নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সমাগত,মিথ্যা বিদূরিত।

শাহমুন নাকীব ফারাবী (১)

আমার পরিচয়,আমি মুসলিম।আমার একমাত্র পরিচয় আমি মুসলিম।আমি মুসলিম ব্যতিত আর কিছুই না।

শাহমুন নাকীব ফারাবী (১) › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎকন্ঠাময় এক রাতের গল্প..................................

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১২

ঈদের তৃতীয় দিন।রাত প্রায় ১২ টা!

রাজশাহী আম চত্তরে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে,নাহিদ,হাসান এবং আহনাফ। নাহিদ রাজশাহী এর স্থানীয় মানুষ হলেও আহনাফ আর হাসান রাজশাহীতে প্রথমবারের মত ঘুরতে এসেছে।আজকে নাহিদের বাসায় তাদের দাওয়াত ছিল। খাওয়া দাওয়া শেষে নাহিদের আব্বা আর তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে ১২ টা বাজিয়ে ফেলেছে। আর সেই সাথে তারা তাদের কপালেরও ১২ টা বাজিয়ে ফেলেছে!

রাত গভীর হবার সঙ্গে সঙ্গে শহরের রিক্সাওয়ালাদের ডিমান্ডও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আম চত্তর থেকে তাদেরকে আরও চার কিলোমিটার পূর্বে যেতে হবে। সেখানেই তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।কিন্তু দূরত্ব বেশি হবার কারনে একটা রিক্সাও পাওয়া গেল না। এমন সময় তাদের সামনে দিয়ে কয়েকটি র‌্যাবের গাড়ি, সা!সা! করে চলে গেল।স্থানটিকে মোটেও নিরাপদ মনে হচ্ছে না। তখন তারা বাধ্য হয়ে হাটা শুরু করল।

কয়েক ডজন মামলা আর ক্রসফায়ারের আশংকা থাকার কারনে নিজ বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারেনি,হাসান ও আহনাফ! বাড়িতে যে ঈদ করতে পারবে না সেটা তারা আগে থেকেই জানতো। কিন্তু এই একাকিত্বময় ঈদকে আনন্দময় করে তুলতে অর্গানাইজেশনের অপর এক ভাইয়ের আমন্ত্রনে তারা রাজশাহী বেড়াতে এসেছে। একই সঙ্গে ঈদের নামায পড়ার কথা থাকলেও ট্রেনের টিকিট যথা সময়ে না পাওয়ার কারনে তা আর সম্ভব হয় নি।

ঈদের পরের দিন রাত ১১টায় সিল্ক সিটিতে উঠে পড়ে হাসান এবং আহনাফ। ট্রেনের ভিতরে সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।দাড়ানোর মত তিল ধরনের জায়গা নেই। আগেই টিকিট কাটার কারনে হাসান এবং আহনাফ তাদের নির্ধারিত আসনে বসে পড়ে। বগির মাঝখানে অনেকের সাথে এক দম্পতি তাদের দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাদের মুখের করুন অবস্থা দেখে বোঝা যায় তাদের কতোটা কষ্ট হচ্ছে। তখন হাসান সেই দম্পতি কে বলে,একজনকে আমার কোলে দিন।সেই দম্পতি যেন অবাক করা কোন কথা শুনল।তারা হা করে হাসানের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসান আবারো হাক ছাড়ল!কই দিন আমাকে!তাদের বড় ছেলেটাকে হাসানের কোলে দিল।

ট্রেনটি যখনই কোন ষ্টেশনে দাঁড়ায় তখনই যাত্রীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ট্রেনের অবস্থা দেখে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিষ্ফোরনের মাত্রা সহজেই অনুমান করা যায়। আহনাফ নিজের চশমাটা পরিষ্কার করে যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকজন মহিলাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ধাক্কাধাক্কি করাটা পুরুষের জন্য মামুলি ঘটনা হলেও মহিলাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর। এহেন অবস্থা দেখে আহনাফ বলে,হাসান ভাইয়া! আমার আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কেমন জানি লজ্জা করছে।আমার ইচ্ছে করতেছে,দাড়িয়ে থাকা মহিলাদেরকে আপনার আর আমার সিটটা ছেড়ে দেই।হাসান বলল,তোমার উপলবদ্ধির জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু কতো জন মহিলা দাড়িয়ে আছে,গুনে দেখতো? আহনাফ জবাব দিল,৭ জন! হাসান বলে,আমাদের মাত্র দুইটা সিট। আমরা কাকে বসতে দিবো আর কাকে দাঁড় করিয়ে রাখবো? এই প্রশ্নে আহনাফ একদম শান্ত হয়ে যায়।

ট্রেন ছাড়ার প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেল। রাজশাহী পৌছতে তাদের আরও তিন ঘন্টা লাগবে। আহনাফ মাথা বাড়িয়ে দেখল,অনেক মহিলা বগির মেঝেতে বসে পড়েছে মাত্র দু’জন দাড়িয়ে আছে। তখন হাসান তার কোলের বাচ্চাটিকে তার মায়ের কোলে দিয়ে নিজের আসনটি সেই মায়ের জন্য ছেড়ে দেয় । আর আহনাফ দাড়িয়ে থাকা অপর মহিলাকে ডেকে এনে নিজের সিটে বসিয়ে দেয়। তারপর তারা দরজার সামনে দাড়িয়ে মাদকতা লাগানো জ্যোৎস্না দেখতে থাকে। জ্যোৎস্নার মন ভুলানো আলো আর চিরচেনা নিস্তবদ্ধা তাদেরকে রাজশাহী পর্যস্ত সঙ্গ দেয়।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতে আহনাফ বলে উঠে,উফ!প্রচন্ড গরম। এরপর আহনাফ নিজেদের গায়ের শার্ট খুলে ফেলল! আর আহনাফের দেখাদেখি নাহিদ আর হাসান নিজেদের শার্টগুলো খুলে কোমরে ভেঁধে ফেলল! আর আহনাফ তার প্রিয় নীল রঙ্গে শার্টটাকে কোমরে না বেঁধে মাথায় ছুলিয়ে রেখেছে। আহানাফের খালি গা,আবার চোখে চশমা!নিজেকে কেমন জোঁকার জোঁকার লাগতেছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে,কোন বাউন্ডুলের দল।আর হয়েছেও তাই! পুলিশের পেট্রোল গাড়ি তাদের দেখে স্লো করলেও,তাদের এমন উড়নচন্ডি আচরন দেখে বাউন্ডুলে ভেবে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

আহনাফ বলল,এ যাত্রায় না হয় বেঁচে গেলাম!কিন্তু সামনে তো আরও বিপদ। গত দিন তো র‌্যাবের চেকপোষ্ট দেখেছি। বিষয়টা তিন জনকেই ভাবিয়ে তুলল! তখন হাসান আহনাফ কে নিয়ে পাশের বিড়ি সিগারেটের দোকানে গেল! হাসান গত দুই দিনে রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষা অনেকটা সহজ ভাবেই বলতে পারে! শুধু মাঝে মাঝে দুই একটা শব্দ বলতে গিয়ে জট পাকিয়ে ফেলে। সিগারেটের দোকানে গিয়ে,রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় বলল,মামুর বেঠা! চারটা ষ্টার সিগারেট দিন তো! দোকানদার বলে,আপনের বাড়ি কই ! হাসান ভাব নিয়ে বলে,এইতো সামনেই! দোকানদার বলে,উহু! এটা মিছা কথা! হাসান কিছুটা ভড়কে যায়! তখন বলে,ঢাকাত! ঢাকাত!

সিগারেট প্যাকেট করা হয়ে গেলে,আহনাফ বলে কত টাকা? এসময় হাসান আহনাফ এর হাতে চিমটি দিয়ে কানে কানে বলে,এই গাঁধা! তুমি যদি নিয়মিত সিগারেট খাও তাহলে সিগারেটের দাম জানবা না! বোকার মত দাম জিজ্ঞেস করবানা!বাধ্য ছেলের মত,মাথা নাড়ায় আহনাফ! সিগারেট নেয়া শেষ হলে,হাসান বলে সলাই(দিয়াশলাই) দেন! দোকানদার বলে,ভাই সত্যি করে বলেন তো,আপনাদের বাড়ি কই? সলাই শব্দটাতো লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম রংপুরের মানুষ ব্যাবহার করে! একথা শুনে আহনাফ চম্পট কেটে পড়ে! হাসান ওভার স্মার্ট হতে গিয়ে এবার ১৩টা বাজিয়ে ছাড়বে! শেষ পর্যন্ত দোকানদারকে ভুলভাল বুঝ দিয়ে দোকান থেকে কেটে পড়ে, হাসান!

এরপর আল্লাহর নাম নিয়ে হাটা শুরু করে,তারা তিন বাউন্ডুলে!
এমন সময় দূর থেকে একটি গাড়ি,খুব ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসতেছিল! এসময় আহনাফ বলে,হাসান ভাই সিগারেট ধরান। দ্রুত করেন। দ্রুত বললেই তো আর দ্রুত কাজ হয় না।

হাসান পর পর দশটা কাঠি জ্বালিয়েও সিগারেট ধরাতে পারছে না! অবশেষে ১১ নাম্বার কাঠি দিয়ে সিগারেট ধরাতে সক্ষম হল হাসান! দূরের গাড়িটা যতোই কাছে আসতে লাগল,তাদের বুকের দুরু,দুরু শব্দটা ততোই বাড়তে লাগল! গাড়িটি যখন একদম কাছাকাছি এসে গেল,তখন বুঝল এটি হেভী লোডেড ট্রাক! অতিরিক্ত লোডের কারনে এমন ধীরে ধীরে আসতেছিল।

আহনাফ ভাবে,সামনের মোড়টাতে র‌্যাবের চেকপোষ্ট ছিল।আজও যদি বসে! এ কথা ভাবতেই কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হয়ে গেল! আহনাফ হাসানকে বলল,এই হাসান ভাই! গতদিন এক বড় ভাই বলল না,ওনার নানা শ্বশুর ইউনিয়ন চেয়্যারম্যান। আবার সরকার প্রধান দলের বড় নেতা! ওনার নামটা যেন কি? হাসান বলে, ঔ বড় ভাইকে ফোন দিয়ে শ্বশুরের নাম জিজ্ঞেস কর।

ফোন দিয়ে ওনাকে ঘটনাটা খুলে বলল,আহনাফ! বড় ভাই আবার এই পদ্ধতিটাকে আরও একটু বিশ্বাসযোগ্য করবার চেষ্ঠা করল। তিনি বললেন,পুলিশকে বলবা,আমরা মোস্তফা চেয়্যারম্যানের জামাই ফকরুল এর আত্নিয়! কিছুক্ষন পর আহনাফ, জামাই শ্বশুরের নাম ওলট পালট করে ফেলে !সে নাহিদকে বলে, আচ্ছা নাহিদ ভাই! শ্বশুরের নাম ফকরুল বলল নাকি জামাই এর নাম ফকরুল বলল! নাহিদ আহনাফের মুখের দিকে করুন দৃষ্টি নিয়ে বলে,জানি না গো ভাই! আহনাফ তখন বলে,র‌্যাবের সামনে নাম যদি উল্টা পাল্টা করে বলেন তো! রাস্তাতেই ডিম থেরাপী শুরু করে দিবে!

সেই ডিম থেরাপী কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় তারা গন্তব্য স্থলে পৌছে যায়! আহনাফ বলে,আজ বহুদিন পর সেই পুরোনো শিহরন পেলাম!হাসান বলে,শিহরন পরে নিও! তোমার কিছু হলে,তোমার আপা দুলাভাই আমাকে জ্যান্ত কবর দিত! আর নাহিদ বলে,আর আপনাদের যদি কিছু হতো,বড় ভাই আমাকে কাঁচায় খেয়ে ফেলতো!

পরোক্ষনেই তারা ভাবে,সত্যিই যদি কিছু একটা হতো! তাহলে হাসানকে কখনোই আহনাফ এর বোন দুলাভাই এর মুখোমুখি হওয়া কিংবা নাহিদকে বড় ভাইয়ের কড়ার প্রশ্নের সম্মুক্খিন হতে হতো না। তাদের তিন জনকেই, মুনকার নকীর,অন্ধকার কবরে স্বাগতম জানাতো!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: হাহাহা! বেশ ভাল ছিল।

আশ্চর্যের ব্যাপার হল নাহিদ হাসান আহনাফ নামেই আমার এক বন্ধু আছে। গল্পের তিনজন মানুষের নাম একজনের সাথে কী করে মিলে যায় সেটা বুঝতে পারছি না।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৩

শাহমুন নাকীব ফারাবী (১) বলেছেন: দারুন তো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.