নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am a Verb

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার

বাংলাদেশ

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিড়ম্বনার নাম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকগনকে প্রায় বিদেশ সফর করতে দেখা যায়। সভা, সেমিনার, সাক্ষাৎ ছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষ বিভিন্ন কাজে তারা বিদেশ ভ্রমন করে থাকেন। সরকারী খরচেই তাদের এ সফর সম্পন্ন করতে দেখা যায়। বিদেশ ভ্রমনকারী নীতি নির্ধারকগন এ ধরনের সফর থেকে কি কোন শিক্ষা লাভ করেন না? সম্প্রতি আমি কয়েকটি দেশ ভ্রমন করেছি। আর তা থেকেই আমার এমন প্রশ্নের উৎপত্তি। এ লেখায় আমার সর্বশেষ বিদেশ ভ্রমন থেকে অর্জিত কিছু অভিজ্ঞতাকে আলোকপাত করতে চাই। বিড়ম্বনা! সেতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এক নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। আমি একটি জরুরী কাজে সিঙ্গাপুর হয়ে তাইওয়ান যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত মার্চ ০৩, ২০১৫ খ্রি: তারিখে বাসা থেকে রওনা হই। সিঙ্গাপুরে দু-দিন এবং তাইওয়ান এ চারদিন থাকার পরিকল্পনা ছিল আমার। দু-দেশে থাকা খাওয়ার প্রয়োজনে সাথে বেশ কিছু ইউ. এস ডলার থাকার প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করলাম। আর তাই, আমি একটি মানি চ্যাঞ্জার থেকে চার হাজার ইউ. এস ডলার ক্রয় করি। এনডোর্স করতে যেয়ে বাধল বিপত্তি। মানি চ্যাঞ্জার থেকে আমাকে জানাল যে, এক হাজার ইউ. এস ডলার এর বেশী তারা এনডোর্স করতে পারবেন না। যদিও নিয়মটি সম্পর্কে আমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আমি কিভাবে চার হাজার ইউ. এস ডলার নিয়ে ইমিগ্রেশন এবং নিরাপত্তা চেক পোস্ট পার হব- এ প্রশ্নে মানি চ্যাঞ্জার থেকে আমাকে জানালো যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত সার্কুলার অনুসারে আমি পাঁচ হাজার ইউ. এস ডলার বহন করতে পারব এবং তাতে কোন এনডোর্স এর প্রয়োজন পড়বেনা। সার্কুলারটি আমি নিজেও পত্রিকায় পড়েছি, তাই অবিশ্বাস করার মত কোন কারন আমার মনে উদ্রেক হল না। আমি যথারীতি ইমিগ্রেশন পার হলাম, এখন বিমানে উঠার পালা কিন্তু আরেকটি নিরাপত্তা চেকপোস্ট বাকী আছে। তখন বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টার কিছু বেশী। সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্স এ আমার ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ সময় ১১: ৫৫। আমি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় আমার মানিব্যাগটা তারা দেখতে চাইল। আমি দেখালাম। ইউ. এস ডলার কত আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বললাম চার হাজার। আবার প্রশ্ন করল- এনডোর্স কত? আমি বললাম এক হাজার। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করল-বাংলা টাকা কত আছে? বললাম পাঁচ থেকে সাতশত। ঐ লোকটি তৎক্ষনাৎ বলল-এনডোর্সের চেয়ে বেশী ইউ. এস ডলার নিচ্ছেন, বাংলা টাকা যা আছে, আমাকে দিয়ে দেন অন্যথায় ঝামেলায় পড়বেন। আমার অবস্থান অনড়, একটি টাকাও দিব না। আমার অনড় অবস্থান দেখে পাশেই দাড়িয়ে থাকা এক তথাকথিত ভদ্র লোক এগিয়ে আসল এবং আমাকে জেরা করতে শূরু করল। সম্ভবত তিনি পুলিশের কোন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, তার পুলিশি পোশাকে একাধিক তারকা দেখে আমার আর বিষয়টি বুঝতে খুব একটা দেরী হল না। ঐ পুলিশের কর্মকর্তার জেরার মুখেও আমি যখন অনড়- তখন তিনি আমাকে বললেন বাড়তি ইউ. এস ডলার পাসপোর্টে এনডোর্স করেন। আমি বললাম কিভাবে? তিনি বললেন আপনি আপনার পাসপোর্টের এনডোর্স পাতায় তিন হাজার ইউ. এস ডলার লিখেন এবং নিজে স্বাক্ষর করেন। আমার একবার মাথায় চিন্তা আসল- আমার পাসপোর্টটি বাতিল হয়ে যাবে নাতো? তবুও অগত্তা আমি তাই করলাম। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, পুলিশ কর্মকর্তার জেরার মাঝে এবং তার সামনেই আমাকে বাংলা টাকা গুলো ঘুষ দিয়ে ঝামেলা এড়ানোর প্রস্থাব দিচ্ছিলেন নিরাপত্তা চেকের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বা কর্মচারীগন। আমি হয়ত অন্যায় করেছি। একটু ভেবে দেখুনতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে আমি বিদেশ ভ্রমনকালে পাঁচ হাজার ইউ এস ডলার পর্যন্ত বহন করতে পারি, যদিও প্রত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ঐ সার্কুলারে এনডোর্স করার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। কিন্তু আমি বহন করেছিলাম চার হাজার ইউ এস ডলার, এটা বড় অন্যায় নাকি একজন উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার নাকের ডগায় আমার কাছ থেকে বাংলা টাকা ঘুষ দাবি করা বেশী অন্যায়? যাই হোক, অবশেষে বিমানে চড়ে সিঙ্গাপুর পৌছালাম। শুনে ছিলাম সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশন নাকি খুব কঠোর। কিন্তু আমার কাছে তা মনে হল না। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সিঙ্গাপুর-এর একটি হোটেলে পৌছালাম। পরদিন সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখলাম। রাস্তাঘাট দেখে মনে হল-মাত্রই ধুয়ে মুছে রেখে গেছে কেউ। গাছের পাতা গুলো মনে হল আর্টিফিশিয়াল প্লাস্টিকের তৈরী সবুজ পাতাওয়ালা কোন গাছ। একটি মরা পাতাও নেই। দুই দিন পরে মরবে এমন পাতাও একটি চোখে পড়ল না কোথাও। কোথাও নেই কোন ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারা। যার যার মত গাড়ী চালাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও কোথাও কোন ট্রাফিক সিগনাল অমান্য কারী কাউকে দেখতে পেলাম না। আমার মনে হল, ট্রাফিক পুলিশ থাকলেই বরং সিগনাল অমান্যকারী থাকতো, কারন সিগন্যাল অমান্য করে হয়ত বাংলাদেশের মত টাকা পয়সা দিয়ে রেহাই পাওয়ার ব্যবস্থাও তৈরী হত। পুলিশ নেই, হয়ত দূরে কোথাও থেকে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করছে পুলিশ কর্মকর্তাগন। সিগনাল অমান্য করলেই বিপদ, টাকা পয়সা দিয়ে রেহাই পাওয়ার ব্যবস্থা তৈরী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর তাই অমান্য কারীও নেই। বিভিন্ন যায়গায় যেতে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এ সারিবদ্ধ ভাবে দাড়াতে হয়। উঠার আগে বলার প্রয়োজন নেই-ট্যাক্সি ড্রাইভার সেখানে যাবে কিনা। খালী গাড়ীগুলো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এ দাড়ায় এবং আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ট্যাক্সিতে উঠতে হয়। কোন দরকষাকষির বিষয় নেই। সারিবদ্ধভাবে দাড়াতেও কাউকে বলতে হয় না। সিঙ্গাপুরের বাঙ্গালী পাড়া নামে পরিচিত মোস্তফা প্লাজার সামনে অসংখ্য বাংলাদেশীদের হোটেল ও বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে, যেখানে বাংলায় লেখাও অহরহ চোখে পড়ছে। আমার কাছে মোবাইল সেট আছে কিন্তু সিঙ্গাপুরের সিম কার্ড নেই। চিন্তা করলাম-একটি সিম কিরে দেশের বাড়ীতে কথা বলি। সবাই হয়ত টেনশন করছে। চোখে পড়ল মোস্তফা প্লাজার সামনে একটি দোকানে বাংলায় লেখা -মোবাইল সিম বিক্রয় ও ফ্লেক্সিলোড করা হয়। সে দোকানে গেলাম একটি সিম চাইতেই আমার কাছে সে পাসপোর্ট চাইল। আমার পাসপোর্টটি অবশ্য তাইওয়ান যাওয়ার জন্য সকালেই তাইপে রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে জমা দিয়ে এসেছি। আমি দোকানীকে বুঝিয়ে বলার চেষ্ঠা করলাম। সে বলল ভাই আপনার অরিজিনাল পাসপোর্টটি স্ক্যান করে মোবাইল কোম্পানীতে জমা না দিলে সিমটি একটিভ হবে না। অগত্যা হোটেলে বসে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে কল করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকলনা। কতটা নিয়ন্ত্রন আছে সেদেশে, একটু চিন্তা করে দেখুনতো। বাংলাদেশ হলে বিদেশী নাগরিক হোক বা দেশেরই নাগরিক হোক যেকেনো রাস্তার ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে সিম কিনা যেত। আর তাইতো এদেশে মোবাইল সিম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কু-কর্ম অহরহ করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। পরদিন তাইওয়ানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করছি। ইমিগ্রেশন পার হলাম, এবার নিরাপত্তা চেকপোস্ট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউ এস ডলার এনডোর্সমেন্ট নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমাকে আবার ভাবিয়ে তুলল। সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশন যদি মনে করে, তাদের দেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের টাকা প্রোপার চ্যানেলে না পাঠিয়ে আমার কাছে কেউ পাঠিয়ে দিচ্ছে। এদেশের ইমিগ্রেশন এমনটি মনে করলেতো আমার আর রক্ষা নেই। সোজা জেল-জরিমানা। চেকপোস্টে নিরাপত্তা চেকের দায়িত্বে থাকা ভদ্রমহিলা আমার মানিব্যাগটি ঝুড়িতে রাখতে বললেন। আমি রাখলাম। মানিব্যাগটি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করলেন এবং খুলে একবার চোখ বুলালেন। অত:পর কিছু না ভেবেই আমাকে আবার ফেরত দিয়ে দিলেন। ভাবলাম- এ হল দেশ। এ হল ইমিগ্রেশন। মানিব্যাগে করে বা পকেটে করে টাকা পাচার করা যায় না। এ বোধ শক্তিটুকু তাদের আছে। না থাকারতো কোন কারনও নেই। বাংলাদেশের মানবিক বিভাগের ছাত্রদের মততো ডিগ্রি বা মাস্টার্স পাসের জন্য পাঁচটি করে প্রশ্ন আর বাকী অফুরন্ত সময় বিসিএস পরীক্ষার জন্য তোতাপাখির মত কার বাবার নাম কি, কে কবে মারা গেছে, আর কে কবে জন্মগ্রহন করেছে, এসব অসাধরন জ্ঞান মুখস্ত করে বা মামা খালুর জোরে বা দলীয় পরিচয়ে অথবা টাকা দিয়ে বিসিএস পাস করে তারা ইমিগ্রেশনের চেয়ারে বসেননি। তারা তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে এ চেয়ার বসেছেন। এজন্য হয়ত তাদের বোধ শক্তির কোন কমতি নেই। তার পর তাইওয়ান পৌছালাম। ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে দেখে খুবই খুশি হলেন। মনে হল আমাদের দেশের লোকজন এদেশে খুব কমই আসে, তাই হয়ত খুশি হলেন ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিনম্র হাসি দিয়ে আমার ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করলেন। আমরা হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। গাড়ীর গতিবেগ কম হলেও ১০০ কি: মি। সিঙ্গাপুরের মত সেই একই দৃশ্য। কোথাও কোন ট্রাফিক পুলিশের হাতছানি নেই। তবুও যানজট নেই। গাড়ীর সংখ্যাও রাস্তায় কম নয়। ট্যাক্সি ভাড়া করার ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম। কোন দরকষা-কষি নেই। উঠে ঠিকানা বললেই হল। তারা গাড়ীর ড্যাস বোর্ডে সেট করা গুগল ম্যাপ দেখে গাড়ী চালান। তাইওয়ান এর শহরগুলো অত্যন্ত ব্যস্ততম। সবাই হোটেলে খান। খুব কম লোকই বোধ হয় বাসায় রান্না করেন। সব মার্কেট গুলোতে ফিক্সড প্রাইজ। কোথাও দরকষাকষির বিষয় নেই। আর একটি বিষয় না বললেই নয়, তাইওয়ানের খাদ্য তালিকা আমাদের দেশের সাথে বিন্দুমাত্রও মিল নেই। খাবার দেখলে গা শির শির করে। তবুও বাচার তাগিদে খেতে হল। এত মানসিক অতৃপ্তি নিয়ে খেলাম কিন্তু একবারও পেট খারাপ হল না। কেন? কারন হয়তবা ভেজাল খাবার নেই এবং মানসম্মত উপায়ে খাবার তৈরী। তাছাড়া দুপুর পর্যন্ত গরম, সন্ধ্যা হতেই অনেকটা শীত অনুভুত হলেও কোন সর্দি লাগল না। কারন রাস্তায় কোন ধুলাবালি নেই বিধায় রোগ জীবানুও নেই। কোথাও রাস্তা খোড়াখুড়ি চোখে পড়ল না। চারদিন পর আবার ফেরত আসার জন্য তাইওয়ান বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পার হতে হবে। তাইওয়ান বিমানবন্দরের ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছিল, কি কি সাথে নিয়ে বিমানে আরোহন করা যাবে না। আমার সাথে একটি গ্যাস লাইট ছিল, যা তাইওয়ানে আমি কিনেছিলাম, ডিসপ্লেতে গ্যাস লাইটও নিষিদ্ধ তালিকায় দেখাচ্ছিল। আমি আমার সাথে থাকা মানিব্যাগ, গ্যাস লাইট এবং পাসপোর্ট ইত্যাদি নিরাপত্তা পাস এর জন্য একটি ঝুড়িতে রাখলাম এবং নিরাপত্তা চেকপোস্ট পার হলাম। এবার ঝুড়ি থেকে আমার মানিব্যাগসহ জিনিসপত্র ফেরত নেওয়ার পালা। আমি আমার মানিব্যাগ, পাসপোর্ট নিয়ে এবং গ্যাস লাইটটি না নিয়েই চলে গেলাম। ভাবলাম এটাতো নিতে দিবে না। হাতে নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়ার চেয়ে না নেওয়াই ভাল। আমি কিছুদুর আগাতেই পিছনে পিছনে এক ভদ্রমহিলা আমার নিকট এগিয়ে আসছেন এবং আমাকে ডাকছেন, ফিরে দেখলাম গ্যাস লাইটটি আমাকে ফেরত নেওয়ার জন্য বলছেন। এবং বলছেন এ ধরনের গ্যাসলাইট সঙ্গে নিয়ে বিমানে আরোহন করা যাবে। আমি আশ্চর্য হলাম-এটাও দেশ। আর আমার মাতৃভুমি! যে দেশে আমি জন্মালাম। যে দেশের আলো বাতাসে আমি বড় হলাম। যে দেশে আমার প্রানের টান। সে দেশের ইমিগ্রেশন বা নিরাপত্তা চেকপোস্টে কি দু-টাকার আলপিন ভুলে রেখে গেলে আমাকে ডেকে নিয়ে ফেরত দিত! কোন ধরনের ইস্যু খুঁজে পেলেই সেটা নেওয়া যাবে না বলে নিজেরা ভাগ করে নিয়ে নিত। অথচ সেদেশের নিরাপত্তা চেকের দায়িত্বে থাকা তথাকথিত দেশের স্বার্থ রক্ষাকারী কর্মকর্তার এবং তাদের পরিবারের ভোরন পোষন আমার মত সাধারন জনগন এবং খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টার্যিত অর্থ থেকে প্রদত্ত আয়কর দিয়ে চলে। যাই হোক, প্রতিক্ষিত সেই মাতৃভুমিতে পা রাখলাম মার্চ ০৯, ২০১৫ খ্রি: বাংলাদেশ সময় রাত ১০:৪০ । ইমিগ্রেশন পার হলাম। কোন সমস্যা হল না। তার পর আবারও বিড়ম্বনা। একজন মহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসেছেন। দেখে মনে হল, কাস্টম কর্মকর্তা গোছের কেউ হবেন। আমাকে ডাকলেন এবং পাসপোর্টটি দেখতে চাইলেন। দিলাম। আমাকে বললেন-সিঙ্গাপুর গেলেন বেড়াতে, ভাবীর জন্য কিছু আনেননি? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে, কর্মকর্তা বেশধারী মহিলাটি কি বলতে চাচ্ছেন। আমি বললাম, হ্যা এনেছি। জিজ্ঞাসা করলেন- কয়টা স্বর্নলংকার এনেছেন। আমি বললাম একটাও না। বললেন- না আপনারা আনতেইতো পারেন। একটা নিদ্দিষ্ট পরিমান আনাতো আইনসম্মত। বেশী আনলেও বলেন কোন সমস্যা নেই। আমিতো আছি। আমি রেগে টান দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে হাটা শুরু করলাম। তথাকথিত ভদ্রমহিলাটি সেখানেই থেমে গেলেন। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়- মাঝে মাঝেই শোনা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিপুল পরিমান স্বর্ন/ বৈদেশিক মুদ্রা/ জালনোট আটক। এ থেকে কি প্রতীয়মান হয়-আমাদেশের দেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই কঠোর? আপাত দৃষ্টিতে তা মনে হলেও বাস্তব চিত্রটা ঠিক উল্টো। অপরাধী চক্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে অবৈধভাবে স্বর্ন/ বৈদেশিক মুদ্রা/ জালনোট পাচাররের নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। আমার মত সাধারন জনগনের কাছে যারা ঘুষ দাবী করতে পারে, তারা যে টাকার বিনিময়ে স্বর্ন/ বৈদেশিক মুদ্রা/ জালনোট পাচার করতে সহায়তা করবে, একথা অপরাধী চক্রের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঘুষের পরিমান কম অথবা ফ্লাইট ডিলে’র কারনে কন্টাক্ট পারসন পরিবর্তনের ফলে মাঝে মাঝে স্বর্ন/ বৈদেশিক মুদ্রা/ জালনোট যে ধরা পড়ছে, একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যাই হোক, বিমান বন্দর থেকে বের হলাম, এখন ট্যাক্সি দালালদের ব্যগ টানাটানি। যেসব সাধারন জনগন ভ্রমন এবং কাজের উদ্দেশ্যে একবারও বিদেশ ভ্রমন করেছেন তাদের এ বিড়ম্বনার কথা আর মায়ের কাছে মামা বাড়ীর গল্প করা একই কথা। কিন্তু আমাদের দেশের যেসব গনপ্রজাতন্ত্রের ভদ্রবেশী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিক আছেন, যারা এদেশের সাধারন এবং খেটে খাওয়া মানুষের প্রদত্ত আয়কর থেকে নিজের বেতন নামক ভাতা গ্রহন করছেন এবং সর্দি লাগলেও সরকারী খরচ নামক জনগনের অর্থে বিদেশ যেয়ে নিজের চিকিৎসা করার অধিকার চর্চা করেন, তারা একটু ভেবে দেখেন। একটু ভাবলেই বুঝতে সময় লাগবে না- মাস শেষে সরকারী কোষাগার নামক জনগনের অর্থ থেকে গৃহীত অর্থটা আপনার জন্য কতটা হালাল। আপনার এবং আপনার পরিবার পরিজনের শরীরের রক্ত মাংস কতটা হালাল টাকায় উৎপাদিত। নীতি নির্ধারক পর্যায়ের রাজনীতিক এবং সরকারী কর্মকর্তাগন তাদের বিদেশ সফর থেকে কি এটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারেন না- আমাদের দেশের সমপর্যায়ের দেশগগুলো থেকে নীতি নৈতিকতায় আমরা কতটা পিছিয়ে বা আমরা কতটা সৎভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম ।আমার ও আপনার মত একই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো , বলা যায় আরও ভয়াবহ ।সার্থক জনম আমার এই দেশে জন্মে

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩০

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০০

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: বাঙলাদেশের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়া আর পুল সিরাত পার হওয়া প্রায় কাছাকাছি ঘটনা। আমি বাইরের দেশে গেলে সাধারণত আমাদের শ্রমিক ভাইদের মত আচরণ করি এবং তাদেরকে প্রদত্ত সুবিধাগুলো পাবার চেষ্টা করি। যাতে করে আমি কিছু কিছু পদে বাধার সম্মুখিন হই। তবে অনেকবার ঐ পথে যাতায়তের কারণে ওরা কি ভাবে যেন বুঝে যায় যে এই লোকের সাথে পেরে ওঠা কঠিন হবে!

ডলারের ব্যাপারে আমার পরামর্শ হল আপনি এরপর থেকে টাকা নেবেন, এবং নিদ্দিষ্ট পরিমাণের বেশী অংশটূকু বলবেন না। এখানে অসতের কোন কথা বলা হচ্ছে না। বরঞ্চ, আপনি সৎ থেকেই নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করবেন। সেইটাই উত্তম কাজ হবে।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

খোচা বাবা বলেছেন: পৃথিবীর কোন দেশের পাসপোর্টএ এন্ডোর্স সিস্টেম চালু নাই এবং কোন দেশের এয়ারপোর্ট এই ধরনের ঝামেলা করে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.