবে হোটেলে। আরও একটা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে বাকি চারজনের থাকার জন্য। হোটেলে রুমের ব্যবস্থা তো হল কিন্তু যেটা শুনলাম তাতে মেজাজ সপ্তম আসমানে।X(X(( পরের দিন নাকি সেখানে ছাত্রধর্মঘট। কোন গাড়ি বান্দরবান যাবে না। চলবে না কোন নৌকা। প্রায় ৫ ঘন্টা হাটার ক্লান্তি এবং এ রকম একটা দুঃসংবাদ নিয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে জরুরী মিটিং এ বসলাম। বিষয় এখন কি করা যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম নদীর পাড় দিয়েই রুমা বাস স্ট্যান্ডে পায়ে হেটে রওনা দিবো যা থাকে কপালে। ভাগ্য ভাল ছিল। পাহাড়ের কোল ঘেসে একটা ইট বিছানো রাস্তার সন্ধান দিল স্থানীয় একজন।

আমরা হাটতে হাটতে রুমার সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। প্রতিটি বাঁকে যেন অপরূপ প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে নতুন সাজ। সৌন্দর্য এখানে হাজার ভাবে সংঙ্গায়িত। রুমার চারপাশে পাহাড়ী পথে পথে কলা, আম ইত্যাদি পেঁকে আছে। আমাদের কাছে এ যেন কল্পনা মাত্র। ঘন্টা দেড়েক হাটার পর আমরা পৌছে গেলাম রুমা বাস স্ট্যান্ড। সেখানে এসে দেখি বান্দরবান থানার প্রায় অর্ধেক পুলিশ (প্রায় ২০/২৫ জন) উপস্থিত। পুলিশের দারোগা জিজ্ঞেস করলো এখানে আসার কারন? রসিকতা করে বললাম ছাত্র তো তাই এখানকার ছাত্র ইউনিয়নের ধর্মঘটে যোগদিতে এসেছি।:P:P



অবশেষে বেলা ১টার দিকে ধর্মঘটের অবসান ঘটল। ১.৩০ এর গাড়িতে করে আমরা রুমার কোল ছাড়লাম।



আগেও বলেছি, রুমার সৌন্দর্য ভাষায় বা লিখে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে একেই হয়তো বলে “ভয়ঙ্কর সুন্দর”।:D:);)

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

মামুন রশিদ বলেছেন: ছবিগুলো অসাধারণ! চমৎকার ভ্রমন পোস্ট ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ ভাই।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




দারুণ বর্ণনা ও ছবি নিয়ে অসাধারণ ভ্রমন পোষ্ট।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০২

তাহসিন মামা বলেছেন: ছবির ভিড়ে লেখা না হারিয়ে যায়, এই ভয়ে ছবি কম দিলাম :)

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:২৩

ছোট্‌বাবু বলেছেন: কবে যাব পাহাড়ে আহা রে আড়ে.।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৪

তাহসিন মামা বলেছেন: পাহাড় থেকে আপনার জন্য মিস কল আসছে ছোটবাবু, একটা কল করে ফেলেন !!!!

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: ছোট্‌বাবু বলেছেন: কবে যাব পাহাড়ে আহা রে আড়ে.।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৫

তাহসিন মামা বলেছেন: কেমন আছেন ভাই?

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০০

সোজা কথা বলেছেন: ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন! যাইতে মুঞ্চাহইতেছে!

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৭

তাহসিন মামা বলেছেন: মন কি যে চায় বলেন, এখন আপনি পাহাড়ে চলেন।

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ডজ খাইচি :#>

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৩০

তাহসিন মামা বলেছেন: ডজ দিতে পাইরা তো আমি মহা খুশি :প :) :দ

৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:২৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


সুন্দর

৮| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮

তাহসিন মামা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ঃ)

৯| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আমিও ডজ খাইছি!!! :!> :P

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

তাহসিন মামা বলেছেন: বাহ,

১০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ সুন্দর ...।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৪

তাহসিন মামা বলেছেন: :) :) :)

১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩

ছাইচাপা আগ্নেয়গিরি বলেছেন: গত মাসে রুমা ঘুরে আসলাম। অসাধারণ জায়গা। সত্যিই মনোমুগ্ধকর.. পরে গিয়েছিলাম বগা লেক। লেকের পানি গোছল করলাম, রাতে ওই খানে থাকলাম আর বার বি কিউ পার্টি দিলাম। উফফ পুরা সময়টা ছিল স্বপ্নের মতন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.