নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am a Verb

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার

বাংলাদেশ

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্মানীত করদাতা !!!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৬

২০১৬-২০১৭ করবর্ষের শুরু থেকেই জাতীয় রাজস্ববোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন জাতীয় প্রতিকায় প্রদত্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে করদাতাদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান করছেন এবং প্রায় প্রতিটি বিজ্ঞাপনেই করদাতাদের ”সম্মানীত করদাতা” হিসাবে উল্লেখ করছেন। জাতীয় রাজস্ববোর্ড কর্তৃক এ ধরনের বিজ্ঞাপন অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। এ কথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে, একটি দেশ পরিচালনায় এবং দেশের উন্নয়নে যে অর্থের প্রয়োজন, দেশের জনগনই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ্যভাবে সে অর্থের যোগানদাতা। রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক এ অর্থ সংগৃহীত হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন খাতে দেশের মোট সংগৃহীত রাজস্বের ৮৬ শতাংশই সংগ্রহ করছে জাতীয় রাজস্ববোর্ড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সংগৃহীত রাজস্বের মধ্যে আয়কর একটি অন্যতম রাজস্ব খাত। রাজস্ব আয়ের অন্যান্য খাতের সাথে দেশের জনগন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও ”আয়কর” নামক এ খাতটির সাথে ব্যাক্তি করদাতাগন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্য যে ভাবেই সংগৃহীত হোক না কোন, দেশ পরিচালনার বা উন্নয়নের নিমেত্ত্বে রাষ্ট্র কর্তৃক সংগৃহীত সমস্ত অর্থই দেশের জনগন কর্তৃক প্রদত্ত। আমরা যদি আমাদের দেশটিকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভাবি, তাহলে রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগন ”বাংলাদেশ” নামক প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকৃত কর্মকর্তা বা কর্মচারী, যার মালিকপক্ষ জনগন এবং যা নিয়ন্ত্রিত হয় মালিকপক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা, যাকে আমরা সরকার হিসাবে অভিহিত করে থাকি। সে অর্থে সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীগন জনগন কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের রক্ষক বা যথাযথ ব্যাবহার নিশ্চিতকারীর ভুমিকায় অবতীর্ন। সুতরাং মালিকপক্ষকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলা বা মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগটা একটু ফরমাল হওয়া কি স্বাভাবিক নয়? কিন্তু বাস্তবচিত্র কি তাই? সরকারী অন্যান্য দপ্তরের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, জনগনের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সরাসরি যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে, সেই জাতীয় রাজস্ববোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন চিঠি পর্যালোচনা করলে মনে হয় যেন, তারা তাদের মালিকপক্ষ অর্থাৎ করদাতাদের সম্মান করতে লজ্জাবোধ করে। বিভিন্নমহল থেকে কর কর্মকর্তাদের পাঠানো চিঠি অসৌৗজন্যমুলক এবং শিষ্ঠাচার বিবর্জিত বলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ০১ জুলাই ২০১৬ খ্রিঃ তারিখে সকল কর কার্যালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ পাঠানো হয় এবং উক্ত আদেশে করদাতাদের কাছে পাঠানো চিঠির ভাষা প্রমিত, মার্জিত, সৌজন্যমুলক, সুন্দর, প্রাঞ্জল এবং সাবলীলভাবে রচনার রীতি অনুসরণ করতে বলা হয়। কে শোনে এ ধর্মের কাহিনী। জাতীয় রাজস্ববোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত বিভিন্ন চিঠি পর্যালোচনা করলে মনে হবে যেন তারা সরকারী চাকুরী পেয়ে কাউকে সম্মানসূচক সম্বোধন করার রীতি-ই ভুলে গেছে। সূত্র এবং বিষয় লিখে কোন সম্বোধন না করেই চিঠি লিখতে তারা অভ্যস্ত। এছাড়া লক্ষ্যনীয় যে, সকল চিঠির-ই কমন ফরম্যাট। নাম এবং ঠিকানার ঘরটি ফাঁকা রেখে পূর্বমুদ্রিত চিঠিতে নাম ঠিকানা বসিয়ে দেয়া হয় মাত্র এবং প্রযোজ্য ধারা বা নির্দেশনায় টিকচিহ্ন দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় করদাতাদের ঠিকানায়। যেসকল চিঠি কোন কাগজপত্র বা প্রমানপত্র দাখিলের জন্য প্রেরিত, সেসব চিঠিতে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের পূর্বে তৈরীকৃত কমন তালিকার একটি সিল বসিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পুর্বে জমা প্রদান করা হলেও উক্ত তালিকায় সে কাগজপত্রের নামটি বাদ যায় না। আমরা যদি একটু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেই, তবে দেখব-মালিকপক্ষতো দুরের কথা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ছোট গ্রাহকের সাথেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অত্যান্ত সম্মানেরসাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে কেন জনগন নামক মালিকপক্ষকে রাষ্ট্রের রাজস্ব সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এতটা অসম্মান করা হয়? কমন ফরম্যাটে না দিয়ে কষ্ট করে দু-লাইন লিখতে কি খুব কষ্ট হয়? একটু ভালো এবং সম্মানজনক সম্বোধন রাষ্টের মালিক পক্ষ হিসাবে অভিহিত জনগন কি পেতে পারে না? এত-ই যদি লজ্জা করে বা আত্মসম্মানে বাধে, তবে তাদের প্রদত্ত টাকা থেকে বেতন নিতেওতো লজ্জা করা উচিত। বিভন্ন দৈনিক প্রত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যেভাবে করদাতাদের সম্মান দিয়ে সম্বোধন করা হয়, জাতীয় রাজস্ববোর্ডের অফিসের পরিবেশ ঠিক উল্টো। ব্যবহার দেখলে মনে হবে করদাতা হওয়া পাপ। এভাবে কর কার্যালয়গুলো চলতে থাকলে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহনের জন্য উৎসাহ নিয়ে কোন করদাতা ওই পথে পা বাড়াবেন না। করদাতাদের বাধ্য করেই রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। বাধ্য করে কর সংগ্রহের এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার সময় এসেছে। জাতীয় রাজস্ববোর্ডকে বিভিন্ন কর কার্যালয়গুলোতে করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে, যাতে করে শুধু আইওয়াশ নয়, বাস্তবেও করদাতাগন নিজেকে সম্মানীত বোধ করেন। তবেই স্বনির্ভর জাতী হিসাবে আমরা বিশ্বের কাছে মাথা উচু করে দাড়াতে সক্ষম হব। (দৈনিক ইত্তেফাক এ আংশিক প্রকাশিত ১৭/১১/২০১৬)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.